ঢাকা, শনিবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

তুই যে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলি

মোহাম্মাদ মাহাবুবুর রহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৩
তুই যে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলি

সূর্যের সমস্ত আলো:
ভজন পূজন সাধন আরাধনা/সমস্ত থাক পড়ে। /রুদ্ধদ্বারে দেবালয়ের কোণে/কেন আছিস ওরে।

/অন্ধকারে লুকিয়ে আপন-মনে/ কাহারে তুই পূজিস সংগোপনে,/নয়ন মেলে দেখ দেখি তুই চেয়ে-/দেবতা নাই ঘরে। /তিনি গেছেন যেথায় মাটি ভেঙে/করছে চাষা চাষ-পাথর ভেঙে কাটছে যেথায় পথ,/খাটছে বার মাস। আমি নিশ্চিত পূজন রবি ঠাকুরের এই কবিতা পড়েছিল। না হয় এতোটা কর্মবীর হওয়ার কথা নয় । ভালোবাসত ও কাজ করতে । সৃষ্টিশীল সব চিন্তা মাথায় ঘুরঘুর করতো।

আমি যখন চট্টগ্রামে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কাজ করছিলাম তখন ও সবে কোর্টে যাওয়া –আসা শুরু করেছে। হুটহাট ছুটে আসতো আমার কাছে। বলতো –“স্যার , বাবা নাই তো তাই অস্থির লাগলে আপনার কাছে ছুটে আসি”। ওর বাবা একজন প্রয়াত আইনজীবী। চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। খুব সুনাম ছিল উনার। নিজেও একই পেশাতে এসেছে বলে বাবার পরিচয়টা দিতে ও সংকোচ করত। অসম্মান করে নয়। ওর আত্মমর্যাদাবোধের কারণে।

নিজের পরিচয়েই ও বড় হতে চাইতো। আমার চেম্বারে আসলে না বলা পর্যন্ত দাঁড়িয়েই থাকতো। বসার পরও চোখ তুলে তাকাত না । মাথা নীচু করে দাঁত দিয়ে নখ কাটতে থাকতো। ওর মা’র কুশল জিগ্যেস করলেই খুশিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠত। ঐ সময় সূর্যের সমস্ত আলো ওর চেহারায় দেখতে পেতাম। মা আর মানব-কল্যাণ ছাড়া অন্য কোন বিষয় ও আমার সাথে  কমই শেয়ার করত।

ভালোলাগার আবেশ:
মানুষ ভালোবাসত । তাই অনেক পরিচিত জনের স্বার্থপরতা ও ও  অকৃতজ্ঞতা প্রত্যক্ষ করলে ও তা মনের মধ্যে গেঁথে রাখতো না। কিংবা আমাদের অনেকের মত সেটাতে পড়ে থাকতো না বুঁদ হয়ে। বরং যাঁরা ভালোবাসা দেখাতো  কিংবা  স্নেহ করতো তাঁদের কথা আমাকে বলতো প্রাণ খুলে ।

বলতো, “স্যার , আমিও মানুষকে নিয়ে আপনার মত আশাবাদী। এই যে স্যার, শংকর আংকেল আছেন না , উনি আমার বাবার জুনিয়র ছিলেন । আমার বাবার আদরের কথা উনার মনে আছে। প্রত্যেক সেমিস্টারের শুরুতে উনি নিজেই ফোন করেন, ‘বাবা ,তুমি সেমিস্টার ফি দিয়েছ?’  নিজের সন্তানের মত খোজ খবর রাখেন”। সিনিয়রের চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে উঠে। ভাবি-“গাম্ভীর্যের শক্ত খোলসের মধ্যে  কত মহত্ব-ঔদার্য যে লুকিয়ে থাকে!”

নিজেকে খুব হীন-নীচ মনে হয়। হঠাৎ করে বলতো, “স্যার , আপনার অনেক মুল্যবান সময় নিয়ে নিলাম। চেয়ার ছেড়ে  উঠতে উঠতে প্রণাম  করতো  পরম ভক্তি নিয়ে । ও চলে যেত । আমি তাকিয়ে থাকতাম । ওর বিনয়-ভরা অথচ আত্মবিশ্বাসী হেঁটে যাওয়া বড়ই ভালো লাগতো ।

সূর্য ডুবে গেলে পশ্চিম আকাশে লাল আভা বিরাজ করে অনেকক্ষণ। পূজনের প্রতিটি প্রস্থানের পরও সেরূপ ভালোলাগার আবেশ হৃদয়ে লেগে থাকতো। কোন কোন  ছাত্রের বেলায় সেরূপ হয় । সব ছাত্র-ছাত্রী সমান। তারপরও কারো কারো বিশেষ স্বকীয়তা আমার মত নগণ্য মানুষের সূক্ষ্মতম অনুভুতির গভীরে চলে যায় । মানুষ হিসেবে এটা আমার দুর্বলতা। এটা আমার ত্রুটি ।

লজ্জায় ভিসি স্যারের সাথে দেখা করিনি:
একবার এমন হল যে , অনেক দিন পুজনের সাথে দেখা নেই। হঠাৎ করে দেখা হল। কোন অনুষ্ঠানে । নাকি প্রিমিয়ার ল স্কুলে! ঠিক মনে করতে পারছি না । আমি জিগ্যেস করলে জানায়, “স্যার ,সিনিয়রের সাথে ঢাকায় থাকতে হচ্ছে। ” আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালে ও বলল, “ আমার সিনিয়র তো অ্যাডভোকেট হেনা স্যার। ”এটা আমার জানা ছিল না । ও বলে চলে, “ উনার পেশাদারিত্ব অসাধারণ। অনেক জানেন। উনার কাছ থেকে প্রচুর শিখছি”।

কোথাও একবার দেখা হলে ও আমাকে বলল, “ স্যার ,আমার দুর্ভাগ্য যে আমি মাস্টার্সে আপনার ক্লাস করতে পারছি না”। জানতে চাইলাম, “ কেন কেন?” বলল, “ স্যার , আপনাকে এই মুহূর্তে বলতে পারছি না । সংকোচ লাগছে”। পরে আমার পীড়াপীড়িতে বলল, “ আমি প্রিমিয়ারে মাস্টার্স করছি না। অন্য ভার্সিটিতে করব। ওখানে টিউশান ফি কিছুটা  ছাড় পাচ্ছি। ”

আমি জিগ্যেস করলাম, “ ওখানে কি ভর্তি  কমপ্লিট?” ও বলল, “ না । স্যার”। বললাম, “আমি ভিসি স্যারের সাথে কথা বলবো। আমি বলার আগে অন্য কোথাও ভর্তি হওয়া যাবে না ”। প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য ড. অনুপম সেন স্যারের সাথে ওর ব্যাপারে কথা বললাম।

স্যার বললেন, “ না- না এটা হতে পারে না । টাকার অভাবে আমাদের ছাত্র অন্য কোথাও চলে যাবে –তা মেনে নেয়া যায় না । ওর জন্য আমি টিউশান ফি ছাড়ের ব্যবস্থা করবো। তুমি ওকে আমার সাথে দেখা করতে বল”। স্যারের সিদ্ধান্ত ওকে জানানোর জন্যে ফোন করলাম। ফোন বন্ধ। পাওয়া গেল না ।

ওদের ব্যাচের কোন একজনের মাধ্যমে আমি মেসেজও পাঠালাম। কিন্তু কোন রেসপন্স নেই। বেশ কয়েক দিন ধরে কোন খবর নেই ওর । শেষে একদিন দেখা হল। হালকা করে বকা দিলাম । মাথা নীচু করে মিটিমিটি হেসে জবাব দিল,“স্যার , আমি আপনার মেসেজটা পেয়েছিলাম। লজ্জায় ভিসি স্যারের সাথে দেখা করিনি”। বললাম, “ বাবার মত এই মানুষটার কাছে লজ্জা পাওয়ার কী আছে?” ও নিরুত্তর।

