ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

চুদুরবুদুর শব্দের ইতিকথা

বখতেয়ার মুন্না, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৬ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৩
চুদুরবুদুর শব্দের ইতিকথা

জাতীয় সংসদের ‘চুদুরবুদুর’ শব্দটি নিয়ে এখন কতো কথার মালা! এতদিন পর শব্দটা নিয়ে কথার ফুলঝুরি দেখে মনটা আনচান করছিল ‘চুদুরবুদুর’ এর ইতিকথা প্রকাশের জন্য। এ শব্দটি ফেনী সরকারি কলেজের একটি শ্লোগান থেকে ২৫ বছর পর কিভাবে জাতীয় সংসদে জায়গা করে নিলো, সেটাই এখন সবাইকে জানানোর বিষয়।



১৯৮৮ সালের কথা। আমি তখন ফেনী সরকারি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্র। কলেজটি তখন ছিল ছাত্রলীগের একক নিয়ন্ত্রণে। সংগঠনটির রাজনীতির সঙ্গে আমারও নিবিড় সম্পৃক্ততা ছিল। সেই বছর নবীনবরণের জন্য ফান্ড ছিল ৮০ হাজার টাকা। তখনকার সময়ে নবীণবরণ অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

তখন কলেজে কোনো ছাত্র সংসদ ছিল না। যে কারণে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সমন্বয়ে নবীনবরণ অনুষ্ঠান উদযাপন পরিষদ গঠিত হতো। পরিষদের আহবায়ক ছিলেন তৎকালীন কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান রফিকুল ইসলাম। ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে আমিও ছিলাম পরিষদের সদস্য। পরিষদের দফায় দফায় বৈঠকে অনুষ্ঠানে  শিক্ষার্থীদের পছন্দের অবসকিউর ব্যান্ড আনার সিদ্ধান্ত হয়। সেজন্য টাকা লাগবে ৫০ হাজার। বাকি টাকাটা অনুষ্ঠানের খরচ দিয়ে চালানো হবে। এমনটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।

কিন্তু হঠাৎ ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল হাজারী ফরমান জারি করলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের সিদ্ধান্ত বাদ। অবসকিউর নয়, স্থানীয় শিল্পীরাই অনুষ্ঠান করবেন।

এ ফরমানের পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল টাকা আত্মসাৎ। আমি সেই ফরমান মেনে নিতে পারিনি। আমি আমার বন্ধু সেন্টু, রনি, শাহজাহান, নিধিরসহ বেশ কিছু শিক্ষার্থী নিজস্ব গোপন সভা করে আন্দোলনে নেমে পড়ি। কলেজ আঙ্গিনায় ফরমানের বিরূদ্ধে দফায় দফায় মিছিল করতে থাকি। শিক্ষার্থীদের সমর্থন ছিল বলেই মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়িত হতে থাকে।

মিছিলে আমাদের মুখে একটাই আঞ্চলিক স্লোগান ছিল, “হেনি কলেজের টেঁয়া লই চুদুরবুদুর চোইলতো ন”, চলতি ভাষায় যার অর্থ -ফেনী কলেজের টাকা নিয়ে ছলচাতুরি চলবে না।

সেদিন পরিস্থিতির কারণে ও এ শ্লোগানের জোরেই ফরমান প্রত্যাখ্যান করে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছিলাম। অবশ্য দেশে না থাকায় অবসকিউর ব্যান্ডের পরিবর্তে একই টাকায় ফিডব্যাককে আনতে হয়েছিল।

এ স্লোগান তখন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকার শিরোনাম হয়েছিল। মূলত সে কারণেই এটি এখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রসাত্মক শ্লোগান হিসেবে প্রচলিত আছে।

ক’দিন থেকে দেখছি জাতীয় সংসদও ‘চুদুরবুদুর’ শব্দটি নিয়ে বেশ তপ্ত-উত্তপ্ত। শব্দটি সংসদে যাওয়ার সূত্র খুঁজতে গিয়েই আমি হতবাক। কারণ, যিনি সংসদে শব্দটি উপস্থাপন করেছেন, তিনি হচ্ছেন সংরক্ষিত আসনের বিএনপির সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু। এই রানু তৎকালীন সময়ে ফেনী সরকারি কলেজে আমার সহপাঠিনী। রানুই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে বক্তব্য দিতে গিয়ে ‘চুদুরবুদুর’ আঞ্চলিক শব্দটি ব্যবহার করেন। এ শব্দটা নিয়েই সরকারি দলের যত আপত্তি যত কথা। এখানেই শেষ নয়, রানু সংসদে শব্দটি ব্যবহার করে শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের ভাষাবিদদেরও দৃষ্টি কেড়েছেন।

লেখক: ফেনী ব্যুরো ইনচার্জ, সময় টিভি, bakhtearmunna@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৩
সম্পাদনা: হাসান শাহরিয়ার হৃদয়, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।