এ সরকারের মূল লক্ষ্য ডিজিটাল বাংলাদেশ। আর এ সরকারের অদূরদর্শিতার প্রমাণ সবাই দেখে আসছে।
এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নেই। এ অভিযোগও আছে। সরকার ব্লগ-ফেসবুকের মত সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোর ইতিবাচক দিকের পৃষ্ঠপোষকতায় এখনও বিশেষ কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। শিক্ষিত-সচেতন তরুণদের রাজনীতিতে আকৃষ্ট করতে, রাজনৈতিক প্রচারণায় সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইনকে সুস্থভাবে ব্যবহার করতেও সরকার উদাসীন।
আওয়ামী লীগের দলীয় ওয়েব সাইটটি (http://www.albd.org) যদি দেখা যায় তো একে ‘ইন্টারএ্যাকটিভ’ সাইট বলা যাবে না। যদিও প্রতিদিন কোন না কোন আপডেট প্রতিবেদন দেখা যায় সাইটটিতে।
সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটি (http://molwa.gov.bd) ঘুরে আসার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ডিসেম্বর ২০১২’র পর সাইটটির চেহারায় কিছু সংস্কার করা হয়েছে কোন ধরণের প্রচারণা ছাড়াই। সে সময় সাইটটির অন্যান্য পাতাগুলো হয় লিংক বিহীন অথবা অসম্পূর্ণ ছিল। বর্তমানে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য-ফর্ম সংযোজিত হয়েছে। পূর্বে সাইটটিতে ফটোগ্যালারি হিসেবে ফ্লিকারের লিংক পাওয়া গিয়েছিল (http://www.flickr.com/photos/87375592@N07) ফ্লিকারের ছবি আপলোড এক্টিভিটি কেবলমাত্র সেপ্টেম্বরের। ফটো ভিউ পরিসংখ্যান খুবই কম। অর্থ্যাৎ এই লিংকের প্রচার-প্রচারণা নেই বললেই হয়।
যে আয়োজনের ছবি ফ্লিকারে সংযোজিত হয়েছে, সে আয়োজনের উপস্থিত ব্যক্তিবর্গরাও খোদ মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয়েরর প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের প্রত্যেকে যদি উক্ত ফ্লিকার লিংকের অ্যালবামের প্রত্যেক ছবিতে একবার করে হলেও চোখ বুলান তো ফটো ভিউ সংখ্যা আরো বেশি হওয়ার কথা!
তবুও ফ্লিকারে ছবি সংরক্ষণকে সাধুবাদ জানাতে হয়। বর্তমানে মূল ওয়েবসাইটেই যে ফটো গ্যালারি লিংক রয়েছে, যেখানে মাত্র দশটির মত ছবি সংযুক্ত রয়েছে। মূলত একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতে হতাশ হতে হবে একেবারে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া এবং এ সম্পর্কিত আলোচিত ঘটনা-সংবাদ মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সাইটে অনুপস্থিত! এই সাইট দেখে বোঝার উপায় নেই মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যকে, অপপ্রচারকে তুলে ধরতে আদৌ কোনরকম ভূমিকা রাখে কিনা!
