ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

ইতিহাসের সেরা ডিভিডেন্ট ঘোষণা নাকি প্রহসন?

সেরাজুম মুনীরা মিতা(অধরা) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০১৩
ইতিহাসের সেরা ডিভিডেন্ট ঘোষণা নাকি প্রহসন?

অনেক জল্পনা কল্পনার পর অবশেষে গত ৫ অক্টোবর টানা আট বছরের(২০০৫-২০১২)জন্য ২ হাজার ১শ’ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স। নিঃসন্দেহে বলা যায়, শেয়ার বাজারের ইতিহাসে এটি স্মরণকালের সেরা ডিভিডেন্ড ঘোষণা।



অপ্রত্যাশিত এ ঘোষণার পর বাজারে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মূল্য সর্বোচ্চ হওয়ার পরও অনেক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী এটি ক্রয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বলা বাহুল্য, ২০১০ এর বাজার ধসের পর অনেক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী এখন প্রায় নিঃস্ব। এদের অনেকেই দ্রুত তাদের পুঁজি ফিরে পাওয়ার আশায় প্রতীক্ষায় থাকেন এমন সুযোগের। আর তাই ইতিহাসের সেরা ঘোষণা ২ হাজার ১শ’ শতাংশ স্টক তাদের প্রলুব্ধ করে অনেক বেশি।

অবশ্য ডিভিডেন্ড ঘোষণার আগেই কোম্পানির ডিভিডেন্ড ঘোষণার এই তথ্য ইন্টারনেটে ফেসবুকের শেয়ার বাজার গ্রুপগুলোর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এমন তথ্যে পুঁজি ফিরে পাওয়ার আশায় স্বপ্ন দেখেন অনেক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। আবারো কেউ কেউ তাদের সর্বোস্ব বিনিয়োগ করে ডিভিডেন্ড ঘোষণার প্রহর গুণতে শুরু করেন।

এরই মাঝে এ কোম্পানির ধীর লেনদেন বাজারে ছড়ানো আগাম তথ্য সম্পর্কে সন্দেহ সৃষ্টি করে। অবশেষে ২৮ সেপ্টেম্বর ডিএসইর ওয়েবসাইটে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ র্বোডসভার তারিখ ৫ অক্টোবর ঘোষণা করে। এ ঘোষণার পর ডেল্টা লাইফের লেনদেনে চিত্র পাল্টে যায়। ধীরে ধীরে মূল্য হ্রাস পেতে থাকে, যা আতঙ্কে ফেলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের। ডিভিডেন্ড ঘোষণার আগের দিন আকস্মিকভাবে প্রায় বিক্রেতা শূন্য হয়ে পড়ে ডেল্টা লাইফের শেয়ার। এ দৃশ্যপট আবারো সক্রিয় করে তোলে ২ হাজার ১শ’ শতাংশের আগাম তথ্যকে।

ডিভিডেন্ড ঘোষণার দিন র্বোডসভায় ডিভিডেন্ড সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত জানার জন্য আকুল অপেক্ষায় থাকে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। অবশেষে বাজারের আগাম তথ্যকে সত্য প্রমাণ করে ২ হাজার ১শ’ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হয়। ঈদের খুশি যেনো উপচে পড়ে ডেল্টা লাইফ শেয়ার হোল্ডারদের মাঝে। এ নিয়ে শুরু হয় গুঞ্জন।
এবার ঝড় ওঠে এর উর্ধ্বগতির মাত্রা নিয়ে। যেহেতু ডিভিডেন্ড ঘোষণার দিন এর মূল্যের কোনো সীমা নির্ধারণ করা থাকে না তাই ডেল্টা লাইফ শেয়ার হোল্ডাররা ১৫ থেকে ২০ হাজারের উর্ধ্বগতির স্বপ্ন দেখেন। এখানে বলা বাহুল্য যে, এতো ভালো ঘোষণায় সাধারণ বিনিয়োগকারীর এ আশা অযাচিত বা অসম্ভব নয়। কারণ দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানির ফার্মা এইড ৫শ’ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণার পর যদি এর মূল্য ২৫ হাজার টাকা ওঠে তাহলে ২ হাজার ১শ’ শতাংশ স্টক ঘোষণা দিয়ে ডেল্টা লাইফের এ প্রত্যাশা অত্যন্ত স্বাভাবিক।

কিন্তু ৬ অক্টোবর ডেল্টা লাইফের লেনদেন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অবাক ও নিরাশ করে। অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার, যেখানে এতো ভালো ঘোষণায় এর মূল্যের চরম উর্ধ্বগতি থাকার কথা, সেখানে দেখা যায়- ধীরে ধীরে এর মূল্য কমে পতনের একটি বড় ব্যবধান তৈরি করে।

এসময় অনেকে আতঙ্কিত হয়ে লসেই শেয়ার ছেড়ে দেন। এরপর আরো দু’দিন একইভাবে শেয়ারটি  ক্রেতা শূন্য হয়ে পড়ে।

প্রশ্ন থেকে যায়, যেখানে কোম্পানির এতো ভালো ঘোষণার পর শেয়ারটির ক্রেতা অধিক সক্রিয় থাকার কথা সেখানে এতো এতো বিক্রেতা কারা?  এই মন্দা বাজারে যেখানে কোনো শেয়ারে প্রতিদিন ক্রেতাশূন্য হচ্ছে না সেখানে এতো ভালো ঘোষণার পরও ডেল্টা লাইফের শেয়ার ক্রেতাশূন্য কেনো?

এতো ভালো ঘোষণায় কোম্পানির পরিচালক আর বাজারের তথাকথিত গেম্বলাররা এই শেয়ার ক্রয়ে নীরব ভূমিকা পালণ করছেন কেনো? তাহলে কি ইতিহাসের সেরা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাসের অন্যতম নির্লজ্জ পরিকল্পনা সাজিয়েছেন কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আর মার্কেট মেকাররা?

২ হাজার ১শ’ শতাংশ স্টক ঘোষণা কি পূঁজি বাজার ইতিহাসের সেরা ঘোষণা ছিলো নাকি ক্ষুদ্র সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ছিলো নতুন ফাঁদ? এ ধরনের নতুন কৌশলী খেলায় ভবিষ্যতে কোনো কোম্পানির ভালো ডিভিডেন্ড ঘোষণায় আর আস্থা থাকবে না ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের।

উল্লেখ্য, শেয়ার মূল্যের টানা উর্ধ্বগতি যখন ডিএসই কর্তৃপক্ষের নজরে আসে তখন তারা কোম্পানিকে মূল্যবৃদ্ধির কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠান। কিন্তু তার উল্টোটা অর্থাৎ মূল্যের টানা নিম্নগতি ডিএসই কর্তৃপক্ষের নজরে কখনোই আসে না, যেখানে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ জড়িত। সেরা ডিভিডেন্ড ঘোষণার নামে নির্লজ্জ কেলেংকারির সেরা শিকার আমাদের মতো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। ২০১০ সালে যে কৌশলে বাজারে ধস নামানো হয়েছিলো ঠিক একই কৌশল অবলম্বন করা হলো ডেল্টা লাইফ শেয়ারটির ক্ষেত্রে।

তাহলে শেয়ার ব্যবসা কি শুধুই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বোকা বানানো? যদি তাই হয় তবে দেশের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, এ দেশে শেয়ার ব্যবসা নামের প্রহসনমূলক ব্যবসা দ্রুত বন্ধ করে রেহাই দেওয়া হোক অসহায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০১৩
জেডএম/জেসিকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।