ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

জনহিতৈষী সব রাজনীতিবিদের উদ্দেশ্যে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৩
জনহিতৈষী সব রাজনীতিবিদের উদ্দেশ্যে

zinia-zahidদেশের যত রাজনীতিবিদ আছেন তাদের উদ্দেশে বিনীতভাবে কয়েকটি কথা বলতে চাই। আপনারা সারাক্ষণ দেশের উন্নয়নের কথা বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য আপনারা নিবেদিত প্রাণ বলে সর্বদাই দাবি করেন।

আমরা জনগণও সব মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে আমাদেরই মঙ্গলের উদ্দেশ্যে ভোট দিয়ে আপনাদের জনপ্রতিনিধি করে ৫ বছর অন্তর অন্তর সংসদে পাঠাই। উন্নয়নের অপেক্ষায় থাকি।
 
কিন্তু নির্বাচনের দু’দিন যেতে না যেতেই আমরা আমাদের ভুল বুঝতে পারি। আমরা বুঝতে পারি, আমাদের উন্নয়ন নয়, নিজেদের উন্নয়নের জন্যই আপনারা আমাদের কাছে ভোট ভিক্ষা করেছিলেন। তবুও ন্যাড়া যে একবারই বেল তলায় যায় সে প্রবাদ বরাবরই ভুল প্রমাণ করে বারবার মাথা ন্যাড়া করে বেলতলায় যাই। এই আশায় যে, এবার হয়তো বদলে যাবেন সুবিধাবাদী রাজনীতিকরা। নিজেদের টাকা পয়সার পাহাড় গড়ায় মনোনিবেশ না করে আমাদের ভাত-কাপড়ের সামান্য হলেও ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবেন। ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থার আবদার খুব বেশি শোনালে অন্তত নিশ্চিন্তে পরিবার-পরিজন নিয়ে শান্তিতে ঘুমানোর ব্যবস্থা করে দেবেন। আশাহত জনগণ এর চেয়ে বেশি এ দেশের রাজনীতিকদের কাছে আশা করে না। আশা করার স্বপ্নও আমরা দেখি না।
Bus-bg
পেটে ভাত না থাক, গায়ে কাপড় না থাক, মাথায় ছাদ না থাক, শিক্ষার আলোর আশা তো বহু দূরের কথা, কিন্তু কষ্ট হয় যখন দেখি আমাদের জনগণের নাম ভাঙিয়ে আপনারা ক্ষমতার জন্য কামড়াকামড়ি করেন।
এতই যখন দেশের মঙ্গল চিন্তায় ঘুম হয় না বলে দাবি করেন, তখন হরতালের পিকেটিং এর সময়ে আপনাদের পরিবারের সদস্যদের কেন রাস্তায় নামিয়ে দেন না? তারা কি "মঙ্গল চিন্তায়" কাতর বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আওতায় পড়ে না? কেন মিছিলের আগে আপনাদের বিদেশ ফেরত সন্তানরা ব্যানার হাতে প্রতিবাদী শ্লোগান দেয় না?
 
কেন আপনাদের সন্তানদের আত্মরক্ষার জন্য লগি-বৈঠা ও দা-কুড়াল নিয়ে রাস্তায় নামিয়ে দিচ্ছেন না? কেন আপনাদের সন্তানরা দেশের বাইরে বসে দেশের মঙ্গল চিন্তায় ম্যাকডোনাল্ডে বসে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়? কেন দেশের এই ক্রান্তিকালে আপনারা পরিবার-পরিজন দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন?

গণতন্ত্র রক্ষা না হলে দেশে রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়া হবে বলে যে প্রায়ই ঘোষণা দেন, আপনাদের জবাব দিতেই হবে সেই রক্তের বন্যা হবে কাদের রক্ত দিয়ে?
bus-bg2
গাড়িগুলোতে যে দেদারছে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, আপনাদেরকেই জবাব দিতে হবে সেখানে কয়টা গাড়ি আপনাদের আছে? কার কষ্টের টাকায় কেনা গাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছেন? আপনাদের পরিবারের কোনো সদস্য কি সেসব গাড়িতে চড়ে কখনো বাসা থেকে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিল? এসব গাড়ির প্রয়োজনীয়তা কি আপনারা আদৌ বোঝেন?

