ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

পাহাড় ধস একটি আতঙ্কের নাম

মো. আব্দুল হাই | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২১ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৩
পাহাড় ধস একটি আতঙ্কের নাম

যশোর: পরিবেশগত বিপর্যয়ের একটি আতঙ্ক জাগানো প্রপঞ্চের নাম পাহাড় ধস। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের এবং ভারতের উত্তরাখণ্ডের পাহাড় ধস বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে।

এসব এলাকায় পাহাড় ধসজনিত ভয়াবহতা পরিবেশবিদ, নগর পরিকল্পনাবিদ এবং সাধারণ মানুষকে নতুন বাস্তবতার সামনে দাঁড় করিয়েছে। ভাবতে বাধ্য করেছে যে, পরিবেশের ব্যবহার কেমন হওয়া উচিত এবং ধস জনিত বিপর্যয় মোকাবিলায় আমাদের করণীয়গুলো কেমন হওয়া উচিত।

পাহাড় ধসের ভূমিরূপতাত্ত্বিক কারণ
পাহাড় ধস মূলত একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। পাহাড়ের মাটি ধসে পড়াকেই ধস বলে। তবে সমুদ্র থেকে দূরবর্তী স্থানে, উপকূলে অথবা উপকূলের নিকটবর্তী স্থানে শিলাপতন, ঢালের গভীর অবনমন এবং ধ্বংসাবশেষের অগভীর প্রবাহকেও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়ার প্রাথমিক চালিকা শক্তি হিসেবে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কাজ করে। তবে পাহাড় ধসের কারণ হিসেবে অন্যান্য শর্ত বিশেষ করে ভূমির উপরের অবস্থা ও পরিবেশ এবং মানুষের কর্মকাণ্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

ধসের প্রাকৃতিক কারণ:
•    পাহাড় চূড়ার বরফ গলা পানি, হিমবাহ গলিত পানি বা প্রচণ্ড বৃষ্টির পানিতে পরিপৃক্ত হয়ে শিলা দুর্বল হয়ে গেলে পাহাড় ধস হতে পারে,
•    আগ্নেয় গিরির অগ্নুৎপাত ও ভূমিকম্পের সময় কম্পন সৃষ্টি হলে শিথিল মাটি ও দুর্বল পাথরের স্তুপ স্থানচ্যুত হয়ে ধসের সৃষ্টি হতে পারে;
•    নদী অথবা সমুদ্র তরঙ্গ দ্বারা ঢালের নীচের অংশ ক্ষয়ীভূত হলে ধসের সৃষ্টি হতে পারে এবং
•    মৃত্তিকায় পুষ্টি উপাদান কম থাকলে ও মৃত্তিকার সংযুক্তি আলগা হলে ও ধস হতে পারে।

ধসের মানব সৃষ্ট কারণ:
•    পাহাড়ের বন নির্বিচারে ধ্বংস করলে মাটি আবরণহীন হয়ে পড়ে। আবরণহীন মাটিতে রোদ, বৃষ্টি ও মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ফলে মাটি শিথিল হয়ে ধস হতে পারে,
•    পাহাড়ী ঢালের পানি নির্গমনপথে ঘর, বাড়ি ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করলে নির্গমন পথ বন্ধ হয়ে ধস হতে পারে,
•    অগভীর মৃত্তিকা স্তরে গভীর মূল জাতীয় বৃক্ষরোপন করলে শিলা আলগা হয়ে ধস হতে পারে,
•    অবকাঠামো নির্মাণ, চাষাবাদ এবং বনসৃজন জাতীয় কর্মসূচী মৃত্তিকায় পানির প্রবেশযোগ্যতার পরিমাণ কমিয়ে দিলে ধস হতে পারে;
•    যন্ত্রাংশ ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট কম্পন, যানবাহনের শব্দজনিত কম্পন, কৃত্রিম বিস্ফোরণের কারণে ধস হতে পারে এবং
•    পাহাড় কেটে অনিয়ন্ত্রিতভাবে মাটি অপসারণের ফলে ও ধস হতে পারে।

বাংলাদেশের ধসপ্রবণ এলাকা:
বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের নেত্রকোনা ও সিলেট এলাকা এবং দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারে কিছু পাহাড় রয়েছে। তবে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ১৫ হাজার ৮০৯ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত পাহাড়ে মূলত ধসের ঘটনা ঘটে থাকে। এসব পাহাড়ের যে অংশে জনবসতি বেশি এবং মানুষের বিচরণ বেশি সে এলাকাগুলোয় ধস যেন বাৎসরিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বৎসর বর্ষা মৌসুমে এসব পাহাড়ে ধসের কারণে প্রচুর ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়, মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং সম্পদের ক্ষতি হয়ে থাকে।

ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলা অন্যতম। এই দুটি উপজেলার দুই হাজার পরিবারের ১০ হাজার মানুষ পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে লামা উপজেলার আজিজনগরের হরিনমারা, চিউনিপাড়া, ফাইতং, তেলুনিয়া, গজালিয়া, সরই, ফাঁসিয়াখালি ও রূপসীপাড়া, লামা পৌর এলাকার হাসপাতাল পাড়া, নুনারবিল পাড়া, কুড়ালিয়ার টেক, টি অ্যান্ড টি পাহাড় এবং আলীকদম উপজেলার ক্রপপাতা, পোয়ামহরী, আমতলী ও বাবুপাড়া সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা।

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা ও অন্যতম ধসপ্রবণ এলাকা। এই এলাকার পাহাড় চূড়া, পাহাড়ের ঢাল ও পাহাড়ের পাদদেশে প্রায় ৬০ হাজার পরিবার ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। এছাড়া ও রামু, মহেশখালী, টেকনাফ, চকোরিয়া ও পেকুয়ার বিশাল পাহাড়ী এলাকা জুড়ে প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন চট্টগ্রাম মহানগরীতে ১৩টি পাহাড়কে ধসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এগুলো হচ্ছে- জালালাবাদ পাহাড়, নবীনগর পাহাড়, হামজারবাগ পাহাড়, দেব পাহাড়, কুসুমবাগ পাহাড়, গোল পাহাড়, কৈবল্যধাম পাহাড়, খুলশী পাহাড়, বার্মা কলোনী পাহাড়, হিলভিউ পাহাড়, জামতলা পাহাড়, এনায়েত বাজার পাহাড় ও বাটালি হিল।

পাহাড় ধসের সাম্প্রতিক চিত্র:
পাহাড় ধসে প্রাণহানীর প্রকৃত চিত্র পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তবে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৯৬ সালে রাজবাড়ী ও লামায় ৭ জন, ২০০৩ সালে চট্টগ্রামে ১০ জন, ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে ৫ জন, ২০০৫ সালে চট্টগ্রামে ৩ জন, ২০০৬ সালে চট্টগ্রামে ২ জন, ২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রামের লেবুবাগান এলাকায় ১২৭ জন, ২০০৮ সালের আগস্টে চট্টগ্রামের মতিঝর্ণা এলাকায় ১১ জন, নাইক্ষংছড়িতে ৪ জন, টেকনাফের ফকিরামুরা ও টুন্যাতে ১৩ জন, ২০০৯ সালের ৩০ আগস্ট লামায় আজিজনগর ও গজালিয়ায় ১১ জন, ২০১০ সালে রামুতে ৬ জন, টেকনাফে ৩৩ জন, উখিয়ায় ৯ জন, হিমছড়িতে ৬ জন এবং কক্সবাজার সদর উপজেলায় ২ জন, ২০১১ সালে ১৭ জন এবং ২০১২ সালে লামার ফাইতং, রূপসীপাড়া ও লামা সদর ইউনিয়নসহ চট্টগ্রাম মহানগরে ৯০ জনের প্রাণহানী ঘটেছে। উক্ত পরিসংখ্যান থেকে পাহাড় ধসের ভয়াবহতাকে বোঝা না গেলেও এটি পরিস্কার যে, বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে পাহাড় ধস একটি নিয়মিত পরিবেশগত দুর্যোগে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশে যে সব কারণে পাহাড় ধস হয়:
এইচ ব্রামার (১৯৭১) এবং SRDI (Soil Resource Development Institute) এর শ্রেণীবিভাগ অনুযায়ী বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের মৃত্তিকা বাদামী পাহাড়ী মাটির (Brown Hill Soils) অন্তর্ভুক্ত। এখানে ভূমির উপরিভাগে পলি দোআঁশ বা দোআঁশ এবং নিচের দিকে ক্রমশ বেলে প্রধান মৃত্তিকা দেখা যায়। এই মৃত্তিকা অঞ্চলে ভূমিক্ষয় একটি অন্যতম সমস্যা।

গঠনগত কারণে গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপে পাহাড়গুলোতে ছোট ছোট ফাটলের সৃষ্টি হয় এবং ফাটল সংলগ্ন স্থানে ক্ষয় শুরু হয়। পাহাড়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় বৃষ্টির পানির সঙ্গে ক্ষয়ীভূত পদার্থগুলো নিম্নঢালে স্ববেগে চাপ প্রয়োগ করে আবার অন্যদিকে বৃষ্টির পানি এসব ফাটলে ঢুকে বৃহদাকার ধস নামায়।

বাংলাদেশে পাহাড় ধসের এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলেছে মানুষের কর্মকাণ্ড। পাহাড়ের ঢালে অপরিকল্পিতভাবে বসত নির্মাণ, বসবাসের প্রয়োজনে জঙ্গঁলে পরিষ্কার, খাদ্যের প্রয়োজনে আদিবাসীদের জুম চাষ এবং স্থানীয় প্রভাবশালী মহল কর্তৃক নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের ফলে পাহাড় আবরণহীন হয়ে পড়ছে। ফলে পাহাড়ে ভূমি ক্ষয় তীব্র আকার ধারণ করছে। ফলশ্রুতিতে ধসের সম্ভাবনা বাড়ছে।

পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম জুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগের মেরুং রেঞ্জের ৫৮৯৯ দশমিক ৬২ একর, হাজাছড়া রেঞ্জের ১২৩৫০ একর ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগের নাড়াইছড়ি রেঞ্জের ৫৪১১২ একর বনাঞ্চলে গাছ নেই বললেই চলে। ১৯৮৬ সালের বিশেষ পরিস্থিতির কারণে বনাঞ্চল থেকে রেঞ্জ কার্যালয় গুটিয়ে নেওয়ায় এসব বনের অধিকাংশ গাছ লুট হয়ে যায়।

বাংলাদেশে পাহাড়ধসের সবচেয়ে বড় কারণ বোধ করি পাহাড় কর্তন। বিগত তিন দশকে কেবল চট্টগ্রামেই তিন শতাধিক পাহাড় কাটা পড়েছে। পাহাড় কাটা হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে।

মূলত দুটি কারণে পাহাড় কাটা হচ্ছে। প্রথমত, মাটি কেটে ইট ভাটায় ব্যবহার, দ্বিতীয়ত প্লট তৈরি করে বসত নির্মাণ। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে বড় বড় ডেভেলপার কোম্পানিগুলি জড়িত। আর এই প্লট ও ফ্ল্যাট ব্যবসায় নির্বিচারে অনুমোদন দিয়ে সিডিএ কর্তৃপক্ষ সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

চট্টগ্রামে পাহাড় কাটার এই মহোৎসব চলছে মূলত খুলশী, লালখান বাজার, পাঁচলাইশ, বায়েজিদ বোস্তামী, ফয়’স লেক, পাহাড়তলী, কাট্টলী ও ভাটিয়ারীকে ঘিরে থাকা পাহাড়ে। অপরিকল্পিতভাবে এসব পাহাড়ের পাদদেশ কেটে ফেলার কারণে পাহাড় দুর্বল হয়ে যায়। বর্ষার পানি উপরে আটকে যায়, এক সময় প্রবল বেগে তাতে ধস নামে।

পাহাড়ে ভূমিধস বন্ধে আমাদের করণীয়:
•    পাহাড়কে ছিন্নমূল ও অনাদিবাসীদের পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। পাহাড়ের চূড়ায়, ঢালে ও পাদদেশে যারা অবৈধভাবে বাস করছে তাদের অপসারণ করতে হবে। ২০০৭ সালে পাহাড় ধসের পর বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান করে পাহাড় ধস ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসন কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটির কার্যক্রম দৃশ্যমান হতে হবে,

•    যে সব পাহাড়ে বৈধভাবে লোকজন বসবাস করছে সেসব পাহাড় ঝুঁকিমুক্ত ও বসবাসের উপযোগী কি না তা বৈধ কর্তৃপক্ষ দ্বারা যাচাই করতে হবে;

•    কোনো অজুহাতেই পাহাড় কাটা যাবে না। পাহাড় কাটা প্রতিরোধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ ঘটাতে হবে এবং পরিবেশ অধিদপ্তরকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এর ৬ (খ) ধারায় বলা হয়েছে “কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কাটা বা মোচন করা যাইবে না। তবে শর্ত থাকে যে, অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণক্রমে কোনো পাহাড় বা টিলা কাটা বা মোচন করা যাইতে পারে। ”
       তাই পাহাড় কাটানজনিত ধসের ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না,

•    নতুন প্লট ও ফ্ল্যাট নির্মাণের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ সিডিএ। চট্টগ্রাম মহানগরে পাহাড় কেটে জমজমাট গৃহায়ন ব্যবসা পরিচালনায় ডেভেলপারদের সঙ্গে সিডিএ কর্তৃপক্ষ ও সমান দায়ী। তাই পাহাড় ধস রোধে সিডিএ কর্তৃপক্ষকে তাদের ভূমিকা পরিষ্কার করতে হবে,

•    ধসপ্রবন পাহাড়ে ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপন করতে হবে। বৃক্ষ মাটির সহনশীলতা বৃদ্ধি ও ধস প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। উদ্ভিদের কারণে পৃষ্ঠপ্রবাহ কম হয় ও জলের গতি হ্রাস পায় ফলে ধসের সম্ভাবনা কমে যায়, এবং উদ্ভিদের ডালপালা ও পাতা দ্বারা সৃষ্ট চাঁদোয়া বৃষ্টির ফোঁটার সরাসরি আঘাত থেকে মৃত্তিকাকে রক্ষা করে ফলে ক্ষয় কম হয় এবং ধস কমে যায়,

•    পাহাড়ে অবশিষ্ট বনাঞ্চলের সংরক্ষণের জন্য বন বিভাগকে উদ্যোগী হতে হবে। এক্ষেত্রে রেঞ্জ অফিসগুলিকে পুনরায় বনের গভীরে ফিরিয়ে নিতে হবে,

•    পাহাড়ে আদিবাসীদের জুম চাষ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। জুম চাষ ভূমি ক্ষয়কে তীব্রতর করে। আদিবাসীদের আধুনিক চাষাবাদে আগ্রহী করে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে,

•    ধস প্রবণ ঢালের উপর সরাসরি কৃষিকাজ না করে ধাপ সৃষ্টি করে কৃষিকাজ করতে হবে। এতে ঢালের নতিমাত্রা কমে যায় এবং ধসের সম্ভাবনা ও কমে যায়। এ ব্যপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে প্রচারণা চালাতে হবে,

•    ধসপ্রবণ স্থানে Retaining Wall তৈরি করে এবং Geo-Textile প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভূমির ক্ষয় রোধ এবং ধস প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

ভূমিধস পূর্বানুমান মানচিত্রায়ন (Landslide Prediction Mapping)

ভূমিধসজনিত দূর্যোগের মারাত্মক ক্ষতি প্রশমন এবং টেকসই ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনার নির্দেশিকা প্রণয়নের জন্য ভূমিধসের বিশ্লেষণ এবং মানচিত্রায়ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। এই প্রক্রিয়ার জন্য উক্ত ভূমিরূপের ভূমিরূপতাত্ত্বিক, ভূ-তাত্ত্বিক, ভূমি ব্যবহার, ভূমির আচ্ছাদন এবং পানি বিজ্ঞান জনিত নিয়ামক ব্যবহার করা হয়। জিআইএস এবং দূর অনুধাবন (Remote sensing) কৌশল প্রয়োগ করে এই মানচিত্রায়ন সম্পন্ন করা হয়। দুর্যোগের পূর্বের এবং দূর্যোগ পরবর্তী বিমান চিত্র ও উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে ভূমিধসের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ যেমন উক্ত ভূমির বণ্টন, ভূমির শ্রেণীবিভাগ, ঢালের বৈশিষ্ট্য, ভূমি ব্যবহারের ধরণ, ভূমির আচ্ছাদন, প্রভৃতি প্রকাশ করে যে, উক্ত ভূ-দৃশ্য কিভাবে পরিবর্তন হয়েছে এবং হচ্ছে। এ থেকে মানচিত্র প্রণয়ন সম্ভব হয়, ভবিষ্যতে কোথায় ধস হতে পারে তার পূর্বানুমান করা যায় এবং এই ধস প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। এর ফলে সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও জীবন হানি এড়ানো সম্ভব হয়।

বাংলাদেশে পাহাড় ধসের ক্ষেত্রে যেহেতু প্রকৃতির চেয়ে মানুষের ভূমিকা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ, তাই বাস্তবে এটি একটি পরিবেশগত বিপর্যয়। এই বিপর্যয় মোকাবিলায় একটি সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন যেখানে ভূমি অধিদপ্তর, বন ও পরিবেশ অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন ও সিডিএ কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারবে। এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পাদন ও ধসজনিত ঋণাত্মক প্রতিক্রিয়া মোকাবেলার জন্য টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ননীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। তাহলেই হয়তো পাহাড় ধস কমানো যাবে এবং এর মাধ্যমে পাহাড়ে মৃত্যুর মিছিল প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

মো. আব্দুল হাই
সহযোগী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, সরকারি এমএম কলেজ, যশোর।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৩
সম্পাদনা: শরিফুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর-eic@banglanews24.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।