নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে অবরোধ বা হরতাল আহ্বান এবং তা` সমর্থন অথবা প্রত্যাখ্যান- সবই মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার।
অবরোধ বা হরতাল চলাকালে কেউ যদি তা` পালন করতে না চায়, তার ওপর হামলা কিংবা আগুনে পোড়ানো কারও গণতান্ত্রিক অধিকার নয়, ফৌজদারি অপরাধ।
আর অবরোধ বা হরতাল শুরুর আগেই আতঙ্ক সৃষ্টি বা অন্য কোন উদ্দেশ্যে যানবাহনে হামলা ও আগুন অথবা কোন মানুষ ও স্থাপনার ওপর সহিংস আক্রমণ একই ধরনের ফৌজদারি অপরাধ।
আপাত: দৃষ্টিতে সোমবার (২৫ নভেম্বর) দেশজুড়ে সহিংসতার জন্য বিএনপি`র নেতৃত্বাধীন ও জামায়াত সমর্থিত ১৮-দলীয় জোট দায়ী বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় অন্তত দু’জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এ ঘটনা প্রকৃত দায়ীদের খুঁজে বের করা এবং আইনের আওতায় নিয়ে আসা একটি স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়া। একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
অথচ `আইনের শাসন` প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ এবং তার নেতৃত্বাধীন সম্প্রসারিত মহাজোট অথবা তথাকথিত `সর্বদলীয়` সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে নিজেরাই একের পর এক আইন লংঘন করে চলেছে। সংবিধানের বিধি থেকে `এক চুল` না সরার ঘোষণার পর সংবিধান লংঘন করে পদত্যাগী ও নতুন মন্ত্রীদের নিয়ে সংবিধানের বিধি বহির্ভূত এক জগাখিচুড়ি ধরনের সরকার দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে। তারা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে `চোখ বন্ধ করে` ভোট দেওয়ার রাজনীতি ভিত্তিক, ন্যূনপক্ষে আরো পাঁচ বছর ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার এক ভয়ংকর রক্তক্ষয়ী খেলায় মত্ত। এ সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ধরে বিচার করার সদিচ্ছা কিংবা নৈতিক অধিকার কোনটিই তাদের আছে বলে মনে হয় না।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতা প্রত্যাশী বিএনপি এবং তাদের অনুগত জোটভুক্ত দলগুলো তাদের সহিংসতার ফলে বাংলাদেশের মানুষের এই প্রাণহানির জন্য দু:খিত, কিংবা তার প্রতিকার চায়, এমন কোন প্রমাণ নেই। বরং, বিরোধী দলে থাকলে যতো বেশি মানুষের `লাশ` পড়ে। এই রাজনীতিকরা ভেতরে ভেতরে ততো বেশি উল্লসিত হন ক্ষমতার সিঁড়ি আরও জোরদার হওয়ার লোভে। আর নিজের পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্য কারও, বিশেষ করে আমজনতার কারও মৃত্যুতে ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদের কিছু যায় আসে না।
এই অনাকাংখিত, অসময়োচিত একেকটি মৃত্যু ও লাশের দায় এড়াতে পারেন না দুই জোট প্রধান শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া।
বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনা বলেছিলেন, একটি লাশ পড়লে জবাবে দশটি লাশ পড়বে!
অল্পদিন আগে বর্তমান বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছেন, আন্দোলন সফল করতে হলে আরও কিছু মানুষ মারা যাবে!
স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নিহত নূর হোসেন, জেহাদ ও ডা. মিলন, কিংবা সম্প্রতি আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণকারী মুনির এবং গণ আন্দোলনে প্রাণ হারানো প্রতিটি মানুষ যেন হাসিনা ও খালেদার ক্ষমতায় যাওয়ার একেকটি রক্তমাখা সিঁড়ি!
শেখ হাসিনা কেবল ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বরের বাড়িতে পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের রক্তমাখা সিঁড়িটি দেখতে পান। আর খালেদা দেখতে পান চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে স্বামী জিয়াউর রহমানের রক্তমাখা সিঁড়িটি। দেখতে পান না নূর হোসেন, জেহাদ, মিলন ও মুনীরসহ অসংখ্য মানুষের রক্তক্ষরণ।
বাংলাদেশের মানুষ আর কারও ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কোন রক্তমাখা সিঁড়ি দেখতে চায় না। দেখতে চায় না লাশের রাজনীতি। আর সেই লাশের রক্তে রক্তাক্ত সিঁড়ি বেয়ে ক্ষমতায় হাসিনা, খালেদা বা এরশাদকে। বাংলাদেশের মানুষ শান্তি চায়।
সৈকত রুশদী: প্রবাসী সাংবাদিক, রাজনীতি বিশ্লেষক
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৩