ঢাকা: পরিবেশবিদরা উত্তরাখণ্ডে চলমান বন্যাকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলতে নারাজ, ওদিকে আবার এই দুর্যোগের জন্য ভূতত্ত্ববিদরা দায়ী করছেন আবাসন প্রকল্প নিয়ন্ত্রণকারীদের। প্রত্যেকেই বলছেন, অবাধে বসতি স্থাপনের অনুমতি না পেলে ওই এলাকায় মৃতের সংখ্যা এতোটা বৃদ্ধি পেতোনা।
১৯৮৬ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ নীতিমালা অনুযায়ী, ভাগীরথীর নিকটে গাওমুখ ও উত্তরাকাশিসহ প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার এলাকাকে জলাধার হিসেবে ঘোষণা করে ভারতের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। কিন্তু গত ২০১২ সালের ১৮ই ডিসেম্বর একটি তর্কের অবতারণা হয়। স্থানীয় রাজ্য সরকার এধরনের সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত স্থানীয় অবকাঠামোগত ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্তরায়।
জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’র সাবেক সাধারণ সহ-সভাপতি ভি কে রায়না ভারতীয় দৈনিক-দ্যা হিন্দু পত্রিকায় সম্প্রতি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্ধ করা সম্ভব নয়। কিন্তু আইন বাস্তবায়ন, তদারকির মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি ও মৃতের সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। উত্তরাখণ্ডে নদীর ওপর অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্প চালানোর ফলেই আজ সেখানে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বিশাল ঠেকছে। আর তাই মালিক পক্ষের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখন এতো বেশি।
তিনি আরো বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরকে আগে থেকে আরও সতর্ক হয়ে স্থানীয় রাজ্য সরকারকে দুর্যোগ সম্পর্কে সচেতন করা উচিৎ ছিল। তাহলে একটু আগে থেকেই ওখানে পূণ্যার্থী বা দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেওয়া যেত। এ ব্যাপারে কারো কোনো জবাবদিহিতার বিষয়ও সামনে আনা হচ্ছেনা বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
হিমালয়ের পাদদেশে উন্নয়ন প্রকল্প চালানোর ব্যাপারে স্থানীয় সরকারকে নতুন করে হিমালয় পর্বত শ্রেণীর উন্নয়ন মডেল পর্যালোচনা করতে হবে বলে অভিমত দিলেন সেন্টার ফর সাইন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সুনিতা নারায়ন। তিনি আরও বলেন, যেহেতু ওই অঞ্চলে এই মুহূর্তে সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা সম্ভব হচ্ছেনা, কিন্তু এধরনের প্রাকৃতিক সংরক্ষিত এলাকায় প্রকৃতি ধ্বংস না করে যেন ভবিষ্যতে নির্মাণ প্রকল্পগুলো চলমান রাখা হয়, সে ব্যাপারে মনযোগী হতে হবে। তিনি এরই সঙ্গে যোগ করে বলেন, হিমালয়ের পাদদেশে আকষ্মিক বন্যার আঘাত সমতলের থেকে বেশি ভয়ানক। হিমালয় এখনও ভূতাত্ত্বিকভাবে অস্থিতিশীল। উত্তরাখণ্ডে এখনও রাস্তাঘাট কিংবা অন্যান্য নির্মাণ প্রকল্পের মতো অতোটা উন্নত নয়। তাই মৃতের সংখ্যা আরো বেড়েছে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে।
মূখ্যমন্ত্রী বিজয় বাহুগুনা এই বন্যার ভয়াবহতাকে ‘হিমালয়ের সুনামী’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি গত মাসে উত্তরাখণ্ডের সংরক্ষিত এলাকায় অনিয়ন্ত্রিতভাবে বসতবাড়ি, হোটেল নির্মাণ, বিদ্যুৎ ও খনি খনন প্রকল্প এবং সেইসঙ্গে অন্যান্য বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বন্ধের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। অন্যদিকে পরিকল্পিত জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প নিয়েও সমালোচনার ঝড় তুলেন পরিবেশবিদরা। ১৭৪৩ মেগাওয়াটের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ভাগীরথী নদীর ওপর নির্মাণ করা হলে তা পরিবেশের ওপর হুমকি হতে যাচ্ছে। এছাড়াও চীনের কুনমিংয়ে অবস্থিত চাইনিজ একাডেমী অফ সাইন্স ও দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে গবেষণা করে বের করেছেন, এই বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রায় ১৭০০ বর্গ কিলোমিটার বনাঞ্চল পানিতে ডুবে যাবে।
গত বছরও উত্তরাখণ্ড রাজ্যে আকষ্মিক বন্যা হয়েছিল। এ ধরনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের গাফিলতিকে মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৪ ঘণ্টা, জুলাই ০১,২০১৩
সম্পাদনা: বেনু সূত্রধর, নিউজরুম এডিটর