ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

অস্থিরতায় সন্ত্রাস ফিরতে পারে

ভাষ্কর রায়, ভারতীয় সাংবাদিক ও কলামিষ্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৩
অস্থিরতায় সন্ত্রাস ফিরতে পারে

ঢাকা: রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সন্ত্রাসের কবলে চলে যেতে পারে বাংলাদেশ। এমনই আশঙ্কা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিষয়ক এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় হাউজ কমিটি।



কমিটি গত বুধবার ‘অস্থির বাংলাদেশ:খাদের কিনারে জাতি’ শীর্ষক ৯০ মিনিটের শুনানীর আয়োজন করে। অর্থাৎ বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস এটাও মনে করে- ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি প্রধান্য দিয়েছিলেন দেশ থেকে সন্ত্রাস নির্মূলের। কেননা শেখ হাসিনা উল্লেখ করেছিলেন- বিএনপি-জামায়াত সরকার বাংলাদেশে সন্ত্রাসের বীজ বপন করেছে।

আর আল কায়েদা এখনও তার ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় সরকার গঠনের পরই বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশকে ওয়াহাবী ইসলামিক দেশে পরিণত করার ষড়যন্ত্র শুরু করে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিষয়ক এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় হাউজ কমিটির সাব-কমিটি প্রতিনিধি স্টিভ শ্যাবট ৯০ মিনিটের ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। তিনি উচ্ছ্বসিত প্রংশসা করে বলেন, বাংলাদেশ বেশ উন্নয়ন করেছে কিন্তু বিরোধীদলগুলোর আসন্ন নির্বাচন বানচালের হুমকিতে তা অনেকটাই ম্লান হয়ে যাচ্ছে।
 
মি: শ্যাবট সদ্য বাংলাদেশ সফর করে এসেছেন। এ সময় তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াসহ শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান এড রয়সি অবশ্য ওই বৈঠকে আরও বলেন, সরকার সেখানকার সংখ্যালঘুদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা পাকিস্তানের মতো মৌলবাদের দিকেই ঝুঁকে পড়ছে। তিনি আরও বলেন, মৌলবাদীরা পাকিস্তানে গভীর সঙ্কট সৃষ্টি করেছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্ট্যাডিজের (বিআইপিএসএস) সভাপতি মেজর জেনারেল (অব:) আ ন ম মনিরুজ্জামান বলেছেন, শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মেনে না নেওয়ার কারণে নির্বাচন বিলম্বিত হচ্ছে।       .

এদিকে প্রভাবশালী নিউইয়র্ক টাইমসের সাম্প্রতিক এক সম্পাদকীয়তে বাংলাদেশের অস্থিরতার জন্য শেখ হাসিনাকে অভিযুক্ত করে বলেছে- দেশের শীর্ষ বিরোধীদলীয় নেতা ও মানবাধিকার কর্মীদের গ্রেফতার করে এ অবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে।

বিএনপি জোটসঙ্গী জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে বিক্ষুব্ধ কর্মীদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করেছে। এছাড়া প্রভাবশালী সাপ্তাহিক দ্য ইকোনমিস্টিও গত ৩ বছর ধরে ভারতকে যুক্ত করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভূয়া সংবাদ প্রকাশ করে।

এটা সর্বজন বিদিত যে, পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষত: যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর বেশ প্রভাব বিস্তার করে আসছে। কেননা তারা দেশটির মূল উন্নয়ন সহযোগী। এছাড়া তারা দাতা সংস্থা ও আন্তজার্তিক অর্থনেতিক প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। অবশ্য তারা সর্বজনের দাবি মোতাবেক অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়।

অতীতে কেয়ারটেকার সরকারের জন্য আন্দোলন করলেও শেখ হাসিনা এখন আর ২০০৬ সালের তিক্ত অভিঞ্জতার কারণে এ ব্যবস্থা মেনে নিতে চাইছেন না। কেননা তারা ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন না দিয়ে ২ বছর সময় পার করে। উপরন্তু শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াসহ শীর্ষ অনেক নেতাকে জেলে পাঠায়। অবশ্য খালেদা জিয়া কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে অনড়।

এদিকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধকালে লাখ লাখ বাংলাদেশিকে হত্যার দায়ে পাকিস্তানের দালাল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে দেশে-বিদেশে বিতর্ক উঠেছে। মানবতা বিরোধীরা পাকিস্তানি সৈন্যদের নিয়ে বাঙালি হত্যা ও নারীদের সম্ভ্রমহানি করেছে।

পশ্চিমারা মনে করছেন- এই বিচার বন্ধ না করলে দেশটিতে শান্তি আসার সম্ভাবনা নেই।  

বৈঠকে অবশ্য উল্লেখ করা হয়- মার্কিন কংগ্রেস ও অন্যদের বসে ভাবার সময় এসেছে কেন ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত সরকার আমলে বাংলাদেশে হঠকারি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল।
পাশাপাশি আরও ভাবার সময় এসেছে- ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনত‍া নিয়ে রিচার্ড নিক্সন এবং হেনরি কিসিঞ্জার কেনই বা হঠকারি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তদুপরি বিএনপি নেত্রী জামায়াতে ইসলামির ওপর নির্ভর করে বড় ভুলের পথেই এগিয়ে যাচ্ছেন। অর্থাৎ এট‍া হতে যাচ্ছে- ‘লেজের কুকুর নাড়ানোর ব্যাপার। ’

ভাষ্কর রায়, ভারতীয় সাংবাদিক ও কলামিষ্ট

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।