ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

আমরা (গণমাধ্যমকারীরা) কেন টার্গেট?

তুষার আবদুল্লাহ, বার্তা প্রধান, সময় টেলিভিশন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৩
আমরা (গণমাধ্যমকারীরা) কেন টার্গেট?

সাধারণ পথচারীদের উপর হামলা করেও দলের নেতাদের মনতুষ্ট করতে পারছেন না, তাই এখন বেছে নিয়েছেন গণমাধ্যম কর্মীদের? একবার ভেবে দেখুনতো গণমাধ্যম ছাড়া আমাদের রাজপথের তর্জন-গর্জন কিভাবে ধূলিতে উড়ে যায়।

যখন আপনাদের নেতারা রাজপথে আন্দোলনে অচল-অক্ষম ঠাঁই নিয়েছেন অডিটোরিয়ামে, তখন কিন্তু পত্রিকা আর টেলিভিশনের ক্যামেরাই ভরসা।

আজ এ পর্যন্ত যে আপনাদের কথা আম-জনতার কাছে পৌঁছেছে তা কিন্তু গণমাধ্যমের বদৌলতেই।

অনলাইন আর টেলিভিশন চ্যানেলের কৃপায় সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছে যাচ্ছে সাধারণের কাছে। যেখানে যখন আপনারা হাজির হবার অনুরোধ করেন, সেখানেই পৌছে যাচ্ছে ক্যামেরা। সেই কৃতজ্ঞতা কি ফিরে পাচ্ছি আমরা? প্রশ্নটি রাজনৈতিক দলের সেই নেতা-কর্মীদের কাছে যারা রাজপথে বা অলি-গলিতে দলের কর্মসূচি পালনে মাঠে আছেন।

একই প্রশ্ন রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ ও মাঝারী নেতাদের প্রতিও। তাদের জানাতে চাই আপনাদের কৃতজ্ঞতাবোধ আমাদের অর্থাৎ সংবাদকর্মীদের জীবন বিপন্ন করে তুলেছে। আমরা নিরাপদবোধ করছি না। সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্নতা তুলে আনতে গিয়ে নিজেরাই এখন আপনাদের টার্গেটে পরিণত হয়েছি।

২৫ অক্টোবর রাত থেকে শুরু করে একের পর এক আপনাদের টার্গেটে পরিণত হচ্ছে গণমাধ্যম। দেশ টেলিভিশন, একাত্তর টেলিভিশনে হামলা। চ্যানেলটুয়েন্টিফোর এবং এসএ টিভি’র গাড়িতে বোমা হামলায় আমাদের অনেক সহকর্মী আহত হয়েছেন। ঢাকার বাইরে রাজশাহীতে সময় টেলিভিশনের ভিডিও জার্নালিস্ট আপনাদের হামলার শিকার হয়েছেন।

এছাড়া সারাদেশ থেকেই খবর আসছে জামায়াত-শিবিরসহ ১৮ দলীয় জোট গণমাধ্যমকে বেছে নিয়েছে তাদের টার্গেট হিসেবে। যদি রোববার বিকেলে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের ব্রিফিং স্মরণ করি-তাহলে দেখবো তিনি নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন গণমাধ্যমের বাহন হরতালের আওতামুক্ত থাকবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তার সঙ্গে মাঠের নেতা-কর্মীদের বিস্তর দূরত্ব। তারা হয়তো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের এই বক্তব্য শুনতে পাননি। বা শুনলেও আমলে নিচ্ছেন না।

২৫ অক্টোবর রাতে দেশ টেলিভিশন এবং একাত্তর টেলিভিশনে বোমা হামলার পর, সাংবাদিক ইউনিয়ন ২৭ অক্টোবর সমাবেশ করে ৬০ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে। আমরা সাংবাদিকদের কোন ধারার ইউনিয়নের প্রতিই আস্থাশীল নেই। সাংবাদিকদের মধ্যেও অন্য পেশাজীবীদের মতো দলকানারা রয়েছেন।

আজ যারা ১৮ দলীয় জোটের এই আচরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার তারা হয়তো ১৪ দলের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত বা পুরোপুরি নীরব থাকেন। একই অভিযোগ অন্য অংশটির প্রতিও। তারা ১৮ বা চার দলীয় জোট ক্ষমতায় থাকাকালে একই আচরণ করেছেন। তাই দলকানা’র বাইরে সাংবাদিকদের একটি বৃহৎ অংশ রয়েছে। যারা দুই পক্ষের খবরটিই ঠিকঠাক মতো সাধারণের কাছে পৌঁছাতে চান বা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আম জনতার প্রত্যাশার কথা গণমাধ্যমে তুলে আনেন, তারা এখন অসহায় বোধ করছেন। পাঠক-দর্শক ছাড়া তারা আর কাছে ভরসা রাখবে?

রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি বলতে চাই- সংবাদ কর্মী তার নিজের ইচ্ছে খুশি মতো কোন খবর পরিবেশন করতে পারেন না। এটা নিশ্চয়ই আপনারা জানেন। প্রত্যেক গণমাধ্যমের নিজস্ব একটি সম্পাদকীয় নীতি থাকে। সেটা হতে পারে কোন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গীতে আলোকিত। সেটি সাধারণ একজন গণমাধ্যম কর্মী ঠিক করেন না। রুটি-রুজির জন্য আপনি যেমন রাজপথে, তেমনিভাবে সংবাদ কর্মীও।

একথা আমার মানতে দ্বিধা নেই, সব গণমাধ্যমের নীতি এবং পরিবেশনা সব রাজনৈতিক দলের মনপুত হবে না। কিন্তু তার প্রতিক্রিয়া কোন ভাবেই হামলা হতে পারে না। প্রতিক্রিয়া জানানোর অনেক ভাষা রয়েছে। তবে একটি কথা অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, যখন নিজেদের পক্ষে খবরটি যায় তখন সংবাদ কর্মীদের জামাই আদর এবং বিপক্ষে গেলেই ধমক বা হামলাটি আসতে দেখেছি সব রাজনৈতিক দলের কাছ থেকেই। তাই রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের কিছু বলার আগে দলকানা সহকর্মীদের বলছি-কোন রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে হলে প্রকাশ্যেই দলটির পক্ষে অবস্থান নিয়ে নিন।

সাংবাদিকতা এবং রাজনীতি সমান্তরালভাবে করে এই পেশাটিকে কলুষিত করবেন না। সব রাজনৈতিক দলকেই সমানভাবে দেখুন। আপনাদের দলকানা রোগের বলি যেনো না হয় সাধারণ কোন গণমাধ্যম কর্মী।

আর রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বলছি, আপনি কার উপর লাঠি তুলছেন, কার দিকে বোমা ছুঁড়ছেন? যিনি বা যে সংবাদ মাধ্যম আপনার খবরটি পৌঁছে দেয় পাঠক-দর্শকের কাছে। আপনাদের রাজনীতি নিশ্চয়ই এখনো শতভাগ হঠকারিতায় ডুবে যায়নি, নাকি গেছে?

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৩
জেডএম/জিসিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।