পদ্মাসেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ সরকার ও দুদকের উপর অনেক অযাচিত, অন্যায় ও অযৌক্তিক চাপ সৃষ্টি করেছে। আমাকে অহেতুক ও যুক্তিহীনভাবে পদ্মাসেতুর অনিয়মে সম্পৃক্ত দেখাতে চেষ্টা করছে।
সত্যের দাঁড়িপাল্লায় আমি নির্দোষ
● আমি জীবনে কোনো অন্যায় ও অনিয়ম করিনি। এরপরও আজ বিভিন্ন ইস্যুতে অসত্য অভিযোগ ও অপসংবাদের এক অনাকাঙ্ক্ষিত বোঝা বহন করে চলেছি। এ বোঝা আরোপিত ও উদ্দেশ্যমূলক। এ বোঝা পরিকল্পিত। জেনেশুনে অন্যায়ভাবে, অসত্য বিষয় সামনে এনে মিডিয়ার মাধ্যমে, অপসাংবাদিকতার পথ অনুসরণ করে, নানাভাবে আমাকে দোষারোপ ও হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা চলছে। পদ্মাসেতুর পরামর্শক নিয়োগে ও সেতু নির্মাণ বিষয়ে আমাকে জড়িয়ে গত তিন বছর ধরে যে বিতর্ক হয়েছে- তাতে আমি আদৌ সম্পৃক্ত নই। আমার সম্পৃক্ত হওয়ার কোনো প্রশ্নও ওঠে না।
● আমি নিশ্চয়তা দিয়ে জানাতে চাই, স্বচ্ছতা, নিয়ম বজায় রেখে, জবাবদিহিতার পথ অনুসরণ করে পদ্মাসেতু নির্মাণের প্রস্তুতিমূলক কাজ করা হয়েছে এবং মূল সেতু নির্মাণ ও পরামর্শক নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এ কার্যক্রমে কোনো গোপনীয়তা ছিল না। কাউকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যও ছিল না, সুযোগও ছিল না। বিদ্যমান আইন-বিধি ভঙ্গ করা হয়নি। ঋণদাতা সংস্থার তদারকিতে পদ্মাসেতুর প্রস্তুতির কাজ তরান্বিত হয়েছে। পদ্মাসেতুর বাস্তবায়ন নির্ধারিত সময় ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৩-এর মধ্যে শেষ করার প্রত্যাশা নিয়ে কাজ অগ্রসর হয়েছে। যেখানে বঙ্গবন্ধু সেতুর প্রস্তুতি কাজ করতে ১০ বছর লেগেছে, সেখানে মাত্র দু’বছরে আমরা পদ্মাসেতুর প্রস্তুতির কাজ শেষ করেছি। এতে এটাই প্রমাণিত হয় যে, সেতুর কাজ যথানিয়মে, কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই অগ্রসর হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের কাছে কিছু লোকের অসত্য অভিযোগের ভিত্তিতে পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ বাধাগ্রস্ত হয়। এই সময় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা মন্ত্রী হিসেবে আমাকে জড়িয়ে অসত্য খবর প্রকাশ করে আমার মর্যাদা ক্ষুন্ন করে। সত্য জানার পরও একইভাবে নেতিবাচক সংবাদে আমাকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়। অথচ পদ্মাসেতুর কাজে সত্য ও ন্যায়ের দাঁড়িপাল্লায় আমি নির্দোষ।
মেগা প্রকল্প ও মন্ত্রীর দায়িত্ব
● সংশ্লিষ্ট সবাই জানেন, পদ্মাসেতুর ন্যায় মেগা প্রকল্পগুলো দাতাগোষ্ঠীর সহায়তায় কিভাবে বাস্তবায়িত হয়। এক্ষেত্রে কিভাবে অর্থায়ন হয়, কিভাবে প্রকল্প গ্রহণ ও অনুমোদন হয়। কিভাবে প্রকল্পের সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় বা মন্ত্রীর প্রকল্প বাস্তবায়নে তাগিদ থাকে, কিন্তু পিপিআর, বিধি ও আইন অনুযায়ী কোনো হস্তক্ষেপ করার সুযোগ থাকে না- এর কারণ, এক্ষেত্রে মন্ত্রী মূল্যায়ন কমিটির সদস্য নন, ক্রয়কারী কর্তৃপক্ষ নন এবং অনুমোদনকারীও নন। বাংলাদেশের পিপিআর ও সরকারী আইনে মন্ত্রীকে পদ্মাসেতুর দরদাতা নির্বাচন ও পরামর্শক নিয়োগের কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি, ক্ষমতা দেয়া হয়নি। প্রকল্প পরিচালক, মূল্যায়ন কমিটি এবং দাতাগোষ্ঠীর সমন্বয়ে গৃহীত সিদ্ধান্তই প্রকল্পের কাজকে এগিয়ে নিয়েছেন। মন্ত্রণালয় বা মন্ত্রী হিসেবে আমি শুধু আনুষ্ঠানিকতাটুকু পালন করেছি, ফেসিলিটেটরের ভুমিকা পালন করেছি। পদ্মাসেতুর পরামর্শক নিয়োগে যে পর্যন্ত কাজ হয়েছে- তাতে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট দেশের রাষ্ট্রদূতদের সাথে মতবিনিময়ের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া মন্ত্রী হিসেবে পরামর্শক নিয়োগের মূল্যায়নে আমার কোন সম্পৃক্ততা ছিল না। আর এই স্বাভাবিক ও সৌজন্যকে পুঁজি করে পরামর্শক নিয়োগে আমার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তোলা এবং দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের সাথে আমাকে জড়ানোর পরিকল্পিত নাটকও উদ্দেশ্যমূলক।
এখানে উল্লেখ্য, ক্রয়নীতি অনুযায়ী যে কোনো প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে চুক্তিমূল্য সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত এবং উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগের ক্ষেত্রে চুক্তিমূল্য সর্বোচ্চ ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত হলে, তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী অনুমোদন দিতে পারেন। চুক্তিমূল্য এর বেশি হলে তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রীর সুপারিশসহ দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির মূল্যায়ন রিপোর্ট সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত্র মন্ত্রিসভা কমিটিতে উপস্থাপন করতে হয়। পদ্মাসেতুর পরামর্শক নিয়োগের আনুমানিক চুক্তি মূল্য ৩’শ কোটি টাকার বেশি। তাই এ চুক্তি অনুমোদনের ক্ষেত্রে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে আমি কোনোভাবেই বিশ্বব্যাংকের দাবি অনুযায়ী চূড়ান্ত অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ নই। এক্ষেত্রে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিই চূড়ান্ত অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ। কাজেই “মন্ত্রী চূড়ান্ত অনুমোদনকারী”- এই ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে কথিত দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আমার জড়িত থাকার অভিযোগ কোনোক্রমেই সঠিক নয়, আইন সম্মত নয় এবং যুক্তিসঙ্গতও নয়।
উল্লেখ্য, সরকারী অনুমোদনের জন্য মন্ত্রী হিসেবে আমার কাছেও মূল্যায়ন কমিটির মূল্যায়ন মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রেরণের জন্য উপস্থাপন করা হয়নি।
পদ্মা সেতুর অভিযোগের মূল প্রেক্ষাপট
● প্রথমে বলা হয় যে- পদ্মাসেতুতে দুর্নীতি হয়েছে। বিশ্বব্যাংক পরবর্তী সময়ে বলে দুর্নীতি হয়নি, দুর্নীতির চেষ্টা হয়েছে। এরপর বলে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। একটু লক্ষ্য করবেন, একথাগুলো বিশ্বব্যাংক বলেছে তখন, যখন বিশ্বব্যাংক একটি চীনা কোম্পানিকে মূল সেতুর ঠিকাদারী পেতে মূল্যায়ন কমিটি দ্বারা যোগ্য করতে ব্যর্থ হয়। নানা অজুহাত, বিভিন্ন ব্যাখ্যা এবং ব্যাখ্যা চেয়েও যখন কোম্পানিটিকে মূল্যায়ন কমিটি দ্বারা যোগ্য করা যায়নি, যোগ্য করা সম্ভব হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি একটি প্রতারণার জালে ধরা পড়ার পরই প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের প্রতিযোগিতা থেকে ডরঃযফৎধি করে নেয়। এরপর মূল সেতুর টেন্ডার প্রক্রিয়ায় আমার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান সাঁকো’র বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে। অভিযোগ তদন্তে সাঁকো’র কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। পরবর্তী সময়ে মূল সেতু নির্মাণের পরামর্শক নিয়োগে অহেতুক দুর্নীতির আশংকার অভিযোগ এনে পুরো ঋণচুক্তি বিশ্বব্যাংক বাতিল করে দেয়। অথচ পরামর্শক নিয়োগে প্রতিটি পদক্ষেপ বিশ্বব্যাংকের সরাসরি তদারকি ও অনুমোদন সাপেক্ষে অগ্রসর হয়েছিল। পরামর্শক নির্বাচনে সর্বশেষ পর্যায়ও বিশ্বব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক এসএনসি-লাভালিন দ্বিতীয় থেকে প্রথম হয়।
বিশ্বব্যাংক প্যানেল রিপোর্ট: অসত্য ও অযৌক্তিক বিষয়গুলো
● সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক প্যানেল চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়েছে। অধিকাংশ জাতীয় পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এ সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এসব রিপোর্টে আমাকে নিয়ে নতুন করে সমালোচনা ও দোষারোপের চেষ্টাও বিদ্যমান। বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের রিপোর্টটি একটু মনোযোগ দিয়ে পড়লে দেখবেন, বিশ্বব্যাংক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের চূড়ান্ত রিপোর্টের মধ্যে কোনো নতুনত্ব নেই। যুক্তি, প্রমাণ, সততা, ইন্টিগ্রিটি এবং জুরিসপ্রুডেন্স নেই। বিশ্বব্যাংক এক্সটারনাল বিশেষজ্ঞ প্যানেলের এ রিপোর্ট আন্তর্জাতিক আইন, ব্যক্তির মৌলিক অধিকার ও একটি সার্বভৌম স্বাধীন দেশের প্রচলিত আইন ও বিধিবিধানের প্রতি অবজ্ঞার সামিল। এ রিপোর্ট আন্তর্জাতিক দাদাগিরির এক নগ্ন দৃষ্টান্ত বলে প্রতীয়মান। পরামর্শক নিয়োগে আমার কোনো সম্পৃক্ততা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়ে ঢাকা সফরের সময় বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সম্মানিত চেয়ারম্যান লুইস মোরেনো ওকাম্পো দুদক ও বাংলাদেশ সরকারের উপর আমাকে হয়রানিমূলকভাবে তাদের কথিত অভিযোগে অন্তর্ভুক্ত করার যে যুক্তিহীন প্রবল চাপ দিয়েছিলেন, বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের এ চূড়ান্ত রিপোর্ট তারই পুনরাবৃত্তি। রিপোর্টের একাংশে এফআইআর-এ আমাকে আসামি না করায় ‘’“দুদক-এর তদন্ত পরিপূর্ণ ও সঠিক হয়নি” বলা হয়। বিশ্বব্যাংক বিশেষজ্ঞদের প্যানেলের চাপিয়ে দেয়া এ মতামত অগ্রহণযোগ্য এবং যে কোনো যুক্তি, আইন ও বিচারে ভুল বক্তব্য। তালগাছটা আমার- এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া যে কোনো দেশের আইনে অগ্রহণযোগ্য ও আপত্তিকর।
এসএনসি-লাভালিনকে মন্ত্রী পরামর্শকের কাজ পেতে সুযোগ করে দিয়েছে- এটা সত্য নয়
● পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আমি মন্ত্রী হিসেবে এসএনসি-লাভালিনকে সুযোগ করে দিয়েছি এবং অনৈতিক সুযোগ দাবি করেছি- রিপোর্টের এ বক্তব্য সম্পূর্ণ অসত্য। স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা, সত্যতা ও যথার্থতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে এটি একটি ভুল সংকেত। আমরা সবাই জানি, পরামর্শক নিয়োগের মূল দায়িত্ব টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটির। মূল্যায়ন কমিটি ও বিশ্বব্যাংক সমন্বয়ের মাধ্যমে পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়ার সুপারিশ চূড়ান্ত করে। আর্থিক দরপত্র খোলার পর দেখা যায় যে, এসএনসি-লাভালিন দ্বিতীয় দরদাতা হয়। বিষয়টি সেতু বিভাগের পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাংককে অবহিত করা হলে বিশ্বব্যাংক দুইটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে মূল্যায়নের জন্য নির্দেশনা দেয়। বিশ্বব্যাংকের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করায় মূল্যায়নে এসএনসি-লাভালিন দ্বিতীয় থেকে প্রথম হয়। এমতাবস্থায়, এসএনসি-লাভালিনকে দ্বিতীয় থেকে প্রথম করতে কোন অনিয়ম বা ব্যত্যয় হয়ে থাকলে তা হয়েছে বিশ্বব্যাংকের উক্ত নির্দেশনার কারণে, মূল্যায়ন কমিটির তরফ থেকে। মূল্যায়নের কোনো পর্যায়েই আমি সম্পৃক্ত ছিলাম না। ফলে কোনো যুক্তিতেই আমাকে পরামর্শক নিয়োগের অনিয়মের সাথে জড়ানো যাবে না- এটা ভেবে দেখার জন্য সবাইকে আহবান জানাচ্ছি।
মন্ত্রী চূড়ান্ত অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ নয়
● বিশ্বব্যাংকের এক্সটারনাল বিশেষজ্ঞ প্যানেলের চূড়ান্ত রিপোর্ট অনুযায়ী মন্ত্রী হিসেবে আমি অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ-- এ ধারণ একেবারে সম্পূর্ণ ভুল, উদ্দেশ্যমূলক এবং পক্ষপাতমূলক। এ মন্তব্য অসত্য এবং পরামর্শক নিয়োগে আমাকে জড়ানোর একটি অশুভ হাতিয়ার। এ বিষয়টি ওকাম্পোর মত বিজ্ঞ আইনজ্ঞ বুঝবেন না বা বুঝতে পারেননি- এটা হতে পারে না। ওকাম্পোকে ভুল তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে, ভুল বোঝানো হয়েছে। পরামর্শক নিয়োগে মন্ত্রী হিসেবে আমি চূড়ান্ত ক্রয়কারী কর্তৃপক্ষ নই, চূড়ান্ত অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ নই। মন্ত্রী হিসেবে আমি মূল্যায়ন কমিটির সদস্যও নই। এক্ষেত্রে সরকারী ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি চূড়ান্ত অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ। পরামর্শক নিয়োগের বিষয়টি সরকারী অনুমোদনের জন্য সরকারী ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উপস্থাপনের লক্ষ্যে আমার পর্যায়ে মন্ত্রী থাকাকালীন উত্থাপিত হয়নি। তাহলে আমি মন্ত্রী হিসেবে এ নিয়োগের সুপারিশের সাথে জড়িত হলাম কেমন করে? বিশ্বব্যাংক বিশেষজ্ঞ প্যানেল মূল্যায়ন কমিটির মূল্যায়নে কোনো ত্রুটির কথা বলেনি। মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ সঠিক হয়নি বলে কোন মন্তব্যও করেনি। মূল্যায়ন কমিটির সদস্যদের উপর আমি মন্ত্রী হিসেবে প্রভাব বিস্তার করেছি- এ ধরনের কোন অভিযোগও বিশ্বব্যাংক বিশেষজ্ঞ প্যানেল উত্থাপন করেনি। মূল্যায়ন কমিটির কোন সদস্যও বলেননি যে, আমি তাদের কাছে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য তদবির করেছি। তাহলে পরামর্শক নিয়োগে আমার সম্পৃক্ততা খোঁজা এবং এফআইআর-এ মন্ত্রী হিসেবে আমার নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য বিশ্বব্যাংকের চেষ্টা ও চাপ কেন? এটা নি:সন্দেহে একটি অসৎ উদ্দেশ্য বলে প্রতীয়মান। কোনো অজানা (Hidden) উদ্দেশ্যে পদ্মাসেতুতে অর্থায়ন না করে সরকারকে হেয় প্রতিপন্ন করা, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা। বাংলাদেশ ও বিশ্ববাসীকে আমার সম্পর্কে একটি ভুল ধারণা দেয়ার জন্য এ উদ্দেশ্যমূলক অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। ইচ্ছে করে আমার সুনাম ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। যেখানে দরপত্র মূল্যায়ন নিরপেক্ষ হয়েছে এবং সেটি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের কোনো অভিযোগ নেই, সেখানে মন্ত্রী হিসেবে আমার সম্পৃক্ততা আসে কিভাবে?
দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের সাথে মন্ত্রীর সম্পৃক্ততার কথা বলা উদ্দেশ্যমূলক
● প্যানেলের চূড়ান্ত রিপোর্টে উল্লেখিত জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনে ঘুষের যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে- তাতে মন্ত্রী হিসেবে আমাকে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত করা যায় না। এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তা ডায়েরি লেখার বিষয়ে প্যানেল রিপোর্টে কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য নেই। যদি এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তা রমেশ শাহ কিছু লিখে থাকেন, কিছু অনৈতিক চিন্তা করে থাকেন, সেটা তার বিষয়। তার কাছে আমি কোনো অনৈতিক স্বার্থ দাবি করিনি। তিনি বা তার কোনো প্রতিনিধি কোনো অনৈতিক প্রস্তাব আমায় দেননি। পদ্মাসেতুর পরামর্শক নিয়োগে এ যাবত পত্রিকায় যত অসত্য রিপোর্ট হয়েছে- তাতে এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তার বরাত দিয়ে কেউ লেখেনি যে- রমেশ শাহ বলেছে, তার কাছে আমি অনৈতিক দাবি করেছি। রমেশ শাহ’র ডায়েরির লেখা তার নিজের। কেউ যদি আমার নাম ব্যবহার করে কাউকে ব্লাকমেইল করে কিংবা আমার নাম ভাংগিয়ে কোনো অনৈতিক কিছু দাবি করে থাকে- সেজন্য আমি দায়ী নই।
অনেক সময় পত্রিকায় বিশিষ্ট ব্যক্তির নামে চাঁদা দাবির খবর দেখা যায়- এর অর্থ এই নয় যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি চাঁদাবাজ। সত্য-মিথ্যা জানি না, পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে, দুদকের প্রাক্তন চেয়ারম্যানের নামে কোনো ব্যক্তি টাকা তুলেছেন এবং টাকা ব্যাংকে জমা রেখেছেন। সেই ব্যক্তিটি ধরাও পড়েছে। এ বিষয়ে দুদকের সম্মানিত চেয়ারম্যানকে ভুল বোঝা সমীচিন নয়। চেয়ারম্যানকে বিতর্কিত করাও উচিত নয়। আমার ক্ষেত্রে এরকম কিছু ঘটে থাকলে তাতে আমি দায়ী নই। শুধুমাত্র জাতিসংঘের দুর্নীতির সংজ্ঞা অনুযায়ী নয়, কোনো আইনেই আমি কারো ডায়েরি লেখার কারণে অভিযোগে জড়িত হই না।
মন্ত্রীকে কেন আসামি করা হবে?
● কেন দুদক আমাকে মন্ত্রী হিসেবে, মন্ত্রণালয়ের প্রধান ব্যক্তি হিসেবে আসামি করেনি- এটাই প্যানেলের চূড়ান্ত রিপোর্টের মূল বক্তব্য। আমার প্রশ্ন, মন্ত্রী হওয়ায় আমাকে কেন আসামি করা হবে? মূল্যায়ন কমিটির মূল্যায়ন সঠিক হয়নি- বিশ্বব্যাংকের এ ধরনের কোনো অভিযোগও নেই। অর্থাৎ এটা পরোক্ষভাবে প্রমাণ করে মূল্যায়ন কমিটির মূল্যায়ন সঠিক হয়েছে। মন্ত্রী কার্যাদেশ প্রদানে চূড়ান্ত অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ নয়, চূড়ান্ত অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ সরকারী ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। মন্ত্রী মূল্যায়ন কমিটির সদস্য নয় এবং টেন্ডার মূল্যায়নে কাউকে সুযোগ দেয়ার কোনো অথরিটি নন। মন্ত্রী হিসেবে কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পক্ষে আমি মূল্যায়ন কমিটির কাউকে প্রভাবিত করেছি, তদবির করেছি- বিশ্বব্যাংকের এ ধরনের কোনো অভিযোগও আমার বিরুদ্ধে নেই, সম্মানিত প্যানেলও এ ধরনের অভিযোগ করেননি। বিশ্বব্যাংকের নির্দেশনা অনুসরণ করতে গিয়ে মূল্যায়ন কমিটির মূল্যায়নে হলক্রোর পরিবর্তে এসএনসি-লাভালিন প্রথম হয়। এটা প্রমাণ করে- এসএনসি-লাভালিনের ব্যাপারে মন্ত্রী হিসেবে আমার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। তাহলে কোন যুক্তিতে, কোন কারণে মন্ত্রী হিসেবে আমাকে মামলায় আসামি করা যাবে? বিশ্বব্যাংক বলেছে বলেই কি আমি মন্ত্রী হওয়ার কারণে আমাকে দোষী হতে হবে--- এ প্রশ্ন আপনাদের সবাইর কাছে সবিনয়ে রাখছি।
অর্থায়ন স্থগিত করা যে ভুল হয়েছে- তা বিশ্বব্যাংক বুঝতে পেরেছে
● বিশ্বব্যাংক দাতা সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার। কাজ করতে গিয়ে কোনো দাতাসংস্থা ভুলের উর্ধ্বে নয়। আমি মনে করি, অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে পদ্মাসেতুর ঋণচুক্তি বাতিল যে বিশ্বব্যাংকের ভুল সিদ্ধান্ত, এটা তারা বুঝতে পেরেছে। বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রশাসনের বাংলাদেশের জন্য সর্বোত সহযোগিতাই তাই প্রমাণ বহন করে। তাই হয় তো, পদ্মাসেতুর জন্য প্রতিশ্রুত সমপরিমাণ অর্থ অন্য প্রকল্পে দেয়ার জন্য বিশ্বব্যাংক প্রস্তাব দিয়েছে। শুধু মুখ রক্ষার জন্য তারা দুদকের তদন্তে শুধুমাত্র আমাকে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের চূড়ান্ত রিপোর্ট বিশ্লেষণ করলে দেখবেন- রিপোর্টে তারা প্রমাণ দিয়ে নয়, পরোক্ষভাবে দুদকের তদন্তে সহায়তা অব্যাহত রাখবেন। এর মানে তাদের কাছে কোনো অকাট্য প্রমাণ নেই। বিশ্বব্যাংকের এ ভুল সিদ্ধান্তে মন্ত্রী হিসেবে আমার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি যে অবিচার করা হয়েছে, বাংলাদেশকে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে- এ বিষয়টি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য, নিজেদের মুখ রক্ষার জন্য- এ ফরমায়েসি চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। একজন আন্তর্জাতিক সম্মানিত বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে এ ধরনের ফরমায়েসি ও উদ্দেশ্যমূলক রিপোর্ট কাম্য ছিল না।
এসএনসি-লাভালিনের মিস কন্ডাক্টের সাথে মন্ত্রীর সম্পর্ক নেই
● বিশ্বব্যাংক এসএনসি-লাভালিনকে ‘মিস কন্ডাক্ট’ করার দোষে দোষী সাব্যস্ত করেছে। আমি মন্ত্রী হিসেবে কোনোক্রমেই এসএনসি-লাভালিনের মিস কন্ডাক্ট-এর সাথে সম্পৃক্ত নই। এসএনসি-লাভালিনের যে সব কর্মকর্তা আমার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন-তারা বলতে পারবেন না আমি তাদের কাছে অনৈতিক দাবি করেছি। সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী যিনি তাদের সাথে আমার দেখা করিয়েছেন- তিনিও বলতে পারবেন না আমি তার কাছে, তার উপস্থিতিতে বা অনুপস্থিতিতে এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তাদের কাছে কোনো অনৈতিক দাবি করেছি এবং সেতু বিভাগের কোনো কর্মকর্তাও বলতে পারবেন না যে আমি কারো কাছে কোনো অনৈতিক দাবি করেছি। কাজেই এসএনসি-লাভালিনের কোনো কর্মকর্তার কাছে আমার অনৈতিক দাবির প্রশ্ন অবান্তর, অসত্য ও প্রতারণা।
এসএনসি-লাভালিনের কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী বিতর্কিত
● আপনারা জানেন, এসএনসি-লাভালিন শুধু বাংলাদেশে নয়, লিবিয়া, ভারত, কম্বোডিয়ায় ব্যবসা করতে গিয়ে অসদাচরণ করেছে। পদ্মা সেতুসহ সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কোম্পানিটির সাথে বিশ্বব্যাংকের সমাঝোতার ভিত্তিতে এসএনসি-লাভালিন দোষ স্বীকার করেছে এবং শাস্তি মেনে নিয়েছে।
উল্লেখ্য, এ সমঝোতা হয়েছে শর্তসাপেক্ষে এবং গোপন শর্তে। কতিপয় পত্রিকার সংবাদে দেখা যায়, এসএনসি-লাভালিনের রমেশ শাহ ও ইসমাইলের মধ্যে একজন রাজসাক্ষী হচ্ছেন- এটা গোপনীয় শর্তের একটা কিনা- কে বলবে? বিশ্বব্যাংক ও এসএনসি-লাভালিনের সমঝোতায় প্রমাণ হয় না যে, আমি পদ্মাসেতুর দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের আশংকার সাথে সম্পৃক্ত। এ ধরনের একটি চাঞ্চল্যকর (সেনসেশনাল), অসত্য ও বানোয়াট খবর বাংলাদেশের কতিপয় পত্রিকা প্রচার করে। কতিপয় পত্রিকার এ প্রচারণা আমার এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। সরকারকে একটি অন্যায় কাজে সম্পৃক্ত করতে চাইছে। দুদকের উপরও অন্যায় চাপ সৃষ্টি করছে। নানা অসত্য সংবাদ প্রচার করে দুদককে বিভ্রান্তিতে ফেলার অপচেষ্টা করছে। এ ধরনের অপচেষ্টা পরিকল্পিত বলে আমার কাছে প্রতীয়মান- এ দিকটি একটু ভেবে দেখার জন্য সবাইকে সবিনয় অনুরোধ করছি।
বাংলাদেশের কতিপয় পত্রিকার নেতিবাচক প্রচারনা মন্ত্রী হিসেবে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে
● পদ্মাসেতুতে দুর্নীতির আশংকায় আমাকে জড়ানো যে পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলক বা বিশ্বব্যাংকের ঋণ না দেয়ার একটি ওছিলা- তা আমার পক্ষ থেকে বারবার বলা হলেও আমাদের দেশের মিডিয়ার কেউ আমার কথায় কর্ণপাত করেন নি। আমাদের জাতীয় কতিপয় পত্রিকা সত্যের দিকে ধাবিত না হয়ে বরং বিশ্বব্যাংকের অন্যায় সিদ্ধান্তে আমাকে জড়িয়ে কার্টুন প্রচার করে, গল্প লেখা শুরু করে। বরং আমাদের পত্রিকাগুলোর লেখায় আমাকে আরো অতিমাত্রায় জড়ানোর চেষ্টা করে। বিশ্বব্যাংকের ইচ্ছের সাথে আমাকে সম্পৃক্ত করে ফেলে। কোনো অন্যায়, কোনো অনিয়ম না করা সত্ত্বেও আমার দিকে সন্দেহের তীর ছোঁড়া হয়। বিনা বিচারে আমার ট্রায়াল চলে পত্রিকায় এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এটা যে কত দুঃসহ বিড়ম্বনা, কত সীমাহীন অপমান- তা ভুক্তভোগীরা ভাল জানেন।
● কানাডিয়ান কোম্পানি এসএনসি-লাভালিনের ওপর বিশ্বব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও এসএনসি-লাভালিনের ‘মিস কন্ডাক্ট’ বিষয়ে দোষ স্বীকারের যে সূত্র ধরে দেশের অধিকাংশ পত্রিকা অসত্য ও উদ্দেশ্যমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। পত্রিকাগুলো কাল্পনিকভাবে, বিশ্বব্যাংকের পূর্বের অসত্য অভিযোগ টেনে এনে মন্ত্রী হিসেবে আমার নাম ব্যবহার করে লাল অক্ষরে ব্যানার করেছে। কারো সাথে হোটেলে বৈঠক, কারো মুখোমুখি কথা বলা, নৈশ্ভোজে অংশ নেয়া ইত্যাদি কল্পনাপ্রসূত বিষয় নতুনভাবে সংযুক্ত করে খবর প্রকাশ করেছে। অথচ আমি কারো সাথে এককভাবে বৈঠক করিনি, কারো সাথে কোনো হোটেলে দেখা করিনি। কোনো ক্লাবে কারো সাথে ডিনার করিনি।
উল্লেখ্য, আমি কোনো ক্লাবের মেম্বার নই। কোনো ধরনের ক্লাবে যাওয়ার অভ্যাস আমার নেই। টাকা হলে মানুষের যেসব বদঅভ্যাস দেখা দেয়- এর কোনোটাই আমাকে আজও স্পর্শ করতে পারেনি। তবুও কতিপয় পত্রিকা নেতিবাচক রিপোর্ট প্রকাশ ও সম্পাদকীয় লেখে আমাকে দোষী সাব্যস্ত ও বিচারে ট্রায়াল করে ফেলেছে। এ ধরনের খবর ইতোপূর্বেও প্রকাশ করে পত্রিকাগুলো জনগণকে বিভ্রান্ত করার প্রয়াস নিয়েছে। আমাকে অনাহুত ও পরিকল্পিতভাবে পদ্মাসেতুর কথিত দুর্নীতির আশংকা সাথে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ করা সত্ত্বেও, বিবৃতি দিয়ে, চিঠি দিয়ে সত্য ঘটনা জানানো হলেও একইভাবে নেতিবাচক খবর প্রকাশ অব্যাহত রাখা নিঃসন্দেহে উদ্দেশ্যমূলক, বিভ্রান্তিমূলক এবং সাংবাদিকতার নৈতিকতাকে অমান্য করার সামিল।
কানাডার ১০০০ পৃষ্ঠার পুলিশ রিপোর্টে বাংলাদেশের পত্রিকার কাটিং সংযুক্ত
● এটা লক্ষণীয় যে, আমি যোগাযোগমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পর অভিযোগ তৈরির সেই স্বার্থান্বেষী মহল থেমে ছিল না। তারা বরাবরই আমার খুঁত ধরার কাজে লেগেছিল। বেনামী চিঠি অব্যাহত ছিল। কতিপয় পত্রিকা আমার বিরুদ্ধে অসত্য রিপোর্ট প্রকাশও অব্যাহত রেখেছিল। অতীতের অসত্য রিপোর্টগুলো কতিপয় পত্রিকা নতুনভাবে প্রকাশ করে। এবারও অসত্য খবর প্রকাশ অব্যাহত ছিল। কোনো এক বিশিষ্ট সাংবাদিক আমাকে অবহিত করেছিলেন, পদ্মাসেতুর বিষয় নিয়ে কানাডার আদালতে যে শুনানি হয়েছে তাতে ১০০০ পৃষ্ঠার পুলিশ রিপোর্টে আমার বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিভিন্ন সময়ে যেসব অসত্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তার সংবাদ ইংরেজী অনুবাদ করে ও ইংরেজি পত্রিকার কাটিংসহ অন্তর্ভুক্ত আছে। শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের আশংকা টেনে এনে মিথ্যা অভিযোগে সেতু নির্মাণে অর্থায়ন স্থগিত করে। পদ্মাসেতু নির্মাণকে বিলম্বিত করে। কোনো দুর্নীতি হয়নি, অথচ দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের আশংকায় ঋণ সহায়তা বন্ধ বিশ্বব্যাংকের ইতিহাসে, পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম। আমি মনে করি, অসত্য অভিযোগ ও বাংলাদেশের কতিপয় পত্রিকার অপসংবাদে প্রভাবিত হয়ে বিশ্বব্যাংকের এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া সঠিক হয়নি।
গণতন্ত্রের মতো সুরুচি, সুনীতি ও সুচিন্তার যোগফল হলো সাংবাদিকতা
● আজ বাংলাদেশে গণমাধ্যম বড় শক্তি, শিক্ষার অন্যতম বাহন। প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বদৌলতে পত্রিকায় বিভিন্ন প্রবন্ধ লেখা, সংবাদ ও টকশো আলোচনা শিক্ষার বাহন হিসেবে কাজ করছে। এসব লেখা ও আলোচনায় প্রায়ই বিজ্ঞ ও সিনিয়র সাংবাদিকদের বক্তব্যে বর্তমান মিডিয়া জগতের উন্নয়নের কথা যেমন শুনি, তেমনি কতিপয় সাংবাদিক ও মিডিয়ার অপসংবাদের কথাও জানি। সিনিয়র সাংবাদিকদের বক্তব্যের মর্মবাণী হলো- বর্তমানে সংবাদপত্রের বিকাশের পাশাপাশি সংবাদপত্রে এক ধরনের অপসংবাদ ও সাংবাদিকতা দেশের সংবাদপত্র জগতকে বিতর্কিত করছে। সংবাদপত্র জগতে এক ‘অপ-সংস্কৃতি’র জন্ম দিচ্ছে। কতিপয় সাংবাদিক, সাংবাদিকতার সত্য পেশাকে কলুষিত করে একে অন্যায় ও অবৈধ আয়ের উৎস হিসেবে গ্রহণ করছে, মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করছে। সুরুচি, সুনীতি ও সুচিন্তার যোগফল যেমন গণতন্ত্র, তেমনি এই গণতন্ত্রের পুরোপুরি প্রয়োগই সংবাদপত্র, সাংবাদিক ও দেশের উন্নয়নের নিয়ামক শক্তি। অসত্য ও ব্লাকমেইলিং-রিপোর্টের প্রভাব সমাজ, দেশ ও ব্যক্তির জন্য কতটুকু ক্ষতিকর ও এর প্রভাব কতটুকু বিস্তৃত- তা ভেবে দেখার জন্য আপনাদের অনুরোধ করছি। আমি মূলতঃ অপসংবাদ ও অপসাংবাদিকতার শিকার হয়েছি।
সংবাদপত্র উন্নয়নের নিয়ামক
● আমরা জ্ঞান হওয়ার পর থেকে শুনে এসেছি- সংবাদপত্র ও সাংবাদিক জাতির বিবেক। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির নিয়ামক। শিক্ষার পথ প্রদর্শক। দেশের সংস্কৃতি বিকাশের বাহক। দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নের হাতিয়ার। সত্য প্রকাশে অঙ্গীকারাবদ্ধ। তাই আমরা যখন দেখি, কতিপয় সংবাদপত্র ও সাংবাদিক অসত্য খবর প্রকাশ এবং এ অসত্য খবরকে উপজীব্য করে ধারবাহিকভাবে ও ক্রমাগত লিখে চলেছেন, টকশো’তে অবলীলাক্রমে অসত্য লেখার উপর ভিত্তি করে কথা বলেন, আলোচনা চালিয়ে যান- তখন সত্যি অবাক হই। চিন্তিত হই। দুঃখ-বেদনায় ভারাক্রান্ত ও আহত হই। ভাবি, অসত্য কি পৃথিবী নাচিয়ে বেড়াবে? সত্যকে কি কেউ সহায়তা করবে না? শক্তিশালী মিডিয়ার কাছে আমার অর্জিত সুনাম কি নষ্ট হবে? অসত্য বক্তব্য রাজত্ব করবে? ভাবি, এটাই মনে হয়, ইয়োলো জার্নালিজম। ইয়োলো জার্নালিজমের ফাঁদে আমাকে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। অনেকেই সফলও হয়েছেন। আবার ভাবি, মনে করি, সেই প্রবাদের কথা- Truth shall prevail.
