ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

পরিবহন শ্রমিক ও সুশীল সমাজ

আমিনুল ইসলাম, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৩
পরিবহন শ্রমিক ও সুশীল সমাজ

মধ্যরাত, ঘড়ির কাটায় রাত ১২টা। একদল সচেতন, সুশীল ও নাগরিক সমাজের মানুষ টেলিভিশনের পর্দায় দেশ, সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে গভীর উদ্বেগের সাথে কথা বলে যাচ্ছেন।

সকলেই দেশের ভবিষ্যৎ ও গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন এবং যে যার মতো করে যুক্তি উপস্থাপন করছেন। কখনো কখনো তাদের আলোচনা কিছুটা বাক বিতণ্ডায় পরিণত হচ্ছে।

এক সময় আলোচকবৃন্দ ও সঞ্চালক এক জন আরেক জনকে ধন্যবাদ দিয়ে আজকের রাতের মতো দেশ, সমাজ

ও রাজনীতি নিয়ে তাঁদের মুল্যবান কথামালা শেষ করে যে যার মতো নিজ গৃহে ফিরে গেলেন।
পরদিন সকাল বেলা এক দল মানুষ হরতাল আর অবরোধের মাঝে যে যার মতো ছুটছেন কর্মস্থলে। সেখানে যে যেতেই হবে। নইলে যে চাকরিটা আর থাকলো না। সবেধন নীলমণি এই এক চাকরি যদি চলে যায় তাহলে খাবে কি, পরিবার চলবে কিভাবে! অফিসে আসার সময় সামনেই বোমা ফাটানোর আওাজ পেলেও নিজের কিছু হয়নি ভেবে পুরো দিন কাজ করা। তবে কাজ শেষে সন্ধ্যে বেলায় বাড়ী ফিরতে হবে সেই অস্বস্তি তো মনের মধ্যে থেকেই যায়। ওই অস্বস্তি নিয়েই দিন জুড়ে গাধার খাটুনি শেষে সন্ধ্যে পেড়িয়ে রাতের বেলায় একটা বাস পাওয়া গেলো বাড়ী ফেরার জন্য। এই অবরধের মাঝে বাড়ী ফেরার জন্য কিছু একটা পাওয়া গেছে এই ভেবে বাসে উঠে পড়া।
বাস ড্রাইভারের অবশ্য কিছু করার ছিলো না। আর কয়দিন কাজ না করে থাকা যায়! খেয়ে পরে তো বাঁচতে হবে। সংসারে যে আরও কয়েকটা মুখ রয়েছে। তাঁদেরও যে দুবেলা খেতে মন চায়। হেল্পার অবশ্য সেই প্রথম দিন থেকেই বাস বের করতে বলছিলো। ওর নাকি একদিন বাস না চললেই খাওয়া পড়ায় সমস্যা হয়ে যায়। কিন্তু বিপদের কথা ভেবে ড্রাইভার এই কয়দিন বাস বের করেনি। আজ আর না বের করে থাকা গেলো না।

দিন শেষে ক্লান্ত মানুষ গুলো ভয় ও শঙ্কা নিয়ে বাসে করে বাড়ী ফিরছে। হঠাৎ কিসের যেন একটা শব্দ। দাউ দাউ করে বাসটি জ্বলতে শুরু করলো সাথে মানুষ গুলোও।

বিভিন্ন অন লাইন নিউজ পোর্টালে সে খবর সাথে সাথেই ছড়িয়ে পরে। এছাড়া বিভিন্ন  খবরের কাগজ গুলোতে বড় করে কয়েক কলামে শিরোনাম বাস ড্রাইভার সহ পুড়ে অঙ্গার হলো কিছু মানব সন্তান!

পরের দিন সকাল থেকে শুরু করে পুরো দিন জুড়ে বিভিন্ন সামাজিক গণমাধ্যম বিশেষ করে ফেইসবুকে এই নিয়ে নানান আলোচনা সমালচনা। “এসব হচ্ছে কি দেশে?”; “দুই দল কি এইভাবে আমাদের পুড়িয়ে মারবে?”। এরকম হাজারো আর্তি চলতেই থাকে।

আবারও মধ্যরাত, রাত ১২ টা। একদল সমাজ সচেতন, সুশীল ও নাগরিক সমাজ টেলিভিশনের পর্দায় দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্যোগ প্রকাশ করছেন। সবাই বলছে এইভাবে চলতে পারে না। একদল বলছে মানুষ পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে, সকারের উচিত দেশের মানুষের নিরাপত্তা বিধান করা। আরেক দল বলছে বিরোধী দলের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আর হরতাল, অবরোধের জন্যই মানুষ গুলোকে আগুনে পুড়তে হচ্ছে। আবার পরমুহূর্তে কেও একজন বলছে দুই দলে নেত্রীর উচিত এখনি আলোচনায় বসা। অনেকেই তাতে সায় দিচ্ছেন। আলোচনা আবার একটা সময় বাক বিতণ্ডায় রুপ নেয়। একসময় সঞ্চালক সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করেন। যে যার মতো বাড়ী ফিরে যায়।

পরের দিন সকাল আবার আরেকদল লোক হরতাল, অবরধের মাঝে কর্মস্থলে যায় এবং কখনো যাওয়ার সময় কখনো বা আসার সময় হরতালের আগুনে পুড়তে থাকে। কিছুই বদলায় না। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও টেলিভিশনের অনুষ্ঠানমালাও চলতে থাকে নিজের মতো করেই। সবার একই রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত একসাথে বসে কিছু একটা করা। দুই নেত্রীর উচিত কিছু একটা করা। এভাবে আর কত দিন! তবে কিছুই তাতে বদলায় না।

পরের দিন দুপুর বেলা, নিরুপায় হয়ে একদল বাস, ট্রাক ড্রাইভার সহ সকল পরিবহন শ্রমিক একটি দলের নেত্রীর বাসভবন ঘেরাও করতে চেয়েছে। এর একটা বিহিত করার জন্য। কাল হয়তো আরেক দলের সভানেত্রীর বাসভবনও তাঁরা ঘেরাও করে চোখে আঙুল দিয়ে অন্যদের দেখিয়েও দিতে পারে কি করা উচিত!

আচ্ছা আপনাদের কি কোন ধারণা আছে ট্রাক ড্রাইভারদের পড়াশুনা কতটুকু? এরা কি সচেতন কিংবা সুশীল সমাজের নাগরিক কিনা? পড়াশুনা জানা সচেতন সুশীল সমাজের মানুষ গুলো দেখি টেলিভিশনে কথা বলে আর ঘরে বসে ফেইসবুকে দেশ উদ্ধার করছে। অন্যদিকে ট্রাক ড্রাইভার সমাজ উপায় অন্তর না দেখে ঠিকই রাস্তায় বেড়িয়ে এসেছে। সচেতন, সুশীল সমাজের উচিত এই ট্রাক ড্রাইভার ভাইদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে দুই রাজনৈতিক দলের নেত্রীর বাসভবন ঘেরাও করা। আর যদি তাঁরা সেটা করতে সক্ষম না হয় তাহলে তাঁদের সুশীল স্ট্যাটাস কেড়ে নিয়ে ট্রাক ড্রাইভারদের সেটি দেয়া হোক।

আমিনুল ইসলাম: সহকারী অধ্যাপক, আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ সময়: ০৫০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।