ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

প্রতিক্রিয়া ‘ব্রেকিং নিউজ যাচাই করে দিলেই হয়!’

শহীদুল আলম ইমরান, সাংবাদিক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৩
প্রতিক্রিয়া ‘ব্রেকিং নিউজ যাচাই করে দিলেই হয়!’

ঢাকা:  দৈনিক কুমিল্লার কাগজ’র সম্পাদক ও চ্যানেল আইয়ের কুমিল্লা প্রতিনিধি আবুল কাশেম হৃদয়কে ধন্যবাদ জানিয়ে লেখাটা শুরু করতে হচ্ছে আমাকে।

কারণ, তার লেখার সত্যতা কতটুকু তা যাচাইয়ের সংযোগ হয়ত নাও হতে পারে।

তবুও সাহসের জন্য হলেও তাকে অন্তত ধন্যবাদ দেওয়া যেতে পারে। কারণ, জেলায় কাজ করে কেন্দ্রের কর্তাদের নিয়ে সমালোচনা করতে অন্তত একজন পেরেছেন।

বাংলানিউজে ১৯ জুলাই ২০১৩ ‘ব্রেকিং নিউজ যাচাই করে দিলেই হয়!’ শিরোনামে হৃদয়ের লেখাটি দেখে একবারেই হতবাক হইনি। কারণ, হৃদয় নিশ্চিত এমন সব ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন বলে আমার বিশ্বাস।

না হলে সাহস করে লিখতেন না। সে জন্য হৃদয়কে বলবো- আপনি যদি এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে থাকেন, তাহলে বলবো, আপনি লিখে আমাদের জাগ্রত করেছেন। আর আন্দাজে লিখলে বলবো- আরো সাবধানী হওয়ার দরকার ছিল আপনার।

কারণ, হাতের সব আঙুল যেমন সমান নয়, তেমনি সব মানুষের চরিত্রও এক নয়! অন্তত এ প্রবাদ এবং বাস্তবতাটুকু যে কাউকে মানতেই হবে।

আসল কথায় আসি, চমকপদ শিরোনাম দিয়ে ভেতরে কী লিখলেন হৃদয়? আপনার বোঝা উচিত, সবার চরিত্র হননের কোনো অধিকার আপনাকে দেওয়া হয়নি। হয়ত বলবেন- আমি আক্রোশী হয়েছি হৃদয়ের প্রতি। আসলে তা নয়। কারণ, হৃদয়ের লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়ে আমার অন্তত লিখতে ইচ্ছে করছিল না হৃদয়রা- অন্তত মোহনা টেলিভিশন লিমিটেডে আপনার লেখার অভিযোগগুলো হচ্ছেনা।  

আমরা রির্পোর্টার কিংবা প্রতিনিধির ওপর শতভাগ আস্থা রাখতে পারি। কারণ, আমাদের অন্য কারো এজেন্ডা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য নেই। সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো করে যেমনি দেখি; তেমনি প্রচারের চেষ্টা করছে মোহনা। এটি মোহনা কর্তৃপক্ষের যেমনি বলা, তেমনি নিউজ বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদসহ প্রায় সব কর্মকর্তাদেরও। এক/দুটি টিভি দিয়ে দেশের ২৭টি টিভির বিচার করলে তো সবারই হৃদয়ের অভিজ্ঞতা হওয়ার কথা।
 
হৃদয়দের জানার জন্য সংক্ষেপে কিছু কথা বলবো:

১. পদোন্নতি পাওয়া অতটা সহজ নয়। যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা ছাড়া আসলে এভাবে সম্ভব নয়। অবশ্যই এ সবের একান্ত প্রয়োজন যেমনি রয়েছে, তেমনি সততারও দরকার হয় পদোন্নতির ক্ষেত্রে। কারণ, অঢেল অর্থ পুঁজি দিয়ে কেউ এভাবে বসে থাকেন না যে কাউকে চেয়ারে বসানোর জন্য। তবে বলবো, হৃদয়দের হয়ত এমন অভিজ্ঞতা রয়েছে।

তিনি যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত, সেটি দিয়ে সব টিভি চ্যানেলের তুলনা করেছেন কিনা তাও চিন্তার বিষয়।

২. হৃদয় লিখেছেন, কারো কারো আবার টার্গেট থাকে ন্যাশনাল ডেস্কের এডিটর হওয়া। কোনো কোনো জেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করলে মোটা অংকের টাকা তো মিলছেই, আবার মাসে মাসে ফ্লেক্সি, হাওলাত, সমস্যা ইত্যাদিরও সমাধান পাওয়া যাচ্ছে।

৬৪ জেলার প্রতিনিধির মধ্য থেকে বাছাই করে ২০ থেকে ২৫ জনের কাছ থেকে পাঁচ হাজার বা ১০ হাজার করে হাওলাত নিলেও তো এক বা দুই লাখ টাকা অনায়াসে হাতে এসে যায়! আর তা না হলে তো ‘নিষ্ক্রিয়’, ‘অযোগ্য’ ও ‘ভালো নিউজ পাঠাতে পারে না’ ইত্যাদি বাক্য ছুড়ে মারার হুমকি তো দেওয়া যায় সহজেই। এ প্রসঙ্গে আমি অন্তত চ্যালেঞ্জ দিতে পারি। আপনার ধারণা ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে অন্তত মোহনা টেলিভিশন পড়ে না। কারণ, মোহনা জেলা প্রতিনিধিদের কাছ থেকে নিউজ ছাড়া আর কিছুই নেয় না। মোহনা প্রতিনিধিদের যে সব সহযোগিতা ও সুযোগ-সুবিধা দেয়, অনেক টিভিই সেটি দেয় না বলে আমার বিশ্বাস।

তবে হৃদয়কে আবারও ধন্যবাদ দিতে হয়, তিনি এ ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়ে আমাদের বিবেককে নাড়া দিতে পেরেছেন। আমার মনে হচ্ছে, এক দশকের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে গিয়ে হৃদয়দের যে পরিমাণ অর্থ ঝরাতে হয়েছে, তাতে একটি ইতিহাস হয়ে যাবে। আর এ সব অর্থ জনগণকে চুষে করা হয়েছে কিনা, তাও ভেবে দেখার বিষয়।

হৃদয়, আমিও জেলায় কাজ করে আসার কারণে অভিজ্ঞতা হলো এমন আমার তো পত্রিকা কিংবা টেলিভিশনে জেলায় কাজ করার সময় কখনও মফস্বল ডেস্কে টাকা দিতে হয়নি।

আবার রাজধানীতে অবস্থান নেওয়ার পর আমিও তো এমন পরিস্থিতি তৈরি করিনি। কারণ, আমার আদর্শ, শিক্ষা হৃদয়েরই পরিচিত দুজন রয়েছেন। একজন ঢাকায় আরেকজন ফেনীতে সাংবাদিকতা করছেন। আমার মতে, সহকর্মী হিসেবে প্রতিনিধির সঙ্গে সর্বোচ্চ চায়ের আড্ডা হতে পারে। সেটি এর বেশি দূর যেতে পারেনা। হৃদয় যে ভাবে লিখেছেন, তাতে বলতেই হয়, নিশ্চিত তিনি এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত। আর তা না হলে চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষের এ সর্ম্পকে ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে আমি মনে করি।

হৃদয়ের লেখার শেষ অংশটুকুর সঙ্গে আমি একমত কোনোভাবেই হতে পারছিনা। (অতএব সাবধান! ব্রেকিং নিউজ পাওয়ার পর বা প্রতিনিধি ফোনে জানানোর পর পরই তা স্ক্রলে তুলে না দিয়ে একটু যাচাই করে নিন। তাতে আপনার চ্যানেল যেমন রক্ষা পাবে, তেমনি জাতিও বিভ্রান্তির হাত থেকে বেঁচে যাবে। ) কারণ, যে প্রতিনিধি এতটুকু বিশ্বাস অর্জন করতে পারেন না, সে তো প্রতিনিধিত্ব করারও যোগ্যতা রাখেনা। আর প্রতিনিধির ওপর প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাস তো শতভাগ থাকা উচিত।
 
শেষে, হৃদয়দের বলবো অনেক কিছু ভাবা যায়। কিন্তু, প্রকাশের আগে বেশি করে ভাবনার প্রয়োজন। একই সঙ্গে বাংলানিউজ নিঃসন্দেহে দেশ ও মানুষের জন্য। সে হিসেবে এটুকু বলা যে, কোনো লেখা প্রকাশ/প্রচারের আগে একটু নিজেরাও ভাবুন।

শহীদুল আলম ইমরান- ইন-চার্জ, ন্যাশনাল ডেস্ক, মোহনা টেলিভিশন লিমিটেড, emranbd78@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৭ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৩
সম্পাদনা: আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।