ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

সাংবাদিকতার আঙুর: টক-মিষ্টি সমাচার (আপডেটেড)

সারওয়ার রেজা জিমি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২০ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৩
সাংবাদিকতার আঙুর: টক-মিষ্টি সমাচার (আপডেটেড)

মোহনা টিভির যুগ্ম বার্তা সম্পাদক আব্দুর রউফ গত ১০ জুলাই একটি লেখায় দেশের টিভি মিডিয়ার ভাষাজ্ঞান নিয়ে গভীর হতাশা প্রকাশ করতে গিয়ে প্রকারান্তরে আত্মবিজ্ঞাপনের যে নমুনা রেখে গেলেন তা বিশেষ কৌতুকরসের সৃষ্টি করেছে। ব্যক্তিগত ফোরামে তা নিয়ে হাসাহাসিই যথেষ্ট ছিল।

কিন্তু আজ আবার চোখে পড়লো মোহনায় তারই এক সহকর্মী ফোড়ন কেটে আরেকটি লেখা উৎপাদন করেছেন। সুতরাং এবার মাউস-কিবোর্ড ধরতে হলো।

পাঠকের রস এবং বিবেচনাবোধের ওপর শতভাগ আস্থা রেখে উদাহরণ টানছি- ‘কেননা ইদানীং আমাদের মোহনা টিভিতেও অসংখ্য ভুল যাচ্ছে। বাসায় চলে যাওয়ার পরই দেখি টিকারের কি ভয়াবহ অবস্থা’।

অর্বাচীন টিভি চ্যানেলগুলো করছেটা কী?! এমন একটি সম্পদকে নিজের চ্যানেলে নেওয়ার জন্য তো কাড়াকাড়ি পড়ে যাওয়ার কথা!

‘আমি ব্যক্তিগতভাবে এই ভুলটি কম করার চেষ্টা করি। মোহনা টেলিভিশনে বলতে গেলে আমি একা নিউজ এডিটর। তাও পুরোপুরি না, জয়েন্ট নিউজ এডিটর। তিন বছর হলো। কিন্তু চেয়ারম্যান সাহেব প্রমোশন দেবেন না’।

মোহনা টিভির চেয়ারম্যান সাহেবের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনি তো জনাব রতন চিনলেন না!

মোহনা টিভির সবচেয়ে নবীন রিপোর্টারদের উপদেশমালা বিতরণ করতে করতে আঙিনা ডিঙিয়ে যখন জনাব রউফ দেশের সমস্ত টিভি চ্যানেলের জ্যাঠা হতে চান তখন একজন সাধারণ সংবাদকর্মী হিসেবে আমারও কিছু জ্যাঠামি করতে লোভ জাগে।

ভাষার প্রশ্নে বিশেষ করে বানান ভুল নিয়েই যখন জনাব রউফের উদ্বেগ রীতিমতো বাংলাভাষার ইজ্জত লুটের পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তখন তার এই জনগুরুত্বপূর্ণ লেখাটিতে তিনি নিজে কতখানি ভাষা ও বানানশুদ্ধ ছিলেন তা একটু দেখা বোধহয় দোষের হবে না!

‘ক’টি বিখ্যাত টিভি চ্যানেলের খপ্পড়ে পড়ে ইজ্জত হারাচ্ছে বাংলা ভাষা’

খপ্পর। জনাব রউফ বলতেই পারেন তিনি টাইপো’র ‘খপ্পড়ে’ পড়েছেন। পাঠক খেয়াল করে দেখুন, জনাব রউফের উল্লেখ করা বেশিরভাগ ভুল বানানও টাইপো হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

‘রাজনীতির গ্যাড়াকলে মাইনকা চিপায় আমরা। কই নিয়ে গেছে সাংবাদিকতাকে এরা। এটা কোন টিভি’র ভাষা হতে পারে?’
ভাষা নিয়ে শুদ্ধাচারী হতে গিয়ে আপনি ‘কই’ গিয়ে ঠেকলেন ভাই? ‘কই’ তো অন্তত আপনার ভাষা হতে পারে না!

