প্রতিদিন, প্রায় প্রতিদিনই জাহাঙ্গীরনগর কেন্দ্রিক কোনো না কোনো খবরের সম্মুখীন হই। খবরগুলো যে খুব সুখকর বা আশাপ্রদ নয় তা বলাই বাহুল্য।
জাহাঙ্গীরনগরের বাইরের মানুষ যারা তারা সবসময়ই বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষার্থীরা এক কোরামের। ’ অন্যরা মানুন আর নাই মানুন, জাহাঙ্গীরনগরের সিনিয়র-জুনিয়রের মধ্যে সৌহার্দ্যটা বরাবরই অন্য যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেশি। যত সিনিয়রই হোন না কেন, বা যত বড় অবস্থানেই থাকুন না কেন জাহাঙ্গীরনগরের পরিচয় দেওয়া মাত্রই তিনি যেন কতোকালের আপন হয়ে যান। জাহাঙ্গীরনগর এক অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির নাম।
আমাদের অগ্রজেরা যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে ধারণ করেন বা আমরাও যতটুকু ধারণ করি আমাদের অনুজেরা কি তা পারেন! হয়ত পারেন না। দায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি।
২০০৪-০৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে জাহাঙ্গীরনগরের সঙ্গে আমার পথচলা। জাহাঙ্গীরনগরে ভর্তি হওয়ার সময় থেকে ওই যে আমাদের পথচলা শুরু হয়, আমৃত্যু এ বন্ধন অটুট থাকে। আমাদের শেষ সময়েই ২০০৯ সালে নতুন ভিসি হলেন শরীফ এনামুল কবীর। এসেই ক্যাম্পাসে আমূল পরিবর্তন। পরিবর্তগুলো একটাই নগ্ন যে ‘কট’ করে চোখে লাগে। সেই পরিবর্তনের ধারা আজো এতটাই প্রকট যে প্রায়ই পত্রিকাগুলোর শিরোনাম হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। দুই কান কাটা ব্যক্তির মতোই সদর রাস্তার মাঝ দিয়ে চলে এখানকার ঘটনা, অঘটনের পেছনে কলকব্জা নাড়ানো গোষ্ঠী।
২০০৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবীর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে তিনিই ছিলেন প্রথম উপাচার্য। আর এ কারণে স্বাভাবিকভাবেই তার কাছে প্রত্যাশাও ছিল অনেক বেশি। কিন্তু সব আশার গুড়ে বালি।
ভিসি হয়ে এসেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গোড়া ধরে নাড়া দিলেন। জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষার্থীদের যে আত্মিক সম্পর্কের কথা প্রথমেই বলেছি তাতেই প্রথম আঘাত করলেন। রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে নতুন ছাত্রদের বললেন, ‘যদি ফাস্ট ইয়ার ছাড়া অন্য কেউ ফাস্ট ইয়ারের জন্য বরাদ্দকৃত গাড়িতে ওঠে, তাহলে যেন ঘাড় ধরে তাদের নামিয়ে দেওয়া হয়’। একভাবেই শুরু হয়ে গেল সিনিয়র-জুনিয়রের দ্বন্দ্ব। জুনিয়রদের এতোটাই অগ্রাধিকার দিয়ে দেওয়া হলো যে তাদের ভালভাবেও কোনো কথা বলা যেতো না সেসময়।
এরপর শুরু হলো গাছ কাটার তাণ্ডব। হলো আন্দোলন, মানববন্ধন। মিডিয়াতেও বেশ ভাল কাভারেজ পাওয়া গেল। কিন্তু গাছ কাটা থামানো গেলো না কিছুতেই। ধোকা দিয়ে ‘গাছ কাটবেন না’ কথা দিয়ে ঈদের ছুটিতে বহুবছরের পুরোনো গাছগুলো কেটে ফেলা হলো। গাছ কেটে সেখানে হলুদের চাষ করা হলো! এমন কি ডেইরি গেট থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত আইল্যান্ডের মাঝে যে সারি সারি গাছ ছিল, যা দেখলেই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা মাত্রই মন ভালো হয়ে যেতো, রাস্তা থেকে শহীদ মিনার দেখা যায় না বলে সে গাছগুলোও কেটে ফেললো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যে শহীদের সম্মানে এটা করা হয়েছে তারা এটা দেখলে নিশ্চিত লজ্জায় মুখ লুকানোর জায়গা পেতেন না!! কিন্তু কানকাটা প্রশাসন এতে কোনো ভ্রুক্ষেপই করলো না।