পূজনের পূজন:
আমি বদলি হয়ে নোয়াখালী চলে গেলাম। ওখান থেকে  খাগড়াছড়ি। অনেকদিন পূজনের সাথে দেখা নেই । কথা নেই । এক সন্ধ্যায় ওর ফোন পেলাম। ঐ  সময়  কোন এক কাজে আমি প্রিমিয়ার ল স্কুলে ছিলাম। ল ক্যাম্পাস তখনো প্রবর্তক মোড়ে। পূজনের উচ্ছ্বাসিত গলা চিনতে  অসুবিধা  হল না । ও জানাল , “ স্যার , বি.এস. আর. এম – এ আমার একটি চাকরি হয়েছে। আপনাকে না জানিয়ে রেফারী হিসেবে আপনার নাম দিয়েছি। ওঁরা কিছুক্ষণ পর আপনার কাছে ফোন করবেন”। ও অনুভব করেছিল – আমাকে না জানিয়ে রেফারী হিসেবে আমার নাম উল্লেখ করার অধিকার আমি তাকে দিয়েছি।

ওর সাথে কথা বলার পর  বি. এস. আর. এম অফিস থেকে এক ভদ্রলোক ফোন করলেন। তাঁকে যা  জানালাম তার মর্ম হল - পূজন আমার অত্যন্ত প্রিয় ছাত্র ,ওকে পেলে আপনাদের জন্য ভালো হবে। কথা শেষ করে মাগরিবের নামাজ পড়লাম। মুনাজাতের পর কম্পিউটারে বসে কাজ করছিলাম। কারো উপস্থিতি আমার মনোযোগ কেড়ে নিল। দেখলাম- পূজন পা ছুঁয়ে কদমবুচি করার জন্য  হাত এগিয়ে দিয়েছে । আমি হাত ধরে পেললাম । ও খুব আবেগী গলায় বলল- “স্যার , আজকের মত করতে দেন। না হয় আমি মনে কষ্ট পাব”। এই হল  পূজনের পূজন ।

গত রমযানের কোন একদিন । নগরীর একটি হোটেলে প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের ইফতার পার্টি। ওরা দাওয়াত করেছে। আমি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি, ঠিক সেই সময় পূজনের ফোন। ও বলল, “ স্যার ,আপনি আসবেন শুনে আমিও ইফতার পার্টিতে চলে এসেছি। অনেকদিন পর আপনার সাথে দেখা হবে”। ওর কথা শুনে ইফতার মাহফিলে যাওয়ার আগ্রহ আরও বেড়ে গেল। হোটেলের সামনে গিয়ে দেখলাম –পূজন আমাকে রিসিভ করার জন্য দাঁড়িয়ে আছে।  

আমাদের প্রিয় ছাত্র পূজন আর নেই:
আমার মোবাইল নষ্ট । সেটা জানিয়ে পরশু ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছি । গতকাল ভোরে গ্রামে যাওয়ার আগে সর্বশেষ স্ট্যাটাস দিয়েছি ফেসবুকে। ঈদের নামাজ পড়ে কোরবানি সেরে মা, দাদা-দাদী, নানা-নানী এবং অন্যান্য আত্মীয় স্বজনদের কবর জেয়ারত করে শহরের দিকে রওনা দিলাম।

রাস্তায় প্রচণ্ড যানজট। বিশেষ করে চাতরী চৌমুহনীতে। যানজটের তেমন উল্লেখযোগ্য কারণ চোখে পড়ল না। যানজট ছাড়ানোর জন্য স্থানীয় কিছুলোক স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন। কিন্তু মনে হল উনারা নিজেরাই যানজটের অন্যতম একটি কারণ। বিকেল পাঁচটায় রওনা  দিয়ে শহরে পৌঁছতে প্রায় নয়টা বেজে গেল।

সেন স্যার আর ইফতেখার স্যারকে মিস করছিলাম। সেন স্যারকে ফোন করে পেলাম। স্যারকে ঈদের শুভেচ্ছা জানালাম দেরীতে হলেও। স্যারের সাথে কুশল বিনিময়ের পর স্যার স্নেহভরে বললেন, “ তুমি খুব ক্লান্ত। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়”। স্যারের সাথে কথা শেষ করে ইফতেখার স্যারকে ট্রাই করলাম। কোন ভাবে ঢুকতে পারলাম না স্যারের ফোনে। আব্বা আর জাকিয়ার সাথে টুকটাক কথা বলে  ঘুমাতে গেলাম।

ফজর  আযানের সময় ঘুম ভাঙ্গল। নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। একটি ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম। জাকিয়ার কণ্ঠ কানে এল-“এই তুমি চাচাকে সকালে নাস্তার দাওয়াত দিয়েছ। উনি এসেছেন। আর তুমি ঘুমিয়ে রয়েছ”। মনে পড়লো –চাচা শ্বশুর মাস্টার মেরিনার আজিজ সাহেবকে কাল রাতে দাওয়াত দিয়েছিলাম। সাগরে  উনার বিচিত্র অভিজ্ঞতা। এজন্য আমরা উনাকে সিন্দাবাদ চাচা ডাকি।

চটজলদি বিছানা ছাড়লাম। মুখ-হাত ধুয়ে নাস্তার টেবিলে বসলাম। দুঃস্বপ্নের কারণে মনটা খচখচ করছে। নাস্তা ভালো লাগছিল না। চাচা-শ্বশুর থাকায় ভদ্রতার খাতিরে কোন রকমে  উনার সাথে সময় পার করছিলাম । নাস্তা করা শেষ হলে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ল্যাপটপ ওপেন করলাম।

ফেসবুকে ঢুকলাম। প্রথম নটিফিকেশনটায় ক্লিক করলাম। এটা  ল স্কুলের শিক্ষক প্রিয় ছোটভাই রাজীবের পোস্ট। ওখানে লেখা আছে- “আমাদের প্রিয় ছাত্র পূজন আর নেই”। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল । আমার দু’চোখে অশ্রু অঝোর ধারায় বইতে থাকল। জাকিয়া বলল- কি হল? আব্বা বললেন, “ ও ফুত কি অইয়ে?” আমি অনেকক্ষণ ওদের দিকে নিশ্চুপ  তাকিয়েছিলাম। আব্বা আর জাকিয়া কিছুটা অধৈর্য হয়ে পড়লেন। অনিচ্ছা সত্বেও দুঃসংবাদটা  বললাম । উভয়ের হৃদয় থেকে হাহাকার  ঝরে পড়লো। ওর বাবার নাম বলায় আব্বা খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন। উনি নাকি চিনতেন ওর বাবাকে। জাকিয়ার চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে । ও উঠে অন্য রুমে চলে গেল।

শোয়েবদের তীব্র যন্ত্রনা ও ট্র্যাজিক হিরো সঞ্জয় গান্ধী
আমি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে চ্যাট অপশনে চোখ রাখলাম। আরেক প্রিয় ছাত্র শোয়েবকে দেখলাম অনলাইনে আছে। টেক্সট পাঠানোর সাথে সাথে রিপ্লাই পেলাম। ও নাকি পূজনদের গ্রামে । এক পর্যায়ে শোয়েব লিখল, “তীব্র যন্ত্রনা”। আব্বার মোবাইল নাম্বারটা ওকে দিলাম। শোয়েব ফোন করলে জানতে পারলাম- দাহ-অনুষ্ঠান প্রস্তুত। শোয়েবকে প্রশ্ন করলাম –“এতো তাড়াতাড়ি?” শোয়েব বলল, “ স্যার , ওর শরীর খুব খারাপ হয়ে গিয়েছে। লাংসে পানি ঢুকে গিয়েছিল”। তাই শেষবার দেখতে  যাওয়ার ইচ্ছে ত্যাগ করলাম।

পূজনের ওয়ালে চোখ  বুলাতে থাকলাম। সবকিছু আগের মতোই আছে। প্রোফাইল ছবিতে ছোটবেলার পূজন হাসছে। অসাধারণ নিষ্পাপ হাসি। কাভারের ছবিতে কনভোকেশনের পোশাকে দুই হাত মেলে দাঁড়ানো আমাদের পূজন। যেন স্রষ্টার  কাছে বিশাল মুনাজাত-“হে প্রভু! আমি অনেক ভালো কাজ করতে চাই”।