আমি অসত্য খবরের ভিকটিম
● আমি বিশ্বাস করি, সাংবাদিকতা একটি দায়িত্বশীল পেশা। আমি সাংবাদিকদের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। এ প্রসঙ্গে- ভলতেয়ার-এর একটি বিখ্যাত উক্তি টেনে আমি বলতে চাই- I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it. ভলতেয়ার-এর বিখ্যাত উক্তিটি আমি সমর্থন করি, ব্যক্তিগতভাবে আমি অনুসরণ করি। মানুষের কথা বলার অধিকার আছে, পত্রিকায় খবর প্রকাশের স্বাধীনতা আছে, সেটা সত্য হোক আর অসত্য হোক। কিন্তু অন্যায়, অসত্য ও ভিত্তিহীন খবর প্রচার না করাই সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের শিষ্টাচার বলে মনে করি। অসত্য সংবাদের প্রতিবাদের অধিকার সবার রয়েছে। উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের ভাষায়- The nature of bad news infect the teller. অনৈতিক খবর বা ইয়োলো জার্নালিজম যেমন সংবাদপত্রের সুনাম, সুখ্যাতি নষ্ট করে, তেমনি উন্নয়ন কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে। দেশের অগ্রগতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা উন্নয়ন কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়। দেশের সার্বিক উন্নয়ন তরান্বিত করে। সংবাদপত্র একজন মানুষের ইমেজও তৈরী করতে পারে। দেশের উন্নয়নে ব্যক্তির ইমেজকে কাজে লাগাতে পারে। আবার এই সংবাদপত্র একজন নির্দোষ, নিরাপরাধ মানুষকে দোষী ও অপরাধী হিসাবে উপস্থাপন করতে পারে। তা করে তার ইমেজও নষ্ট করে। আমি নিজে পত্রিকার সেই নেতিবাচক ও অসত্য খবরের ভিকটিম।
মন্ত্রীর অফিস সংস্কার ও গাড়ি ক্রয় নিয়ে পত্রিকার অসত্য রিপোর্ট এবং আমার সম্পর্কে জনমনে ভুল ধারণা
● প্রকৃতপক্ষে দেশের কতিপয় পত্রিকার পরিকল্পিতভাবে পুন: পুন: অসত্য রিপোর্ট প্রকাশ করে আমার সম্পর্কে জনমনে ভুল ধারণা সৃষ্টিতে সহায়তা করেছে। যোগাযোগমন্ত্রী হওয়ার পর, যোগাযোগমন্ত্রীর অফিস মেরামত ও গাড়ি ক্রয় নিয়ে অসত্য রিপোর্ট প্রকাশ করে আমাকে বিতর্কিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। মন্ত্রীর অফিস মেরামত ছিল একটি রুটিন ওয়ার্ক। গণপূর্ত বিভাগ আমাকে জানিয়েছিল, অফিস মেরামত বাবদ ব্যয় হয়েছিল আনুমানিক ৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। অথচ কতিপয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এই ব্যয় ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। আর যে গাড়ি নিয়ে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, সে গাড়ি আদৌ ক্রয় করা হয়নি।
পত্রিকার অসত্য রিপোর্ট নিয়ে সংসদে উপতপ্ত আলোচনা
● আপনাদের মনে আছে, জাতীয় সংসদের স্পিকার কতিপয় পত্রিকার ভুল রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে সংসদের একটি অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়ে রুলিং দিয়ে নিস্পত্তি করেছেন। পত্রিকার ভুল রিপোর্ট সংক্রান্ত কিছু বিষয়- আমার বেলায়ও ঘটেছে এবং ঘটে চলেছে। কতিপয় পত্রিকার অসত্য খবরের উপর ভিত্তি করে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ- সমালোচিত হয়েছেন, এরকম মিথ্যা সমালোচনার শিকার আমি নিজেও। অনেকেই জানেন, ১৮ আগস্ট, ২০১১ তারিখে সংসদে পত্রিকার একটি ভুল রিপোর্ট নিয়ে আমাকে দোষারোপ করা হয়েছিল। সংসদে উত্তপ্ত আলোচনা হয়েছে। অথচ এ দোষারোপের বিষয়ে আমার কোনো ভুল ছিল না। অপ্রতুল বাজেট বরাদ্দের কারণে গত বছর সড়ক উন্নয়ন, মেরামত ও সংস্কারের অনেক কাজ সময় মত শেষ করা যায়নি। অতি বর্ষার কারণে কিছু সড়কে যাতায়াতে সাময়িক অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছিল। এ নিয়ে সংসদে আলোচনার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি সার-সংক্ষেপ পাঠাই। ওই সার-সংক্ষেপের বিষয়ে কতিপয় পত্রিকা অসত্য খবর পরিবেশন করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো সার-সংক্ষেপে কারো প্রতি কোন অসৌজন্যমূলক কথা ছিল না। সার-সংক্ষেপের মূল কপিটি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে আছে। এর একটি ছায়ালিপি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংরক্ষিত আছে। আমি যখন যোগাযোগ মন্ত্রী, সে সময়ে আমার সম্পর্কে কতিপয় পত্রিকা ঢালাওভাবে অসত্য খবর প্রকাশ করে। এ অসত্য খবরকে ভিত্তি করে টকশো’তে আলোচনা হয়। পত্রিকায় প্রবন্ধ লেখা হয়। অথচ খবরটি সঠিক ছিল না। অসত্য খবরই পরবর্তীকালে আবার খবর সৃষ্টি করে বের করা হয়েছে। মনে হয়েছে- এটা আমার বিরুদ্ধে একটি সংঘবদ্ধ প্রোপাগান্ডা।
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে আমাকে দায়ী করে পত্রিকায় রিপোর্ট
● আমি যোগাযোগমন্ত্রী থাকাকালীন সড়ক দূর্ঘটনার সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে কতিপয় পত্রিকা বহু লেখা লিখেছে, কার্টুন ছেপেছে, সম্পাদকীয় লিখেছে। এখনো সড়ক দুর্ঘটনা হয়, দুর্ঘটনা ঘটে- কিন্তু পত্রিকাগুলো এ নিয়ে এখন আর তেমন লিখে না। সড়ক দুর্ঘটনা বিশ্বের সর্বত্র ঘটে থাকে। আফ্রিকার পরে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার বেশি। এ নিয়ে আলোচনা, উদ্যোগ সর্বত্র পরিলক্ষিত। সড়ক দুর্ঘটনা কারো কাম্য নয়। আপনারও না, আমারও না। মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় দেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও বিশিষ্ট সাংবাদিক মিশুক মুনীর মারা যাওয়ার পর কতিপয় সুধীজনরা যেভাবে টিভির পর্দায় আমাকে জড়িয়ে কথা বলেছেন- তা আজও আমার মনে আছে। যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে কতিপয় বিশিষ্ট সুধীজন আমার পদত্যাগ চেয়েছিলেন। শেষাবধি আমি পদত্যাগও করেছি। কিন্তু যে দুর্ঘটনার কারণে তারা আমার পদত্যাগ চেয়েছেন- সেজন্য আমাকে কি সরাসরি দায়ী করা যায়?।
তদন্তে দেখা গিয়েছে, দুই গাড়ির ড্রাইভার দু’জনের অসর্তকতা ও অতিবৃষ্টির কারণে ভিজিবিলিটি না থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঐ সড়কে কোনো খানাখন্দক কিংবা গর্ত ছিল না, কোন সমস্যা ছিল না। যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে আমাকে দায়ী করে পদত্যাগ চাওয়া হয়েছে। গুরুত্ব বাড়াতে শহীদ মিনারে ঈদের দিনে শিশুদের গলায় ‘মন্ত্রীর পদত্যাগ চাই’- ব্যানার ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছিল। একথা ঠিক দেশের দুই বিশিষ্ট ব্যক্তির অকাল মৃত্যু আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। সেজন্য আমি মর্মাহত হয়েছি। দু:খ পেয়েছি। যে ঈদের আগে মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে, পরের ঈদে দেশে এর চেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু পরের ঈদে দুর্ঘটনার হার বেশি এবং মর্মান্তিক হলে তা নিয়ে হৈ চৈ হয়নি। তাহলে কেন বা কি উদ্দেশ্যে আমি যোগাযোগমন্ত্রী থাকাকালীন এতো বাড়াবাড়ি, এতো লেখালেখি করা হয়েছে? বিষয়টি দেশবাসীকে ভেবে দেখতে সবিনয়ে অনুরোধ করছি।
উল্লেখ্য, আমার বাবা-মা, ছাত্র জীবনে আমার কোনো শিক্ষক- কখনো আমার গায়ে হাত দেননি। অথচ কতিপয় পত্রিকা মিডিয়ার শক্তির অসৎ ব্যবহার করে আমার বিরুদ্ধে অসত্য সংবাদ প্রকাশ করেছে, আমার সুনাম নষ্ট করেছে। আমাকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করেছে।
বিশ্বের জনপ্রিয় ব্যক্তিদের দুর্ঘটনার মৃত্যুতে কোনো মিছিল হয়নি
● বিশ্বের অনেক জনপ্রিয় ব্যক্তি-বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবির, ফরাসী বিজ্ঞানী পিয়েরে কুরি, নাইজেরিয়ার নেতা এডোগোক আদেলাবুর, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জুসেলিনো কুরিতসেক, সোভিয়েতের নেতা ম্যাসহরেভ, নভোচারী পিট কনবার্ড ও প্রিন্সেস ডায়না সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেলেও সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর কেউ পদত্যাগ চায়নি। হৈ চৈ করেনি। শিশুদের গলায় ‘পদত্যাগ চাই’ ব্যানার ঝোলায়নি। শহীদ মিনারে যায়নি। কিন্তু বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ, বিশিষ্ট সাংবাদিক মিশুক মুনীর দূর্ঘটনায় মারা যাবার পর শহীদ মিনারে গিয়ে যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে আমার পদত্যাগ চাওয়া হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশের এক সময়ের ডাকসাইটে অর্থমন্ত্রী জনাব সাইফুর রহমান সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পরও বুদ্ধিজীবী বা খোদ বিরোধীদল বিএনপি’র কেউ যোগাযোগমন্ত্রীর পদত্যাগ চায়নি।
আমি জানি, সড়ক দুর্ঘটনার একটি মৃত্যু, একটি পরিবারকে নি:স্ব করে দেয়। এ দুঃখবোধ ও ক্ষতি একটি পরিবারকে চিরকাল বহন করতে হয়। তাই সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে আমাদের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে হবে। আইনের প্রয়োগ নির্বিঘ্ন করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আন্দোলন আমার, আপনার আন্দোলন। আমাদের সবার আন্দোলন।
কালকিনিতে ‘অতিথি ভবন’ নির্মাণ নিয়ে পত্রিকায় ব্যানার হেডলাইন করে অসত্য খবর প্রকাশ
