ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

একটি আত্ম সমালোচনা

খালেদার চেয়েও বড় বিএনপি, হাসিনার চেয়ে বড় আ’লীগার !

বিশেষ সংবাদদাতা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৩
খালেদার চেয়েও বড় বিএনপি, হাসিনার চেয়ে বড় আ’লীগার !

আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি বিটের কিছু সাংবাদিক দলীয় কর্মী হয়ে উঠছেন! এ-কথাটি ক্রমেই দৃষ্টিকটুভাবে সামনে চলে আসছে। এমনটা হচ্ছে এই দুই বিটেরই কতিপয় সাংবাদিক ইদানীং নিজেদের পেশার চেয়ে দলীয় স্বার্থটিকে বড় করে দেখছেন বলে।

কখনো কখনো তাদের আচরণ দলীয় কর্মীদের আচরণকেও হার মানায়।

তাদের এই আচরণের কারণে পেশাদার সাংবাদিকদের পক্ষে কাজ করাই মুশকিল হয়ে পড়ছে। এই সাংবাদিকরা কেউ কেউ দলের খবরটি কেমন হবে, ইন্ট্রো কোনটি হবে, কোন নেতার পক্ষে লিখতে হবে, কোন নেতাকে হাইলাইট করতে হবে এগুলো অন্যদের ডিক্টেট করেন বা গায়ে পড়ে চাপিয়ে দিতে চান। আবার  সাংবাদিকতার চেয়ে `নেতা` ঠিক মতো খেয়েছেন কিনা, নেতার কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না জাতীয় ব্যাপার-স্যাপারের খোঁজ নেওয়াতেই তারা বড়বেশি তৎপর। সাংবাদিকসুলভ নৈর্ব্যক্তিকতার চেয়ে এসব দিকে নজর রাখাই যেন তাদের কাছে মুখ্য।   এসব দিক এরা যেমন সদা নজরে রাখেন, তেমনি প্রেস কনফারেন্সে কোন সাংবাদিকদের প্রশ্নে `নেতা` অস্বস্তিতে পড়লে তা-ও তাদেরকেই দেখতে হয়। প্রেস কনফারেন্সে পছন্দের বাইরের প্রশ্ন হলেই- ‘আর প্রশ্ল নয়, আর প্রশ্ন নয়’ বলে তারাই আগ বাড়িয়ে প্রেস কনফারেন্সের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

বিটে কাজ করা অন্যসব সাংবাদিক এদের এহেন অসাংবাদিকসুলভ আচরণে যারপরনেই বিব্রত। খেদ প্রকাশ করে তাদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন,  এই দলকানা সাংবাদিকরা এমন আপত্তিকর ও হাস্যকর আচরণ করেন যে, দেখেশুনে মনে হয় তারা খালেদা জিয়ার চেয়েও বড় বিএনপি কিংবা শেখ হাসিনার চেয়েও বড় আওয়ামী লীগার হয়ে। লোকে কি আর এমনি-এমনি বলে, ``মোর ক্যাথলিক দ্যান দ্য পোপ!``
 
এরা নেতাতোষণ করেন। দলের খবর বস্তুনিষ্ঠভাবে প্রকাশের চেয়ে নির্দিষ্ট দলটির পক্ষে প্রচার প্রপাগাণ্ডাটাই বেশি করেন। নেতাদের কাছাকাছি যাওয়ার মরিয়া চেষ্টা এই সাংবাদিকদের মধ্যে প্রকট। কেবল কি নেতা! দলের প্রেস উইংয়ের লোকজন অথবা কর্মকর্তাদেরও দিনরাত তোষণে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় এই গুটিকয় সাংবাদিককে। এদের তোষণে ওই কর্মকর্তারা অনেক সময় অন্যসব সাংবাদিকের সঙ্গে যাচ্ছেতাই আচরণ করে বসেন বা করতে সাহস পান।

এহেন নেতিবাচক কাজ করে গুটিকয় দলকানা সাংবাদিক যে সাংবাদিকতাকেই জলাঞ্জলি দিচ্ছেন সে বোধটুকুও তারা হারিয়ে বসেছেন। এই অভিমত অন্যসব সাংবাদিকের।  