ওর ওয়ালে চোখ রাখলেই শুনা যাবে দুঃখমাখা অশ্রুপতনের বিকট বিকট শব্দ। বিভিন্ন গ্রুপ ও ফ্রেন্ডের ওয়াল ভিজে যাচ্ছে অশ্রুর বন্যায়। এই  বন্যার প্রবাহমান পানি রক্তের চেয়েও লাল। ঘুরে ফিরে পূজনের ওয়ালেই চলে আসি বার বার। সারাটা দিন এভাবেই কাটল। আবারও চোখ বুলাই । ওর ছবিগুলি বারংবার  দেখছি । সারা দিন কতবার যে দেখেছি। দেখা শেষ হয় না । কত ভঙ্গীতে কত রকম পোশাকে ছবি তুলেছে ও। কোন কোন ছবি দেখে আজ  কিছুটা অস্বস্থিবোধ করেছি,  যে ছবিগুলো দেখে আমি আগে আনন্দ পেতাম। আমাদের সদা-পরিপাটি ছাত্রটির সপ্রতিভ স্টাইল আমার কাছে বড়ই মনোমুগ্ধকর ছিল।   কোন কোন ছবি দেখে মনে হত –ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ছোটছেলে ট্র্যাজিক হিরো ড্যাশিং পলিটিশিয়ান সঞ্জয় গান্ধী আমার দিকে তাকিয়ে স্মার্ট ভঙ্গীতে হাসছে।

সঞ্জয় গান্ধী উচ্চশিক্ষিত ছিল না। লেখাপড়ায় ছিল অমনোযোগী কিন্তু আমাদের পূজন তো ছিল ব্যতিক্রম। এলএলএম করার উদগ্র বাসনা নিয়ে  ও প্রিমিয়ার ল স্কুলে ফিরে এসেছিল । কিন্তু জীবনের শেষ পরিণতিতে কেন এমন কষ্টদায়ক মিল!   টিউশান ফি ওয়েভার লাগবে কিনা জিগ্যেসও করেছিলাম। ও মিষ্টি হেসে কিছুটা দুষ্টুমি করে বলেছিল, “স্যার , চাকরি করছি না”। এমনই ছিল আমাদের পূজন। শিক্ষক হিসেবে অনেক সম্ভাবনা দেখতে পেতাম ওর মধ্যে। কিন্তু মহান সৃষ্টিকর্তা আমার মত তুচ্ছ মানুষ ও নগণ্য শিক্ষককে নিয়তি দেখার ক্ষমতা তো দেননি । অনেক বড় হতে পারতো। নিদেনপক্ষে দেশসেরা আইনজীবী । মহাপ্রভু হয়তো আরও ভালো কিছু  দেওয়ার  জন্য তাকে নিয়ে গেছেন। কিন্তু এই অবুঝ মনতো বুঝতে চায় না। ওর ভাইহারা বোন আর একমাত্র সন্তানহারা মাকে কী বুঝাব ?

পুনশ্চ-কেবলই তোর জন্য:
আমি সব ছাত্র-ছাত্রীর মত পূজনকেও ‘আপনি’ করে বলতাম।

পূজন তুমি তো প্রায়ই অনুযোগ করতে-“ স্যার,  আমাকে আপনি করে বললে লজ্জা লাগে। পর পর মনে হয়। আমি কি স্যার এতই দূরের? প্লিজ স্যার ,আমাকে তুই বলে ডাকবেন। ” আমি বলতাম, “আমার অন্য ছাত্ররা বলবে আপনাকে বেশি আদর করি। অন্ততঃ সম্বোধনের ক্ষেত্রে আমি বৈষম্য এড়িয়ে সাম্য বজায় রাখতে চাই”। তুমি বলতে, “স্যার , এটা আমি আদায় করবই”। হ্যাঁ –রে পূজন! তুই আদায় করেছিস। কিন্তু তুই যে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলি; তার কি হবে? বল্‌বল্‌!চুপ করে থাকিস না ।

লেখক: সচিব (যুগ্ম জেলা জজ) ভূমি কমিশন,খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা

বাংলাদেশ সময়:১২২১ঘন্টা, অক্টোবর ১৮ ২০১৩
টিসি/জিসিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।