শর্ট সার্কিটের কারণে আগুন লেগে শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনা এখন যেন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েকদিন পরপরই এসব ঘটনার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্মুখীন হই আমরা।
এসব কারণে শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় নিরাপত্তার বিষয়টি প্রতিটি মহলের মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। মোটামুটি সবার মনে একই প্রশ্ন কাজ করছে, কেন এবং কিভাবে একই ঘটনার বার বার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। একটু প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে বিষয়গুলো বিবেচনা করলেই সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যায়।
সাধারণত যখন কোনো দালান তৈরি করা হয় তখন এর সঙ্গে সম্পূর্ণ দালানের ইলেকট্রিক্যাল ডিজাইনিংও সংযুক্ত থাকে। তাতে যে বিষয়গুলো লক্ষ রাখতে হয় সেগুলো হল- দালানের লোডের ওপর ভিত্তি করে নিজস্ব সাব স্টেশন স্থাপন, প্রতিটি ফ্লোর বা ফ্ল্যাটে কি পরিমান লোড থাকবে তা হিসেবে রাখা, কোন ধরনের তার বা কেবল ব্যবহার করা হবে তা দেখা, ইলেকট্রিক্যাল ওয়্যারিং (ড্রাফটিং) এর ডিজাইন কেমন হবে সেগুলো দেখা, ট্রান্সফরমার, পি.এফ.আই., সুইচ গিয়ার, বাস বার, মিটার, জেনারেটর, ব্রেকার, সুইচ, ওয়্যার ইত্যাদি ইলেকট্রিক্যাল ইকুইপমেন্টের রেটিং কেমন হবে তা দেখা, এইচ.ভি.এ.সি. সিস্টেম, ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম, স্মোক ডিটেকশান সিস্টেম ইত্যাদি যথাযথ ভাবে রাখা এবং ইমারজেন্সি এক্সিটওয়ে পর্যাপ্ত প্রসস্ত রাখা।
কিন্তু অবাক করা হলেও সত্য যে, খুব কম প্রতিষ্ঠানই আছে যারা উপযুক্ত বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। অথচ এই শর্ট সার্কিট শুধু কতগুলো মানুষের জীবন নাশের কারণই নয়, এর সঙ্গে কোটি কোটি টাকার সম্পদও ধ্বংস হচ্ছে। পরিবার হারাচ্ছে তার প্রিয় মানুষটিকে, আর মালিক হারাচ্ছে তার কোটি টাকার সম্পদ। কিন্তু এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার নিরাময় সম্ভব একটু সচেতন হলেই।
ইলেক্ট্রনের গতিবেগ ও আলোর গতিবেগ সমান। সেকেন্ডে প্রায় ৩ লাখ মাইল। আর শর্ট সার্কিটের ফলে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে মাত্র ৮০ মি.লি. সেকেন্ডে। তবে শর্ট সার্কিটের ফলে আগুন ধরা অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ফলাফল ছাড়া আর কিছুই নয়।
এমন একটা সময় ছিলো যখন শর্ট সার্কিট হলেই ব্রেকারে আগুন ধরে যেত। এখন যুগ বদলে গেছে। উন্নত মানের ব্রেকার এবং ওয়্যার আগুন ধরা থেকে আমাদের রক্ষা করে। তাই প্রতিটি ভবনে সঠিক পদ্ধতিতে এবং সঠিক মানের উন্নত ব্রেকার এবং ওয়্যার বাঁচাতে পারে অনেকগুলো মূল্যবান জীবন এবং সম্পদ। শর্ট সার্কিট হলেও আগুন সৃষ্টি হওয়ার আগেই ব্রেকার ট্রিপ করে দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
পরিতাপের বিষয় যে, অধিকাংশ গার্মেন্টস মালিক খরচ কমাবার আশায় নিম্নমানের ইলেকট্রিক্যাল ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করেন। অথচ সামান্য একটা ভুল কেড়ে নিচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষের জীবন আর মালিকের মূল্যবান সম্পদ। তাই বিজিএমইএ’র এখনই এ বিষয়ে সচেতন হওয়াটা খুবই জরূরি।
দালান পরীক্ষার পাশাপাশি যেসব দালানের ইলেক্ট্রিক্যাল ডিজাইন নেই অথবা নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে অথবা যথাযথ মান বজায় রাখছে না তাদের একটি নির্দিষ্ট আলটিমেটামের মধ্যে তা ঠিক করবার জরুরি তাগিদ দেওয়া। এতে শ্রমিকরাও যেমন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে না ঠিক তেমনি আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে শ্রমিক নিহতের ঘটনায় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণর কবলে পড়তে হবে না বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পকে।
লেখক: এ. বি. এম. মনসুর আলী খান
সিস্টেম সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার (ডাটা সেন্টার অ্যান্ড পাওয়ার সিস্টেম)
<sajeeb.monsur@gmail.com>
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৩
সম্পাদনা: মীর সানজিদা আলম, নিউজরুম এডিটর/জেডএম