ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

জলবায়ু উদ্বাস্তু: একটি বিপর্যয়ের নাম

মো: আব্দুল হাই, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৯ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০১৩
জলবায়ু উদ্বাস্তু: একটি বিপর্যয়ের নাম

জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী একটি আলোচিত বিষয়। জলবায়ুর এই পরিবর্তন একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া হলেও এতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে মানুষ এবং মানুষের কর্মকাণ্ড।

বিশ্বজুড়ে জৈব জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং বন ধ্বংসজনিত মনুষ্য কর্মকাণ্ডের ফলে বায়ুতে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে যা বায়ুমণ্ডলকে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি উত্তপ্ত করছে। এর ফলে হিমবাহ ও পাহাড় চূড়ার বরফ দ্রুত গলছে। এটি বন্যার সৃষ্টি করছে এবং সমুদ্রতলের উচ্চতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই বাড়তি উত্তাপ বিশ্বের কোন কোন অঞ্চলে অনাবৃষ্টি জনিত শুষ্কতার ক্ষেত্রে যেমন ভূমিকা রাখছে; তেমনি মরুকরণ প্রবণতা বৃদ্ধির মাধ্যমে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছে। আবার সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধি উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলগুলো তলিয়ে দেবার সম্ভাবনা যেমন সৃষ্টি করছে; তেমনি অনাবৃষ্টিজনিত শুষ্কতা খাদ্য উৎপাদনের প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে। এই সবগুলো নেতিবাচক কারণের সম্মিলিত প্রভাব ঐ সকল এলাকায় বসবাসকারী মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলছে। ক্ষেত্রবিশেষে ঐ সব এলাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে এবং জনসাধারণ ঐ সকল এলাকা পরিত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে। এভাবেই সৃষ্টি হচ্ছে জলবায়ু উদ্বাস্তু।

জলবায়ু উদ্বাস্তুর ধারণা:
জলবায়ু উদ্বাস্তু (Environmental Refugee/Climate Refugee) শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন লেস্টার ব্রাউন নামের একজন পরিবেশ বিজ্ঞানী (১৯৭৬)। জলবায়ু উদ্বাস্তু হচ্ছে বহিরাগত অভিবাসীদের একটি বড় গ্রুপ যারা নানাবিধ প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে হঠাৎ করে নিজেদের চেনা ও অপেক্ষাকৃত নিরাপদ পরিবেশ থেকে স্বল্প অথবা দীর্ঘ সময়ের জন্য অথবা স্থায়ীভাবে অন্যত্র গমন করতে বাধ্য হয় (উইকিপিডিয়া)। যে সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই প্রক্রিয়ায় অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে থাকে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধিজনিত সমস্যা ও অনাবৃষ্টিজনিত শুষ্কতা বা খরা। এছাড়াও বন্যা, সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস, সুনামি, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, ভূমিকম্প, দাবানল এবং স্থানীয় আবহাওয়ার পরিবর্তন যেমন মৌসুমী বায়ুর আগমন-নির্গমনজনিত পরিবর্তন ও এই প্রক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
 
জলবায়ু উদ্বাস্তুর ধরন:
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মতে তিন ধরনের জলবায়ু উদ্বাস্তু দেখা যেতে পারে:
•    জরুরি পরিবেশগত কারণে অভিবাসী: আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এরা অস্থায়ীভাবে অভিবাসন করে থাকে। যেমন: হ্যারিকেন, সুনামি, ভূমিকম্প প্রভৃতি।
•     পরিবেশগত কারণে বাধ্য হওয়া অভিবাসী: পরিবেশের উপাদানগুলির মান ক্রমশ নিম্নগামী হওয়ার কারণে এরা অভিবাসী হয়ে থাকে। যেমন: বন ধ্বংস, উপকূলীয় জনপদের অবনমন প্রভৃতি।
•    পরিবেশগত কারণে উদ্বুদ্ধ হওয়া অভিবাসী: সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক বিপর্যয় এড়াতে এরা অভিবাসী হয়ে থাকে। যেমন: মরুকরণের কারণে ফসলের উৎপাদনশীলতা কমে গেলে।

