প্রসঙ্গ: ঢাকা-মোহনগঞ্জ আন্তঃনগর ট্রেনের নাম হোক "কংস এক্সপ্রেস"
মাননীয় মন্ত্রী
আমার সালাম ও শুভেচ্ছা নেবেন। এখানে আমি `কংস` নামকরণের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরছি।
১. কংস নামের উৎপত্তি কংসাবতী নদী (শেরপুর অংশে) থেকে, এটি মহাভারতের খলচরিত্র কংস নয়। সূত্রঃ উইকিপিডিয়া।
২. কংস হলো নেত্রকোনা জেলার দীর্ঘতম, গভীরতম ও বহুমাত্রিক ঐতিহ্যবাহী আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত এক নদী।
৩. কংস, ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা ও যমুনা যাই হোক না কেন, নদী সব সময় ধর্মনিরপেক্ষ। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে উপকার করে যায়। কংস ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক নদী হলে এতে মুসলমানদের অজু-গোসল নিষিদ্ধ হতো। কাজেই এ নামে ধর্মীয় বিপত্তি ও আপত্তি নেই।
৪. কংস গতিময়তার প্রতীক, আন্তঃনগর ট্রেনও তাই। এ জন্যেই বিশ্বের অধিকাংশ আন্তঃনগর ট্রেনের নাম সেই এলাকার নদীর নামে।
৫. ঢাকা থেকে কয়েকটি জেলা পেরিয়ে কংস এক্সপ্রেস যখন নেত্রকোনার দিকে ছুটবে, তখন পরিচিত-অপরিচিত সবাই বুঝবে ট্রেনটি নেত্রকোনায় যাচ্ছে। এতে নেত্রকোনার পরিচিতি ও আলোচনা আরো বাড়বে। কাশবন হলে তা হবে কি?
৬. সুন্দরবন ও উপকূলীয় ঝাউবন ছাড়া অন্যান্য বন(কাশবন, বাঁশবন, উলুবন ইত্যাদি) সারা বাংলাদেশে বিস্তৃত হলেও এদের কোন আঞ্চলিক গুরুত্ব ও এলাকা শনাক্তকারী পরিচিতি নাই। ফলে এ ধরনের বনের নাম দিয়ে নামকরণ হাস্যকর হবে।
৭. কংস নামটি সমগ্র নেত্রকোনা জেলার পরিচয়বাহী, কিন্তু কাশবন নামটি একটি গ্রাম ও একটি প্রতিষ্ঠানকেই শুধু তুলে ধরে।
৮. কারো ব্যক্তিস্বার্থে ও কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম প্রচারের স্বার্থে নামকরণের প্রয়াস নন্দিত হতে পারে না। যেখানে নিঃস্বার্থভাবে সামষ্টিক ও বৃহত্তর পরিধির উৎস থেকে নামকরণ সম্ভব।
৯. নামকরনের জন্য ছোট্ট কোনো ফেসবুক গ্রুপের আয়োজিত একপেশে জরিপের ফলাফল কোনো জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে না। কারণ, এই জরিপের কোনো বিধিবদ্ধ নিয়ন্ত্রক ছিলো না, ছিলো না কোনো স্বীকৃত পদ্ধতি।
১০. কোনো নদীর নামই সাহিত্যমূল্যে অন্য কোনো নামের চেয়ে তুচ্ছ নয়।
১১. কংস নামের মধ্য দিয়ে নেত্রকোনার সার্বিক ঐতিহ্য ও গুরুত্ব ফুটে উঠবে, কাশবনের মধ্য দিয়ে তা হবে কি?
১২. কোনো কিছুর নামকরণের সর্বময় ও চূড়ান্ত কর্তৃত্ব শুধু কবি-সাহিত্যিকদের একচেটিয়া নয়। সে অধিকারটুকু অন্যদের জন্য না রাখলে, কবি-সাহিত্যিকদের উদার ও গণতান্ত্রিক ভাবধারা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
১৩. কংস নামকরণের জন্য মাননীয় সংসদ সদস্যদের ডিও লেটার গেলেও, আমিই প্রথম এই নাম প্রস্তাব করে ফেসবুক এবং NDC-তে পোস্ট দিই, এবং এর পক্ষে জনমত গড়ে ওঠে। মাননীয় সংসদ সদস্যরা এই নামের পক্ষে ডিও লেটার দিয়ে নেত্রকোনার জনগণের সমর্থনই প্রকাশ করেছেন। যেহেতু, তারা জনপ্রতিনিধি, তাদের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
১৪. জন আকাঙ্ক্ষা সঙ্গে সাহিত্যিকদের কল্পনার সুর যে কখনও এক হবে না তাতো নয়। অর্থাৎ, কংস সাহিত্যিকদেরও পছন্দ হতে পারে।
১৫. চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর ট্রেনের নাম আগে কর্ণফুলী ও উপকূল এক্সপ্রেস হওয়ার পরেই আরেকটি ট্রেনের নাম সুবর্ণ হয়েছে।
১৬. কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম তার আপন মহিমা ও ক্রিয়াকলাপে বিকশিত হয়। কোনো ট্রেনের নামকরণের মধ্য দিয়ে নয়।
১৭. কংস কোনো কলংকিত ও দু:খপ্রদায়ী নাম হলে বাংলার জনগণ তা এতোদিনে পরিবর্তন করে ফেলতো।
১৮. কাশবন-এর নামে কোনো স্টেশনের নামকরণ করার প্রস্তাব করলে তা যুক্তিযুক্ত ও যুতসই হতো।
১৯. নামটি কে দিয়েছে, সেটি বড় বিষয় নয়, নামটি কী এবং কেন সেটিই বড় বিষয়।
সর্বোপরি কংস এক্সপ্রেস নামের পক্ষে আপনার সমর্থন চেয়ে এখানেই শেষ করছি।
রফিকুল ইসলাম
বিভাগীয় প্রধান ও প্রভাষক
অর্থনীতি বিভাগ
সুসং ডিগ্রি কলেজ
দুর্গাপুর, নেত্রকোনা, nim71@yahoo.com
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০১৩
জেডএম/জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর