ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

সাকা অপরাধী নন, বিএনপি পাকিস্তানপ্রেমী

সুমি খান, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১৩
সাকা অপরাধী নন, বিএনপি পাকিস্তানপ্রেমী

‘বাংলাদেশের লাখো লাখো মানুষ পাকিস্তান ভালোবাসে । বিএনপি তার মধ্যে প্রধান।

একাত্তর সালে সাকা চৌধুরী লাহোরে ছিলেন, কোন অপরাধ করেন নি’- গত ২৫ অক্টোবর পাকিস্তান ডেইলি নিউজে প্রকাশিত লেখাটিতে  এভাবেই ঘাতকদের  পক্ষে সাফাই গান একাত্তরের ঘাতক সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পারিবারিক বন্ধু ইসহাক খান খাকওয়ানী।

তিনি পাকিস্তানের সাবেক মন্ত্রী এবং প্রভাবশালী হেভিওয়েট রাজনীতিক।

আর ‘পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ’ প্রতিষ্ঠা করেন বিশ্বজয়ী ক্রিকেটার ইমরান খান ।

জনশ্রুতি আছে, পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর নির্দেশনায় তিনি  দলটি গঠন করেন। এ দলের কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসহাক খান খাকওয়ানী সম্প্রতি বাংলাদেশের পাকিস্তান প্রেমীদের ভালোবাসার টানে  বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে একটি আত্মকথন  লিখেছেন।

বিপুল সম্পদশালী জমিদার পরিবারের সন্তান  ইসহাক খান খাকওয়ানী ছিলেন পাকিস্তানের তথ্যপ্রযুক্তি, টেলিযোগাযোগ ও রেলওয়ে মন্ত্রী। আফগানিস্তানের  নানগড় এলাকার উপজাতি খোগওয়ানি  গোত্রভুক্ত  ‘খাকওয়ানি’  জমিদার পরিবারের সন্তান ইসহাক পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। মীর মর্তুজা ভুট্টোর সঙ্গে ১৯৯৪ সালে পাকিস্তান পিপলস পার্টিতে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে রাজনীতিতে তার অভিষেক। ২০০২ সালে পাকিস্তান মুসলিম লীগে যোগ দেন। ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল পোলোর আ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করছেন তিনি।   প্রশ্ন আসতে পারে, এই সম্পদশালী ব্যক্তিটি রাজনীতিতে তার অবস্থান দৃঢ় থেকে দৃঢ় করার জন্যেই কি আইএসআই এর বার্তাবাহকের কাজ করছেন?
 
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে  গণহত্যা, ধর্ষণ , বুদ্ধিজীবীহত্যা এবং অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে  মানবতার বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে, যারা  অত্যাচারী পাকিস্তান সরকারের প্রতি ‘দায়িত্ব’ পালন করেছেন, পাকিস্তান সরকারের বেতনভুক্ত  সেই ঘাতকদের  বিচারপ্রক্রিয়া  স্বাভাবিকভাবেই গাত্রদাহের সৃষ্টি করেছে প‍াকিস্তানিদের।   এর বাইরে থাকতে পারেন নি খাকওয়ানী । নিরপেক্ষতা দেখাতে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিকে সম্মান করার ভান করেছেন তার লেখার একটি লাইনে, যা হাস্যকর বটে!

তিনি একদিকে স্বীকার করেছেন, বেলুচিস্তানসহ ৫টি প্রদেশের পাকিস্তান সরকারের বৈষম্য এবং অপশাসনে বিদ্রোহ করছে স্থানীয় জনগণ। অন্যদিকে বাংলাদেশের  প্রতি, এ দেশের মানুষের প্রতি  স্বৈরাচারী পাকিস্তান সরকারের বৈষম্য এবং  অত্যাচারের বিরুদ্ধে স্বাধীকার আন্দোলনের নৈতিক অধিকারকে অস্বীকার করেন  ইসহাক খান খাকওয়ানী।   স্বাধীন বাংলাদেশে বৈষম্যের প্রশ্ন তোলেন তিনি। একাত্তর পূর্ব পরিস্থিতি নিয়ে তুলনা করেন পরাধীন জাতির সঙ্গে স্বাধীন বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার । একে  ‘পাকিস্তানি ঔদ্ধত্য’ না বলে পারা যায় না!  

