১৯তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এশিয়ান সিলেক্ট ক্যাটাগরিতে একটি মাত্র অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে। এশিয়ার নয়টি চলচ্চিত্রের মধ্যে থেকে নেটপ্যাক অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয় মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘টেলিভিশন’।
মুক্তির আগেই জিতে নেয় ২০১২ সালের এশিয়ান সিনেমা ফান্ড ফর পোস্ট প্রোডাকশন পুরস্কার। এছাড়া, উৎসবে বাংলাদেশের নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেলের ‘১৯৭১’ এবং অমিত আশরাফের ‘উধাও’সহ ৬৩টি দেশের ১৮৯টি চলচ্চিত্র অংশ নিয়েছিল।
গত রোববার সন্ধ্যায় কলকাতার সায়েন্স সিটিতে আয়োজিত চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান রঞ্জিত মল্লিক ‘টেলিভিশন’ ছবির নাম ঘোষণা করেন। আর বরেণ্য পরিচালক গৌতম ঘোষের হাত থেকে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন বাংলাদেশের অন্যতম প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর ও ছবির অভিনয় শিল্পী তিশা। এ সময় মঞ্চে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জন্য নিঃসন্দেহে এসবের সবই ভাল খবর। এত ভাল খবরের মধ্যে মন খারাপ করা খবর হচ্ছে, বাংলাদেশের এ অনন্য অর্জন ভারতীয় মিডিয়ায় ঠাঁই পায়নি। কলকাতার জনপ্রিয় দৈনিক এই সময়সহ বেশক’টি পত্রিকার রিপোর্টে কলকাতা উৎসবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অংশটুকু পর্যন্ত ছাপা হয়নি। সম্ভবত এই ভেবে যে, কলকাতায় যদি ছবিটির কাটতি বেড়ে যায়!
চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপনী দিন ১৭ নভেম্বর জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পী মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়, সুস্মিতা সেন, রানী মুখার্জি, বিপাশা বসু ও কঙ্কনা সেন শর্মাকে পশ্চিম বঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
গ্রুপ ফটোশুটে পুরস্কৃত পঞ্চকন্যার সঙ্গে আমাদের অভিনেত্রী তিশার ছবিটি থাকলেও ১৮ নভেম্বর আনন্দবাজার, আজকাল ও এইসময় পত্রিকা থেকে শুরু করে সবকটি পত্রিকায়ই গ্রুপ ছবিটি থেকে তিশার ছবিটি বাদ দিয়েই ছাপে। ভারতীয় মিডিয়ার এ কেমন আচরণ!
এর আগে নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুর খবরটি ভারতীয় মিডিয়ায় গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করা হয়নি। গত ২০ জুলাই কলকাতার জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় ‘এক নজরে’ শীর্ষক কলামে ‘প্রয়াত কথাকার হুমায়ূন আহমেদ’ শিরোনাম দিয়ে মাত্র ৯ লাইনের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
অবস্থাটা এমন যে, খবরটা বড় করে ছাপলে বেশি কালি খরচ হয়ে যাবে! ওই একদিনই খবরটি ছেপেছে তারা।
সংবাদটি কলকাতার আরও দুয়েকটি দৈনিক ছোট্ট করে ছেপে দায় সারলেও বহুল প্রচারিত দৈনিক প্রয়াগে ২১ ও ২২ জুলাইয়ের সংখ্যায় হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে কোন রিপোর্টই ছিল না।
হুমায়ুন আহমেদ জীবিত থাকা অবস্থায় কলকাতার লেখকদের ভাত মেরেছেন। মৃত্যুর খবর প্রকাশের পর যদি তার বইয়ের চাহিদা আরও বেড়ে যায়, এই ভেবে সম্ভবত তারা সংবাদটি প্রকাশ বা গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেননি।
বিষয়টিকে পশ্চিমবাংলার ‘দাদা বাবু’দের হীনমন্যতা হিসেবেই দেখলে কি কোন অন্যায় হবে?
অথচ সম্প্রতি প্রয়াত কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী মান্না দে, জনপ্রিয় লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও অভিনয় শিল্পী ঋতুপর্ণ ঘোষ’র মৃত্যুর সংবাদটি বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলো ব্রেকিং নিউজ হিসেবে প্রচার করেছে। প্রথম সারির দৈনিক ও অনলাইন পত্রিকাগুলো বেশ গুরুত্বের সঙ্গে এসব খবর প্রকাশ করেছে। বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমই এসব খবরকে লিড নিউজ হিসেবে প্রকাশ করার পাশাপাশি এ সংক্রান্ত একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশি টিভি চ্যানেলগুলো দিন-রাত বলিউড এবং ভারতীয় বিভিন্ন সংস্কৃতির গুণ-কীর্তন করতে করতে হয়রান হয়ে যাচ্ছে, তার প্রতিদান হিসেবে বাংলাদেশের অন্তত ৫টা চ্যানেল ভারতে সম্প্রচারের জন্য ভারতীয় কোনো তারকা কলকাতার সব বাঙালিদের নিয়ে জোরালো আন্দোলন করছে বা করেছে জানলে আমরা পুলকিত হতাম।
কলকাতার দাদা-বাবুদের প্রতি আমাদের সম্মান-শ্রদ্ধা বেড়ে যেতো।
সবশেষে বলতে হয়, বাংলাদেশের মানুষ গুণীজন বা ভাল কাজের কদর করতে জানে। পশ্চিম বাংলার দাদা-বাবুরা তা জানেন না। এ ধরনের হীনমন্যতা থেকে তারা যত দ্রুত বেরিয়ে আসতে পারবেন, ততই মঙ্গল দুই দেশের বাঙালিদের জন্য!
লেখক: প্রধান প্রতিবেদক, কিশোরকাল (শিশু-কিশোর ম্যাগাজিন), চট্টগ্রাম
বাংলাদেশ সময়: ০৮০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৩
এইচএ/জিসিপি