ঢাকা: হত্যাকাণ্ডের ৮ বছর পর বৃহস্পতিবার ঘোষিত হলো ২০০৫ সালের ১৭ নভেম্বর খুনের শিকার হওয়া ফরিদপুরের সাংবাদিক গৌতম দাস হত্যা মামলার রায়। গৌতমের স্ত্রী ও তার সহকর্মীরাসহ ফরিদপুরবাসী এ রায়ে ৯ আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দণ্ডাদেশ না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
আর সবার মতোই আমিও আমার এক যুগের সুখ-দুঃখের সাথী গৌতমের খুনিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া এ রায় প্রত্যাখ্যান করছি। আশা করছি, মামলার বাদী উর্ধ্বতন আদালতে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন আর ন্যায়বিচার পাবো আমি, আমরা- সবাই।
তবে যেখানে কোনো সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনেরই বিচার এর আগে আমরা পাইনি (সম্পত্তির লোভে ভাগ্নের হাতে খুন হওয়া সাংবাদিক ফরহাদ খাঁ দম্পতি ছাড়া) সেখানে এ রায় ঘোষণা হওয়াটা আশার কথা। এবার সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনিসহ সকল সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে এ আশা জেগেছে সবার মনে।
গৌতম হত্যা মামলার রায় দৃষ্টান্ত হয়ে তাই খুলে দিক বিচারহীনতার সংস্কৃতির বন্ধ দুয়ার।
বিশেষ করে সাংবাদিক দম্পতি সাগর- রুনি এবং গৌতম দাস হত্যাকাণ্ডের মধ্যে বেশ কয়েকটি বিষয়ে মিল থাকায় বিচার না পাওয়াটার আশঙ্কায় ভুগছি। আর তাই সবার আগে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হোক- এ দাবি জানাচ্ছি জোরালোভাবে।
মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর এবং এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার রুনির সঙ্গে আমার তেমন একটা পরিচয় বা হৃদ্যতা ছিলো না। তাদের নৃশংস-নির্মমভাবে খুন হবার এবং আগে-পরের ঘটনাবলীর সচিত্র সংবাদ-প্রতিবেদনগুলো দৈনিক আর অনলাইন সংবাদপত্রে পড়ে বা টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে দেখে কিংবা স্বজন-সহকর্মীদের ভাষ্য শুনে আর সবার মতো আমারও মনে হলো, এ ঘটনা ঘটবার কথা ছিলো না, তবু ঘটেছে।
খুন হওয়ার সময় গৌতম ছিলেন দৈনিক সমকালের সে সময়কার ফরিদপুরে কর্মরত নিজস্ব প্রতিবেদক ও ব্যুরো প্রধান। এরও আগে প্রথম আলো এবং সাংবাদিকতার শুরুতে ভোরের কাগজে কাজ করার সময় থেকেই টানা এক যুগ ধরে গৌতম ছিলো আমার ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ও বন্ধু এবং অভিন্ন আদর্শ-চেতনায় গড়ে ওঠা আত্মার আত্মীয়।
সাগর এবং রুনির সহকর্মী-স্বজনেরা জানিয়েছেন, অমায়িক, বিনয়ী, বন্ধু বৎসল, সদা হাস্যোজ্জ্বল, আনন্দময় আর অনাড়ম্বর জীবনযাপনকারী সবার প্রিয় এ দু’জন মানুষের ব্যক্তিগত কোনো শত্রু ছিলো না বা শত্রু তৈরি হবার কোনো সুযোগ ছিলো না, যারা তাদেরকে আক্রোশের বশবর্তী হয়ে বা শত্রুতা হাসিলে একেবারে জীবন থেকেই সরিয়ে দিতে পারে।
সাংবাদিক হিসেবে উভয়েই সৎ-সাহসী, দৃঢ়চেতা, পরিশ্রমী এবং কর্তব্যনিষ্ঠ ছিলেন- তাদের ব্যাপারে এ মূল্যায়নই করে আসছেন অগ্রজ সহকর্মীরা। তারা এটাও মনে করছেন, পেশাগত কারণে কোনো সংক্ষুব্ধ বিপক্ষ সৃষ্টি হয়নি, যারা সাগর-রুনির সাংবাদিকতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রাগে-ক্ষোভে তাদেরকেই শেষ করে দেবে বা ভাড়াটে খুনি পাঠাবে। এই সুখী দম্পতির এমন কোনো সম্পদও ছিলো না, যার লোভে বাসায় ঢুকে ডাকাতি করতে গিয়ে খুন করে ফেলবে দুর্বৃত্তরা।
সহজ-সরল কিন্তু সদা হাস্যময়, মিশুক আবার একইসঙ্গে অন্তর্মুখী স্বভাবের, কিছুটা আত্মভোলা কিন্তু নিঃস্বার্থ পরোপকারী গৌতমকেও সবাই তার মৃত্যুর পরে অজাতশত্রু বলেই অভিহিত করতেন বা এখনো করছেন। সম্পদবিহীন কিছুটা ছন্নছাড়া গৌতম মা-বাবা ভাই-বোনদের ভাঙ্গা উপজেলার বাড়িতে রেখে একা থাকতেন ফরিদপুর শহরে। ঘটনার রাতে ঘুমিয়েছিলেন সমকালের কার্যালয়ে।
সাগরকে বুক ও পিঠে অগণিত আর রুনির পেটে ও পাঁজরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যা করেছে ঘাতকেরা।
লাশ উদ্ধারের সময় নিহত সাগরের শরীরে ২৫টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এছাড়া তার শরীরে বিদ্ধ অবস্থায় ২টি বাঁটবিহীন ছুরি পাওয়া গেছে। এর একটি ৫/৬ ইঞ্চি আরেকটি ৮/৯ ইঞ্চি লম্বা। আর রুনির পেটে ও পাঁজরে পাওয়া গেছে ২টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন। সাগরের হাত ও পা পিছন দিক থেকে বাঁধা ছিল। সাগর-রুনির একমাত্র সন্তান মেঘ তার মতো করে ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছে, কিংবা এ পর্যন্ত তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ যা জানাচ্ছে, তা থেকেও মনে হয়, চরম প্রতিহিংসার বশে নির্মম-নিষ্ঠুরভাবে এ জোড়া খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে খুনিরা!
গৌতমকে সন্ত্রাসীরা তার নিজ কার্যালয়ে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে এবং গলায় নাইলনের রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছিল। তার লাশ উদ্ধারের সময় দু’হাত পিছমোড়া করে এবং দুই পা ওই নাইলন আর মশারির দড়ি দিয়েই বাঁধা পাওয়া যায়। কি নির্মম আক্রোশ ছিল খুনিদের, ভাবা যায়!
মনে পড়ে, গৌতম হত্যাকাণ্ডের পর শোক প্রকাশে এবং বিচার দাবিতে ফরিদপুরে এবং তার জন্মস্থান ভাঙ্গার নানা সভা-সমাবেশে, মিছিলে-মানববন্ধনে বার বার বলতে চেয়েছি, শত্রুতা না থাকলে এভাবে একজন ভালো মানুষকে কেন খুন করা হবে? সাগর-রুনির খুনিরাও যে তাদের শত্রুই; তা যেদিক দিয়েই হোক না কেন।
তবে এ দুই হত্যাকাণ্ডের মধ্যে যে মূল মিলটা আমার চোখে পড়ছে তা হলো, খুনের পরপরই পুলিশ আর বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাজে ও কথায় বৈপরিত্য, খুনের বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয়, আতঙ্ক আর ক্ষোভ নিয়ে। এটি শুধু গৌতম বা সাগর-রুনি নয়, যে কোনো হত্যাকাণ্ডের পরেই দেখা যায়। তদন্তের দীর্ঘসূত্রতা, আলামত নষ্ট বা গায়েব হয়ে যাওয়ার কথা বলা, ঘটনা ক্লুলেস থাকা বা পুলিশের পক্ষ থেকেই অনৈতিক সুবিধার ভিত্তিতে শুরু থেকেই দুর্বল তথ্য-প্রমাণ দিয়ে রাখা, তদন্তে নানা বাধা আসা, বাদী বা নিহতদের স্বজনদের হুমকি দিতে থাকা এবং সর্বোপরি বছরের পর বছর ধরে মামলা চলা, বিচারকাজের বিভিন্ন পর্যায়ে নানা অজুহাতে মামলার কাজ স্থবির বা দেরি করিয়ে দেওয়া ইত্যাদির কারণে অনেক ক্ষেত্রেই ন্যায়বিচার পান না ভিকটিম বা তাদের স্বজনরা, এটাই চলে আসছে এ দেশে।
গৌতমের ক্ষেত্রেও এটাই ঘটে আসছিল গত ৭ বছর ৭ মাস ধরে। বিচার শেষই হচ্ছিল না! কারণ, প্রভাবশালী আসামিপক্ষ বারবার নানা অজুহাতে বিচারকাজ ঠেকিয়ে রাখতে সমর্থ হচ্ছিল। সন্তানের খুনিদের বিচার দেথে যাবার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে আর শোকে-দুঃখে মারা গেছেন গৌতমের হতভাগ্য-অসহায় বাবা-মা। পুত্রশোকে এবং পুত্র হত্যার বিচার না পাওয়ার কষ্ট নিয়ে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর গৌতম দাসের মা সতী রানী দাস এবং ২০০৮ সালের ২৩ নভেম্বর বাবা বলরাম দাস পরলোকগমন করেন।
অবশেষে যাও বা বিচারের রায় পাওয়া গেলো, সেখানেও রয়ে গেলো অতৃপ্তি। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির আরজিতে আপিল করে চূড়ান্ত রায় পেতে আরও কতোদিন অপেক্ষা করতে হবে কে জানে!
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার না পাবার শঙ্কায় থাকতে থাকতে এক প্রকার আশাই ছেড়ে দিয়েছেন তাদের স্বজনরা। আর আসল খুনিদের বিচারের আওতায় আনার দাবিতে রাজপথ কাঁপানো আন্দোলনও থামিয়ে দিয়েছেন সারা দেশে সাংবাদিক দম্পতির সহকর্মীরা।
তখনকার প্রভাবশালী মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর ক্যাডারদের রাস্তা সংস্কার কাজের টেন্ডারবাজি ও পুনর্নির্মাণের ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি, জালিয়াতি আর নিম্নমানের কাজ করে অর্থ আত্মসাতের রিপোর্ট সমকালে লিখে আর এর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার অপরাধে মাত্র ৩৩ বছরে অকালে প্রাণ হারালেন গৌতম। প্রায় একই বয়সের সাগর-রুনির অপরাধ কি ছিল, আমরা তা জানতেই পারলাম না গত দেড় বছরেও। পুলিশ এখনো পর্যন্ত প্রকৃত খুনিদের গ্রেফতার না করে শুধু নাটকই করে যাচ্ছে!
বাঙালির আর সব দুর্ভাগ্যের মতোই সবার চাওয়ার কেন্দ্রবিন্দু যে সাগর-রুনি হত্যার বিচার, সেটা নিয়েও বা এ দু’জন ভিকটিম সম্পর্কে বিতর্ক আর অহেতুক সমালোচনাও করতে ছাড়েননি একটি মহল। এ বিতর্কের সুযোগে বা সময়ক্ষেপণের কারণে আসল খুনিরা পালিয়ে গিয়ে আড়ালেই রয়ে গেল কিনা- এ আশঙ্কাই এখন সর্বত্র, সবার মাঝে দেখা দিয়েছে।
এ কথাও উঠেছে, প্রভাবশালীরা জড়িত থাকায় পুলিশ বা গোয়েন্দারা সব রহস্য উদ্ধার করেও খুনিদের ধরেনি। আবার তদন্ত সংস্থাগুলোই এখন পর্যন্ত একেকবার একেক ধরনের তথ্য দিয়ে তদন্তের অগ্রগতি প্রায় শূন্য বলে হতাশার খবর জানিয়ে আসছে। পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়ায় এখন যাদের এ ঘটনায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, তাদের দিয়ে আরেকটি ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজিয়ে মূল ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে বলেও আশঙ্কায় ভুগছেন সবাই।
এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের সবক’টি সংগঠন একতাবদ্ধ হয়ে তোলপাড় করা আন্দোলন শুরু করায় আমরা আশাবাদী হয়েছিলাম যে, সরকার বা তদন্তে নিয়োজিতরা এ দাবি উপেক্ষা বা কোনো রকমের ‘নয়ছয়’ করতে পারবে না। কিন্তু হঠাৎ করেই সাংবাদিকদের ‘ঐক্য’ ভেঙে যাওয়ার পরিণতিতে আন্দোলনই বন্ধ হয়ে গেছে। কোনো চাপ না থাকায় এখন সরকার বা সংশ্লিষ্ট কারোরই আর যেন মাথাব্যথা নেই এ বিষয়ে! শুধু তাই নয়, সাংবাদিক নেতারাও এ বিষয়ে কেন যেন আগ্রহহীন হয়ে পড়েছেন!
