ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

‘ডিসিসি কোথায়?’ প্রশ্ন নগরবাসীর

নাজমুল হাসান, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৪ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৩
‘ডিসিসি কোথায়?’ প্রশ্ন নগরবাসীর

ঢাকা: নগরপিতাবিহীন ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের (ডিসিসি) নাগরিকসেবা ভেঙে পড়েছে। রাস্তাঘাট মেরামত, ড্রেন পরিষ্কার, আবর্জনা অপসারণ, পরিচ্ছন্নতা, মশক নিয়ন্ত্রণের মতো নিয়মিত  কাজও চলছে না ঠিকভাবে।

উন্নয়ন প্রকল্পগুলোও মুখ থুবড়ে পড়েছে। নগরবাসী বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হলেও অভিযোগ জানানোর মতো কাউকেই পাওয়া যাচ্ছে না।

এ অবস্থায় আরো কত বছর যে কাটাতে হবে, তাও কেউই জানেন না।

সরকারের পক্ষ থেকেও নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে নেওয়া হচ্ছে না কোনো আন্তরিক পদক্ষেপ। মাত্র কয়েক দিন আগে ‘নির্বাচন অনুষ্ঠানে আর কোনো বাধা নেই’ বলে হাইকোর্ট একটি রায় দিলেও তাতে নির্বাচন কমিশনের খানিকটা সাড়া পাওয়া গেলেও এখন আবার তারা বলছে- ‘এই মুহূর্তে ডিসিসি নির্বাচন নয়’।

নির্বাচন কমিশনের এমন সিদ্ধান্ত সরকারের চাটুকারিতা ছাড়া আর কিছুই নয়।

সর্বশেষ, ২০০২ সালের এপ্রিলে ডিসিসির নির্বাচন হয়েছিল। পরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মেয়াদ ২০০৭ সালে উত্তীর্ণ হলেও এখন পর্যন্ত আর কোনো নির্বাচন হয়নি।

আবারো পিছু হটেছে নির্বাচন কমিশন। কমিশন সরকারের অনাগ্রহের কারণে ডিসিসি নির্বাচন থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছে। নির্বাচন কমিশনসহ সরকার নগরবাসীর সঙ্গে খেলা খেলছে নির্বাচন ‘দেই’, ‘দেই’ করে।

মানুষের মনে আশা জাগিয়ে আবার নির্বাচন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। সরকার নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয়েই মূলত গড়িমসি করছে। এর কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে সাধারণ জনগণ। দীর্ঘদিন থেকে রাজধানীবাসী বঞ্চিত হচ্ছে নাগরিক সেবা থেকে।

এ সমস্যা দূর করতে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে জনপ্রতিনিধির হাতে দায়িত্ব বুঝে দেওয়াটা কমিশনের দায়িত্ব। কিন্তু, কমিশন সেটা করছে না।

নগরবাসীর হাজারো দুর্ভোগ, নাগরিক দুর্ভোগ নিয়ে মাথা ঘামানোর লোক ওয়ার্ড কাউন্সিলররাও নেই। ফলে, রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়া, সুয়ারেজ লাইন উপচেপড়া, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, মশা, আবর্জনার সমস্যাসহ স্থানীয় বিষয়গুলো দেখার কেউ নেই। তদুপরি, সিটির বিভক্তিজনিত জটিলতার কারণে কার কাছে গিয়ে প্রতিকার পাওয়া যাবে, সেটাও বুঝে উঠতে পারছেন না নগরবাসী। অনেক ক্ষেত্রে ডিসিসির দুই অংশে কিংবা এক জোন থেকে অন্য জোনে দৌড়াদৌড়িতেই গলদঘর্ম হতে হচ্ছে, সেবাপ্রার্থীদের। কোনোভাবে সঠিক জায়গায় পৌঁছাতে পারলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গা-ছাড়াভাব এবং ফ্রি স্টাইলে দায়িত্ব পালনের কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।

কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভালো জায়গায় পোস্টিং, বিশেষ করে উত্তর ডিসিসিতে বদলির তদবিরেই ব্যস্ত। আর এ নিয়ে চলছে বড় অঙ্কের টাকার লেনদেন। অনেক কর্মকর্তা আবার ডিসিসির  নির্বাচন হলে কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে, এ সব চিন্তা করে অফিসে আসা-যাওয়া এবং না পারলে নয়, এমন ফাইলে স্বাক্ষর করে সময় পার করছেন।

আবার অনেকে শুধু হাজিরা খাতায় হাজিরা দিয়ে সময় পার করছেন। জবাবদিহিতা না থাকায় অন্ধকার নগরীতে পরিণত হয়েছে গোটা রাজধানী।

এ দিকে, নির্বাচনকালের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসকদের দফায়  দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ডিসিসিতে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করছে। জনগণের প্রতি জবাবদিহিতা না থাকায় ইচ্ছেমতো লুটেপুটে খাচ্ছেন প্রশাসক ও কর্মচারীরা। ফলে, নির্বাচন শুধু অনিশ্চয়তার মধ্যেই পড়েনি, কবে হবে তা কেউই জানেন না। ফলে, নগরপিতাহীন দুই সিটির তদারকির অভাব এবং ডিসিসির দুই অংশের সার্বিক কার্যক্রম একেবারেই স্থবির হয়ে পড়েছে।

নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় জবাবদিহিতার অভাবে ডিসিসির এই অবস্থা। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, জাতীয় পর্যায়ে যেমন অনির্বাচিতদের একদিনের জন্যও ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নেই, তেমনি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের প্রশাসক নিয়োগও সংবিধানের লঙ্ঘন।

সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভণ্ডামি দেখে মনে প্রশ্ন জাগে- দেশে কি গণতন্ত্র আছে?

যদি থাকে, তাহলে কেন ডিসিসি নির্বাচন হচ্ছে না?

ডিসিসি নির্বাচন না দিয়ে সরকার নগরবাসীর গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করছে। এমন অবস্থায় দল-মত-নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নগরবাসীসহ দেশবাসীর গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের লক্ষে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে।

লেখক- আহ্বায়ক, নাগরিক ছাত্র ঐক্য

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৬ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৩
সম্পাদনা: আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।