গত ডিসেম্বর’২০১২ –তে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের যে লিংকটি প্রচারণায় ব্যবহৃত হত (www.sectorcommandersforum.org) , সেই ওয়েবসাইটটিকে ইনএ্যাকটিভ পাওয়া ছিল দু:খজনক।
সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের বর্তমান সাইট লিংক http://www.scf1971.org, যা অনলাইনে প্রচারণাবিহীন রয়ে গেছে। সাদামাটা চেহারার সাইটটিকে তেমনভাবে ইন্টারেকটিভ বলা না গেলেও এই সাইটের ‘ওয়্যার ক্রিমিনালস’ পাতাটি গুরুত্বপূর্ণ আর্কাইভ হয়ে উঠতে পারে।
সেক্টরকমান্ডারস ফোরামের একটি ফেসবুক পাতা রয়েছে (https://www.facebook.com/pages/Sector-Commanders-Forum-Liberation-War71/305101822834930)। এই পাতায় নিয়মিতভাবেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সংক্রান্ত দেশিয় ও আন্তর্জাতিক কর্মসূচী, সংবাদ ও ছবি আপডেট হচ্ছে। ডিসেম্বর’২০১২ এর পরবর্তীতে এই পাতায় ভিজিটরদের লাইক-মন্তব্য উল্লেখযোগ্য নয়।
গত ডিসেম্বর মাসে এই ফেসবুক পাতায় মাত্র ৯৬টা লাইক ছিল। বর্তমান লাইক সংখ্যা মোটে ২৪০। যদিও স্ট্যাটাস/ছবি লাইক-শেয়ার এখন এক ক্লিকের কাজ। ফেসবুকে কারণে-অকারণে সময় কাটাতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা আজকের প্রজন্ম বুঝে হোক না বুঝে হোক ফেসবুক ফ্যান পেইজে-পোস্টে-ছবিতে লাইক দেয়ার হুজুগে সামিল থাকে। তরুণ প্রজন্মের এই হুজুগে মনোভাবকেও সঠিকভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির একটি ফেসবুক গ্রুপ দেখা গেছে – Communal atrocities by BNP and Jamat-e Islami (2001-2005) । এর সদস্য সংখ্যা বেশ। আপডেটও করা হয় নিয়মিত। তবে ফেসবুক কমিউনিটিতে এই গ্রুপ নিয়ে আলোচনা তেমন দেখা যায় না।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সাইটটিকেও যথেষ্ট ইন্টারেকটিভ করে তোলা জরুরী। এর ‘রিসেন্ট নিউজ‘ ও ‘আপকামিং ইভেন্ট’ অংশটি একদমই হালনাগাদকৃত নয়। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণে সর্বজন সম্পৃক্ততা এই সাইটে লিবিবদ্ধ করা যেতে পারে ছবি-ভিডিও-অডিও সহযোগে। জাদুঘরের নির্মাণকাজের অগ্রগতির বিভিন্ন খবর যুক্ত হতে পারে নিয়মিতভাবে।
গত ডিসেম্বরে ব্লগাররা গিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। তুলে দিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের জন্য ব্লগারদের উদ্যোগে সংগৃহিত অনুদান – দু’টি স্মারক ইটের মূল্য। জনসম্পৃক্ততার, জনমতের সম্পৃক্ততার এইরকম দৃষ্টান্ত সাইটে নিয়মিতভাবে যুক্ত হওয়া জরুরি।
http://www.genocidebangladesh.org/, অনলাইনে খুব গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাগার হিসেবে সমাদৃত হলেও এই সাইটটিকে পুনরায় হালনাগাদ করার প্রকল্প হাতে নেয়া জুরুরী। এর অডিও-ভিডিও বিভাগগুলোতে আরো দুর্লভ প্রামাণ্যচিত্র যুক্ত হতে পারে। মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার, বীরাঙ্গনাদের নিয়ে প্রতিবেদন সংযুক্ত হতে পারে আরো।
বর্তমানে প্রচার-প্রচারণায় সরব রয়েছে http://www.icsforum.org/ সাইটটি। স্বেচ্ছাশ্রমের উপর নির্ভর করে বলে হয়ত, নিয়মিত সাইটের প্রথম পাতায় কোন আপডেট দেখা যায় না, তবে অনলাইনে এর সদস্যদের সরব দেখা যায়।
এই যখন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর অনলাইন পোর্টালের দশা, তখন দেখা যাক মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী সংগঠনগুলো অনলাইনকে কতটা আর কিভাবে ব্যবহার করছে। সরকারের পাশাপাশি শীর্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনলাইন জগত বিমুখতা দেখা গেলেও, জামাত-শিবির কিন্তু অনেক ডিজিটালাইজড। ডিজিটাল জামাতি কার্যকলাপের অসংখ্য প্রমাণ পাওয়া যাবে ইন্টারনেট দুনিয়ার। বাংলা ব্লগের শুরু থেকেই ব্লগে ব্লগে জামাত-শিবির সমর্থকদের পদচারণা দেখা গেয়েছিল। মিথ্যাচার, অপপ্রচার, ইতিহাস বিকৃতির এজেন্ডা বাস্তবায়নে জামাতপন্থীদের সক্রিয় হতে দেরি হয়নি। তবে এতে একভাবে হিত সাধিত হয়েছিল। এ না হলে ব্লগ আরো দীর্ঘ সময় খোশগল্পের কেন্দ্রস্থল হয়ে থাকত। ইতিহাস নিয়ে উপলব্ধি জাগতে জাগতে সময় বয়ে যেত।
‘পেইড ব্লগার’ আখ্যান শুরু হয়েছিল জামাত-শিবিরমনা ব্লগারদের কারণেই। এ কথা সকলেই বলেন, জামাত-শিবিরের কর্মীদের আসলেই অর্থায়ন করা হত ব্লগে দলীয় প্রচারনা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অপপ্রচার চালনার জন্য। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বরাবরই কিছু অন্তসারশূন্য, ‘হিপনোটাইজড’ কর্মীদের লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং এখনো হয়, যারা খুব বেশি দূর কখনই এগুতে পারেনি সচেতন ব্লগারদের আবেগ আর যুক্তির মিশেলে গড়ে ওঠা তীব্র প্রতিবাদের মুখে।
ফেসবুকের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকলে, সেখানেও জামাত-শিবির কর্মীরা সক্রিয় হতে দেরি করেনি। হোক না সেটা কোন ইসলামিক বাণী প্রচারণামূলক গ্রুপ, হোক না সেটা কোন চুটকি শেয়ার করার ফেসবুক ফ্যান পেইজ, কৌশলে কৌশলে জামাতিরা ছেয়ে যাওয়া শুরু করল অনলাইনে।
ব্লগে-ফেসবুকে জামাতিদের উদ্দেশ্য কী? সহজ বিষয়, জনগণকে বিভ্রান্ত করা। জনমতের অপব্যবহার করা। তথ্যসূত্রহীন এবং বিস্তারিত বক্তব্যহীন ছবি ব্লগে-ফেসবুকে প্রচার করে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে বহুবার।
ত্রিশ লাখ শহীদের পরিসংখ্যানকে ভ্রান্তিকর বলে প্রচার করার মত ধৃষ্টতাও দেখানো হয়েছে বহুবার। জাতীয়পর্যায়ের ইস্যুগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছে নগ্নভাবে। উদ্দেশ্য সরকারকে বিব্রত করা। ফেলানি ইস্যুতে সচেতন নাগরিকরা সচেতনভাবেই সরকারের সমালোচনা করেছিল। জনগনের এই অবস্থানকে কৌশলে ব্যবহার করেছিল জামাতপন্থীরা অনলাইনে। জামাতি সমাবেশের একটি অন্যতম কেন্দ্র ছিল একটি বাংলা ব্লগ – সোনার বাংলাদেশ ব্লগ। এটি অবশ্য জামাতমনাদের ব্যর্থ প্রজেক্ট হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। বিটিআরসি’কে ধন্যবাদ সোনার বাংলাদেশ ব্লগ নামক জামাতি আখড়া বাতিলে।
সাম্প্রতিককালে, অর্থ্যাৎ পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে এই স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি চক্র তাদের অপপ্রচারণায় যথেষ্ট কৌশলী এবং আন্তর্জাতিক প্রবণ। এরা পৌঁছে গিয়েছিল হোয়াইট হাউজের সাইটে পিটিশন খোলাতেও। এই পিটিশন পাতা পরবর্তীতে সাইট মডারেটর কর্তৃক বাতিল করা হয়। স্বাধীনতা বিরোধীচক্রের মূল হোতা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী দল জামাত-ই-ইসলামি।
জামাত-ই-ইসলামি তাদের অফিসিয়াল ওয়েব সাইটটিকে (http://www.jamaat-e-islami.org) ব্যবহার করে ট্রাইব্যুনালকে ঘিরে নানামুখী অপপ্রচার চালাতে। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিতর্কিত করতেও ভূমিকা রেখেছে এই সাইটটি।
এই সাইটটিকে জামাতের অনলাইন পত্রিকা বলা যায়। সাদামাটা ভাবে দলীয় নীতিমালা, যোগাযোগ তথ্য দিয়ে একটি সাইট করা জামাতের মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। বরং এই সাইটটিকে নিজেদের চক্রান্ত চরিতার্থ করার একটি উত্তম স্থান করে তুলেছে জামাত। লক্ষ করলে দেখা যাবে -
১। জামাতের এই সাইটটি বাংলা-ইংরেজি-আরবি তিনটি ভাষাতেই প্রচার হচ্ছে। অর্থ্যাৎ দেশীয় কর্মীদের কাছে যেমন এই সাইটটি উপস্থাপন করছে, তেমনি করছে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে। একই সাথে মুসলিমদেশগুলোর কাছেও যুদ্ধাপরাধী জামাত নেতাদের পক্ষে সক্রিয়তা গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে এই সাইট।
এটা স্পষ্টত যে, নিয়মিতভাবে বাংলা-ইংরেজি-আরবি তিনটি ভাষাতেই প্রতিবেদন আপডেট করার জন্য জামাতের কর্মী নিয়োজিত রয়েছে। বাংলা-ইংরেজি পোস্ট আমাদের মধ্যকার সাধারণ পাঠকের পক্ষে পড়ে বোঝা সম্ভব। কিন্তু আরবি পাঠ সম্ভব নয়। বাংলা-ইংরেজি প্রতিবেদনগুলো পড়লেই বোধগম্য হয়, জামাতি প্রোপাগান্ডা কাকে বলে। কিন্তু এই সাইটটির আরবি অংশে যদি মিথ্যাচার ও উস্কানিমূলক প্রতিবেদন উপস্থাপিত হয় সেটা সাধারণের পক্ষে বোঝা দুষ্কর।
২। এই সাইটিতে গোলাম আযমের বক্তব্য/ভাষণ প্রচার করা হচ্ছে। গোলাম আযমের অপরাধ নিয়ে সংশয় প্রকাশের সুযোগ নেই। গোলাম আযম সর্বজনস্বীকৃত শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী। জাতি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালকে স্বচ্ছভাবে চায়, বিচার প্রক্রিয়াকে পদ্ধতিগতভাবে চায় আগামির ইতিহাসের সঠিক লেখনীর স্বার্থেই। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, জামাতকে ছাড় দেয়া হবে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে প্রচার-প্রচারণায়। এ ধরণের কার্যকলাপ উস্কানি সৃষ্টি করছে, জামাত তার কর্মীদের ‘জিহাদি’ চেতনায় উদ্বুদ্ধ করছে এই সব ভাষণ প্রচার করে।
৩। ধর্মের নাম ভাঙ্গিয়ে গড়ে ওঠা জামাত মাদ্রাসাগুলোর মোড়ল সাজার চেষ্টারত। মূলত মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের এভাবে শিবির ও জামাতের প্রতি আকৃষ্ট করার কৌশল এসব।
৪। এই সাইটের প্রথম পাতাতেই রয়েছে ভিডিও গ্যালারি। এই অংশে দেখা যাবে অপর যুদ্ধাপরাধী নিজামীর ভাষণ ও যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে জামাতের প্রচার প্রচারণা।
৫। এই সাইটের প্রথম পাতায় বাংলাদেশের মানচিত্র রয়েছে। মাউস কার্সর সুনির্দিষ্ট বিভাগের উপর রাখলে জামাতের-শিবিরের বিভাগীয় কার্যক্রমের খরর পাওয়া যায়। এইসব প্রতিবেদনগুলোতে মিথ্যাচার করা হচ্ছে যে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিপক্ষেই সবার অবস্থান।
৬। সাম্প্রতিককালে বিরোধী দলীয় নেত্রী, এক সমাবেশে সচিত্র বর্ণনা করেন, আওয়ামী লীগ আর জামাতের পূর্বেকার কোন রাজনৈতিক যোগাযোগের কথা। জামাতও লুফে নিয়েছিল সেসব, তুলে দিয়েছিল তাদের অফিসিয়াল ওয়েব সাইটে।
৭। এই সাইটের গ্যালারিতে প্রকাশিত হচ্ছে মহাফেজখানা থেকে খুঁজে আনা ছবি। কে কখন জামায়াতের আমীরের সাথে হাত-গলা-বুক মিলিয়েছিলেন, তার ছবি উপস্থাপন করে জামায়াত নিজেদের গ্রহণযোগ্য করে তুলে চাইছে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে।
