ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

কফি, শতাব্দীর সেরা সুপারফুড!

হাসান শাহরিয়ার হৃদয়, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৩
কফি, শতাব্দীর সেরা সুপারফুড!

ঢাকা: দুই হাজার বছর আগে গ্রিক দার্শনিক হিপোক্রেটিস বলেছিলেন, “খাদ্যই ওষুধ, আর ওষুধই খাদ্য। ” খাদ্যপুষ্টি নিয়ে কাজ যারা করেন, তাদের সবার কাছে কথাটি খুব জনপ্রিয়।

তারা এই কথার মাধ্যমেই মানুষকে ‍বোঝানোর চেষ্টা করেন যে শরীরকে সুস্থ-সবল রাখার জন্য শুধু খাদ্যই যথেষ্ট।

অনেকেই অবশ্য মনে করেন, এখানে খাদ্য বলতে লতা-পাতা, শস্য বোঝানো হয়েছে, যেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হলেও স্বাদের দিক দিয়ে তেমন আহামরি নয়। তবে কেউ নিশ্চয়ই আশা করেননি যে এক কাপ কফিও এমনই পুষ্টিকর খাদ্যের মধ্যে পড়তে পারে? শুধু তাই নয়, আমাদের কারও কারও জন্য এটি হতে পারে গত শতাব্দীর আবিষ্কৃত সেরা সুপারফুড!

প্রসঙ্গত, সুপারফুড হলো সেসব খাদ্য, যাদের বিশেষ পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপাদান রয়েছে, পাশাপাশি ক্ষতিকর দিক খুবই কম।

বিশ্বব্যাপি বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে বর্তমানে শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের সবচেয়ে বড় উৎস কফি। অবশ্য বেশি কফি পান সবার জন্য ভালো না-ও হতে পারে।

কেন কফি আপনার জন্য দারুণ ফলদায়ক হবে? জেনে নিন ৯টি কারণ-

মৃত্যুঝুঁকি কমায়
মৃত্যু সবার জন্যই আসন্ন। কিন্তু হৃদরোগ, ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের কারণে যেখানে আয়ু কমে যেতে পারে, সেখানে দৈনিক ২/৩ কাপ কফি বাড়িয়ে দিতে পারে এসব রোগে আক্রান্তদের আয়ু। শ্বাসকষ্ট, সংক্রমণের মতো রোগ প্রতিরোধসহ স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে পারে। ২০০৮ ও ২০১২ সালের দুটি গবেষণা থেকে এমনই জানা গেছে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
পুরুষদের প্রোস্টেট ক্যান্সার ও নারীদের জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে কফির তুলনা নেই। ২০১১ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, যেসব পুরুষ দৈনিক ৬ কাপ বা তার বেশি কফি পান করেন, তাদের প্রোস্টেট ক্যান্সারের সম্ভাবনা ২০ ভাগেরও বেশি কমে যায়। আরেকটি গবেষণা থেকে জানা যায়, যেসব নারী দৈনিক ৪ কাপের বেশি কফি পান করেন, তাদের জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ২৫ ভাগ কম।

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়
২০১২ সালের একটি গবেষণা থেকে দেখা যায়, কফির একটি উপাদান শরীরের আইলেট অ্যামিলয়েড পলিপেপটাইড নামে একটি যৌগ তৈরিতে বাধা দেয়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে এ যৌগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। আরেক গবেষণা থেকে জানা যায়, অধিক ক্যাফিনেটেড কফি ডায়াবেটিসের সার্বিক ঝুঁকি কমায়।

মস্তিষ্ককে সুরক্ষা করে
২০০৯ সালের একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, কফি পানকারীদের শেষ বয়সে ডিমেনশিয়া, আলঝেইমারের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। ইঁদুরের ওপর চালানো আরেক গবেষণা থেকে জানা যায়, ঘুমজনিত মানসিক চাপ কমাতে কফির ঘ্রাণই যথেষ্ট। সকালে ঘুম থেকে উঠে ধোঁয়া ওঠা কফির কাপ হাতে নিয়ে অনেকের মুখেই যে হাসি দেখা যায়- এ কারণেই হয়তো!

অস্ত্রোপচারের পর উপকারি
অস্ত্রোপচারের পর পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার একটি লক্ষণ পরিপাকতন্ত্র ঠিকঠাক কাজ করা। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পানি পানের চেয়ে কফি পান অস্ত্রোপচারের পর পরিপাকতন্ত্রকে প্রভাবিত করে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে।

ত্বকের জন্য উপকারি
সবচেয়ে পরিচিত ত্বকের ক্যান্সার রোধেও উপকারি হতে পারে কফি। ক্যান্সার রিসার্চ জার্নালের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, কফির ক্যাফিন ত্বকের ক্যান্সারের জন্য দায়ী কার্সিনোমা কোষ জন্মাতে দেয় না, যার ফলে ত্বক ক্যান্সারের ঝুঁকি কম থাকে।

মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
সাম্প্রতিক একটি বিস্তৃত গবেষণা থেকে দেখা যায়, ২৫ বছর ধরে যারা ৪ কাপ বা তার বেশি কফি পান করছেন, তাদের মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৫০ ভাগ কম।

পেশীর গঠনকে শক্তিশালী করে
সেল মেটাবলিকম জার্নালের একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, ব্যায়ামের ফলে পেশীকোষের ডিএনএতে যেরকম অনুরণন হয়, একইরকম অনুরণন হয় ক্যাফিন পানেও। আরও আশ্চর্য ব্যপার হলো, ব্যায়ামের চেয়েও দ্রুত পেশীতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এটি।

তবে অধিক কফি পান সবার জন্য উপকারি নয়। গর্ভবতী নারীদের পাশাপাশি ঘুমহীনতা, হতাশা ইত্যাদিতে আক্রান্তদের কফি পান সীমিত রাখা উচিত।

যদিও অনেকে মনে হৃদরোগীদেরও কফি পান করা উচিত নয়, কিন্তু গবেষণা মতে, তাদের জন্য কফি বেশি উপকারি।

আর সবশেষে, কফি শিশুদের জন্য নয়। এর বিস্ময়কর সুবিধাগুলো পেতে বড় হওয়ার পর শিশুদের কফি পানের সুযোগ দিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৩
আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।