ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

খালেদার অপেক্ষায় গণতন্ত্রের শেষ ট্রেন

ড. ফরিদ আহমেদ, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৩
খালেদার অপেক্ষায় গণতন্ত্রের শেষ ট্রেন

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয়েছে। গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় বাঙালির ইতিহাসে এটি একটি মাইল ফলক।

১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াঊর রহমান শুরু করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ। চালিয়েছিলেন পাকিস্তানি আগ্রাসন, শোষণ ও নিপীড়ন থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করার লড়াই। সেদিন তিনি জেগে উঠেছিলেন বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাকে। অস্ত্র তুলে নিয়ে তিনিও বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।

লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে ও জেনারেল জিয়ার মত অসংখ্য মহান মুক্তিযোদ্ধার অবদানে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের ৪৩ বছর পরও জাতি কৃতজ্ঞ চিত্তে মহান সেই যোদ্ধাদের স্মরণ করে, শ্রদ্ধা জানায়। বাঙালি হৃদয় ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানটি শুনে নীরবে কাঁদে। শ্লোগান তোলে ‘মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে তরুণ প্রজম্ম শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে সম্মিলিতভাবে দীপ্ত চিত্তে উচ্চারণ করে ‘জয় বাংলা’।

সেই স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে বঙ্গবন্ধুর হাতে প্রধানমন্ত্রিত্ব তুলে দিয়ে সেনানিবাসে ফিরে গেছেন জেনারেল জিয়ার মত অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক। সেদিন জিয়া পারতেন পাকিস্তানের পক্ষ নিতে। তিনি ভাবতে পারতেন- যদি বাংলাদেশ স্বাধীন হয় তবে বঙ্গবন্ধু হবেন রাষ্ট্রনায়ক। তাই কেন তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশ স্বাধীন করবো! জিয়াউর রহমানের পাশে সেদিন ছিলেন কর্নেল অলি আহাদ। তিনিও সেদিন বঙ্গবন্ধু রাজা হবেন ভেবে যুদ্ধ শুরু করতে দেরি করেন নি। কারণ, তারা বিশ্বাস করেছিলেন বঙ্গবন্ধু সবাইকে আপন ভাবেন বলেই লড়াই করছেন- রাজা হবার জন্য নয়। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন যারা রাজা বানায় আসলে তারাই রাজা। জনতার রাজত্ব কায়েম করতে তিনি মুক্তি সংগ্রাম করেছেন।

আজ বঙ্গবন্ধুর কন্যা জনগণের কাছে জাতির জনকের কন্যা হিসেবে একটি সর্বদলীয় সরকার গঠন করেছেন। অনেকেই ভাবছেন, তিনি আবারও প্রধানমন্ত্রী হতে চান। তাদের এ ভাবনা সঠিক নয়। সর্বদলীয় সরকারের মূল উদ্দেশ্য হল লক্ষ শহীদের স্বাধীনতার স্বপ্ন অর্থবহ করতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা। এ ডাক ওই বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাকের প্রতিধ্বণি। এ ডাক একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও অর্থবহ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ডাক। যদি আমরা আজ জাতির জনকের কন্যার ডাকে সাড়া দিয়ে গণতন্ত্রের অভিযাত্রাকে অব্যহত রাখতে পারি, তাহলে সারা বিশ্বে বাঙালি যেমন একটি সম্মানিত জাতি হিসেবে স্থান করে নিতে পারবে তেমনি আমাদের ঐক্যও হবে সুদৃঢ়।

সব দলের অংশগ্রহণে দশম সংসদ নির্বাচন জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সব মুক্তিযোদ্ধার স্বপ্ন  বাস্তবায়নে বাঙালিকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। সমগ্র জাতি আজ অপেক্ষায়। সমগ্র বিশ্ব তাকিয়ে আছে গণতন্ত্রের সৈনিক ও স্বৈরাচারের পতনের অগ্রনায়ক খালেদা জিয়ার দিকে। গণতন্ত্র আজ হুমকির মুখে তাঁর হরতাল ও অবরোধের ডাকে। মানুষ পুড়ে মরছে দেখে তিনি কিভাবে অবিচল আছেন?  তিনি কি বুঝতে পারছেন না প্রধানমন্ত্রীর আহবান ১৯৭১ সালের সেই কালজয়ী মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাক। যে ডাকে সাড়া দিয়ে জিয়াঊর রহমান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন পাকিস্তানি হানদার মুক্ত করতে। আজ যেন সেই হানাদার আবার জামায়ত-শিবিরের কাঁধে চেপে গণতন্ত্রকে হত্যা করতে উদ্যত। এই ক্রান্তিকালে তিনি কিভাবে নীরব থাকবেন?

আমার বিশ্বাস, ১৯৭১ সালে জেনারেল জিয়া যেমন বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে ভুল করেন নি, তেমনি খালেদা জিয়া ২০০৮ সালেও ভুল করেন নি নির্বাচনে অংশ নিয়ে। তেমনি ভুল তিনি আজও করবেন না বলে জাতি বিশ্বাস করে। নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রমাণ করবেন তিনি জনগণের মুক্তির জন্য রাজনীতি করেন। তিনি যেন ভুলে না যান গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে জেনারেল জিয়ার অধীনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। আজ সেই ত্যাগের প্রতিদান দেওয়ার উপযুক্ত সময়। তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে অংশ নিয়ে আবারও প্রমাণ করবেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই তার মূল আদর্শ যা বাঙালি হাজার বছর ধরে লালন করছে।

২০০৮ সালে নির্বাচনে অংশ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার তিনি যে অনন্য অবদান রেখেছেন সেই অবদানকে আরও সমুজ্জ্বল করতে সর্বদলীয় সরকারে যোগদান না করেই নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবেন। নির্বাচন বর্জন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি কেবল পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধকেই  নষ্ট করবে না, বরং বিপন্ন করবে আগামী প্রজম্মের ভবিষ্যত ও ধ্বংস করবে মুক্তিযুদ্ধের অর্জন স্বাধীন বাংলাদেশকে। রাজাকার জামায়াত আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়। আপনি কি তাদের ( রাজাকার) সেই স্বপ্ন পূরণ করবেন, নাকি মুক্তিযোদ্ধা জিয়ার মত ৩০ লক্ষ শহীদের স্বপ্ন পূরণ করবেন?

নির্বাচন সমাসন্ন। গণতন্ত্রের শেষ ট্রেনটি আপনার অপেক্ষায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করে জাতির দায়মুক্তিতে আপনার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনে অংশগ্রহণ ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মাকে শান্তি দেবে। জাতির সম্মান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও শান্তি হোক আপনার আগামী দিনের পথ চলার প্রেরণা। আপনি নির্বাচনে আসবেন কী?

ড. ফরিদ আহমেদ:  অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।