একাত্তরের ঘাতকদের প্রত্যক্ষভাবে সমর্থন দিয়ে তিনি একাত্তরের গণহত্যা, ধর্ষণসহ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকে নির্লজ্জ সমর্থন দিয়েছেন।   বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে তার একাত্মতা প্রমাণ করে ঘাতকদের পক্ষে তাদের এক এবং অভিন্ন  শক্ত অবস্থান!

পারিবারিক বন্ধু সাকা চৌধুরীকে নিরপরাধ প্রমাণ করতে গিয়ে ইসহাক খান  তার লেখার শেষ দিকে এসে স্বীকার করেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান সংগঠক। তবে ইসহাক খানের দাবিমতে বঙ্গবন্ধু নাকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারই চান নি! তিনি একদিকে একাত্তরে সাকা চৌধুরীর অপরাধ অস্বীকার করলেন, অন্যদিকে  যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না চাওয়া বঙ্গবন্ধুর উদারতা বলে উল্লেখ করলেন! স্ববিরোধিতা একেই বলে।

বাংলাদেশের গণমাধ্যম এবং সম্পাদকদের তীব্র সমালোচনা করেছেন ইসহাক খান। আক্ষেপ করেছেন ডেইলি স্টারের সম্পাদকের  কাছে পাঠানোর পরও তার লেখা  এখনো প্রকাশ হয়নি বলে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রতিটি রায়ের সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ এবং গণমাধ্যম পাকিস্তানকে ধুয়ে ফেলে- এটাও তার ক্ষোভের কারণ। এরপরও তার আশাবাদ  মুদ্রার অন্যপিঠ দেখে।  

তার গভীর পর্যবেক্ষণ  বলে, মুদ্রার অন্যপিঠ হচ্ছে বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপি এবং  সাধারণ অনেক মানুষ মানসিকভাবে এখনো পাকিস্তানের পক্ষেই অবস্থান করছে। তার  আশাবাদ, তার পারিবারিক বন্ধু সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর প্রতি আওয়ামী লীগ এবং তার অনুসারীরা অনুকম্পা দেখাবে। এটা বাংলাদেশের বর্তমান বিরোধী দল এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের ‘পাকিস্তানপ্রেম’  ভালোলাগার নির্লজ্জ দৃষ্টান্ত।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী  সশরীরে উপস্থিত থেকে বর্বর নির্যাতন করে হত্যা করেছেন অনেক নিরীহ মানুষকে । সাকা চৌধুরীর নির্দেশে হত্যা করা হয়েছে দানবীর শিক্ষানুরাগী সমাজহিতৈষী নূতন চন্দ্র সিংহকে।    সাকা চৌধুরীর বর্বর  নির্যাতনে নিহতদের স্বজন অথবা আহতদের  কান্না এবং  তথ্য প্রমাণসহ  আদালতে সাক্ষ্যপ্রদান ইসহাক খানের কানে পৌঁছেনি। যারা হত্যাকারীর পক্ষে অবস্থান নেন, তাদের কানে কোন মানবিক বাণী পৌঁছুবে না – এটাই স্বাভাবিক। এ কারণেই সাকা চৌধুরীর সহপাঠী  কোন এক বিচারপতি শামীমের দাবিই তার কাছে মুখ্য হয়ে উঠেছে। এ যেন চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী!  পাকিস্তানিদের আবারো জানিয়ে দেবে এদেশের মানুষ -বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে তিরিশ লাখ বাঙালির ঘাতকদের কখনো ক্ষমা করবে না।

সুমি খান: সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক, Sumikhan29bdj@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১৩
জেডএম/জিসিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।