ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

প্রধানমন্ত্রী কেন হবেন না আরেকটু উদার?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১৩
প্রধানমন্ত্রী কেন হবেন না আরেকটু উদার?

একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেন দল-মত নির্বিশেষে সবার অভিভাবক। কোনো ভেদাভেদ না করেই জনগণের জান-মাল-সম্মান রক্ষার দায়িত্ব পালনের জন্যই তিনি শপথ নিয়ে থাকেন।

সেই সূত্রে কেউ মানুক আর না মানুক বিরোধীদলের অভিভাবকও হলেন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী।
 
বিরোধীদল সে যত বৈরী আচরণই করুক না কেন, তা নিজের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, কূটনৈতিক চাল, ধৈর্য ও যথাযথ শিষ্ঠাচার দিয়ে সরকারের মোকাবেলা করতে হয়।

মনে রাখা দরকার যে, জনগণের ভোটে প্রত্যাখ্যাত হয়েই একটি দল ক্ষমতার বাইরে গিয়ে বিরোধীদল হয়, অন্যদিকে জনগণের ভোটেই নির্বাচিত হয়ে একটি দলপ্রধান সরকারপ্রধান হয়ে থাকেন। অথচ অধিকাংশ জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী যখন তাড়িয়ে তাড়িয়ে মুচকি হেসে বিরোধীদলের নেত্রীর কর্মকাণ্ডের সমালোচনা না করে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে, জনসমক্ষে বক্তৃতা করেন, তখন আমাদের সাধারণ জনগণের মাথা হেঁট হয়ে আসে।

লক্ষ্য করলেই দেখা যায় যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিগত কয়েকদিন বিরোধীনেত্রীকে শুধু একের পর ব্যক্তিগত আক্রমণই করে গেছেন। বহুল আলোচিত ফোনালাপে ‘কেন আপনি ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করেন’ এ জাতীয় প্রশ্ন করে তিনি শুধু বিরোধিনেত্রীর  ঝাঁঝালো উত্তরই শোনেন নি, সেই সঙ্গে বহুল প্রত্যাখ্যাত সংলাপের পথও প্রায় রুদ্ধ করে দিয়েছেন। তবে বিরোধীনেত্রী সেই অনেক বছর আগে থেকেই ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করছেন, আর এ নিয়ে যে তিনি জনগণের একটি বড় অংশের কাছে সমালোচিত। প্রধানমন্ত্রীও নিশ্চয়ই সে কথা জানেন। তা সত্ত্বেও রাজনৈতিক এই ক্রান্তিকালে এই প্রসঙ্গটি বার বার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে, আলোচনায় চলে আসা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কখন কি প্রসঙ্গে কথা বলতে হয়, তা নিশ্চয়ই দেশের  প্রধানমন্ত্রী ভাল জানেন!

বিরোধীনেত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, সেই প্রথমবার তিনি যখন বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন তখন যা ছিল, এখনো তা-ই আছে। অর্থাৎ তখন জনগণ জেনে বুঝেই তাঁকে ভোট দিয়েছে। তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে যে আম-জনতার তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই তা তো প্রতিবার প্রতিটি আসনে নির্বাচিত হয়েই তিনি প্রমাণ করেছেন। তাহলে কেন বারবার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা?

আমার পিএইচডি আছে বলেই  এখন আমি যদি আমার চেয়ে কম যোগ্যতা সম্পন্ন কারোর  শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে অনবরত প্রশ্ন তুলি তাহলে, তা কি সংগত হবে? একজনকে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সবার সামনে বারবার বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে আনন্দ পাওয়ার কিছু তো নেই।

প্রধানমন্ত্রী বিরোধীনেত্রীর সাজগোজ, শাড়ি এসব নিয়েও কথাবার্তা বলে থাকেন। একজন প্রধানমন্ত্রী হয়ে কি তাঁর এসব কথাবার্তা বলা আদৌ শোভা পায়? তিনি কখন কোন রঙের পোশাক পরবেন, কখন ঘুম থেকে উঠবেন সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। সেটা নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রীর ঠিক করে দেবার এখতিয়ারে পড়ে না।
 
যদি কারো দাঁত না থাকে আর সেই ব্যক্তি যদি আলগা দাঁত লাগিয়ে সমাজে ঘোরেন তবে কি সেটা নিয়ে সমালোচনা করা শোভন? ঠিক তেমনিভাবেই বিরোধীনেত্রীর চুলের কথা আসে। প্রধানমন্ত্রীর কথার উপর পূর্ণ আস্থা রেখে না হয় ধরেই নিলাম যে বিরোধীনেত্রীর মাথায় চুল নেই বা চুল কম। এখন যদি তিনি পরচুলা পরেন, আর একজন প্রধানমন্ত্রী যদি তা প্রকাশ্য জনসভায় রসালোভাবে তা বলে বেড়ান, তাহলে তাতে কি রুচির পরিচয় থাকে?
 
দেশে প্রধানমন্ত্রীর নামে কেউ কটূক্তি করলে তার আর রক্ষা নেই। কেউ কটূক্তি করলে, কার্টুন জাতীয় কিছু আঁকলেই সোজা জেল জরিমানা। তাহলে দেশের প্রধান বিরোধীদলের বিরুদ্ধে অশালীন কথাবার্তা, কার্টুনও কেন সেই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের আওতাধীন হবে না?

শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রীপুত্রও ঠিক একইভাবে বিরোধীনেত্রীকে তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে, সভা সমিতিতে ব্যক্তিগত আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন। এভাবেই কি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে মোকাবেলা করা হয় আমেরিকাতে?

আমরা জনগণ আশা করব, যতদিন প্রধানমন্ত্রী তাঁর পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন, তিনি বিরোধীনেত্রীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বক্তৃতা দেবেন না। রাজনৈতিক অভিযোগ-অনুযোগ রাজনৈতিক শিষ্ঠাচারের মধ্যেই যুক্তি-পাল্টা যুক্তি দিয়ে খণ্ডানো উচিত।

তিনি যখন আর প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না, তখন যদি তাঁর রুচিতে কুলায় যা খুশি বলে তিনি তাঁর প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পারেন। কিন্তু দেশের অভিভাবক থাকাকালে এভাবে বিরোধীনেত্রীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকবেন এটাই প্রত্যাশা করি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১৩
জেডএম/জেসিকে/জিসিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।