শুধু এটাই নয়, ছাত্রদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা ভেঙে দিলো ক্যাম্পাসের বহু বছরের আড্ডার জায়গাগুলোও। ‘মেহের চত্বর’ উঠিয়ে দিয়ে তাকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করা হলো। নাম দেওয়া হলো ‘টারজেন পয়েন্ট’। যেখানে পুরানো কারো প্র্রাণের তৃষ্ণা মেটে না। নতুনদের আনাগোনাই বেশি। সিনিয়র-জুনিয়রদের বিচ্ছিন্নতার সুতো টেনে লম্বা করা হলো আরও এক ধাপ।
‘সুপারি তলা’ থেকে সরিয়ে ‘ট্রান্সপোর্ট’ নিয়ে যাওয়া হলো রসায়ন বিভাগের ‘কোলের ভেতর’। ‘বটতলা’ সারারাতের পরিবর্তে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খোলা রাখতে নির্দেশ দেওয়া হলো। এমনকি ছেলেদের হলের গেটও!
শুধু তাই নয় ‘বারো মাসে তেরো পার্বন’র মতো জাহাঙ্গীরনগরে লেগেই থাকতো একের পর এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মুক্তমঞ্চ অনুষ্ঠান ছাড়া ভাবাই যেতো না। আমাদের শেষ দিকে দেখেছি সেই মুক্তমঞ্চের সিড়িগুলোয় কতটা ঘাস জন্মেছে। এই জাহাঙ্গীরনগরকে বলা হতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাংস্কৃতিক রাজধানী। অথচ দেখেছি দর্শকের অভাবে কতোটা খাঁখাঁ করেছে মুক্তমঞ্চ। যাদের সঙ্গে এ মঞ্চের আত্মার সম্পর্ক তারাই বোধহয় এর আর্তচিৎকার শুনতে পেতেন।
এভাবে নানা ফন্দি ফিকির করে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হলো একে অপরের কাছ থেকে। জাহাঙ্গীরনগরের ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্কের মূলে আঘাত করে গড়ে তোলা হলো একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী করে। একে কি পাকিস্তানিদের আচরণের চেয়েও কোনো অংশে কম মনে হচ্ছে!!!
যা হোক নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্টতার পাশাপাশি নানামুখী সহিংস ও নেতিবাচক ঘটনা এবং এসবের জের ধরে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের দীর্ঘদিন ধরে চলা টানা আন্দোলন-বিক্ষোভের এক পর্যায়ে এসে আর কোনো বিকল্প না পেয়ে বাধ্য হয়ে ভিসি পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হলো ড. শরীফ এনামুল কবীরকে।
পদত্যাগের পরক্ষণেই রাষ্ট্রপতির নির্দেশে নতুন ভিসি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। নতুন ভিসি নিয়োগের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান টানা অচলাবস্থার একটি আপাত সমাধান হলো বটে কিন্তু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষককে বাদ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন শিক্ষক নেতাকে ধার করে এনে এর স্থায়ী সমাধান হলো না। সমাধান যে হলো না পত্রিকার পাতা উল্টালেই এর ভুরি ভুরি নজির চোখে পড়বে।
অনেকেই অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধার করে শিক্ষক এনে ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়াকে ভালো চোখে দেখলেন না। অনেকে একে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপমান বলেও মনে করলেন। কিন্তু অনেকে আবার ড. মো. আনোয়ার হোসেনের মতো সৎ ও আদর্শবাদী মানুষ ভিসি হিসেবে আসায় স্বস্তি প্রকাশ করলেন। আমাদের প্রত্যাশাও ছিলো তেমনই। আমরা চলে এসেছি তাতে কি!
ওই যে বলেছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় মানেই এর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একটা আত্মার সম্পর্ক, যেখানেই যে অবস্থানেই থাকুন না কেন তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়কে ধারণ করেন। সেই বোধ থেকেই আমরাও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিলাম কর্নেল তাহেরের ভাই হয়ত তার মতোই হবেন।
কিন্তু ড. আনোয়ারও হয়ত এ বিশ্ববিদ্যালয়কে আপন করে নিতে পারেননি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক জোড়া লাগাতে পারেননি। পারলে হয়তো লেকের পাড় বাঁধাতে হতো না, ভেঙে যাওয়া সম্পর্কের পাড় জোড়া লাগাতে চেষ্টা করতেন, লেকের মাঝে রঙ্গমঞ্চ বানাতেন না একেকটা শিক্ষার্থীর মনেই সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের তৃষ্ণা জাগানোর চেষ্টা করতেন।
শিক্ষকদের কোনো পক্ষই তাকে স্বাগত জানায়নি। কেউ বিরোধিতা করছেন আর কেউ বাধ্য হয়ে চুপ থেকেছেন। সাধারণ ছাত্ররাও শেষ পর্যন্ত আর তার প্রতি আস্থা রাখতে পারেননি। কাজের চেয়ে তিনি নাকি বেশি প্রচারমুখী। গণমাধ্যমে যত যোগাযোগ তত নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও নাই। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে, ক্যাম্পাসের আবাসিক শিক্ষক হিসেবে তাকেই তো ছাত্র-ছাত্রীদের বেশি পাওয়ার কথা। আমি এসব নিজের চোখে দেখিনি। ক্যাম্পাসে গিয়ে, হলে থেকে একেবারেই সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি। যদি সব সত্য নাও হয় তবুও ‘যা রটে তার কিছুটাতো বটেই’।
ড. আনোয়ার হোসেনের কি খুবই দরকার ভিসি পদ আকড়ে থাকার। যতটা সুনাম তিনি অর্জন করেছেন সারা জীবনে তার আর একটুকুও কি অবশিষ্ট আছে? খুব সম্মানের সঙ্গেই আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যেতে পারতেন না কী? নাকি তিনিও ক্ষমতার মোহ কাটাতে পারছেন না? নাকি এ দায়িত্ব ছেড়ে যেতে অপমানিত বোধ করছেন?
কিন্তু স্যার অপমানের আরও বাকি আছে কি?
একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে তিনদিন নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থাকতে হয়, তাকে খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করতে হয়, এর চেয়েও বড় অপমান আবার হয় নাকি! তাও যদি এমন হতো যে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট তাও না হয় কথা ছিলো। কিন্তু তিনিও একই নাওয়ের মাঝি। আদতে শরীফ এনামুল কবীর আর আনোয়ার হোসেনের পার্থক্য কতটুকু!
এতো গেলো আমাদের প্রধান দুই অভিভাবকের কথা। এছাড়া আমাদের যে আরও অভিভাবক আছেন যারা নিজেদের দাবি করেন আমাদের পিতৃতুল্য, তারাইবা আসলে কতটুকু পিতার ভূমিকা পালন করছেন? আমাদের পিতৃতুল্য শিক্ষক তাদের সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত নিয়ে টানাটানি করছেন। আর করবেনই বা না কেন, তারা পিতৃতুল্য কিন্তু পিতা তো নন! তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতেই সাধারণ ছাত্রদের ভবিষ্যৎ তারা অন্ধকার করছেন। কেননা পোষ্য কোটায় তাদের সন্তানদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আর চাকরি দুটোই তো নিশ্চিত!!
সাধারণ শিক্ষার্থী বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক প্রায়ই অভিযোগ করেন, ড. আনোয়ার এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক না বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি তার কোনো মায়া নেই। অনেকটা একটি প্রাপ্তবয়ষ্ক গাছের ছাল অন্য আরেকটি প্রাপ্তবয়ষ্ক গাছে এনে প্রতিস্থাপনের মতো। কিন্তু এ প্রশ্নও কি মনে একবারের জন্যও উদয় হয় না যে, এখানকার শিক্ষকদেরই বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি মমত্ববোধ কতটুকু! এর সুনামের দিকে, এর ভালোর দিকে কে কতটুকু দৃষ্টি দিয়েছেন!
যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হইনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সম্পর্কে তখন ধারণা ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক! ওরে বাবা না জানি কেমন। না জানি কতো বড় মাপের মানুষ তারা, যেনো আকাশ ছুঁতে পারেন! কিন্তু এখন বিশ্বিবিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কথা মনে হলে মুখ দিয়ে বের হয়ে আসে ছি!
আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মারামারি করে জনসমুক্ষে! ভিসির কার্যালয়ের সামনে, ভিসি তাড়ানোর আন্দোলনের নামে। এ ঘটনায় আমি তো লজ্জা পাই। আপনাদের লজ্জা হয় না!! নাকি আপনাদের দুই কান কাটা বলে আজ রাস্তার মাঝ দিয়ে হেঁটে যেতে পারেন নির্দিধায়!!!
অবশ্য হবেই বা না কেন, অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবীর ভিসি হয়ে আসার পর নাকি ১৯৬ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই নাকি দ্বিতীয় শ্রেণীতে উত্তীর্ণ ছিলেন। বিজ্ঞপ্তির বাইরেও নাকি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সেসময়! এভাবে যারা নিয়োগ পান তাদের মানসিকতা আর কতো উন্নত হবে। অবৈধতার হাত ধরে যে যার শিক্ষক হওয়া তিনি তো ওই পথেই হাঁটবেন!
সেসময় আমি দেখতাম কিছু ছাত্রের লেজুরবৃত্তি। শিক্ষকদের পেছনে ঘুরে তাদের নানা কাজ করে দিতেন তারা। উদ্দেশ্য পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়া, সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া। তাদের সে উদ্দেশ্য যে অনেক ক্ষেত্রেই পরিপূর্ণতা পেতো তা বলাই বাহুল্য। দলীয় রাজনীতি, শিক্ষকদের লেজুরবৃত্তিতে যারা শিক্ষক হন তাদের কাছে খুব বেশি কিছু আশা করা যায় কি? সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিই বা তাদের কি মমতা থাকবে!
এই শিক্ষকরাই আবার বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে, যেখানে সেখানে কিংবা সাংস্কৃতিক আড্ডায় গলা ফাটিয়ে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে তুলোধুনো করে ছাড়েন। কিন্তু তাদের নিজেদের চরিত্রের দিকে একবারও ফিরে তাকান না। রাজনৈতিক নেতাদের চরিত্রই না হয় এইটা, নিজেদের কথা ভাবা, কিন্তু আপনারা তো আরও ভয়ংকর! শিক্ষক নামের আড়ালে দলীয় রাজনীতির বন্ধনে আষ্টেপৃষ্টে বাধা। আর ক্ষমতার মোহে অন্ধ আপনাদের নিজেদের মধ্যে হাতাহাতি করতে পর্যন্ত ছাড়েন না। রাজনৈতিক নেতাদের মতোই একদল অন্যদলকে প্রতিনিয়ত দোষারোপ করে যাচ্ছেন। আপনাদের না হয় দুই কানই কাটা, কিন্তু যারা সত্যিকারের শিক্ষক আপনাদের কর্মকাণ্ডে তাদের মাথা কতটা নিচু হয়েছে সেটা বোঝার মতো বোধও আপনাদের অবশিষ্ট নেই। ক্ষমতার মোহে আপনারা অন্ধ, বধির এবং স্থবির হয়ে গেছেন।
ফিরে যাই শুরুর কথায়, যেখানে বলেছিলাম জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষার্থীদের মেলবন্ধনের কথা, অন্যায়-আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কথা এবং তাদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার কথা। শরীফ এনামুল কবীর শিক্ষার্থীদের মেলবন্ধন এবং মেরুদণ্ড দুটাই ভেঙে দিয়েছেন। একতা না থাকলে কখনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যায় না এটা তিনি ভালই জানতেন। সেই একতাটাই নষ্ট করেছেন তিনি। তাই একজনের বিপদে অন্যজনের ছুটে যাওয়ার ঐতিহ্যটাই ধ্বংস করে দিয়েছেন তিনি। তাই এখনো তেমন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা। অনেকের ইচ্ছা থাকলেও চুপ করে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতাদের ভয়ে। তাদের বলব, জাহাঙ্গীরনগরের আন্দোলনের ইতিহাস জানুন। আমি একশ’ ভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি এতে আপনাদের ভাঙা মেরুদণ্ড জোরা লাগবে, রক্ত উদ্দীপিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৩
এসএটি/জিসিপি