মাস কয়েক আগে নয়াপল্টনের একটি ঘটনা। তখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আটক করার জন্য পুলিশ মওকা খুঁজছে। ক`দিন আগে থেকেই পুলিশের গাড়ি বসিয়ে রাখা হচ্ছিলো পার্টি অফিসের সামনে। একদিন সুযোগটি পেয়েও গিয়েছিলো পুলিশ। ঠিক তখনই কয়েকজন সাংবাদিক দলীয় ক্যাডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন। ঘিরে রাখলেন মির্জা ফখরুলকে। পুলিশ সাংবাদিক ডিঙ্গিয়ে তাকে আটকের ঝুঁকি নিলো না। যদিও  মির্জা ফখরুল শেষমেষ আর গ্রেপ্তার এড়াতে পারেননি। তবে ওই দিন বিকেলে বিএনপি বিটের কয়েকজন  সাংবাদিকই তাকে `রক্ষা` করেছিলেন।

দিনকয় আগের ঘটনা। সেদিন ওয়েস্টিন হোটেলে বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলন ছিলো। এসময় একটি বিদেশি মিডিয়ার প্রতিনিধিকে বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা সামনের আসনে বসা নিয়ে ভীষণ অপদস্থ করছিলেন। কিন্তু সবাইকে হতবাক করে ওই বিটেরই কয়েকজন সাংবাদিক বিএনপি নেতা-কর্মীদের পক্ষ নিয়ে ওই সংবাদকর্মীটির ওপর রীতিমতো চড়াও হলেন। বিএনপি চেয়ারপার্সনের নিজস্ব একজন ফটোসাংবাদিক প্রকাশ্যে যখন গালাগাল করে ওই সাংবাদিককে মারতে উদ্ধত হলেন, তখনও একজনমাত্র সাংবাদিক ছাড়া আর কাউকেই এই অন্যায়ের প্রতিবাদ পর্যন্ত  করতে দেখা গেল না।

দু`দিন আগের ঘটনা। বৃহস্পতিবার সেনাকুঞ্জে একটি কর্মসূচিতে গিয়েছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান। সূত্রের বরাতে বাংলানিউজ খবরটি খুব দ্রুত প্রকাশ করে। কিন্তু পরে অন্য মিডিয়া যখন বিষয়টি জানতে চায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তা বেমালুম অস্বীকার করে বসেন: `প্রধানমন্ত্রী এমন কিছু বলেন নি। স্রেফ কুশল বিনিময় হয়েছে। `

এই ঘটনায় বিএনপি বিটের কয়েকজন সাংবাদিকের আশকারায় বিএনপি কার্যালয়ের প্রেস উইংয়ের একজন কর্মকর্তা, যার যোগ্যতা বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ, তিনি চড়াও হন বাংলানিউজের ওপর। `বাংলানিউজের প্রতিবেদককে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে` বলার মতো ঔদ্ধত্যও দেখান তিনি। কথিত আছে, স্রেফ মহাসচিবের কাছের লোক বলে অযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও এই ব্যক্তি বিএনপি’র মতো বড় রাজনৈতিক দলের প্রেস উইংয়ে জায়গা করে নিতে পেরেছেন।

বাংলানিউজ নিশ্চিতভাবেই জানতো সেনাকুঞ্জে মির্জা ফখরুলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কশুল বিনিময়কালে সংলাপে বসার প্রসঙ্গটি ছিলো। বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে বাংলানিউজে প্রকাশিত খবরটি নিয়ে রাতভর তর্ক-বিতর্ক, স্বীকার-অস্বীকারের দোলাচল আর বিএনপি বিটের সাংবাদিকদের কয়েকজনের হুমকি ধমকি চলেছে। কিন্তু পরের দিন শুক্রবার যখন দেশের প্রথম সারির সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলগুলো তাদের প্রথম পাতার খবরে ওই বিষয়টি তুলে ধরে। তখন আর এই বিএনপিঘেঁষা সাংবাদিকদের এবং ওই কর্মকর্তাকে এ নিয়ে টু-শব্দটি করতে দেখা যায়নি।

