ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীগণের সহি ডায়ালগনামা!!!

জিনিয়া জাহিদ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৯ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৩
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীগণের সহি ডায়ালগনামা!!!

বাংলাদেশের যে দেশপ্রেমিকেরা নিজের জীবনের পরোয়া না করে দুর্ধর্ষ জেমস বন্ড বা দেশি মাসুদ রানা স্টাইলে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়ে এই দেশকে দেশি-বিদেশি শত্রুর কবল থেকে রক্ষা করবেন বলে শপথ করে থাকেন তারাই তো হলেন এ দেশের মহান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
 
কথায় আছে, “যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ”।

বাংলাদেশে যে যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাই-ডিফল্ট সেই হয়ে যায় কমেডিয়ান। জেমস বন্ড বা মাসুদ রানা না হয়ে চার্লি চ্যাপলিন বা হাল আমলের যে কোনো কমেডিয়ানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে উনাদের রসে ভরা ডায়ালগ আমাদের এই নিরানন্দ জীবনে ব্যাপক বিনোদন দিয়ে থাকে।
 
তাদের রাজত্বকালে তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ডায়ালগ দিয়ে থাকেন যা কিনা একসময় এতই বিখ্যাত হয়ে যায় যে তা প্রবচনের পর্যায়ে উন্নীত হয়। মানুষ কোনো কিছু উদাহরণ দিয়ে বলতে গেলেই তাদের বিখ্যাত সেই সব ডায়ালগ কোট করে বলে থাকেন। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীগণের সেইসব ডায়ালগ একেকটি অমূল্য শিল্পের মর্যাদা পাবার যোগ্য।
 
স্বৈরাচারী সরকারের আমল আমলে না নিয়ে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন মতিন চৌধুরী। তার বিভিন্ন ঐতিহাসিক মেরুদণ্ডহীন দুর্ধর্ষ (?) কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে স্মরণ করা হলেও যে বাণীর জন্য তিনি বিখ্যাত হয়েছিলেন তা হলো, তিনি একবার ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকে বলেছিলেন, “তোমরা শিবিরের ছেলেদের সঙ্গে মারামারি কর কেন? ওরা তো ভদ্র!”
 
১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন দুইজন। প্রথম জন মেজর (অব.) রফিক। সম্ভবত এই একজন মন্ত্রীকেই পাওয়া যেতে পারে যিনি মোটামুটি কম রসিক ছিলেন কিংবা বলা যেতে পারে কমেডিয়ানের ভূমিকায় তিনি মোটামুটি অযোগ্যই ছিলেন। এ সমাজের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য তার তেমন কোনো ডায়ালগ তিনি রেখে যেতে পারেননি। সত্যি এ আমাদের জন্য ব্যাপক দুর্ভাগ্যই বটে।

মেজর (অব) রফিকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। তিনি প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন যে, সন্ত্রাসীরা নাকি গর্তে থাকে। তিনি বলেছিলেন, “অপরাধী যেই হোক, বাইশ হাত মাটির নিচ থেকে হোক আর সমুদ্রের তলদেশ থেকে হোক তাকে গ্রেফতার করা হবেই!” যদিও বাইশ সংখ্যাটি তিনি কেন ব্যবহার করেছিলেন দেশ-বিদেশের সংখ্যাতাত্ত্বিকদের জন্য তা একটি সমাধানহীন ধাঁধার মতই বটে!! পরবর্তী সময়ে তার “গর্তে থাকা সন্ত্রাসী” আবিষ্কার সকল উত্তরসুরী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুফে নিয়েছিলেন।
 
২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত প্রথমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন আলতাফ চৌধুরী। তার মোনালিসা টাইপ ভুবন ভোলানো হাসি দিয়ে উদ্ধৃত বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বাণী আজ মহাশিল্পের মর্যাদা পেয়েছে। তিনি বলেছিলেন, “পুলিশ সদস্য নিহত হলে পুলিশের জানাজা পড়ি, সন্ত্রাসীদের জানাজা তো পড়ি না!” এছাড়া নিজের বাসার বারান্দায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শিশু নওশীন মারা গেলে তিনি যে বিখ্যাত ডায়ালগ দিয়ে রাতারাতি মনিষীদের কাতারে পৌঁছে গিয়েছিলেন, তা হলো, “আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছেন”।

তবে এ কথা ঠিক যে, কেতাদুরস্ত মডেলদের পিছনে ফেলে চুলে জেল দেয়া ফ্যাশেনেবল স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জনাব লুৎফুজ্জামান বাবরকে কেউ ছাড়িয়ে যেতে পারবে না । তার সেই অমর বাণী “উই আর লুকিং ফর শত্রুজ” এতই হিট যে অনন্ত জলিলের “ইউ পম গানা”-ই তাকে একমাত্র টেক্কা দিতে পারে।
 
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে নারী ক্ষমতায়নকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম নারী জেমস বন্ডের ভূমিকায় নিয়োগ দেন জনাব সাহারা খাতুনকে। তার অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে মাথায় জেল দেয়া সোহেল তাজকেও নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। যদিও অ্যাসিস্ট্যান্টকে বাদ দিয়েই সাহারা খাতুন তার কমেডিয়ানের ভূমিকায় মারাত্মক সফল ছিলেন।
 
তার আমলে ২০১২ সালের প্রথম পাঁচ মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সর্ব নিকৃষ্ট অবস্থায় পৌঁছানোর পরেও সাহারা খাতুনের ভাষ্য পুলিশ আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। তার সময়ই জনগণ সর্ব প্রথম জানতে পারে যে, ৪৮ ঘণ্টা মানে হলো অসীম একটি সংখ্যা, পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে তবু ৪৮ ঘণ্টা ফুরোবে না। এছাড়াও তিনিই প্রথম তালা তত্ত্ব আবিষ্কার করেছিলেন। বলেছিলেন, “ঈদে বাড়ি গেলে তালা লাগিয়ে যাবেন। ”
 
লাস্ট ব্যাট নট লিস্ট আমাদের বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সাম্প্রতিক কিছু উক্তি দিয়ে আজকের এই সহি ডায়ালগনামা শেষ করছি।
 
ক্ষমতায় আসীন হয়েই জনাব মহীউদ্দীন খান আলমগীর যে ডায়ালগ দিয়ে আমাদের ব্যাপক বিনোদন দিয়েছিলেন তা হলো, “পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে সফল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হলেন সাহারা খাতুন। ” এছাড়াও হরতালে মিছিলকারীদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়েও তিনি বোদ্ধা মহলে আলোচনার জন্ম দিয়ে সঠিক ও সফলভাবে পূর্বসুরীদের ন্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হবার যোগ্যতা প্রমাণ করে যাচ্ছেন। তার অতি সাম্প্রতিক বাণী, "পুলিশ কি আঙুল চুষবে?" অলরেডি বক্সঅফিসে সুপার হিট। সামনে আরো দিন আছে। আশা করি, বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার রসিকতায় অন্যদের ছাড়িয়ে যাবেন।

ক্ষমতার পালাবদলে অন্য কেউ এই মন্ত্রণালয়ের হাল ধরবেন। নতুন নতুন ডায়ালগ দিয়ে সহি ডায়লগনামা সমৃদ্ধ করে যাবেন। আমরা প্রত্যাশায় আছি, কমেডিয়ানের ভূমিকা থেকে দুর্ধর্ষ জেমস বন্ড বা মাসুদ রানার ন্যায় একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। যিনি এইসব হাস্যকর ডায়ালগ দিয়ে নয়, কাজেই প্রমাণ করে দেবেন কিভাবে দেশকে শত্রুমুক্ত করে সঠিকভাবে এগিয়ে নেয়া যায়।  
 
zinia-zahidজিনিয়া জাহিদ: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও ব্লগার

 

 

জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।