গৌতম খুনের পরও প্রভাবশালীদের অপচেষ্টা আর হুমকি-ধমকি বা অর্থের মাধ্যমে সবকিছু ‘ম্যানেজ’ করার খেলা আমরা দেখেছি। ‘হুকুমের আসামি’ অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি পেতে গৌতম হত্যার বিচার চেয়ে সাংবাদিকদের অনশন মঞ্চে অনশন ভাঙাতে আর ‘মায়াকান্না মার্কা’ বক্তৃতা দিতে আসতে হয়েছিল তখনকার সেই প্রভাবশালী মন্ত্রীকে। অনেক সাংবাদিক তার উপস্থিতিতেই সেই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ ও তার হাত থেকে অনশন ভাঙানোর শরবত পান না করলেও আসল সত্য হচ্ছে, খুনির লেবেল গা থেকে টেনে খুলে ফেলতে গৌতমের কিছু সহকর্মীই(!) সেদিনকার সে আয়োজনে মন্ত্রীকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন নাটকীয় কায়দায়। এ কাজে এবং তদন্ত প্রভাবিত করতে, ‘ম্যানেজড’ রিপোর্ট করতে মন্ত্রীর বাসায় বসে তার এবং খুনিচক্রের কাছ থেকে বেশুমার অর্থ গ্রহণের খবরও সে সময় ফাঁস হয়ে পড়ে। কাউকে কাউকে আবার প্রত্যক্ষদর্শী, তথ্যদানকারী বা মামলার সাক্ষী সেজে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে সে সময় বা পরবর্তী সময়ে মামলাটিকেই দুর্বল আর ঝুলিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করতেও দেখা গেছে।
তবে বৃহত্তর সাংবাদিক সমাজ এবং জনগোষ্ঠী বিচার প্রার্থনায় ‘গৌতমের লাশ বিক্রি’ করার প্রলোভনের ফাঁদে পা না দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন এবং শেষ পর্যন্ত মামলাটির চূড়ান্ত পরিণতি লাভ এবং অন্তত প্রকাশ্যে খুনের মিশনে থাকা খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করাতে কাজ করে গেছেন।
এদিকে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে প্রথম দিকে প্রকাশিত-প্রচারিত নানা সংবাদ-প্রতিবেদনের বিষয়ে নানা সমালোচনাও করছেন সাংবাদিকরাই। এটিকে প্রভাবশালী, খুনিপক্ষ বা পুলিশের দ্বারা নানা ধরনের তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করিয়ে আসল খুনিদের আড়াল করার ষড়যন্ত্র বলেও অভিযোগ করেন সাংবাদিক নেতারা। তারা সে সময় আরও অভিযোগ করেছিলেন, প্রকৃত খুনিদের ধরার পরিবর্তে বরং নানা রকম গুজব ও কুৎসা রটাচ্ছে পুলিশ। তদন্তে ব্যর্থতার পর পুলিশ সাজানো নাটক তৈরি করার চেষ্টা করছে বলেও তারা অভিযোগ করেন। ‘নোয়াব’ও একই আবেদন জানায় সম্পাদক ও সাংবাদিকদের প্রতি।
একই রকম বিষয় গৌতম হত্যার পরও আমরা দেখেছি। স্থানীয় এবং জাতীয় অনেক সাংবাদিকই পাঠককে অধিক তথ্য জানাতে গিয়ে, নিজের কৃতিত্ব প্রকাশের লোভে বা বিভ্রান্তির কবলে পড়ে অতিরঞ্জিত বা অসত্য তথ্য দিয়ে না জেনে ঘটনাকে বিভ্রান্ত করেছিলেন।
দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে থেকেও গৌতম দাস হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ হতে ৭ বছর ৭ মাস লেগেছে। আর সাগর-রুনি হত্যা মামলার বিচার তো শুরুই হতে পারলো না।
বিচারিক প্রক্রিয়ায় যাবার পর কিংবা চূড়ান্ত বিচারকাজ শুরু হবার পর এ মামলাও যেন গৌতম হত্যার মতোই দীর্ঘসূত্রতায় না পড়ে, যেন বিচারের গতি রুদ্ধ না হয়, আইনের ফাঁক খুঁজে নিয়ে প্রকৃত অপরাধীরা যেন রেহাই পাবার ষড়যন্ত্রের সুযোগ না পায়, সাগর-রুনি হত্যা মামলার ক্ষেত্রে সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যাশিত ও প্রয়োজনীয় দ্রুততম সময়ে খুনিরা শাস্তি পেলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ সম্ভব হবে।
মেঘের বয়স এখন মাত্র সাড়ে পাঁচ বছর। জীবনের মানে বোঝার আগেই জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ হারানোর পর তাকে শারীরিক-মানসিকভাবে ভালো রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন স্বজনরা। বড় হয়ে বুঝতে শিখে যদি বাবা-মা হত্যার বিচার না পাওয়ার বেদনা ওকেও বয়ে বেড়াতে হয়, তার প্রশ্নের জবাব কি হবে? আর যদি ছোট্ট মেঘ বড় হয়ে জানতে পারে, এ দেশে জাতির জনক হত্যার কিংবা যুদ্ধাপরাধের(ততোদিনে গোলাম আযম গং তাদের পাপের যথাযথ শাস্তি পাবে, এ আশাবাদ থেকেই বলছি) বিচারের মতোই সাধারণ মানুষও আইনের ন্যায্য অধিকার পায়, সেটাই হবে মেঘেদের জন্য জাতির দায়শোধের সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত।
তাই সাগর-রুনি হত্যার প্রকৃত আসামিদের আইনের আওতায় এনে বিচার শুরু করতে হবে, এখনই।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৪ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১২
এএসআর