ককটেল বানানোর প্রশিক্ষণ কেন আমাদের সাধারণ ঘরের মায়ের সন্তানদের নিতে হবে? আপনাদের সোনার চামচ মুখে নেয়া আদরের দুলালদের কেন ককটেল বানানোর প্রশিক্ষণ আপনারা দিচ্ছেন না? দেশ রক্ষার দায়িত্ব কি তাদের নয়? দেশের এই ক্রান্তিকালে আপনাদের সন্তানদের হাতে কেন পিস্তল দিয়ে পুলিশ, র‌্যাবের সঙ্গে যুদ্ধে কিংবা ওদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাঠিয়ে দিচ্ছেন না?

পিকেটিং এর সময় শিশুদেরকেই যদি ব্যবহার করতে হয়, তবে আপনাদের নাতিদের কেন পিকেটিং করতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন না? তারা কোথায়? ওদেরও তো এই ক্রান্তিকালে দেশকে রক্ষা করতে হবে, তাই না? এই শিক্ষা এখন না পেলে কখন পাবে?
Bongshal-
হাঁচি, কাশি হলেও দেশের বাইরে কেন আপনারা চিকিত্সা নিতে যান? দেশের সরকারি হাসপাতালে চিকিত্সা না নেবার কারণ আপনাদের অবশ্যই ব্যাখ্যা করতে হবে। আমাদের জন্য যে চিকিত্সা ব্যবস্থা আপনারা দিয়েছেন তা থেকে কেন আপনাদের চিকিত্সা ব্যবস্থা আলাদা হবে? আপনাদের শরীর কি ভিন্ন কোনো ধাতু দিয়ে তৈরি?
আপনাদের সন্তানরা কেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ে না আমরা জানতে চাই। নির্বাচনের সময় শুধু আপনাদের সম্পদ নয়, আমরা আপনাদের সন্তানদের সম্পদের হিসাবও জানতে চাই।
 
 সারাক্ষণ আপনাদের এক পক্ষের মুখে ‘জনগণ’ হরতাল সফল করেছে, আর আরেক পক্ষের মুখে ‘জনগণ’ হরতাল রুখে দিয়েছে বলে আমরা শুনি। এই ‘জনগণ’ বলতে আপনারা কাদের কথা বোঝাতে চাইছেন? খুনাখুনি, জ্বালাও-পোড়াও এর মানেই কি হরতাল সফল? জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের হলেই কি হরতাল বিফল? জবাব আপনাদেরকেই দিতে হবে।
  
আপনারা রাজনীতিকে খেলা মনে করেন! এক দল নির্বাচনে হেরে গেলে অন্য দলকে বলছেন তারা গোল খেয়েছে।
BRTC-BUSBRTC-BUS
প্রায়ই বলে থাকেন বল এখন অমুকের কোর্টে। আপনাদের খেলাধুলা প্রীতি দেখে আমরা সত্যি শঙ্কিত। কারণ নিজেদের তুষ্টির জন্য আপনারা রাজনীতিকে খেলা, দেশটাকে খেলার মাঠ আর আমাদের জনগণকে লাথি মারা ফুটবল বানিয়ে ছেড়েছেন। প্রায় সময়ই দুই পক্ষই দেশের ষোলো কোটি মানুষ আপনাদের পক্ষে আছে বলে দাবি করেন, এই ষোলো কোটি মানুষ কিভাবে ফুটবলের মত লাথি খেয়ে আপনাদের পায়ে গড়াগড়ি খায় তা নিয়ে আপনাদেরকে গর্ব করতে দেখি।

এত এত দেশপ্রেমের বুলি শুনতে শুনতে এখন আমাদের বুঝতে বাকি নেই, আপনারা কে কত বড় দেশ প্রেমিক! জনগণকে আপনারা যে খুব ভালবাসেন তা আমরা উপলদ্ধি করেছি। তবে সেই জনগণ বলতে যে শুধুই আপনাদেরই পরিবার ও সন্তান সেটাও আমরা ভালোভাবে বুঝেছি। আমরা বুঝেছি আপনাদের মঙ্গল কামনা ষোলো কোটি জনগণের জন্য নয়, শুধুই নিজেদের জন্য।

আগে নিজেদের সন্তানদের বিদেশ থেকে, নিরাপদ আশ্রয় থেকে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ থেকে পীচ ঢালা উত্তপ্ত রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে কে কত গণতন্ত্র-তত্ত্বাবধায়ক-নির্দলীয় সরকার প্রেমী, জনগণের মঙ্গলাকাঙ্খী প্রমাণ দিন, আপনাদের সেই দেশপ্রেমের পুরস্কার আমরা জনগণ ব্যালটেই প্রমাণ করে দেব। কথা দিলাম।

জিনিয়া জাহিদ: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ ও গবেষক

 বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৩
জেডএম/জিসিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।