অন্য সংবাদমাধ্যগুলোর কোনো কোনটি বিষয়টিকে হাইলাইট করে খবর প্রকাশ করেছে। কোনো কোনোটি বিষয়টিকে এড়িয়ে মির্জা ফখরুলের ভাষায় স্রেফ কুশল বিনিময় দিয়ে খবর পরিবেশন করেছে।

যে সাংবাদিকরা খবরটিকে গুরুত্ব দেননি তারা স্রেফ এই কারণেই দেননি যে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব চাইছেন না খবরটি এইভাবে প্রকাশিত হোক।

তাহলে কি এই সাংবাদিকরা দলের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় তাদের খবর পরিবেশন করবেন, নাকি সাংবাদিকতা করবেন?


বাংলানিউজে বৃহস্পতিবার বিকেল প্রকাশিত খবরটি:

সংলাপে বসতে ফখরুলকে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

ঢাকা: বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দুই দলের সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে কুশল বিনিময়ের সময় বিএনপি নেতাকে এ আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী।

নির্ভরযোগ্য সূত্র এতথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। এসময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার উদ্যোগ নিলেই বিএনপি সাড়া দেবে।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসে সেনাকুঞ্জে বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি সেখানে যাননি।

বিএনপি’র পক্ষে স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব) মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সেখানে যান। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ছিলেন সেই দলে। সশস্ত্র বাহিনী দিবসের কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘুরে ঘুরে অভ্যাগত অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

তিনি অন্য বিএনপি নেতাদের সঙ্গেও কুশল বিনিময় করেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী এ সময় মির্জা ফখরুলকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে সংলাপে বসার আহ্বান জানান। জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি আলোচনার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হলেই তারা সাড়া দেবেন।

পরে প্রধানমন্ত্রী কুশল বিনিময়ের জন্য অন্য অতিথিদের দিকে এগিয়ে যান।

বাংলাদেশ সময় ১৭২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১৩

পরের দিন শুক্রবারের দৈনিক কালের কণ্ঠ, সকালের খবর, বর্তমান, যায়যায়দিন, ইত্তেফাক খবরটিকে লিড নিউজ করেছে। সেকেন্ড লিডে, কিংবা গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদপত্র।  

দেশের প্রথম সারির একটি সংবাদপত্রের শুক্রবারের সংখ্যা প্রকাশিত খবর:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে কুশল বিনিময়ের সময় বিএনপির নেতাকে এ আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘সরকার উদ্যোগ নিলে আমরা সাড়া দেব। ’ গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে সেনাকুঞ্জে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া যাননি। তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমানসহ দলের বেশ কয়েকজন নেতা উপস্থিত হন। অনুষ্ঠানের সময় প্রধানমন্ত্রী ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। একপর্যায়ে তিনি ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুখোমুখি হন। তাঁরা প্রায় দেড় মিনিট কথা বলেন। এ সময় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মসিউর রহমান ও সরকারি দলের চিফ হুইপ আব্দুস শহীদ তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর সাংবাদিকেরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের কাছে জানতে চান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কী কথা হয়েছে। মির্জা ফখরুল প্রথমে এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি। পরে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন। ’ এ সময় ফখরুলের পাশে থাকা আব্দুস শহীদ সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বললেন, ‘আসুন, এক সাথে নির্বাচন করি। আপনারা আলোচনায় বসুন। মহাসচিব পর্যায়ে আলোচনা করতে পারেন। ’ ফখরুল ইসলাম আব্দুস শহীদের এ কথার সময়ও চুপ ছিলেন। এরপর সাংবাদিকেরা ফখরুলের কাছে জানতে চান, ‘আপনারা আলোচনায় বসছেন কি না?’ এর জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকার উদ্যোগ নিলে আমরা সাড়া দেব। ’

উল্লেখ্য, গত বছর বাদ দিলে বর্তমান সরকারের সময় এই পর্যন্ত তিনবার সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকলেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। তিনি শুধু গত বছর সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। তবে ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কোনো কথা হয়নি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে সেনাকুঞ্জে দেখা হয় দুই নেত্রীর। ওই সময় কুশল বিনিময়ও হয়েছিল তাঁদের মধ্যে। তবে সেনানিবাসের বাসা থেকে চলে আসার পর ২০১০ ও ২০১১ সালে সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়াকে আর দেখা যায়নি।
   
দুটি সংবাদকে এখানে তুলে ধরা হলো এ কারণে যে, বাংলানিউজে প্রকাশিত খবরটি নিয়ে বিএনপি যখন অস্বীকারের খেলায় মেতে ওঠে তখন এই বিটের দলকানা সাংবাদিকরা তাদেরই সহকর্মীর খবরের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেন। তারা সত্যমিথ্যা যাচাই করবার প্রয়োজনটুকুও বোধ করলেন না।

এই গুটিকয় দলকানা সাংবাদিক কারা? বিএনপি-আওয়ামী লীগ উভয় বিটেই তারা চিহ্নিত। বিএনপি বিটে একটি অনলাইন পত্রিকার বয়স্ক কোটার কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া একজন রয়েছেন। বিএনপি বিটে এখন আর তাকে কেউ সাংবাদিক হিসেবে দেখে না। বরং তাকে বিএনপি’র থিংকট্যাংকই মনে করে। তিনি নেতাদের প্রেসকনফারেন্সের বক্তৃতা লিখে দেন। তার এহেন এই কাণ্ডটি এখন বিএনপি কার্যালয়ে প্রকাশ্যই ঘটে।

এই বিটে আরো একজন রয়েছেন যিনি তেজগাঁওয়ের একটি ‘বড়’ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের ‘ডাকসাইটে’ সাংবাদিক। তাকে সাংবাদিকের খাবার বিএনপি অফিসের কর্মীদের খাওয়াতেও দেখা গেছে। আরেকজন রয়েছেন যিনি বারিধারার একটি ২৪ ঘণ্টার সংবাদ চ্যানেলের সাংবাদিক। বিএনপি অফিসে বা বিএনপি নেতাদের কোনো কর্মসূচিতেও তার দৃষ্টিকটু দাপুটেপনা সবার আলাদা নজর কাড়ে।

অনলাইন পত্রিকাটির ওই সাংবাদিক মির্জা ফখরুলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কথপোকথনের খবরটি প্রকাশ করে দলীয় নেতার মান রেখেছেন। অনলাইনটি সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানটির ওপর একটি ছোট্ট খবর প্রকাশ করে যাতে মির্জা ফখরুলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কথা বলছেন এমন একটি ছবি দিয়ে এক লাইনের ক্যাপশান দিয়েই দায়িত্ব শেষ করে।

এই অনলাইন সাংবাদিক প্রায়শই দলের নেতাদের চেয়ার টানেন, গাড়ির দরজা খুলে দেন বলেও বিটের অন্য সাংবাদিকদের মধ্যে মুখরোচক আলোচনা রয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ডের ছবি অনেক ফটো সাংবাদিক নেহায়েতই শখের বশে তাদের ক্যামেরাবন্দি করে রেখেছেন।

‘জয় মামা এখন খাবেন’    

সাংবাদিকদের এহেন অসাংবাদিকসুলভ আচরণ আওয়ামী লীগ বিটেও প্রকট। ভুরি ভুরি দৃষ্টিকটু নজির রয়েছে সেখানেও।

সাম্প্রতিক একটি প্রেস কনফারেন্সের কথাই ধরা যাক। প্রেস কনফারেন্স করছিলেন প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। সেখানে ডজন ডজন সাংবাদিক। জয়ের বক্তব্য দেওয়া তখন শেষ। সাংবাদিকরা বিভিন্ন প্রশ্ন করছেন তাকে। এমন সময় বিটের একজন সাংবাদিক, যিনি সাংবাদিক ইউনিয়নের একজন নেতাও, বলে উঠলেন, ‘এই আর কোনো প্রশ্ন নয়... জয় মামা এখন খাবেন। ’

এই ‘মামা’ সম্বোধনই প্রমাণ করে এই সাংবাদিকের সঙ্গে সজীব ওয়াজেদ জয়ের হয়তো ব্যক্তিগত খাতিরটা ‘প্রকট’। কিন্তু একটি সাংবাদিক সম্মেলনে ব্যক্তিগত সম্পর্ককে টেনে এনে ``মামা`` সম্বোধন! ফলে অন্য সাংবাদিকরা বিব্রত ও কোনঠাসা।

এই বিটেও আছেন একজন বয়স্ক সাংবাদিক, যিনি বছর কয়েক আগে যশোর থেকে ঢাকা এসে এই বিটে কাজ করছেন। তার সমালোচনা বিটের সাংবাদিকরা প্রায়শই করছেন।


প্রেস উইংয়ে যারা কাজ করে...