● আমার বাড়ি মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার ডাসার থানায়। আমি পরিবার নিয়ে স্থায়ীভাবে ঢাকায় বসবাস করি। স্বভাবত:ই গ্রামের বাড়ি আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। দীর্ঘদিন ধরে আমি এ বিষয়ে খুব একটা মনোযোগ দিইনি। ডাসার গ্রামটি এখন আর আগের দুরাবস্থায় নেই। এর অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। বিশাল বিলের জায়গায় রাস্তা হয়েছে। কুপির জায়গাটি নিয়েছে বিজলি বাতি। ডাসারে আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও সহায়তায় গড়ে উঠেছে স্কুল, কলেজ এবং মাদ্রাসা। এসব প্রতিষ্ঠান আবাসিক মর্যাদা নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বাজার হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলার সুষ্ঠু প্রয়োগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ডাসার থানা। ফলে, এলাকা এখন উন্নয়নের ছোঁয়া পেয়ে কর্মতৎপর হয়ে উঠেছে। ডাসারের এই উন্নয়নে দেশ-বিদেশের বহু গুণীজন এলাকায় যান। সরকারী বড় বড় কর্মকর্তারা স্কুল-কলেজ পরিদর্শনে আসেন। সার্বিক অবস্থায় এলাকার গুরুত্ব আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এছাড়া, দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের কারণে রাজধানী ঢাকা থেকে কালকিনি যেতে সময় খুব কমই লাগে। সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে আমি সিদ্ধান্ত নিই- ডাসারে একটি অতিথি ভবন নির্মাণের। মানে আমি যখন বাড়ি যাবো, তখন এই ভবনে থাকবো--- ক্ষনিকের জন্য হলেও, বাকি সময়ে দেশের প্রখ্যাত ব্যক্তিগণ আমার এলাকায় গেলে এই অতিথি ভবনে থাকবেন। এই উদ্দেশ্য নিয়ে ডাসারে বাড়ি নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। এই বাড়ি নির্মাণ ২০০৫ সালে শুরু হয়ে ২০১২ সালে সমাপ্ত হয়। এ বাড়ি নির্মিত হয়েছে শেখ হাসিনা একাডেমী অ্যান্ড উইমেন্স কলেজের পাশে। এ বাড়ি নির্মাণের ব্যয় আমি কর পরিশোধিত অর্থ থেকে বহন করেছি। যা আমার আয়কর রিটার্নে প্রতিফলিত রয়েছে। ডাসারে আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তিতে একটি বাড়ি নির্মাণের সামর্থ্য আমার আছে- এটা নিশ্চয়ই দেশবাসী বিশ্বাস করবেন। অথচ এই বাড়ি নির্মাণ নিয়ে দেশের একটি প্রথম শ্রেণীর দৈনিক প্রথম পৃষ্ঠায় ব্যানার হেডে, বাড়ীর ছবি দিয়ে আমার সম্পর্কে নেতিবাচক পন্থায় নাতিদীর্ঘ রচনা লিখেছে। পুরো রিপোর্টে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা করা হয়েছে।
সাকো’র ব্যবসা জড়িয়ে পত্রিকার অসত্য রিপোর্ট
● প্রায়শ:ই অসত্য তথ্য দিয়ে আমার প্রতিষ্ঠিত সাকো এবং আমাকে জড়িয়ে পত্রিকায় সংবাদ পরিবেশন করা হয়। মিডিয়ার শক্তিকে ব্যবহার করে মানুষকে, পাঠককে বিভ্রান্ত করা হয়। সংবাদ এমনভাবে পরিবেশন করা হয়- যাতে পাঠকের কাছে অসত্য খবরও বিশ্বাসযোগ্য হয়। আমি অনেক সময় লক্ষ্য করেছি, পত্রিকার পরিবেশিত সংবাদ অসত্য তথ্যের উপর তৈরি। বিদ্যুৎ খাতে চীনের কোনো প্রতিষ্ঠান বিড করলেই আমার নাম, সাকো’র নাম জড়িয়ে রিপোর্ট করা হয়। বিদ্যুৎ খাতে সাকো’র প্রতিটি টেন্ডার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার আগে এমনভাবে রিপোর্ট করা হয়, যাতে প্রক্রিয়াটি ভণ্ডুল হয় এবং এর মাধ্যমে অন্য দরদাতার স্বার্থ অর্জিত হয়। এতে প্রতীয়মান হয় যে, পত্রিকা প্রভাবিত হয়ে, অন্যের জন্য কাজ করে এবং আমার প্রতিষ্ঠান ও আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমার এবং আমার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের সুনামকে বিনষ্ট করে।
আমার সম্পর্কে পত্রিকার আনা অন্যান্য অভিযোগ
● কোনো কোনো পত্রিকা লিখেছে, প্রথম জীবনে আমি নাকি সরকারি চাকরি হারিয়েছিলাম। তা আদৌ সত্য নয়। আমার অধঃস্তন কর্মকর্তার অসর্তকতার কারণে একটি তথ্যগত ভুলের অভিযোগ উঠলে, তদন্তে ও চূড়ান্ত বিচারে তা প্রমাণিত হয়নি। পরবর্তী সময়ে আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় এসেছি। আমার প্রটোকল অফিসারের অসর্তকতার জন্য পাসপোর্ট নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছিল তাতে আমি বিতর্ক এড়াতে পদত্যাগ করলেও, তখন কেউ আমার প্রশংসা করেনি। পরবর্তী সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এসবি’র যে অনুসন্ধান রিপোর্ট খুঁজে বের করা হয়েছিল তাতে দেখা যায়, ভুলটি হয়েছিল আমার প্রটোকল অফিসারের অজ্ঞতার কারণে।
স্বাক্ষর জাল বা সুপার ইম্পোজ করে আমার নামে অপপ্রচার
● ১৯৯৬ সালে নির্বাচনের সময় আমার স্বাক্ষর জাল করে, সুপার ইম্পোজ করে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী অপপ্রচার শুরু করে। আমার স্বাক্ষর জাল করা চিঠিটি নিয়ে যে সেসময় বাংলাবাজার পত্রিকায় রিপোর্ট করা হয়। এই চিঠির বিষয়টি বিএনপি আমলে প্রণীত শ্বেতপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। চিঠিতে আমি চীনের একটি কোম্পানিকে লিখেছি যে, আমার সাথে যোগাযোগ করলে বাংলাদেশের যে কোনো কাজ পাওয়া যাবে। আমার সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। এ ধরনের প্রোপাগান্ডার উদ্দেশ্য আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন এবং জনগণের কাছে মেসেজ দেয়া যে, আমি অন্যায় কাজে পারদর্শী। এই চিঠি নিয়ে তদন্তে আমার সম্পৃক্ততা নেই- বলে প্রমানিত হয়। অর্থাৎ উল্লেখিত স্বাক্ষর আমার ছিল না। আবার ১/১১-এর সময় আমার স্বাক্ষর ইম্পোজ করে আওয়ামী লীগ থেকে আমার পদত্যাগপত্র প্রচার করা হয়। এবার ক্ষমতায় এসে পদ্মাসেতুর মূল কাজের ঠিকাদার নিয়োগ নিয়েও সাকো’র এক কর্মকর্তার স্বাক্ষর সুপার ইম্পোজ করে প্রপাগান্ডা চালানো হয়। আমাকে বিভিন্ন অবৈধ কাজের সাথে সম্পৃক্ত করার অপচেষ্টা নেয়া হয়। শেষোক্ত বিষয়ে চিঠিটি নিয়ে তদন্ত করেও বিশ্বব্যাংক কিছু পায়নি। এ ধরনের নেতিবাচক চিঠি প্রকাশের আগে পত্রিকা আমার বা সাকো’র কোনো বক্তব্য নেয়নি। মনে হয়, চিঠিটি প্রকাশ তাদের উদ্দেশ্য বেশি ছিল। অথচ সেই মিথ্যা স্বাক্ষরের অভিযোগ আজও আমাকে বইতে হচ্ছে। এটা কোন ধরনের বিচার, এটা কোন ধরনের অভিযোগ? ন্যায় বিচারের স্বার্থে কতিপয় সংবাদপত্রের এ অসত্য খবর প্রকাশ কি বন্ধ হবে না? বন্ধ করা যায় না?
বিভিন্ন সরকারের সময় তদন্ত
● বিভিন্ন সরকারের সময়ে আমাকে নিয়ে দুর্নীতি দমন ব্যুরো/দুদক একাধিকবার তদন্ত করেছে। বিএনপি’র ২০০১ সালে বিএনপি সরকারের এসে একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন করে। শ্বেতপত্রে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে, পেপারকাটিংসহ আমার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়।
উল্লেখ্য, বিএনপি’র তৈরি করা শ্বেতপত্রে আমার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ পত্রিকার রিপোর্টের ভিত্তিতে করা হয়। বিএনপি সরকারের ৫ বছরে শ্বেতপত্রে অন্তর্ভুক্ত অভিযোগগুলো নিয়ে তদন্ত হয়। তদন্তে পত্রিকার সকল খবর অসত্য বলে প্রমাণিত হয়। আমি অভিযোগ থেকে মুক্তি পাই। অথচ এবার আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর আমি যোগাযোগমন্ত্রী হলে পূর্বের কতিপয় পত্রিকা আগেকার অসত্য খবরগুলো আবার নতুন করে প্রকাশ করা শুরু করে। শ্বেতপত্রে প্রকাশিত পত্রিকার অভিযোগগুলো টেনে এনে আমাকে প্রতিনিয়ত নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়, হচ্ছে। এ মিথ্যা রিপোর্টের অবসান হওয়া উচিত।
১/১১-এ আমার নামে নানা অভিযোগ
● ১/১১ ছিল বাংলাদেশের জন্য একটি দুর্যোগপূর্ণ সময়। এ সময় বাংলাদেশকে একটি সংকটকাল কাটাতে হয়েছে। অপরাজনীতি দিয়ে রাজনীতি বন্ধে অপচেষ্টা করা হয়েছে। নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে। টোপ দিয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দলের নেয়ার চেষ্টা হয়েছে। এ থেকে আমিও বাদ যাইনি। ১/১১ কুশীলবদের ডাকে সাড়া না দেয়ায় আমাকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। এ সময় গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা আমাকে নতুন দল গঠনে ভুমিকা পালনে বাধ্য করার চেষ্টা করে। আমি আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেছি, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুগত নই- এ ধরনের একটি জাল চিঠিও বের করা হয়, আমাকে ফাঁদে ফেলানোর জন্য। তখন আমি ১/১১ এর কুশলীদের বলি, “বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আমাকে রাজনীতিতে এনেছেন, যতদিন বেঁচে থাকবো- তাঁর সাথে থাকবো। ” এ কারণে বাংলাদেশের অনেক রাজনৈতিক নেতার সাথে সন্দেহভাজন দুর্নীতিবাজদের তালিকার দ্বিতীয় দফায় আমার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আমার জন্মকাল থেকে ১/১১- পর্যন্ত আমার নামে নামে-বেনামে উত্থাপিত বিভিন্ন অভিযোগসহ বিএনপি’র ১৯৯১-৯৬ এবং ২০০১-০৭ মেয়াদের তদন্ত করা সব বিষয়ে অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগ আনা হয় বিএনপি’র সময় তৈরী White paper-এর অন্তর্ভুক্ত মিথ্যা বিষয়গুলোর ওপরও। ১/১১ এর সময় এসব অভিযোগ তদন্তে একাধিক টিম কাজ করে। দীর্ঘ তদন্তে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হই। সকল অভিযোগ থেকে মুক্তি পাই। বিষয়টি পত্রে দুদক আমাকে জানিয়ে দেয়।
সর্বশেষ তদন্তে আমি নির্দোষ প্রমাণিত
● সর্বশেষ, ১/১১ তদন্তে আবার আমার সততা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। জন্ম থেকে ১/১১ পর্যন্ত বেনামে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসাসহ নানা বিষয়ে উত্থাপিত অভিযোগ থেকে আমি মুক্তি পাই। আমার কার্যক্রমের স্বচ্ছতা প্রমাণিত হয়। এরপরও এ বিষয়গুলো রেফারেন্স হিসেবে লেখা কি যুক্তিযুক্ত? অথচ কতিপয় সংবাদপত্র এ সত্যের দিকে না গিয়ে ইনিয়ে-বিনিয়ে অসত্যকে বারবার তুলে আনছেন। এটা কোন ধরনের নৈতিকতা?