জলবায়ু উদ্বাস্তু সংক্রান্ত প্রক্ষেপণ:
জলবায়ু উদ্বাস্তু বিষয়ক বিশ্বের প্রথম গবেষক জডি জ্যাকসন (১৯৮৮) এর মতে সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বিশ্বে ইতোমধ্যে ১০ মিলিয়ন উদ্বাস্তুর সৃষ্টি হয়েছে। তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন যে, রাজনৈতিক উদ্বাস্তুর চেয়ে জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা ছয় গুণ বেশি হতে পারে। ইউনেপ (UNEP) এর নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফা টলবা (১৯৮৯) এর মতে রাষ্ট্রসমূহ টেকসই উন্নয়নের প্রতি মনোযোগী না হলে আগামী দিনগুলিতে বিশ্বে ৫০ মিলিয়ন জলবায়ু উদ্বাস্তুর সৃষ্টি হতে পারে। বৃটিশ পরিবেশ বিজ্ঞানী নরম্যান মেয়ার (১৯৯৭) এর মতে মধ্য ১৯৯০ সালে বিশ্বে জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা ছিল ২৫ মিলিয়ন। ২০১০ সালে এই সংখ্যা হবে ৫০ মিলিয়ন এবং ২০৫০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা ২০০ মিলিয়নে দাঁড়াতে পারে। নরম্যান মেয়ারের মতে ২০৫০ সাল নাগাদ বাস্তুচ্যুত মানুষের এই সংখ্যা চীনে ৩০ মিলিয়ন, ভারতে ৩০ মিলিয়ন, বাংলাদেশে ১৫ মিলিয়ন, মিশরে ১৪ মিলিয়ন, অন্যান্য ব-দ্বীপ ও উপকূলীয় অঞ্চলে ১০ মিলিয়ন, দ্বীপ রাষ্ট্রগুলিতে ১ মিলিয়ন এবং কৃষিগতভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ৫০ মিলিয়ন হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের এই সতর্ক বার্তা যে নিছক অনুমান নয় তার প্রমাণ পাওয়া যায় জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশনারের একটি পরিসংখ্যান থেকে। UNHCR এর মতে ২০০৯ সালে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিশ্বে ৩৬ মিলিয়ন মানুষ স্থানচ্যুত হয়েছিল। ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেলের হিসাব অনুযায়ী ২০১০ থেকে ২০১১ সালে শুধুমাত্র এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেই বিরূপ পরিবেশের কারণে ৪২ মিলিয়ন মানুষ স্থানচ্যুত হয়েছে।

সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধি ও উদ্বাস্তু সৃষ্টি:
আন্তঃ সরকারি প্যানেল (IPCC) এর হিসাব অনুযায়ী ১৯৯০ থেকে ২১০০ সালের মধ্যে বিশ্বে সমুদ্রতলের উচ্চতা ০.১৮ থেকে ০.৬ মিটার (৭″ থেকে ২″) বৃদ্ধি পাবে। বিশ্বের উপকূলীয় নিম্নাঞ্চল গুলিতে যা ক্রমশ দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা সমুদ্রতলের ৫ মিটার (১৬.৫ ফুট) উচ্চতার মধ্যে বসবাস করে। সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে ১৯৯৫ সালে ভোলা জেলার প্রায় অর্ধেক এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার ফলে ৫ লক্ষ মানুষ গৃহত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে সৃষ্ট বন্যা এবং সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের মোট ভূখণ্ডের ১৭ ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে। এই বিরাট সংখ্যক এলাকা হারানোর অভিঘাতে প্রায় ২০ মিলিয়ন জলবায়ু উদ্বাস্তুর সৃষ্টি হবে বাংলাদেশে।

বাংলাদেশের উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলের মতো বিশ্বের আরো অনেক এলাকা যেমন সমগ্র মালদ্বীপ, মোজাম্বিক, মাদাগাস্কার, মেক্সিকো ও ভেনিজুয়েলার কিছু অংশ এবং ভেনিস, নিউইয়র্ক, ম্যানহাটন, লন্ডন, সাংহাই, হামবুর্গ, ব্যাংকক, জাকার্তা, মুম্বাই, ম্যানিলা, বুয়েন্স এইরেস প্রভৃতি শহর সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধিজনিত কারণে তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ফলে আমরা ধরে নিতেই পারি এসব এলাকা থেকে আগামী দিনগুলোতে বিশ্বে জলবায়ু উদ্বাস্তুর ঢল নামবে।

শুষ্কতা জনিত কারণে উদ্বাস্তু সৃষ্টি:
আগামী বছর গুলিতে বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত শুষ্কতা ও উদ্বাস্তু সৃষ্টিতে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করবে বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন যে, চিনের গোবি মরুভূমি প্রতি বছর ৩৬০০ বর্গকিলোমিটা (১৩৯০ ব.মি.) সম্প্রসারণ করছে। ফলে এই এলাকার কৃষক এবং ব্যবসায়ীরা অপেক্ষাকৃত জনাকীর্ণ শহরগুলোতে অভিবাসী হতে বাধ্য হচ্ছে। ফলস্বরূপ ঐ সব এলাকার পরিবেশ প্রতিবেশের উপরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। একইভাবে মরোক্ক, তিউনিসিয়া ও লিবিয়াতে প্রতি বছর ১০০০ ব.কি. (৩৮৬ ব.মি.) চাষযোগ্য জমি মরুভূমিতে হারিয়ে যাচ্ছে। শুষ্কতা ও মরুকরণ জনিত এই সমস্যা সবচেয়ে প্রকট উত্তর পূর্ব আফ্রিকার সোমালিয়া, ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়াতে। এসব দেশ থেকে জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচেছ। ইথিওপিয়া ও সোমালিয়া থেকে প্রায় ৯০,০০০ হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তু বর্তমানে কেনিয়ার উদ্বাস্তু শিবির গুলোতে অবস্থান করছে।

জলবায়ু উদ্বাস্তু সংক্রান্ত আইন ও উদ্বাস্তুদের মর্যাদা:
জাতিসংঘ উদ্বাস্তু বিষয়ক আইনে (১৯৫১) উদ্বাস্তুর সংজ্ঞা (আর্টিকেল ১-এ) খুব সংকীর্ণ অর্থে প্রদান করা হয়েছে। এখানে ধর্ম, বর্ণ, জাতিগত সংঘাত, কোন নির্দিষ্ট সামাজিক গ্রুপের সদস্য অথবা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে কোন ব্যক্তি ও ব্যক্তিবর্গ নিজস্ব আবাস বা দেশ পরিত্যাগ করতে বাধ্য হলে তাদেরকে উদ্বাস্তু বলা হয়েছে। ১৯৬৭ সালের কনভেনশনে এই সংজ্ঞা পরিমার্জিত করে যুদ্ধ কিংবা অন্যান্য সহিংসতার কারণে পলায়মান বা বাস্তুচ্যুত মানবগোষ্ঠীকে  উদ্বাস্তুর স্বীকৃতি দিলেও আজ পর্যন্ত বৈরী প্রাকৃতিক পরিবেশ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অভিবাসী জনসাধারণকে উদ্বাস্তুর মর্যাদা প্রদান করা হয়নি এবং এ সম্পর্কিত কোন আইনও প্রণয়ন করা হয়নি।

যেহেতু জলবায়ু উদ্বাস্তুরা আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা সুরক্ষিত নয় তাই রাজনৈতিক বা অন্যান্য জাতিগত দ্বন্ধে পলায়মান উদ্বাস্তুদের থেকে অধিকতর রাজনৈতিক ঝুঁকি মোকাবেলা করতে হয় পরিবেশগত শরনার্থীদের। শরনার্থী শিবির থেকে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের যে কোন সময় তাদের বিধ্বস্ত বাড়িঘর বা জনপদে ফেরত পাঠানোর আশঙ্কা থাকে।

অধিকাংশ জলবায়ু উদ্বাস্তু আন্ত: অভিবাসী (Internal migrant)|। দেশের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে জনসাধারণের স্থানান্তরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে এটাকে দেখা হয়। যদিও জলবায়ু উদ্বাস্তুরা গ্রাম এবং উপকূলীয় জনপদ থেকে প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে শহরে আসতে বাধ্য হয়। নতুন জনপদে এই শরনার্থীদের নানান ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। নতুন জীবিকার সন্ধান করতে হয়। অন্যের সাহায্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে হয়। তাদেরকে নতুন নতুন আইন কানুন, ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে চলতে হয়; শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সর্বোপরি অভিবাসী উদ্বাস্তুদের ভাষা, রুচি ও জীবনযাপনের পার্থক্য স্থানীয়দের সঙ্গে একটি সংঘাতময় পরিবেশের সৃষ্টি করে।

জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাই কমিশনার (UNHCR) এন্টনিও গুটার সতর্ক করে দিয়েছেন যে, অভিবাসীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে বিশ্বের জাতিসমূহের মধ্যে সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে বিশেষত খাদ্য, পানি ও গোচারণ ভূমির ব্যবহারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পেতে পারে। আর এই প্রতিযোগিতা থেকে সহিংসতার সূত্রপাত হতে পারে।

জলবায়ু উদ্বাস্তু সংক্রান্ত বাংলাদেশের বাস্তবতা:
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট উদ্বাস্তুর সংখ্যা কত এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট তথ্য-উপাত্ত বাংলাদেশে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন অন্বেষণের (২০১২) মতে প্রতিটি বড় বন্যায় গড়ে ২৫ লক্ষ লোক উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাম্প্রতিককালে ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতা ও তীব্রতা অনেকগুন বেড়ে গেছে, যার অন্যতম প্রধান প্রতিক্রিয়া হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উদ্বাস্তুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। শুধু গত পাঁচ বছরে ঘূর্ণিঝড় সিডরে ৬ লাখ ৫০ হাজার, ঘূর্ণিঝড় বিজলিতে প্রায় ২০ হাজার এবং ঘূর্ণিঝড় আইলার কারণে ৮ লাখ ৪২ হাজার লোক সাময়িক বা স্থায়ীভাবে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। উন্নয়ন অন্বেষণের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে জলবায়ু উদ্বাস্তুর এই সংখ্যা ২০২০ সাল নাগাদ ২ কোটি ২৩ লাখ, ২০৩০ সালে ৪ কোটি ৮৩ লাখ এবং ২০৪০ সালে তা ৯ কোটি ৫৭ লাখে দাঁড়াতে পারে।

জলবায়ু উদ্বাস্তু প্রতিরোধে আমাদের করণীয়:
জলবায়ু উদ্বাস্তু সৃষ্টির প্রধান কারণ যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তন, তাই জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা কমানোর জন্য রাষ্ট্রসমূহকে মনোযোগী হতে হবে। এক্ষেত্রে কিয়োটো প্রটোকলের মতো আইনি বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার অন্যতম প্রধান উপায় অ্যাডাপ্টেশন বা পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া। এক্ষেত্রে যথাযথ কৌশল উদ্ভাবন করতে হবে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও প্রস্তুতিগত দিক থেকে দুর্বল রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে শিল্পোন্নত দেশগুলোর কর্মকাণ্ড যেহেতু অধিকতর দায়ী তাই বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর স্থানান্তরের প্রশ্নটি আন্তর্জাতিক ভাবে উন্মুক্ত করার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত বাস্তুহারা মানুষ এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বাস্তু হিসাবে স্বীকৃতি পায়নি। তাই জলবায়ু উদ্বাস্তুদের সুরক্ষার জন্য আইন প্রণয়ন করতে হবে, সর্বোপরি টেকসই উন্নয়নের ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই উদ্বাস্তু কবলিত ভবিষ্যতের সংঘাতময় বিশ্ব থেকে আমরা পরিত্রাণের পথ খুঁজে পাবো।

লেখক: মো: আব্দুল হাই, সহযোগী অধ্যাপক, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, সরকারি এম এম কলেজ, যশোর।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২২ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০১৩
সম্পাদনা: এম জে ফেরদৌস, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।