উভয় বিটেই সাংবাদিকরা বেশি যোগাযোগ রাখোন (কেউকেউ `দহরম-মহরম`) রাখেন প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। নেতাদের চেয়েও এই প্রেস উইংয়ের দাপট যেন একটু বেশি। কিন্তু প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের এই প্রেস উইংয়ে নিয়োজিতরা তাদের ওপর বর্তানো দায়িত্বটি পালনে কতটুকু যোগ্য সে নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলেই স্পষ্ট হয় একাজে তাদের অযোগ্যতা। বিএনপি প্রেস উইংয়ে মারুফ কামাল খানকে খুব কমই পাওয়া যায়। আর সায়রুল কবির খান নামে যে ব্যক্তি কাজ করেন এই বিভাগে তার না আছে রাজনৈতিক বিষয়বোধ না রয়েছে সাংবাদিকতা সম্পর্কে সামান্য জ্ঞান। ফলে হুমকি ধমকি আর বিটের গুটিকয় সাংবাদিকের সঙ্গে দহরম-মহরমই হয়ে উঠেছে তার এক মাত্র পুঁজি।

সরকারি দলে আবার দুটি ভাগ। আওয়ামী লীগের দপ্তরের উপ-দপ্তর সম্পাদক মিডিয়ার সঙ্গে কাজ করেন। আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইংয়ে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব, উপ ও সহকারী প্রেসসচিবসহ সাত জন। এদের মধ্যে একজন উপ-প্রেসসচিব ও একজন সহকারী প্রেসসচিব ছাড়া অন্যরা সাংবাদিকদের ফোনকল খুব কমই ধরেন।

তবে গুটিকয় দলকানা সাংবাদিক ফোন করলেই কথা বলেন প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তারা। আওয়ামী লীগের দফতরে একজন উপ-দফতর সম্পাদক রয়েছেন, তথ্য চাওয়া হলে তিনি, ‘আমি এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল’ নই বলে একবাক্যে কথা শেষ করেন।      

দলের বিরুদ্ধে খবর প্রকাশিত হলেই যে গুটিকয় সাংবাদিক সহকর্মীকে জ্ঞান দিতে এবং বিভিন্নভাবে হেনস্তা করতে উঠে পড়ে লেগে যান তাদের আসলে সাংবাদিকতা ছেড়ে তাদের পছন্দের দলে যোগ দেওয়াই শ্রেয় ---সে আলোচনা চলে বিটের অন্যসব সাংবাদিকের ব্যক্তিগত আলেঅচনায়।  

এইসব গুটিকয় সাংবাদিক নামধারী ব্যক্তি সাংবাদিকতা পেশার মর্যাদাকে পদদলিত করে লজ্জাকরভাবে লেজুরবৃত্তি করে চলেছেন। তাদের এহেন আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়।

আমরা মনে করি, এই নেতিবাচক বিষয়গুলো ওই সাংবাদিকদের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রের কর্তাব্যক্তিদেরও অজানা নয়। কিন্তু তারা দেখেও না দেখার ভান করে চলেছেন। হাউজগুলোর কাছে কি এই সাংবাদিকরা তাদের বিটের জন্য অপরিহার্য্? যদি হয় কেন? নাকি ব্যক্তিগত সম্পর্ক বড় হয়ে ওঠে তাদের চোখে? যদি তা না হয়, তাহলে এসব দলকানাদের সরিয়ে সাংবাদিকসুলভ আচরণ করবে এমন ব্যক্তিত্বধারীদের কেন নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না?-----এ প্রশ্নটা এখন করাই যায় সংবাদমাধ্যমগুলোর কর্তাব্যক্তি ও সংশিষ্টদের।

বাংলাদেশ সময় ২০০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।