সবশেষে, ‘স্ল্যাগ’। যা একেবারে রউফ সাহেবের লেখার শুরু থেকেই জ্বলজ্বল করছে। দেখুন slag  শব্দটির মানে ডিকশনারি কী বলছে-
১. stony material ejected by a volcano; scoria
২. Slag is a pejorative slang term, primarily used in United Kingdom, the Republic of Ireland and Australia, to describe women who often engage in casual sex and promiscuous behaviour. Its meaning is broadly similar to the terms "slut" and "skank". It originally derives from the same term for piles of impurities skimmed off

ইজ্জত তো আক্ষরিক অর্থে মেরে দিলেন ভাই।

শব্দটি হবে স্লাগ (slug) । মানে-In newspaper editing, a slug is a short name given to an article that is in production.

ভুলের সাফাই গাওয়ার কোন উপায় নেই। বিশেষ করে গণমাধ্যমে ভুল বানান কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের গণমাধ্যমে অনেক জ্যেষ্ঠ সংবাদকর্মীদেরও ভাষা বিশেষত বানান ভুল লজ্জা পাবার মতোই। এবং একথাটিও নির্দ্বিধায় স্বীকার করতে হবে, প্রিন্ট মিডিয়ার তুলনায় ইলেকট্রনিক মিডিয়ার অবস্থা অর্ধশিক্ষিত পর্যায়ের। এদিকে নজর দেওয়া সত্যিই অত্যন্ত জরুরি।

জনাব রউফের লেখায় যতটুকু ছিল এই দিকে চোখ ফেরানোর তাগিদ- তার জন্য সাধুবাদ। কিন্তু তার লেখার সুরটি এই বিষয়টিকে ছাপিয়ে অন্যদিকে গেছে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, তার ভাষায় ‘এ টু জেড’।

ক্রমাগত বক্রোক্তি আর আত্মপ্রচারই যে লেখাটির মূল সুর ছিল, পাঠকমাত্রই তা বুঝবেন। ভাষা নিয়েই যখন ভাবছেন তখন ভাবনার জায়গায় এটিও থাকা উচিৎ- প্রয়োজনীয় কথাটি ঠিক কোন ভঙ্গিতে বলা সঙ্গত। সবমিলিয়ে গণমাধ্যমকে শুধরে দিতে যতটা না, লেখাটি থেকে লেখকের পেশাজীবনে ব্যক্তিগত ব্যর্থতাজাত হতাশার প্রতিধ্বনি তার চেয়ে অনেক বেশি প্রকট।

সবশেষে বলতে চাই, ‘উত্তম’ হওয়ার চর্চা অব্যাহত থাক। গণমাধ্যমে তার প্রচারও চলতেই পারে। কখনো না কখনো মোহনায় না হোক, অন্য কোথাও মিষ্টি আঙুরের সন্ধান মিলেই যাবে।

পুণশ্চ. একটি লেখার প্রতিক্রিয়া লিখে শেষ করতে না করতেই আরেকটি রচনা হাজির দেখতে পেলাম। আগের চেয়েও বেশি আত্মপ্রচারময়। আগের মতোই প্রবঞ্চক শিরোনাম-‘টেলিভিশন সাংবাদিকতা: অসুস্থ প্রতিযোগিতার অভয়ারণ্য’। ভেতরের লেখার সঙ্গে যার যথার্থতা খুঁজলে পাঠক হয়রান হবেন।

এবারে বানানের সঙ্গে উচ্চারণ ধরেছেন লেখক। পুরো লেখার কাটাছেঁড়া করার উৎসাহ পাচ্ছি না। স্রেফ উচ্চারণ শেখাতে গিয়ে তিনি যে আবারও কেঁচে দিলেন তার একটি নমুনা দিয়ে রাখছি- বিহ্বল। এর উচ্চারণ ‘বিওভল’ নয় ভাই, উচ্চারণটা ‘বিউভল’। অন্তত আপনার কন্যা যেন ভুল না শেখে, তাই আবারও এই জ্যাঠামো!

সারওয়ার রেজা জিমি: প্রতিবেদক, সময় টেলিভিশন, reza.sarower@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৩
জেডএম/ জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।