৮। তুরস্ক সরকার গোলাম আযমকে শীর্ষ ইসলামিক নেতা মান্য করে, এবং তার মৃত্যুদণ্ড হলে সামাজিক জীবনে ইসলামিক চর্চায় ভারসাম্যহীনতা আসবে এমনটাও মনে করে। সে কারণে গোলাম আযমের মতো যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড না দেয়ার আবদার জামায়াতে ইসলামর ওয়েবসাইটটের আলোচিত সংবাদ হয়ে ওঠে। গৌরবের কথা, বাংলাদেশ সরকার তুরস্ক সরকারের আবদারের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল। প্রতিবাদ এসেছিল নির্মূল কমিটি থেকেও। যদিও সেসব আর প্রতিবেদন আকারে প্রকাশিত হয়নি জামাতি সাইটটিতে।
৯। ইনু-নিজামীর করমর্দনের ছবি প্রকাশ করেও বিতর্কের উস্কানি যোগান দিচ্ছিল এই ওয়েব সাইট।
জামাতের ছাত্র সংগঠন শিবিরের ওয়েব সাইটিও (http://www.shibir.org.bd) সরকার-পুলিশের বিপক্ষে প্রতিবেদন আর হরতাল-পিকেটিংয়ে উদ্বুদ্ধকারী খবরাখবর নিয়ে নিয়মিত আপডেট হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামি ও এর ছাত্র সংগঠন শিবিরের ফেসবুকে অসংখ্য এ্যাকাউন্ট, পেইজ, গ্রুপ আছে। এসব পাতায় দেখা যায় ইসলামের নামে জামাতি প্রোপাগান্ডা আর এজেন্ডা বাস্তাবায়নের চেষ্টা অনলাইনে কিভাবে অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু পেইজ বাতিল করা হলেও এখনো অসংখ্য পেইজ, গ্রুপ, এ্যাকাউন্ট বহাল তবিয়তে রয়েছে।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালকে বাধাপ্রাপ্ত করা, চিহ্নিত শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের জন্য তাদের বক্তব্য/ভাষণ প্রচার করে দলীয় কর্মীদের উদ্বুদ্ধকরণ তথা বিশংখলা সৃষ্টিতে ইন্ধন দিতে জামাত-ইসলামি অনলাইনে তাদের দলীয় ওয়েব সাইটে আর সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোকে ব্যবহার করছে।
ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা গ্রহণযোগ্য নয়। নৈতিকতা, গণতন্ত্রের যে ছাড় জামাত জাতি ও রাষ্ট্র থেকে প্রাপ্ত হচ্ছে, তার সম্পূর্ণই অপব্যবহার করছে এই যুদ্ধাপরাধী দলটি। কোন সন্দেহ নেই এদের অর্থলগ্নি মোটা অংকের। তাই অনলাইনে এদের কার্যক্রম সচল ও অভিনব। জামায়াতে ইসলামি একটি যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে বাজেয়াপ্ত হওয়ার দাবিদার। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাতে দেয়াও অনুচিত।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলাদেশের জনতার দাবি। বর্তমান সরকারের দায়িত্ব এই বিচারকে সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং অচিরেই চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের আইনি প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা। জাতির দাবি বিরোধী এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বিরোধী জামাতের সকল অনলাইন কার্যকলাপকে তাই নজরে আনতে হবে। অনলাইনের এই অপপ্রচারগুলোকে অচিরেরই বন্ধ করতে হবে।
দাবি এটাই– অনলাইন হোক রাজাকারমুক্ত। জামায়াত ও শিবিরের ওয়েবসাইট বাতিলে বিটিআরসি কর্তৃপক্ষের দ্রুত কার্যকরী ও প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা এখন অত্যাবশ্যকীয়।
লেখক: ব্লগার
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৩
এসএএস