মন্ত্রী থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ নিয়েও পত্রিকায় সমালোচনা
● পদ্মাসেতুর তদন্তের স্বচ্ছতার জন্য, মিডিয়া, সুধীজন ও শুভানুধ্যায়ীদের পরামর্শে আমি মন্ত্রিসভা থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করি। গণতান্ত্রিক বিধান ও কনভেশনকে গুরুত্ব দেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে পদত্যাগের জন্য বলেননি। অথচ পদত্যাগের পর পত্রিকায় লেখা হলো- আমি দোষী না হলে পদত্যাগ করলাম কেন? পদত্যাগ করলেও দোষ, না করলেও দোষ! যেখানে পদত্যাগের জন্য আমার প্রশংসা হবে, সেখানে এ ধরনের লেখা কিভাবে নেবেন। এর ভিত্তিতে টকশো’র আলোচনা কিভাবে দেখবেন? পত্রিকার ও মিডিয়ার এ ভুমিকা কতটুকু গ্রহনযোগ্য- বিষয়টি নতুনভাবে ভেবে দেখার আপনাদের অনুরোধ করছি।
বিভিন্নজনের কটাক্ষমূলক বক্তব্য
● অনেক বিজ্ঞজন, অনেক সুধীজন মন্ত্রিসভা থেকে আমার পদত্যাগের আগে দম্ভোক্তি করে বলেছেন “আমরা কেউ ধোয়া তুলসী পাতা নই। ” আমি ধোয়া বা আধোয়া তুলসি পাতা কিনা- জানি না, এতটুকু জানি, আমি জীবনে কারো অপকার করিনি। কারো বিরুদ্ধে গিবত করিনি। কারো চরিত্র হনন করিনি। কাউকে গালাগাল করিনি। কারো বিরুদ্ধে মন্দ বলিনি। কারো বিরুদ্ধে অশোভন কথা বলিনি। কারো কোনো ক্ষতি হোক- এরকম কাজ করিনি। জীবনে অন্যায় ও অসত্যের পথে হাঁটিনি। আবার সাম্প্রতিককালে অনেকে কটাক্ষ করে বলেছেন, “পদ্মাসেতুর অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে চাই না”। পদ্মাসেতুর অতীত ঘাঁটাঘাঁটি করলে দেখা যাবে, পদ্মাসেতু কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়িত হয়েছে। যেখানে বঙ্গবন্ধু সেতুর প্রস্তুতি কাজ করতে ১০ বছর লেগেছে সেখানে পদ্মাসেতুর ক্ষেত্রে ২ বছরে সে কাজ শেষ করা হয়েছে। শুধুমাত্র একটি ষড়যন্ত্র পদ্মা সেতুকে ২০১৩ সালে চালু করার পথকে রুদ্ধ করেছে। এছাড়া আমি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে বিগত তিন বছরে যে কাজ করেছি- ১০০ বছরের মধ্যে ৫ বছর মেয়াদী কোনো সরকারের সময় তা করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে যে প্রকল্পগুলো উদ্বোধন হচ্ছে- কার্যক্রম চলছে- তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমার প্রচেষ্টায় গৃহীত প্রকল্প। এ প্রকল্পগুলো এখন আমার বন্ধু বর্তমান যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং রেলমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক উদ্বোধন করছেন, বাস্তবায়ন কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। আমি ব্যবসা করে সম্পদ অর্জন করেছি। নিয়মিত সরকারকে কর দিই। আমি দেশের প্রচলিত আইন মেনে চলি। সৎভাবে ব্যবসা করে সম্পদ অর্জন কি অন্যায়? দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমি বর্তমান অবস্থানে এসেছি। রাজনীতি করি। এর অর্থ এই নয়, সব ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ অন্যায় পথে চলেন। বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-রাজনীতিবিদরাও যে সৎ ও নৈতিকতাসম্পন্ন লোক হতে পারেন- তা কি বিশ্বাসযোগ্য নয়? শুধুমাত্র বিদেশি বা বিদেশি সংস্থা- বিশ্বব্যাংক কিছু বললে সত্য হবে, আর আমরা বললে সত্য হবে না--- এ মানসিকতা পরিবর্তন দরকার। আমরাও পারি। আমরা সততা ও স্বচ্ছতার অধিকারী। আমি স্বচ্ছ ও সৎ মানুষ- এটা উচ্চৈ:স্বরে বলতে পারি।
সংবাদপত্র ও সাংবাদিক সমাজের কন্ঠস্বর
● সংবাদপত্র ও সাংবাদিক সত্যের কন্ঠস্বর। সমাজের বিবেক। সংবাদপত্র রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। যেখানে পরামর্শক নিয়োগে কার্যাদেশ দেয়া হয়নি, অর্থের ছাড় হয়নি- আমি কোনো মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় জড়িত নই, যেখানে মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় বিশ্বব্যাংক সম্পৃক্ত- সেখানে কিভাবে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের সাথে আমার সম্পৃক্ততা খোঁজা হয়? প্রথমে বিশ্বব্যাংক অভিযোগ করে পদ্মাসেতুর মূল ঠিকাদার নিয়োগে আমার পূর্বতন প্রতিষ্ঠান সাকো জড়িত। তদন্তে তা অসত্য প্রমাণিত হয়। বিশ্বব্যাংকও নিজস্ব পদ্ধতিতে এ বিষয়ে খোঁজ নেয়। ফলে সে অভিযোগ থেকে বিশ্বব্যাংক সরে আসে। পরবর্তীতে পরামর্শক নিয়োগে আমার সম্পৃক্ততা খোঁজে। যেখানে মূল্যায়নে আমি সম্পৃক্ত নই- সেখানে আমি কিভাবে সম্পৃক্ত হই। যেখানে মূল্যায়ন সঠিক হয়েছে- যেখানে মূল্যায়ন কমিটির মূল্যায়ন বিশ্বব্যাংক সঠিক মনে করে- সেখানে আমার সম্পৃক্ততা খোঁজা কি উদ্দেশ্যমূলক ও অন্যায় নয়? বিষয়গুলো পূর্বাপর বিশ্লেষণ করলে দেখবেন- এটা একটি আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় একটি ষড়যন্ত্র। কতিপয় পত্রিকায় আমার বিরুদ্ধে অসত্য লেখাও এক্ষেত্রে কাজ করেছে। আমি গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার।
অর্থ দান করেছি- কারো কাছ থেকে অর্থ সাহায্য নিইনি
● আমি সারাজীবন সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সর্বোচ্চ ইন্টিগ্রিটির সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। পৃথিবীর বড় আদালত মানুষের বিবেক। এই বিবেককে সমুন্নত রেখে আমি দায়িত্ব পালন করেছি। অনেক সামাজিক ও কল্যাণমূলক কাজ করেছি। এলাকায় বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছি। কখনো কারো কাছে আর্থিক সাহায্য চাইনি। কেউ বলতে পারবে না- কারো কাছ থেকে, এমনকি নির্বাচনের সময় অর্থ সাহায্য নিয়েছি। বরং সব সময় অন্যকে, অসহায়দের আর্থিক সাহায্য করেছি, আর্থিক সাহায্য করে চলেছি।
যোগাযোগমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পর তিন বছরে পদ্মাসেতুর নির্মাণসহ অনেক ফ্লাইওভার, সেতু, সড়ক ও রেলের উন্নয়নে নানা কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছি। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পদ্মাসেতু চালু করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে গেছি। যেখানে বঙ্গবন্ধু সেতুর প্রস্তুতিমূলক কাজ করতে ১০ বছর লেগেছে, সেখানে ২ বছরে পদ্মা সেতুর প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করেছি। মূল সেতু নির্মাণের ঠিকাদার নিয়োগের কার্যক্রমও প্রায় শেষ করে এনেছিলাম।
আমি ইতিবাচক রাজনীতিতে বিশ্বাসী
● আমি ইতিবাচক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও সহমর্মিতার রাজনীতি করি। আমি উৎপাদন ও কল্যাণের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। আমার রাজনৈতিক জীবনে জনকল্যাণে নিবেদিত একজন মানুষ হিসেবে, জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করে চলেছি, করছি এবং ভবিষ্যতে করবো ইনশাল্লাহ। গতানুগতিক রাজনীতির ধারায় আমি বিশ্বাসী নই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে একটি সুস্থ ও সেবামূলক ধারা আমি আমার এলাকায় গড়ে তুলেছি। জনসভা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দলীয় কোন্দলের উর্ধ্বে থেকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও অন্যান্য দলের নেতাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন গড়ে তুলেছি। তাদেরকে সহঅবস্থানে, একমঞ্চে বসা ও বক্তৃতা দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। মাও সে তুং এর ভাষায়- “শত পুষ্পের বিকাশ সম্ভব হোক, শত মতের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা চলুক”- এ কথায় বিশ্বাস করি। আমি রাজনীতির নামে এলাকায় সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে দিইনি। কাউকে জ্বালাও, পোড়াও এর নামে এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ করতে দিইনি। আমি আমার এলাকার সকল রাজনৈতিক সহকর্মী এবং প্রতিপক্ষের মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করেছি। সকল মতাদর্শের প্রতি সমান শ্রদ্ধাশীল থেকে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করেছি। আমি আমার কাজের এই ধারা অব্যাহত রেখেই ভবিষ্যতেও কাজ করবো। অপরাজনীতি করা আমার পক্ষে অসম্ভব। ডিসরেলির ভাষায়- ‘‘There is no gambling like politics.’’ আমি মহান আল্লাহকে হাজির নাজির মেনে বলছি- আমি শান্তিতে বিশ্বাসী। আমি পরম সহিষ্ণুতায় বিশ্বাসী। আমি আমার নির্বাচনী এলাকার রাজনীতিতে এই উদার ও পরম সহিষ্ণু ধারা প্রবর্তনে সক্ষম হয়েছি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও জননেত্রী শেখ হাসিনার ঐক্যমতের রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় আমি কাজ করে চলেছি।
মানুষের বড় শত্রু মানুষ
● সৎভাবে, স্বচ্ছভাবে ব্যবসা করা এবং নিজেকে সমাজে গৌরবের আসনে প্রতিষ্ঠা, সরকারী কাজে সততা ও স্বচ্ছতা প্রতিপালন, এলাকার শিক্ষা প্রসারে কাজ করা, এলাকার উন্নয়ন, ঐক্য ও পরমসহিষ্ণু রাজনীতি প্রবর্তন এগুলো মুখের কথা নয়, মুখের বুলি নয়, একথাগুলো বক্তৃতার জন্যও নয়, এগুলো বাস্তবায়ন করে, প্রদর্শন করে আমি প্রমাণ রেখেছি। আমার পুরো জীবন স্বচ্ছতার মোড়কে প্রতিষ্ঠিত। অথচ রাজনীতির কুটিল চরিত্র, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত, ব্যক্তি বিদ্বেষী কতিপয় লোকের ষড়যন্ত্র, কতিপয় পত্রিকার অসত্য রিপোর্টে আমার এই সত্য, সুন্দর চরিত্রকে কালিমায় লিপ্ত করার অপপ্রয়াস চলছে। প্রবাদ আছে, “মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে মানুষ। ” সাময়িকভাবে তারা সফলও হয়েছেন। তবে সুবোধ ঘোষের ভাষায় বলবো- “মিথ্যা কথা শেষ পর্যন্ত কারো ক্ষতি করতে পারে না। ” অন্য কথায়, Truth Prevails. আমাকে একজন বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করার প্রয়াস পরিলক্ষিত হচ্ছে। অথচ তাদের ষড়যন্ত্রে আমি যেভাবে চিত্রিত হচ্ছি, আমি আসলে সেই ব্যক্তি নই।
অসত্য খবর দ্রুত প্রচার পায়
● কার্যতঃ নেতিবাচক খবর দ্রুত ছড়িয়ে যায় এবং অসত্য হলেও মানুষ তা বিশ্বাস করতে শুরু করে। আমি পদ্মাসেতুর কোনো কার্যক্রমেই অনিয়ম করিনি। তবুও আমি এবং পদ্মাসেতু- অপসংবাদ, অপসাংবাদিকতা ও অপপ্রচারে আক্রান্ত হয়ে পড়েছি। এতে আমার দীর্ঘদিনের অর্জিত সুনাম বিনষ্ট হয়েছে। আমি এই অপবাদ থেকে মুক্তি চাই। আমি আবারো আপনাদের নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে চাই, পদ্মাসেতুর পরামর্শক নিয়োগসহ কোনো অনিয়মে আমি জড়িত নই। পদ্মাসেতুর কাজটি দ্রুত এবং ডিসেম্বর/২০১৩ এর মধ্যে চালু করার টার্গেট বাস্তবায়নে কাজ করেছি। বলতে দ্বিধা নেই, পদ্মাসেতুর কার্যক্রম দ্রুত এগুতে থাকলে এক পর্যায়ে বিশ্বব্যাংকের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা অন্তত: তিনবার আমাকে ধীরগতিতে কাজ করতে অনুরোধ করেন। বিষয়টি আমি গুরুত্ব দিইনি। অনেক কথা বলা যায় না- তবুও বলছি- আমি কোনো অনিয়ম করিনি।
একদিন আমার নির্দোষিতা বিশ্বব্যাংক ও মিডিয়া বুঝবে
● আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, পদ্মাসেতুর পরামর্শক নিয়োগে আমি কাউকে কোনো সুযোগ দেয়ার চেষ্টা করিনি। আমার নির্দোষ, তা একদিন বিশ্বব্যাংক ও মিডিয়া বুঝতে পারবে। আমি বিশ্বাস করি, আমি একদিন বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ, মিডিয়ার অব্যাহত অপসংবাদ, অপসাংবাদিকতা ও অপপ্রচার থেকে মুক্ত হবো। আমি আরো বিশ্বাস করি, মহান আল্লাহ আমাকে এ অন্যায় দোষারোপ ও অপবাদ থেকে উদ্ধার করে আমাকে আরো সম্মানিত করবেন।
যৌথ স্বাক্ষরে পত্রিকায় প্রকাশিত অপসংবাদের তদন্ত
● যে সব পত্রিকা নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে আমার সুনাম ক্ষুন্ন করেছে সেসব পত্রিকার সম্মানিত সম্পাদকদের প্রতি আমি আহবান জানাতে চাই, ১৯৯১ সালে রাজনীতিতে যোগদানের পর থেকে এ যাবত আমার ব্যক্তিগত বিষয় এবং পদ্মা সেতুসহ যত বিষয়ের ওপর আমাকে অন্যায়ভাবে জড়িয়ে সংশ্লিষ্ট পত্রিকায় অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে- সেসব পত্রিকার সম্মানিত সম্পাদক চাইলে আমার এবং সংশ্লিষ্ট সম্পাদকের যৌথ স্বাক্ষরে দুদক দিয়ে তদন্ত করাতে পারি। আমি চাই, আমার সম্পর্কে নেতিবাচক প্রতিবেদনগুলোর নিবিড় তদন্ত হোক। আমি অন্যায় ও অহেতুক অপবাদের বোঝা বইতে চাই না। এ বিষয়ে আমি অভিযুক্ত হলে যে কোনো শাস্তি মাথা পেতে নিতে বাধ্য থাকব। এ বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অসত্য প্রমাণিত হলে তার দায়-দায়িত্ব নিতে সংশ্লিষ্ট সম্পাদকের প্রস্তুত থাকতে হবে। অপসংবাদ ও অপসাংবাদিকতা গ্রহণ করা যায় না। সংবাদপত্র ও মিডিয়া জগতের জন্য, দেশের জন্য অপসংবাদ ও অপসাংবাদিকতা শুভ নয়। আমি পত্রিকার সম্মানিত সম্পাদকদের প্রতি অনুরোধ করবো, অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেয়া বিশ্বব্যাংক প্যানেলের ফরমায়েসি রিপোর্টটি যথাযথভাবে পড়ে দেখুন, সত্য অনুধাবন করুন এবং আমাকে পদ্মাসেতুর দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের আশংকার সাথে সম্পৃক্ত করার অনৈতিক প্রচেষ্টা ও আমার বিরুদ্ধে অসত্য প্রচারণা বন্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করুন। আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই, সত্য মনের প্রতিফলন চাই।
পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে আমি কোনক্রমেই জড়িত নই
● আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, আমি সততা, নিষ্ঠা ও স্বচ্ছতার সাথে পদ্মাসেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করেছি। পদ্মাসেতুর পরামর্শক নিয়োগের কোনো অনিয়মের সাথে আমি কোনক্রমেই সম্পৃক্ত নই। বিশ্বব্যাংক ভুল তথ্যের ভিত্তিতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাকে দোষী করার চেষ্টা করছে। পদ্মাসেতুর বাস্তবায়নে, জাতির বৃহত্তর স্বার্থে স্বেচ্ছায় আমি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলাম। তারপরও বিশ্বব্যাংকের পদ্মা সেতুর ঋণ প্রদানে গড়িমসি ও ঋণদান স্থগিত করা নজিরবিহীন। এধরনের কোনো কারণে বিশ্বব্যাংক কোথাও ঋণদান বন্ধ করেনি। আমি দেশের একজন সাধারণ ও সচেতন নাগরিক। আমি দেশের এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সঠিক ও যথাযথ যে কোনো তদন্তে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হবো- ইনশাল্লাহ।
(সৈয়দ আবুল হোসেন, এমপি)
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৩
সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর