আলিম সাহেব থাকেন গুলশানে। ফ্ল্যাটটির দাম হবে কোটি টাকার উপরে।
কর্তা- আলিম সাহেব
গৃহিণী- মিসেস আলিম
কন্যা- মুক্তি
পুত্র- বিজয়
কাজের মেয়ে- রোজিনা
কাজের বুয়া- সখিনা
ড্রাইভার- আবুল
সকালে ঘুম থেকে উঠে:
মিসেস আলিম- সখিনা, সকালে কী নাস্তা তৈরি করছিস?
সখিনা- জ্বি খালাম্মা। ডিম ভাজি, আলু ভাজি, ডাইল, সবজি আর আটার রুটি। আর খালুর জন্য পরোটা। চা-ও দিছি।
মিসেস আলিম- আমাকে কফি দিস।
সখিনা- ঠিক আছে খালাম্মা।
(সখিনার ভাবনা- প্রতিদিন আপনারা যা খাওয়া দাওয়া করেন তাই দিয়া আমাগো এক সপ্তাহর বেশি চইলা যাইব। আর যা নষ্ট হয়, ওইটা দিয়া আমাগো মতো দুই পরিবার খাইয়া বাঁচতে পারে। কোনদিন মনে কইরা এই খাওনগুলা ফালাইয়া দিলেও আমাগো খাইতে দিলেন না। )
মিসেস আলিম- রোজিনা, ঘর মোছার আগে জামা-কাপড়গুলো ধুয়ে দিস। বিকেলে বৃষ্টি আসতে পারে। আগে ভাগে শুকিয়ে নিতে পারবি।
রোজিনা- জী খালাম্মা।
(রোজিনার ভাবনা- আপনারা এক ঈদে যত টাকার জামাকাপড় কিনেন, ওইটা দিয়া আমাগো সারা জীবনের জামা কাপড় হইয়া যায়। জামা-কাপড়গুলা পুরান হইলেও পরতে দিলেন না। পুরান কাপড় দিয়া ডেকচি কিনেন, যেইটা পোলা মাইয়া বিয়ার সময় গ্রামের বাড়িতে মেহমান খাওয়াইতে লাগব। )
ঘুম থেকে উঠে লিভিং রুমে বসে টিভিটা ছাড়লেন আলিম সাহেব-
আলিম সাহেব- মুক্তি, দেখেছিস সাভারের লাইভ ফুটেজ দেখাচ্ছে। তোরা গিয়েছিলি কালকে? আজকে আমারও যেতে হবে। খুব কষ্ট হচ্ছেরে। বিজয় কোথায়। ওদের জন্য কিছু একটা করতে হবে। আহারে, এতো করুণ দৃশ্য দেখা যায়? রোজিনা, আবুলকে বলতো পেট্রোল ভরে নিয়ে আসতে। সাভার যাব।
রোজিনা- জ্বি, খালু। কইয়া আইতাছি।
মুক্তি- আজকে শুক্রবার। রাস্তায় জ্যাম কম হবে। তাড়াতাড়ি যাওয়া যাবে। আইপ্যাড-এ স্ট্যাটাসটা আপডেট দেই, আজ আবার সাভার যাচ্ছি, আব্বুর সাথে।
বিজয়- আপু, আমার আইফোন-টা দেখেছিস? খবর নিতে হবে কত টাকা উঠল, সাভার যাওয়ার সময় নিয়ে যাওয়া যাবে।
(রোজিনার ভাবনা- যেই ঘুষের টাকা দিয়া আইপ্যাড/আইফোন কিনেন, ওইটা তো আমার বইনেরে কম বেতন দিয়া গার্মেন্টসের বেশি লাভের একটা অংশ; আপনার বাপ, মানে আমার ডাকুইন্না খালুরেই তো মালিকেরা দিছে কারখানার সুতা আননের সময়। আইপ্যাড/আইফোন-এর টাকা দিয়া একটা রিকশা কিনা দিতেন আমার জামাইরে, তাইলে আমাগো আর গার্মেন্টসে কাম করতে যাইতে অইত না। নাইলে গেরামে ফিরা দোকান দিয়া বইয়া যাইতে পারতাম। )
আলিম সাহেব- আবুল, গাড়িটা বিজয়ের ইউনিভার্সিটি দিয়ে নিস। সাভারের জন্য ওরা টাকা তুলেছে, ওইটা বিজয় নিয়ে যাবে।
আবুল- জ্বি, খালু। ঠিক আছে।
মুক্তি- আব্বু, যা গরম পরেছে না। মুভেনপিক দিয়ে যেয়ো। আইসক্রিম খাব।
(আবুলের ভাবনা- যত টাকার তেল যাইব, আর যত টাকার আইসক্রিম খাইবেন, অইডা দিয়া আমার বউয়ের সারা মাসের বেতন হইয়া যায়। তাইলে আর আপনেগো বাসায় কাম করতে পাডাইতে হয় না। সখিনারে কইবার পারি বাসায় বইসা সেলাইপাতি করতে)
বিজয়- দোস্ত কত উঠেছে?
দোস্ত- ৪৫,০০০ আপাতত।
(আবুলের ভাবনা- গতবারে বিজয় ভাইয়ার জন্মদিনের পার্টিতে বিল আসল ৫৫,০০০ টাকা। আর সবাই মিলা সাভারের জন্য ৪৫,০০০ টাকা তোলে? কি আর করা, ইনাগো বেসরকারি ইউনিভার্সিটির এক বছরের বেতন দিয়া আমারে এক টুকরা জমি কিনা দিলে গেরাম যাইয়া কিছু কইরা খাইতাম। আমাগো রক্ত ঘামের টাকা দিয়াই তো ইনাগো এতো বাহাদুরি। )
রোজিনা-সখিনা-আবুলের সম্মিলিত ভাবনা:
আমাদেরকে দারিদ্রের জালে আটকাইয়া, কোনোরকমে জীবন চালানোর পরিমাণ টাকা দিয়া বাঁচাইয়া রাখেন। সারাজীবন গোলামি করনের লাগি। নাইলে আপনের খাওয়া রানবো কেডা? কাপড় ধুইবো কেডা? ঘর মুসবো কেডা? গাড়ি চালাইব কেডা? আপনাগো বউরাতো সারাদিন টিভি সিরিয়াল দেখব আর মার্কেটে শপিং করবো। এগোর কাছে এইডাই সংসার। আর আমরা, দুইডা সংসার চালাই। নিজের আর আপনাগোর। সাভার দেইখা মায়াকান্না না কাইন্দা, আমাগোরে গোলামি থেইকা মুক্তি দেন। পারবেন? তাইলেতো আপনাগো নিজের কাম নিজের করতে হইব। দয়া কইরা, আমাগোরে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দেন, আর আপনারা নিজেরাও নিজের কাজগুলো করেন। আমাগো গোলামির পিঞ্জরে আর বাঁধিয়েন না। আমাগোর দিকে তাকান। সাভার নিয়া মায়াকান্না আর কাঁদিয়েন না। সবচাইতে বড় সাভার আপনাগো চোখের সামনে, যারা বেঁচে থেকেও মৃত।
আকুল আবেদন: সাভারের আগে রোজিনা, সখিনা আর আবুলের দিকে একটু তাকান।
[ঘটনা এবং চরিত্রগুলো কাল্পনিক। দৈবক্রমে কারো সাথে মিলে গেলে দয়া করে ক্ষমা করবেন]
বংলাদেশ সময়: ১২৫৯ ঘণ্টা, ২৯ এপ্রিল ২০১৩
এজেএফ