ঢাকা: সিরাজগঞ্জের জয়সাগর মৎস্য খামারের সেই ঐতিহ্য আজ কোথায় ? পাঁচ বছর আগে ওখানে গিয়ে স্থানীয় বাজারে দেখেছিলাম, কত না চাষকৃত মাছ রুই, কাতলা, মৃগেল, পাংগাসের ছড়াছড়ি।
কিন্তু সম্প্রতি ওখানে গিয়ে শুনলাম, আগের মত বাজারে মাছ মেলে না ।
ভুলবো না কেন, গ্রামীণ মৎস্য ও পশুসম্পদ ফাউন্ডেশন ১৯৮৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত জয়সাগর খামারের দায়িত্বে থাকার সময়ে জয়সাগর মৎস্য খামারের মৎস্য উৎপাদনে বিপ্ল¬ব ঘটেছিল।
শুধু এলাকাবাসী নয়, কাছের ও দূরের বিভিন্ন জেলায় এখান থেকে মাছ পাঠানো হতো। আজ সেই অবস্থা নেই। একটিই কারণ ২০১১ সালে মৎস্য ও পশুসম্পদ ফাউন্ডেশানের লিজ চুক্তি না বাড়ানো।
এ কারণে ২০১১ সালের পর থেকে জয়সাগর মৎস্য খামার সরকারের মৎস্য অধিদপ্তরের নিকট চলে যাওয়ায় মাছের উৎপাদনে ধস নামতে শুরু করে। আর এক বৃদ্ধ জানালেন, হায়রে জয়সাগর । ৫ বছর আগেও ছিল মাছের ছড়াছড়ি। আজ নেই মাছ। এ দুঃখের কথা কারে জানাই।
জয়সাগর খামারের লিজ চুক্তি সরকার নবায়ন না করার ফলে মাছ চাষের সাথে সরাসরি জড়িত ৮ হাজার সদস্যের (পরিবারের) প্রায় ৫০ হাজার দরিদ্র মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ব্যাহত হওয়া ছাড়াও সদস্যগণ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন ২০১১ সাল থেকে।
স্থানীয় ভূমিহীন জনগোষ্ঠী প্রতি বছর মাছ উৎপাদনের শেয়ার বাবদ প্রায় ৬ থেকে ৭ কোটি টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আর এতে দারিদ্র বিমোচন বাধাগ্রস্থ, ভূমিহীন সদস্যদের খাদ্য নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়া ও বেকারত্ব বেড়ে গেছে। এদিকে সরকার প্রতি বছর লিজ মানি বাবদ বিরাট অংকের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
খামারের লিজ নবায়ন না হওয়ায় স্বার্থান্বেষী মহলই বেশী উপকৃত হয়েছে। পুকুরসমূহ ক্রমান্বয়ে আবার বেদখল হয়ে গেছে। অবৈধ জাল কাগজপত্র দিয়ে কেউ কেউ সরাসরি পুকুর দখল করে নিয়েছে।
ফলে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি সরকারী অনেক খাস পুকুর হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে। একই পুকুরের একাধিক মালিকানা দাবী করায় স্থানীয়ভাবে বিশৃংখলার সৃষ্টি হওয়া ছাড়াও আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।
প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে মৎস্য অধিদপ্তর বিশাল এ প্রকল্পটির ৭৮৩টি পুকুর ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানা গেছে। সরকারী হ্যাচারিতে মাছের পোনা উৎপাদন এবং পুকুরসমূহে মাছ উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে।
মাছ চাষ ও রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে অনেক পুকুরের পাড় ভেঙ্গে যাচ্ছে এবং আগাছা ও কচুরীপানায় ভরাট হয়ে গেছে। মাছ ও পোনা উৎপাদন না হওয়ায় এলাকায় মাছ ও পোনার সংকট দেখা দিয়েছে। স্থানীয়ভাবে যে মাছের বাজার/আড়ত গড়ে উঠেছিল সেগুলিও বন্ধ হয়ে গেছে।
গ্রামীণ মৎস্য ও পশুসম্পদ ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমের সাথে জড়িত মহিলাদের যে ক্ষমতায়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। জয়সাগর খামারের পুকুর উন্নয়নসহ যাবতীয় ব্যয় গ্রামীণ মৎস্য ও পশুসম্পদ ফাউন্ডেশান নির্বাহ করতো। এতে সরকারের কোন ব্যয় ছিল না।
সদস্যদের বাড়তি আয়ের জন্য ১৯৯৯ সাল থেকে গ্রামীণ মৎস্য ও পশুসম্পদ ফাউন্ডেশন মৎস্য চাষের পাশাপাশি পশুসম্পদ ঋণ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। বর্তমানে মাছের আয় থেকে বঞ্চিত হয়ে গরীব সদস্যগণ পশুসম্পদ কর্মসূচীকে আঁকড়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা করে যাচ্ছে। গ্রামীণ মৎস্য ও পশুসম্পদ ফাউন্ডেশন দেশের প্রাণিসম্পদ উন্নয়নেও ব্যাপক চেষ্টা করে যাচ্ছে।
এ অবস্থায় জয়সাগর মৎস্য খামারটি গ্রামীণ মৎস্য ও পশুসম্পদ ফাউন্ডেশনের নিকট পুনরায় ফিরিয়ে দেয়া জরুরী। বিষয়টি সংশি¬ষ্ট বিভাগ অবিলম্বে ভাবুন এবং সিরাজগঞ্জের জয়সাগর মৎস্য খামারের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনুন।
বাংলাদেশ সময় : ১৮৪৭ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৩
সম্পাদনা: সুকুমার সরকার, আউটপুট এডিটর