তিনি কিছুই মানেন না, তার দাবি একটাই-ক্ষমতা চাই। তিনি খুব বড় মাপের ওঝা, তিনি সাপকে বিশ্বাস করতে রাজী আছেন কিন্তু আওয়ামীলীগকে নয়! তিনি ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তস্নাত বাংলায় রাজাকার নিয়ে বসবাসের স্বপ্ন দেখেন, তাই তিনি হাসিনামুক্ত বাংলাদেশ চান !
যারা আগামী নির্বাচন নিয়ে দুশ্চিন্তায় ঘুমাতে পারছে না, ক্যান দুই নেত্রীর সংলাপ হচ্ছে না বলে মিডিয়ার ঝড় তুলছেন তারা কি মনে করেন, এই সমস্ত ধমকের পরে সংলাপ সম্ভব ।
তিনি শেখ হাসিনা মুক্ত বাংলাদেশ চান কেন, শেখ হাসিনাকে তার এতো ভয় কেন! তিনি যদি সত্যি হাসিনামুক্ত বাংলাদেশ চান তাহলে তার বুঝতে হবে, সেটা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ নয়, জিন্নাহর দেশ পাকিস্তানে চলে যেতে হবে, যেখানে হাসিনা আতঙ্ক তার পিছু নিবে না। তার বুঝতে হবে, শেখ হাসিনা এখন আর একজন ব্যাক্তি নন, শেখ হাসিনা একটি আদর্শের নাম, একটি দর্শনের নাম, আধুনিক বাংলাদেশের পরিপূরক নাম হচ্ছে শেখ হাসিনা, যা কারো ইচ্ছায় বাদ দেয়া যাবে না।
বিগত সাড়ে চার বছরে বেগম খালেদার বিভিন্ন সময়ে ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডেই প্রমান করে তিনি নির্বাচন বা সংলাপ কোনটায়ই বিশ্বাস করেন না। তার মুল লক্ষ্য ছিলো পেছনের দরজা দিয়ে কিভাবে ক্ষমতায় আসা যায়, সেই লক্ষ্যে ব্যার্থ বিডিআর বিদ্রোহ, ক্ষুদ্রাংশের ব্যর্থ সেনা অদ্ভুথান, হেফাজতের মাধ্যমে সরকার উৎখাতের ব্যার্থ চেষ্টা প্রমানিত করা ।
সংলাপ কেন এবং কার সাথে, যিনি লেভেল প্লেইং ফিল্ডের কথা বলেন, তিনি কি তা বিশ্বাস করেন? তিনিতো সারাক্ষণ ষড়যন্ত্রের ছক আঁকতে থাকেন । তাছাড়া, যিনি হাসিনামুক্ত বাংলাদেশ চান, তার সাথে কিসের সংলাপ? শুধু তা কেন, এই দেশের অস্তিত্বকে যারা অস্বীকার করে, এই দেশে বসবাস করেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করে না, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যাকারী ঘাতকদের লালন পালন এবং রক্ষার জন্য যিনি দেশে অরাজকতা করে, তার সাথে কিসের সংলাপ?
৭৫এর ১৫ আগস্টে জাতির জনকের হত্যার পরে ঘুরে ফিরে এই ৭১এর পরাজিত শক্তির পছন্দের খালেদা জিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় বার বার মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামীলীগের উপর বার বার আঘাত হেনেছে। গত ৩৮ বছরে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের আত্মহুতি দিতে হয়েছে বহুবার। আওয়ামীলীগ কাউকে আঘাত করেছে এমন ইতিহাস নেই । তারপরও সেই ঘাতকদের সাথে আমাদের বসতে হবে কেন। এখন সময় এসেছে, সংলাপ তো দূরের কথা! যারা স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রশ্রয় দিবে, জোট গঠন করবে তাদের সাথে কোন আপোষ নয়, এমন মনোভাব পোষণের। এতে যদি ঘাতকদের বিদেশি প্রভুরা অসন্তুষ্ট হয় হউক কারন এই দেশ স্বাধীন করার জন্য আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা রক্ত দিয়েছে, প্রভুরা নয়। খালেদা জিয়া ভালো করেই জানেন, বাংলাদেশের মানুষ সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে না, আওয়ামীলীগের কিছু ব্যার্থতা আছে তাই বলে বিএনপি জামাতের এমন কোন অর্জন নেই যে, দেশের মানুষ আবার বিএনপি জামাতের সেই অন্ধকার যুগে ফিরে যেতে চাইবে । দেশের মানুষ তারেক, হওয়া ভবন, খোয়াব ভবন, বাংলা ভাইদের জগতে ফিরে যেতে চায় না। দেশের মানুষ এখন মেলা, ঈদ,পুজা- পার্বনে জঙ্গিদের বোমা আতঙ্কে থাকতে চায় না । দিন বদল হয়েছে, এখন বর্বর খুনী-ঘাতকদের বিচার হচ্ছে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে । অনেকেই পাঁচ বছর আগের বাংলাদেশের সাথে এখনকার বাংলাদেশকে মিলাতে পারছে না । ঢাকা এখন সার্থক মেগা সিটি । গ্রাম গঞ্জের চেহারা বদলে গেছে। আগে বিদেশিরা আমাদের বন্যা, পানি আর মিস্কিন দেশর মানুষ বলে তাছিল্ল্য করতো, এখন আমরা গর্ব করে নিজের পরিচয় দিতে পারি। কিছুদিন আগে খোদ ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশকে নিয়ে ভবিষ্যৎ বাণী করেছেন যে, একদিন বাংলাদেশ আমেরিকার মতো হবে !
বিরোধীদলীয় নেত্রী যদি ঘাতকদের ছেড়ে সরকারকে সহযোগিতা করতেন, তাহলে দেশ আজ অনেকদুর এগিয়ে যেতো। অবাক হওয়ার মতো ব্যাপার হচ্ছে, গত ৪ বছর ৮ মাসে বেগম খালেদা মাত্র ৯ কার্য দিবস সংসদে উপস্থিত থেকেছেন অথচ বিরোধী দলীয় নেতা হিসাবে সরকার থেকে সব ধরনের ভাতা, এমনকি বিদেশে চিকিৎসা ভাতাসহ সব কিছু রাষ্ট্রের তহবিল থেকে নিয়েছেন । ওই ৯ দিনের একদিনও তিনি আগামী নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে জাতীয় সংসদে কোন কথা বলেননি । এখন শেষ সময়ে এসে দেশে অরাজকতা করে যদি কোন একটা কিছু ঘটানো যায় সেই লক্ষ্যেই তিনি এগোচ্ছেন কিন্তু তার সেই স্বপ্ন কখনো পূরণ হবে না ।
অন্তর্বর্তীকালীণ সরকারের প্রধান হিসাবে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃতে যথাসময়ে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে । জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি দেশের মানুষ ও বন্ধুপ্রতীম বিদেশী রাষ্ট্র এবং উন্নয়ন সহযোগীরাও সেই আস্থা রাখে, এবার জাতিসংঘ সফরে তেমনটিই মনে হয়েছে ।
খালেদা জিয়া যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি নিশ্চিত না হবেন যে, আগামীতে তিনি ক্ষমতায় যেতে পারছেন না, ততোক্ষণ পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে আসবেন কিনা সন্দেহ আছে! এই কাজের জন্য তিনি দেশ বিদেশে প্রচুর লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছেন। মিডিয়ার পেছনে প্রচুর ইনভেস্ট করেছেন । রাতজাগা কিছু কুশীল সমাজের লোকদেরও ভাড়া করেছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, খালেদা জিয়াকে ক্ষমতায় বসানোর নিশ্চয়তাই কি একমাত্র নিরপেক্ষ নির্বাচনের যথাপোযুক্ত প্রমান ! তা করতে হলে বেগম খালেদার কথা মতো, ২০০১-এর সালসা মার্কা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্বে ডঃ ইউনুস-ড. কামালদের বসাতে হবে, জাতি কি সেই সুযোগ খালেদা–ইউনুস-কামালদের দেবে! মোটেই না, কারন ন্যাড়া বেলতলা একবারই যায় । ।
লেখকঃ ডেনমার্ক প্রবাসী, সমাজ কর্মী ও সংগঠক।
E-mail: linkonmollah1@gmail.com
জিসিপি