ঢাকা: নারীদের `তেঁতুলের` সঙ্গে তুলনা করে নতুন বিতর্কে জড়িয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী। তার বক্তব্য নিয়ে ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বইছে সমালোচনার ঝড়।
বাংলানিউজের কাছেও নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের স্ত্রী মিলি রহমান বলেন, নোংরা, জঘন্য, ছি:। ওকে (মাওলান শফী) এতো গুরুত্ব কেন দেওয়া হচ্ছে সেটাইতো বুঝতে পারছি না, ওর কী যোগ্যতা রয়েছে? মিডিয়া কেন তাকে এতো প্রাধান্য দিচ্ছে, কেন ওর কথা এতো প্রচার করছে, এতে তো ও বেশ মজা পাচ্ছে। এতো নোংরা, কুৎসিত ভাষা মিডিয়া প্রচার করছে কী করে, এটা মিডিয়ার কাছে আমার প্রশ্ন। একটা বিকৃত লোক কী বলে বেড়াচ্ছে সেটা আমরা শুনবো কেন।
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক এবং নারী নেত্রী অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, যৌনতাকে মানুষ যে কীভাবে নগ্ন করেছে এই শফী তার প্রমাণ। মাওলানা শফী নারীর প্রতি মানুষের ভয়ানক বিকৃতির উদাহরণ তৈরি করলেন, যেটা মুছে ফেলা দুষ্কর হবে। ৯৪ বছরের বয়স্ক এক লোক যেটা প্রত্যক্ষ করেছে সেটার কোন পরিবর্তন হয় নাই। কিন্তু আমাদের বাবা, স্বামী, ভাই, বন্ধুরা যদি সবাই এমন হতো তাহলে পৃথিবী আজ এখানে আসতো না।
অ্যাডভোকেট সালমা আলী আরও বলেন, শফীতো শুধু নারী নয়, পুরুষদেরও অপমান করেছে। আমি বুঝতে পারছি না, পুরুষরা কেন এর প্রতিবাদ করছে না, সেটাও এক প্রশ্ন আমার। প্রতিটি পুরুষকে সে লালসাময় ভাবে উপস্থাপন করেছে, কোনো পুরুষের কী এতে অপমানবোধ হয়নি?
নারীর চরিত্র নিয়ে বারবার হেফাজত এভাবে আক্রমণ করে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দল এবং মিডিয়ারও দোষ রয়েছে এতে আমি মনে করি। মিডিয়া কেন হেফাজত ও শফীকে এতো কাভারেজ দিচ্ছে? কোথাকার কোন শফী কি বললো, সেটা এতা ফলাও করে প্রচার করার কি আছে। নারী আজ তার যোগ্যতায়, দক্ষতায় এগিয়ে এসেছে, এগিয়ে যাবে, নারী কোন ভোগ্য পণ্য নয়
তিনি আরও বলেন, শফীর এ মন্তেব্যের প্রতিবাদে যদি রাজনৈতিক দল, প্রশাসন এগিয়ে আসতো তাহলে হেফাজত একের পর এক এভাবে বলতে পারতো না। এই ধরনের কথায় আমরা পঞ্চাশ বছর পিছিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু আমাদের অর্জন রয়েছে অনেক। যুগে যুগে ধর্মীয় নেতা এসেছেন এখানে, কিন্তু সবসময় রাষ্ট্রীয়জীবন থেকে ধর্মকে পৃথক রাখা হয়েছিল। কিন্তু এখন যেভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দড়ি টানাটানি করছে ধর্মকে নিয়ে, সেটা কোনভাবেই ঠিক নয়। নারীর মর্যাদা, সম্মান কোনোভাবেই নষ্ট হবার নয়।
অপরদিকে আইনজীবী এলিনা খান বলেন, এটা কোনভাবেই ধর্মের কথা হতে পারে না। কারণ ইসলাম নারীদের নিয়ে কখনোই এ ধরনের কথা বলেনি, ইসলাম নারীকে অসম্মান করেনি। বরং, কোরআন শরীফে নারীকে সম্মান, মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। সুরা নিসা, সুরা বাকারা এবং সুরা নূরসহ প্রায় সব সুরায় নারীকে সম্মান করার কথা বলা হয়েছে। শফী সাহেব তার মাকে অপমান করেছেন কারণ তার মাও একজন নারী। নারী কখনো তেঁতুল হতে পারে না। নারী মানুষ এবং মানুষকে দেখে কখনো কোনো মানুষ লোভাতুর হতে পারে না।
অপরদিকে শিক্ষক ও আইনজীবী ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, ভিডিওচিত্রটি আমি দেখেছি এবং এটা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। আমাদের মাদ্রাসাগুলোতে আসলে কী শেখানো হচ্ছে, সেটা ভাবার সময় এসেছে। তিনি আরও বলেন, অসুস্থ, কুরুচিপূর্ণ শিক্ষা গ্রহণ করে বাংলাদেশের মাদ্রাসার শিক্ষাথীরা ক্রমাগত অসুস্থ মানুষে পরিণত হচ্ছে, এটা জানার পরও আমরা দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছি না। ধর্মশিক্ষার আড়ালে আমাদের ১৪/১৫বছরের কিশোর সন্তানদের যৌনতার অশ্লীল কথবার্তায় উত্তেজিত করে তোলা হচ্ছে, এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ফেসবুক খুলে দেখা যায়, হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী নারীদের স্বাধীনতা, শিক্ষা ও চাকরি সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে বক্তব্য দিচ্ছেন একটি ওয়াজ মাহফিলে। তার বক্তব্য সংবলিত একটি ভিডিও ফুটেজও আছে ফেসবুকে। ওয়াজে নারীদের তেঁতুলের সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি।
আল্লামা শফী বলেন, `তেঁতুল দেখলে মানুষের যেমন জিভে জল আসে তেমনি নারীদের দেখলে দিলের মইধ্যে লালা বাইর হয়। ` নারীদের কাজের ক্ষেত্র প্রসঙ্গে আল্লামা শফী বলেন, `শোনো নারীরা, চার দেয়ালের ভেতরই তোমাদের থাকতে হবে। স্বামীর বাড়িতে বসে তোমরা আসবাবপত্র দেখভাল করবা, শিশু লালন-পালন, পুরুষ-শিশুদের যত্ন করবা। এই হলো তোমাদের কাজ। তোমাদের কেন বাইরে যেতে হবে?`
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব মতে, দেশের চাকরিজীবী নারীর সংখ্যা এক কোটি ৭০ লাখ। মোট জনসংখ্যার তুলনায় আবার অর্ধেক নারী।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৩
জেএ/সম্পাদনা: নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর;জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর