ঢাকা: ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা রংপুর ও সিলেটে একযোগে পালিত হতে যাচ্ছে ‘পথশিশুদের আম উৎসব’। আগামী ২৯ জুন পাঁচ বিভাগের পথশিশুদের মুখে তুলে দেওয়া হবে মৌসুমী ফল আম।
২০১০ সালে ‘আমরা খাঁটি গরিব...’ নামে ফেসবুকের একটি গ্রুপ আম উৎসব করে ঢাকার পথশিশুদের নিয়ে। সুস্বাদু আম খাওয়ার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত এ সব ছিন্নমূল শিশুর হাতে আম দিয়ে তাদের চোখে যে উচ্ছ্বাস তারা দেখেছিল, তা থেকে প্রেরণা পেয়ে ২০১১ সালে আবারও আম উৎসব আয়োজন করে গ্রুপটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
২০১১ সালে আম উৎসবের পরিধি বেড়েছিল। পাকা আমের সুবাস ছড়িয়ে পড়েছিল ঢাকার বাতাস রাঙিয়ে চট্টগ্রামের বাতাসেও। একেকটি আম যেন শিশুদের কাছে ‘হঠাৎ পাওয়া ঈদের চাঁদ’-এর মতো হয়ে ওঠে। ১০ মাস বয়স থেকে ১০ বছর বয়েসী শিশুদের কেউই বাদ পড়েনি আম খাওয়ার আনন্দ থেকে। ২০১২ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রামের সঙ্গে উৎসবের মিছিলে যোগ দেয় খুলনা। খুলনার ‘মাসুস’ নামের একটি সংগঠনের ৬টি স্কুলের প্রায় এক হাজার একশ পথশিশুকে আম দিয়েছিল তারা।
এবারও আম উৎসব হবে। ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং খুলনার পাশাপাশি রংপুর ও সিলেট শহরেও আয়োজন করা হয়েছে ‘পথশিশুদের আম উৎসব’। সবার মনে একটাই প্রশ্ন, ফেসবুকের মাধ্যমে তারা আম দেবে কীভাবে! উত্তর খুবই সোজা। ‘আমরা খাঁটি গরিব...’ গ্রুপের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১২ হাজারের বেশি। যখন ঘোষণা দেওয়া হলো- পথশিশুদের আম খাওয়ানো হবে; তখনই এগিয়ে এলো অনেকে।
কেউ নিজেদের রিকশা ভাড়া, কেউ এক দিনের মোবাইল ফোনের বিলের টাকা, আবার কেউবা তার বিকেলের ডালপুরি খাওয়ার টাকা বাঁচিয়ে জমা করে দেয় ব্যাংক অ্যাকাউন্টে।
তাদের সাহায্যের আবেদন পৌঁছে যায় সবার কাছে। তিল তিল করে দেশের সব জায়গা থেকে অর্থ সাহায্য আসতে থাকে। ‘আমরা খাঁটি গরিব...’ গ্রুপের এবারের লক্ষ্য ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রংপুর ও সিলেট মিলিয়ে প্রায় সাত হাজার পাঁচশ পথশিশুকে আম খাওয়ানো।
উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকায় আম উৎসবের শুরু হবে গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে। এরপর পথশিশুদের জন্য আমভর্তি ট্রাকটি ছুটে যাবে মিরপুর মাজার রোড হয়ে মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট পার করে কমলাপুর, পল্টন, হাইকোর্ট, নিউমার্কেট, বিজয় সরণি, রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধ, মালীবাগ, খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী, পুরান ঢাকা ঘুরে শেষ হবে মিরপুর বেড়িবাঁধে।
এ সব এলাকায় রয়েছে পথশিশুদের একটি করে স্কুল। ঢাকায় আম খায়ানো হবে দুই হাজার দুইশ ৬০ জন শিশুকে।
চট্টগ্রামে চারুলতা বিদ্যাপীঠ থেকে শুরু করে বহদ্দারহাট, মুরাদপুর হয়ে ষোলশহর, টাইগার পাস, বটতলী শেষ করে রেললাইন পার হয়ে হালিশহর ও আশ্রয় মিলিয়ে ১০টি স্কুলের প্রায় এক হাজার একশ ৫০ জন পথশিশদের আম দেওয়া হবে।
খুলনার সোনাডাঙ্গা, রূপসার চর, বয়রা, রেলস্টেশন ও লবণচোরার দুটি পথশিশুদের স্কুলের মোট দুই হাজার সাতশ শিশু উদযাপন করবে এই আম উৎসব।
রংপুরের লালবাগ ও কারমাইকেলসহ আটটি স্থানের সাতশ ৫০ জন ও সিলেট নগরীতে দুটি এতিমখানাসহ মোট ৬টি পথশিশুদের স্কুলের পাঁচশ ৫০ জন শিশু এবার হাসবে আমের রঙে।
প্রতিবছরের জুন মাসের শেষ শনিবারে আয়োজন করা হচ্ছে এই আম উৎসবের। আমাদের আশা, একদিন গোটা বাংলাদেশে একযোগে হবে এই উৎসব, সেদিনটা হবে ‘আম দিবস’।
২৯ তারিখে চট্টগ্রামের আয়োজকদের বেশির ভাগেরই মাস্টার্স পরীক্ষা থাকার কারণে এবার চট্টগ্রামের আম উৎসব অনুষ্ঠিত হবে ৩০ জুন।
লেখক: আয়োজক ‘পথশিশুদের আম উৎসব’ যোগাযোগ: 01190 137 283
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৮ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৩
সম্পাদনা: এম জে ফেরদৌস, নিউজরুম এডিটর, আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর