‘আমি একদিনও না দেখিলাম তারে … বাঞ্ছা করি দেখব তারে কেমনে সেথায় যাই রে’
–হ্যাঁ, লালনের গানের সাথে মিলিয়েই আমার মনের আকাঙ্ক্ষাগুলো এভাবেই প্রকাশ করলাম -খুব ইচ্ছা করেছিল ‘বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’- পরিবারকে একবার দেখে আসি- কিন্তু সাত সমুদ্র তের নদীর পাড়ে বসে সেটা প্রশ্ন হয়েই ছিলো- কীভাবে সেখানে যাব! বললেইতো আর হয় না। তাছাড়া বাংলানিউজ পরিবারের কারো সাথে চেনা নাই পরিচয় নাই- তারা আমাকে চেনেনই না- কার কাছে কখন কোথায় কীভাবে যাব! তাই মনের বাঞ্ছা মনেই গোপনে রয়ে গেল।
রোমান্টিক বর্ষার ভরা মৌসুমে অর্থাৎ ১৭ আষাঢ় এক কদমফোটা বর্ষণসিক্ত দিনে বাংলানিউজ-এর জন্ম। চতুর্থ বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে একটু দেরিতে হলেও একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকা বাংলানিউজের সকল সম্মানিত পাঠক ও কর্মীদের জানাচ্ছি একগুচ্ছ প্রস্ফূটিত কদমফুল শুভেচ্ছা। যে বর্ষায় বাংলানিউজ এর জন্ম সে বর্ষা হল একা, একমাত্র- তার জুড়ি নেই- এ বসুন্ধরায় বাংলা ছাড়া আর কোথায়ও বর্ষা বলতে কোনো ঋতু নেই, তাই বর্ষা হল বাঙালিদের ঋতু- শুধু বাঙালিদের- বর্ষার মত বাংলানিউজও কোটি কোটি বাঙালির কাছে জনপ্রিয় অন লাইন পত্রিকা। বর্ষাবিহীন বাংলাদেশ! কল্পনাই করা যায় না- তাই যেখানেই থাকিনা কেন আমরা যে বর্ষাপ্রেমী বাঙালি- বাংলানিউজবিহীন বাংলাদেশ! এখন কল্পনাই করা য়ায় না! যেখানেই থাকিনা কেন আমরা যে বাংলানিউজপ্রেমী বাঙালি!
বাংলানিউজ এর কারো সাথে আমার কোনো পূর্ব পরিচয় ছিল না। আমি মাঝে-মধ্যে এই প্রবাসের অনলাইন পত্রিকাগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের উপর কিছু লেখা পাঠাই- একদিন ভাবলাম প্রবাসের অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত লেখাগুলো বাংলাদেশের পাঠকরা আসলে পড়েন কি না! তাই একদিন কৌতূহলবশত বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এ ‘৫ সহযোদ্ধা শরতের শিশিরের মত ঝরে গেলো!’ শিরোনামে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ঘটনার উপর একটি লেখা পাঠাই-
http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=f7842f68f123d866ca9f8e786c3c7239&nttl=20121001102200142578
একাত্তরের এই ঘটনাটির সাথে আমি নিজেও জড়িত ছিলাম এবং সেই ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধাদের শহীদদের তালিকায় দুইদিন পর্য্যন্ত আমার নামটিও বাঞ্ছারামপুরের রুপসদী জমিদার বাড়ি তথা মুক্তিযোদ্ধা হেডকোয়ার্টারে টাঙানো ছিল। হঠাৎ একদিন লেখাটির প্রাপ্তি স্বীকার ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং ধন্যবাদ জানিয়ে হেড অব নিউজ মাহমুদ মেনন এর পাঠানো একটি ই-মেইল পাই এবং তিনি বাংলানিউজকে বেছে নেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বাংলানিউজের সাথে যোগাযোগ থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন এবং প্রকাশিত লেখাটির লিঙ্কও পাঠিয়ে দেন।
ই-মেইলটি পেয়ে শরীরে শিহরণ জাগে এবং রোমাঞ্চিত হয়ে উঠি- কারন এধরণের প্রাপ্তি স্বীকার করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও ধন্যবাদ দিয়ে লেখার জন্য উৎসাহ প্রদান করার সংস্কৃতি মনে হয় বাংলানিউজই প্রথম দেখালো এবং এই সংস্কৃতি বাংলানিউজের নিজস্ব- একান্ত নিজস্ব।
বাংলানিউজের উৎসাহ পেয়ে আমি কয়েকদিন পরেই ‘তিতাস পাড়ের আর্তনাদ আজও শোনা যায়!’ শিরোনামে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনার উপর আরেকটি লেখা পাঠাই।
http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=6ec4d92bf58a162b02eda183b4a0c2ae&nttl=05102012143282
এখানেও একই রীতিতে প্রাপ্তি স্বীকার করে এবং লেখাটির লিঙ্ক পাঠায় বাংলানিউজ। সবচেয়ে মজার ব্যাপার লেখাটিতে ঘটনার সাথে মিল রেখে নতুন প্রজন্মের সুবিধার জন্য SONG OF BANGLADESH by Joan Baez -এর মুক্তিযুদ্ধের উপর গাওয়া গানের ইউটিউবের ভিডিওটি ওপেন করে দেওয়া হয়। এভাবেই বাংলানিউজের সাথে মনের অজান্তে ধীরে ধীরে প্রেমে পড়ে যাই- এ যেন ‘কেহ জানিবে না মোর গভীর প্রণয়, কেহ দেখিবে না মোর অশ্রুবারিচয়। আপনি আজিকে যবে শুধাইছ আসি, কেমনে প্রকাশি কব কত ভালবাসি। । ’
বাংলানিউজ কতটা দ্রুত! সুপারস্টর্ম ‘স্যান্ডি’ যখন হ্যারিকেনে রূপ নিয়ে আছড়ে পড়ে নিউইয়র্কের উপর- তখন মাহমুদ মেনন ছিলেন নিউইয়র্কে। ক্যানেটিকাটের ম্যানচেস্টারে বসে রাত জেগে জেগে ‘স্যান্ডি’র সর্বশেষ খবর জানার জন্য টিভি দেখছি আর বাংলানিউজ ক্লিক করছি ঘনঘন। ম্যানচেস্টারে বিদ্যুৎ লুকোচুরি খেলেছে কিন্তু স্থায়ীভাবে যায়নি- হঠাৎ দেখি ‘স্যান্ডি’ ঝড়ের সর্বশেষ খবরের ব্যাপারে বাংলানিউজ অনেক অনেক এগিয়ে আছে- বাংলানিউজ যে নিউজটা এখন দিচ্ছে- স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো বা মিডিয়াগুলো ঝড়ের খবর লাইভ দেখানোর পরও সেটা দিচ্ছে অনেক অনেক পরে- এ যেন স্থানীয় মিডিয়া বাংলানিউজের কাছে আত্মসমর্পণ! অবাক হয়ে যাই- এ কী করে সম্ভব! বাংলানিউজ এসব সর্বশেষ খবর কীভাবে ম্যানেজ করলো? এই বিস্ময়কর ঘটনার জন্য ঝড়ের রাতেই রাত ৩ টায় মাহমুদ মেনন এর কাছে ই-মেইল করি। নিউইয়র্ক ছিল সে রাতে ভুতুরে নগরী- তাই তাকে এবং বাংলানিউজের নিউইয়র্ক প্রতিনিধি, এখন স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট র্র্শিহাবউদ্দিন কিসলু-কে ধন্যবাদ দিয়ে এবং ঝড়ের রাতে তাদের আরো সাহস ও উৎসাহ দেওয়ার জন্য লোপামুদ্রা মিত্রের গাওয়া রবীন্দ্রনাথের গান ‘ঝড়কে আমি করব মিতে, ডরব না তার ভ্রুকুটিতে- দাও ছেড়ে দাও, ওগো, আমি তুফান পেলে বাঁচি। । ’ -এই গানের ইউটিউবের লিঙ্কটি পাঠিয়ে দেই। http://youtu.be/XknjFyx0ZLc
যাইহোক অবশেষে ঢাকার পথে। `৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার পর দীর্ঘ ৯ মাস পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় শহর আমার ঢাকাকে দেখি নাই অর্থাৎ ঢাকা এই প্রথম চোখের আড়াল হয়ে য়ায়- তবে মনের আড়াল এক মুহূর্তের জন্যও হয়নি। আর এবার ৯৩ মাস ১৮ দিন হলো আমার শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের প্রিয় শহর ঢাকাকে দেখি না- এখন আর ঘুম হয় না- আমার মনে হয় যতক্ষণ না ঢাকাকে না দেখবো- ততক্ষণ আমার আর ঘুম আসবে না- কেন এরকম হচ্ছে আমি বলতে পারবো না। ঢাকা, ‘বড় সাধ জাগে একবার তোমায় দেখি, কতকাল দেখিনি তোমায়’। ঢাকা, আমি জানি তুমি এখন তিলোত্তমা, তুমি অপ্সরা- তোমাকে স্বর্ণালি অলংকার পড়িয়ে নববধূরূপে সাজানো হয়েছে- তোমার রহস্যময়ী প্রেমের স্বপ্নীল অপরূপ রূপে আমি মুগ্ধ- তোমার অপরূপ সৌন্দর্য্যের বিচিত্র নয়নাভিরাম শোভা দেখে প্রাণে শিহরণ জাগে মন রোমাঞ্চিত হয়- প্রেমের আকাঙ্ক্ষা জাগে, ভালোবাসার স্পর্শ প্রত্যাশা করি- রাতে আলো ঝলমল তোমার চোখ ধাঁধাঁনো লুকোচুরি স্নিগ্ধ আলোতে বিমুগ্ধ নয়নে তোমার মনোলোভা রহস্যময়ী আকর্ষণীয় সৌন্দর্য্য উপভোগ করি- তোমার অনিন্দ্যসুন্দর রূপলাবণ্য দেখে তোমার প্রেমে বিভোর হয়ে তোমাকে না ভালোবেসে কি পারি! ঢাকা, তুমি এখন বিশ্বসুন্দরী- সারা বিশ্ব এখন তোমার সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ। এতোদিন-এতোবছর পর এসে আমি আকাশচুম্বী ভবনের শহরে তোমাকে খুঁজে পাবো তো- আর তুমিই বা আমাকে আগের মতো চিনতে পারবে তো- আগের মতো ভালোবাসবে তো? আর যদি চিনতে নাও পারো- ভালো নাও বাসো- তারপরও আমি দূর হতে তোমাকে ভালোবেসেই যাব- ছেলেবেলায় একবার যাকে ভালোবাসা যায় তাকে কি কখনো ভোলা যায়!
এভাবে প্লেনে দীর্ঘ ২৩ ঘন্টার ভ্রমণে সারাটা পথ মনে মনে-স্বপ্নে-কল্পনায় শুধু ঢাকা এবং ঢাকার কথা ভেবেছি। ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে বের হওয়ার পথেই প্রথমেই চোখে পড়লো গোলচত্ত্বরে লালনের ভাস্কর্য্য সত্যি সত্যি হাওয়া হয়ে গেছে- অথচ পবিত্র নগরী জেদ্দা হয়ে এসেছি, সেই জেদ্দায় শোভা পাচ্ছে উটের ভাস্কর্য্য! সেটা ভাঙ্গার জন্যতো কেউ কথনও বলেনি!
এয়ারপোর্ট রোডে উড়াল সড়ক দেখে চমকে উঠি- এতো ভাগে ভাগ করা উড়াল সড়ক কোনটা কোন দিকে গেছে কে বলবে! কলাবাগান লেকসার্কাসের ডলফিন গলিতে ঢুকেই শরীরে শিহরণ জাগে! নিজের মহল্লাকে চিনছি না! সত্যি কথা বলতে কি এমনকি আমাদের বাসাটাকেও ভালভাবে চিনতে পারছি না- আমদের বাসা হারিয়ে গেল কোথায়! এ আকাশ চুম্বী ভবনতো কখনো আমাদের বাসা ছিল না!
আমি কি আমার সেই শৈশবের স্মৃতিবিজরিত লেকসার্কাসের বাসায় এসেছি না অন্য কোথাও! অবাক হয়ে দেখছি সবকিছু! আসলে প্লেনে বসে বসে ঢাকাকে নিয়ে কতকিছু কল্পনা করেছি- আর এখন সেই কতকিছু অবাক হয়ে দু’চোখ দিয়ে দেখছি!
১৯ জানুয়ারি’১৩ শনিবার ‘বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’-কে দেখতে যাব। কী যে আনন্দ! আগেই ফোন করে নেই বাংলানিউজ এর অফিসটাকে ভালভাবে চেনার জন্য- তিনি বললেন বারিধারা আবাসিক এলাকার ‘মিডিয়া হাউস’ বললেই সবাই দেখিয়ে দিবে। কিন্তু মিডিয়া হাউসকে খুঁজে পেতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে- তাছাড়া আমার কাছেতো সবই অচেনা লাগছে। একটু ঘুরে আসতে হওয়ায় ভাড়া কিছু বাড়িয়ে অর্থাৎ বকশিস দিতে চাইলাম- বকশিস নিলেন না- সিএনজির ড্রাইভার বললেন- সাংবাদিকদের কাছ থাইক্ক্যা আমি বেশি ভাড়া নেই না। আমরা বললাম আমরাতো কেউ সাংবাদিক না- ততক্ষনে সিএনজিওয়ালা চলে গেল। আমরা সাংবাদিকের ‘স’ ও না অথচ সিএনজিওয়ালা সাংবাদিক মনে করে কি সম্মান করে গেল! সাথে ছিল ভাগ্নি পুনম এবং ভাতিজা লিয়ন- দুইজনকেই বললাম দেখলিতো সাংবাদিকতার কি দাম!
ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া ভবনের এতো সাজানো এবং অত্যাধুনিক স্থাপত্যের নিদর্শনের অফিস দেখে দেখে আমিতো বুঝতেই পারছিলাম না- আমি এখন আমেরিকায় আছি না বাংলাদেশে আছি! আমেরিকার অনেক অফিসইতো এই অত্যাধুনিক ভবনের ধারে কাছেও যাবে না! এই ভবনেই বাংলানিউজের অফিস।
সিকিউরিটিকে বাঙলানিউজের কথা বলাতে তারা সেকেন্ড ফ্লোরে যাওয়ার পথ দেখিয়ে দিল।
মাহমুদ মেনন আমাকে দূর থেকে দেখে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলেন- কুশল বিনিময়ের পর সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। ঘুরে ঘুরে দেখছি আর মুগ্ধ হচ্ছি- সবাই ব্যস্ত সবার দৃষ্টি কমপিউটারের মনিটরের দিকে আর কাগজপত্র এবং কলম-পেন্সিল মনে মনে হয় তারা কবেই জাদুঘরে পাঠিয়ে দিয়েছে এবং সেটার বিকল্প এখন কীবোর্ড এবং মাউস। অবাক হয়ে দেখছি সবারই বয়সে তারুণ্যের ছাপ মনে হয় শরীরে এখনও ছাত্রত্বের গন্ধ লেগে আছে। মনোবিজ্ঞান পড়ি নাই- তারপরও কর্মরত তরুন-তরুণীদের চেহারা দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তাদের মধ্যে কোনো পেশাদারি মনোভাব নেই- মনে হচ্ছে তারা যেন অতি উৎসাহিত হয়ে রোমাঞ্চকর কোনো অভিযানে নেমেছে- ঠিক একাত্তরে আমরা যে মনোভাব নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম- আমি কিন্তু একটুও বাড়িয়ে বলছি না- সেটা বাঙলানিউজ পরিদর্শনের বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকেই বলছি। কথা হলো বাংলানিউজের কনসালট্যান্ট এডিটর জুয়েল মাযহারের সঙ্গে। আমাকে অনুরোধ করলেন আমার বাস্তব অভিজ্ঞার আলোকে মুক্তিযুদ্ধের উপর আরো লেখা পাঠাতে- আমি বললাম আরেকটা অবাক করার মত ঘটনা আছে, সেটা হল আমাদের এখানে অর্থাৎ বাঞ্ছারামপুরের পাকিস্তানি আর্মি এবং রাজাকাররা নয়দিন বিরতিহীন যুদ্ধের পর ২২ ডিসেম্বর’ ৭১ সন্ধ্যার দিকে তিতাসের তীরে এক রক্তক্ষয়ী ট্যাঙ্ক সংঘর্ষের পর মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে আর এটাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের শেষ যুদ্ধ- যেটার সাথে আমিও জড়িত ছিলাম। অবশ্য এই ঘটনাটি অন্য অনলাইন পত্রিকায় দিয়েছি সেটাও বলি- তারপরও তিনি এবং আরো অনেকে অনুরোধ করলেন লেখাটি বাঙলানিউজে পাঠানোর জন্য এবং আমি কথা দিয়ে এসেছি।
এরই মধ্যে এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন ভাই আমাদের আগমনের খবর পেয়ে তার অফিস রুম থেকে আমাদের কাছে এসেই আমার দিকে দু’বাহু বাড়িয়ে দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরেন- যেন কতদিনের পরিচিত কতদিনের আত্মার আত্মীয়- অথচ জীবনের প্রথম দেখা প্রথম পরিচয়। আলমগীর ভাই যেন গ্রেফতারের ভঙ্গিতে আমাকে ধরে নিয়ে যান তার কক্ষে- কুশল বিনিময়, কত না বলা কথা হল- তারপর তার অটোগ্রাফসহ বাঙলানিউজের একটি ডাইরি আমাকে উপহার দেন যেটা আমার কাছে স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষিত আছে। এবার ফটো সেশন। অল্প সময়ের মধ্যেই বুঝতে পারলাম- বাংলাদেশের প্রখ্যাত এই সাংবাদিক কেবল সাংবাদিকতায়ই সেরা নয় খুবই রসিক ও সবাইকে আনন্দের মধ্যে রাখেন তিনি এবং বাংলানিউজ পরিবারের সবাইকে নিয়ে উনি বেশ ভালই আছেন।
তার রসিকতার একটা উদাহরণ দেই- বাংলানিউজের হেড অব নিউজ মাহমুদ মেনন এখন আবার নিউইয়র্কে অফিসের বিশেষ অ্যাসাইনমেন্টে কাজ করছেন। ফেসবুকে দেখলাম নিউইয়র্কে মেননের সেল ফোন হারিয়ে গেছে- সবাই বিভিন্ন মন্তব্য করে সান্ত্বনা দিচ্ছে। আলমগীর ভাই মেননকে সান্ত্বনা দিলেন এভাবে- ‘Tumi haraiyo na abar!!’ -এ মধুরতম বাক্যটির মধ্যে কতো আন্তরিকতা, কতো স্নেহ-ভালবাসা, কতো সান্ত্বনা, কতো রসিকতা, কতো সাবধানতা থাকার কথা- আরো কতো অজানা ভালবাসার কথা থাকতে পারে সেটা আলমগীর হোসেন ভাই আর মেনন মাহমুদই ভাল বলতে পারবেন!!
বাংলানিউজ পরিবারের সদস্যরা সত্যিই ভাগ্যবান আলমগীর ভাইয়ের মতো একজন এডিটর পেয়েছেন- যাকে বাংলাদেশে অনলাইন সাংবাদিকতার পথিকৃৎ বলা যায়। এই তিন বছরে বাংলাদেশে তিনি কত বৃক্ষকে রক্ষা করেছেন এই হিসেবকি পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বা অন্য কেউ করেছেন! আমরা প্রবাসে এতো ব্যস্ততার মধ্যেও কাজে যাওয়ার আগে এবং কাজ থেকে ফিরে এসেই বাংলানিউজ ক্লিক করে চোখ বুলিয়ে নেই- কারণ প্রিন্ট মিডিয়ার খবর থাকে বাসি। এই মুহূর্তে বাঙলানিউজে যে খবরটা দেখছি সেটা হয়তো প্রিন্ট মিডিয়াতে আসতে সময় লাগবে ১২ ঘন্টা বা তার চেয়েও বেশি।
সায়মন ড্রিং যেমন টিভির খবরে একটা নতুন ধারা অর্থাৎ বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছেন যে ধারা এখনও অব্যাহত আছে- ঠিক সেরকমই আলমগীর ভাই অনলাইন পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতায় এক বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছেন- যার ফলে বাংলানিউজ এখন বিশ্বের কোটি কোটি বাঙালির কাছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে স্থান করে নিয়েছে।
এই সুযোগে এখানে আমি বাংলানিউজ কর্তৃপক্ষ তথা আলমগীর ভাইয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি- পশ্চিমবাংলা, আসামের শিলচর (যেখানে বাংলা ভাষার জন্য ১১ জন প্রাণ দিয়েছিল)- হাইলাকান্দি- করিমগঞ্জ এবং ত্রিপুরা তথা আগরতলার বাংলাভাষাভাষীদের কথা চিন্তা করে সেখানকার টাটকা খবর কি প্রকাশ করা যায় না- এদিক দিয়ে কি একটু সুনজর দিয়ে শক্তিশালী করা যায় না- তাহলেই আমি বারবার বলেই যাব বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম হল বিশ্বের ত্রিশ কোটি বাঙালির একমাত্র জনপ্রিয় অন লাইন পত্রিকা।
বাংলানিউজকে বিমুগ্ধ নয়নে দেখে সেখান থেকে বিদায় নেবার সময় রবীন্দ্রনাথের ‘যাবার দিন’ কবিতার দুটি চরণ বার বার মনে হচ্ছিলো-
“বিশ্বরূপের খেলাঘরে কতই গেলেম খেলে,
অপরূপকে দেখে গেলেম দুটি নয়ন মেলে। ”
বাংলাদেশ সময় ০৩৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৩
এমএমকে