জর্জ বার্নার্ড শ বাতের ব্যথ্যায় ভুগছিলেন। আমাদের খালেদা জিয়ার মতো পায়ের বাত।
ডাক্তাররা বই পড়ে ক্ষেপলেন। ঘোষণা দিলেন তার চিকিৎসা করবেন না। বার্নার্ড শ`ও খুশি মনে মন্তব্য দিলেন- যাক, অনেক টাকা বেঁচে যাবে।
লেখালেখির করার এই একটা বিপদ। এতে প্রতিক্রিয়া হয়। বিড়ম্বনা হয়। আমাদের দেশের হুমায়ূন আহমেদও এই বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন। বিচারকদের সততা নিয়ে কথা বলায় বিচারকরা এজলাস ছেড়ে রাজপথে নেমেছিলেন। হুমায়ুন আজাদ পালিয়ে বেড়াতেন জঙ্গিদের ভয়ে। হুলিয়া লেখার অপরাধে নির্মলেন্দু গুণ ফেরারি হয়েছিলেন। কাঁদতে আসি নি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি লিখে মাহাবুবুল আলম পাকিস্তানি সামরিক শাসকদের চক্ষুশূল হয়েছেন। শুধু কবিতা লেখার অপরাধে কবি নজরুলকে জেলে যেতে হয়!
কবিতার ভাষা বেয়োনেটের চাইতে তীক্ষ্ণ ও ক্ষুরধার হয়।
গতকাল শুনলাম সাংবাদিকদের ভয়ে রীতিমতো পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কবি হেলাল হাফিজ। পালিয়ে না বলে এড়িয়ে চলছেন বলাই ভালো। সাংবাদিকরা তার মন্তব্যর জন্য হন্যে হয়ে পিছু ঘুরছেন। কবি হেলাল হাফিজের মুখেই ‘মন্তব্য প্রদান হইতে নিরাপদ দূরত্বে থাকা’র গল্প শুনলাম। সাংসদ শাম্মী আখতার সংসদে ‘চুতমারানি’ গালি দিয়ে কবিকে শেষ বয়সে দৌড়ের উপর রেখেছেন। মিসেস শাম্মীর যে বক্তব্যকে গালি বলে প্রচার হচ্ছে সেটি কবি হেলাল হাফিজের "যার যেখানে জায়গা" নামের একটি কবিতার অংশ বিশেষ।
১৯৮১ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে লেখা এই কবিতাটি মূলত: শ্রেণি সংগ্রামের কবিতা। বৈষম্যের শিকার, বঞ্চিত শ্রেণির ক্ষোভের কবিতা। গ্রামের শোষিত, বঞ্চিত কৃষক শ্রেণি তাদের দাবি আদায়ে একদিন শহর পানে ছুটবে- এমন একটি দৃশ্যকল্প দিয়ে কবিতাটি সাজানো। যখন তারা বুঝতে পারবে তাদের ঠকানো হচ্ছে তখনই এই বিস্ফোরণ ঘটবে। এমনই এক কৃষক শহর পানে এসে তার ক্ষোভ প্রকাশ করে এই গালি দিয়ে যায়:
"টিকিট ঘরের ছাদে বিকালে দাঁড়ায়া যখন যা খুশি যারা কন
কোনোদিন খোঁজ লইছেন গ্রামের লোকের সোজা মন
কী কী চায়, কতোখানি চায়
কতোদিন খায়, আর কয়বেলা না খায়া কাটায়।
রাইত অইলে অমুক ভবনে খুব আনাগোনা, খুব কানাকানি,
আমিও গ্রামের পোলা চুতমারানি গাইল দিতে জানি। "
কোনো বিশেষ সময় বা ঘটনাকে কেন্দ্র করে নয়, চিরন্তন সময় ধরে আবর্তিত হওয়া বঞ্চিত শ্রেণির ক্ষোভ এটা। একশ বছর আগে যেমন এই ক্ষোভ ছিল, একশ বছর পরেও এই ক্ষোভ থাকবে। এই অনুভূতি কালোত্তীর্ণ। গ্রামের এক যুবকের ক্ষোভ ঝাড়তে শব্দটি খুবই প্রয়োজন ছিল এই কবিতায়। গ্রামের একজন সাধারণ যুবক এভাবেই তার ক্ষোভ প্রকাশ করে।
সংসদে এর আগেও বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ বর্ণনায় অসংখ্য কবিতা আবৃত্ত হয়েছে, হয়। কিন্তু ক্ষোভ প্রকাশের জন্য এহেন তীর্যক কবিতা এর আগে কেউ শোনেনি সংসদে। ভদ্র সমাজের ভব্য কানে এই কবিতার শব্দ শ্রুতিকটু ঠেকেছে, হয়তো হৃদয়ে বিঁধেছেও। শাম্মীর কবিতা আবৃত্তি শ্রতিমধুর না হলেও ক্ষোভ প্রকাশের জন্য কবিতাটি মোক্ষম ছিল। বড়জোর অপ্রিয় এই শব্দটি এড়িয়ে যেতে পারতেন। তা সরকারি দলের জন্য শ্রুতিমধুর হতো বৈকি, কিন্ত ক্ষোভের প্রকাশ কি কম হতো?
-মনোয়ার রুবেল অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট।
monowarrubel@yahoo.com
বাংলাদেশ সময়: ২০৪১ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৩