গণতন্ত্রের চর্চা এখন অনলাইনেই সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য। এমন ধারণার বিপরীতেও আছে অনেকের অবস্থান।
আবার সরকারের পক্ষে যুক্তি হচ্ছে, রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের নাগরিক যে কোনো বিষয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের কারণে বিরোধে জড়িয়ে পড়লে তা মোটেও সহজভাবে নেওয়ার বিষয় নয়। এখানে আইন এমনকি প্রয়োজনে কঠোর আইন প্রয়োগ করবে দেশটির সরকার।
এ বিতর্কে ভারত নতুন আলোচনার সূচনা করেছে। এখন থেকে চাইলেই ভারতে সামাজিক সাইটে আপত্তিকর মন্তব্যের কারণে যে কোনো নাগরিককে তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার করা যাবে না। এ জন্য উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার আগাম অনুমোদন নিশ্চিত করতে হবে। দেশটির সর্বোচ্চ আদালত এ বিধি-নিষেধ জারি করেছে।
ফলে দেশজুড়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে এর অর্থ এই নয় যে, ইচ্ছামতো মন্তব্য করে রাষ্ট্র কিংবা রাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে আপত্তিকর কিছু বলার নৈতিক স্বাধীনতা পাওয়া গেল। এমনটা ভাবলে ভুল হবে বলেও সতর্ক করেছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত।
বিচারক বি এস চৌহান এবং দীপক মিশ্র বলেন, সামাজিক সাইটে আপত্তিকর মন্তব্য করলে সরকারের পক্ষে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অধীনে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ আছে। হুট করে কিংবা শুধু অনুমানের ভিত্তিতে কোনোভাবেই এ গ্রেপ্তার গ্রহণযোগ্য হবে না।
ভারতের আইসিটি আইনের ৬৬এ ধারা মোতাবেক গ্রেপ্তার করার প্রচলিত আইনে কিছুটা সংশোধন আনা হচ্ছে। সরকারের গঠিত উচ্চপর্যায়ের বিচারক দল এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়ে আইনি প্রণয়ন করার সুপারিশ করেছেন।
এ সময়ে বিশ্বব্যাপী সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুকে সরকার কিংবা বিশিষ্ট কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে মন্তব্য করে অনেক সামাজিক গ্রাহকই গ্রেপ্তার এবং নানামুখী হয়রানির কবলে পড়েছেন। এ বিষয়ে সরকার এবং নাগরিকদের মুক্তকথা চর্চার খোলামেলা লড়াই চলছেই।
ভারতে এ বিষয়ে প্রস্তাবিত নতুন আইনে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো আপত্তিকর মন্তব্য করলে কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে হলে পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের অনুমতি নিতে হবে। এ তালিকায় পুলিশের আইজিপি, ডিসিপি বা ন্যূনতম এসপির অনুমোদন বাধ্যতামূলক।
এরপর আইসিটি আইন ৬৬এ ধারায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হলেও সুনির্দিষ্ট তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্তের মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। এ জন্য অভিযুক্তের পক্ষে উকিল নিয়োগ করার সুপারিশও করা হয়।
এ ধরনের বিচার কাজে অভিযুক্তের সময়, সামাজিক পরিস্থিতি এবং কি ধরনের প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহার করে সে এ আপত্তিকর মন্তব্য করেছে তাও প্রমাণস্বরূপ শনাক্ত করতে হবে।
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে ভারতে হায়দ্রাবাদের একজন প্রতিবাদী নারী সামাজিক সাইটে তামিল নাড়ু প্রশাসকের বিরুদ্ধে মন্তব্য করলে তাকে গ্রেপ্তার করে রাজ্য পুলিশ।
এ নিয়ে ভারতজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরিস্থিতি আদালত অবধি গড়ায়। পরে হায়দ্রাবাদের জেলা আদালত মুক্তি দেয় ২১ বছর বয়সী প্রতিবাদী এ তরুণ নারীকে।
আলোচিত এ ঘটনা ভারতজুড়ে সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষ তৈরি করে। ফলে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার এ বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতকে একটি সঠিক আইন তৈরির জন্য বিশেষ বেঞ্চকে দায়িত্ব দেয়। এরপরই সরকারের গঠিত এ বিশেষ বেঞ্চের প্রণীত আইন জনমনে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরিয়ে আনে।
বিশ্বের সব দেশেই সামাজিক গণমাধ্যমে মন্তব্য করে অনৈতিক রোষানলে পড়ছেন অনেকেই। তাই ভারতের এ সিদ্ধান্তে অনলাইনে সামাজিক বোদ্ধারা বেশ আশ্বস্তই হয়েছেন।
তবে আপত্তিকর এবং সহিংসতা ছড়ায় এমন কোনো কাজে প্রত্যক্ষভাবে সমৃক্ত থাকলে তাদের অবশ্যই প্রচলিত আইনের আওতায় নিয়ে বিচারভুক্ত করা হবে।
ফলে ভারতে সরকার এবং সামাজিক যোগাযোগ লেখকদের মধ্যে আপাতত খুব বড় ধরনের বিরোধ তৈরির অবস্থা কিছুটা হলেও প্রশমিত হয়েছে। এ ধরনের উদ্যোগ অন্য সব দেশের জন্যও অনুকরণযোগ্য হতে পারে। এমনটাই জানালেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকেরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৯ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৩
সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর