ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

৩০ লক্ষ শহীদের উন্নত মম শির

অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমেদ, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১৩
৩০ লক্ষ শহীদের উন্নত মম শির

বাঙালির বিজয়ের মাস শুরু হয়েছে। স্বাধীনতার প্রায় ৪৩ বছর পর আবার মায়ের কান্নায় আর পোড়া মানুষের আর্তচিৎকারে ভারী হয়ে ঊঠেছে বাতাস।

আজ ঘুমন্ত মানুষও নিরাপদ নয়। শীতের রাতে বাসের হেলপার শিশুটি ঘুমিয়ে ছিল বাসেই। তাকেও পুড়িয়ে মারা হলো! কি নির্মম আমাদের পরিণতি, আর কি নিষ্ঠুর ওই পক্ষ! যারা ১৯৭১ সালে আমার মা-বোনকে তুলে দিয়েছিল হানাদারদের খাঁচায়, তারাই আজ মানুষ পুড়িয়ে মারছে! ওরা সেদিন অস্ত্রতুলে নিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করতে। আজ সেই পশু শক্তি যেন আবার বাংলার বুকে দাপড়ে বেড়াচ্ছে। এমন মুহূর্তে মুক্তিযোদ্ধারা কি এক হবেন না?

ক্ষমতার প্রতিযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলো কেন আজ দূরে দূরে? এই দূরত্ব ও প্রতিযোগিতা কি জনগণকে চরম বিপদ ও নিরাপত্তা হুমকিতে ফেলে দিচ্ছে না? এই প্রতিযোগিতা কি যেকোন মূল্যে বর্তমান সরকারকে বিরোধীদলে বসানোর প্রতিযোগিতা নয়? কিন্তু এই প্রতিযোগিতা যে আবার রাজাকার-আলবদর-আল শামসকে ক্ষমতায় আনার সুযোগ তৈরি করছে তা ভাবছেন কি?  ৩০ লক্ষ শহীদ কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলেন?

যেদিন থেকে রাজনীতিবিদদের কথা বুঝতে শুরু করেছি সেদিন থেকেই আমরা দেখছি রাজনৈতিক সংঘাত, হরতাল আর অবরোধ নিয়ে রাজনীতিবিদরা পরস্পরকে দোষারোপ করেন এবং এরই ধারাবাহিকতায় সাধারণ মানুষের প্রাণহানি ঘটে বা পঙ্গুত্ব বরণ করে। এ মুহূর্তে যারা সরকার পতনের আন্দোলনে আছেন, তারা দাবি করছেন এসব সন্ত্রাসের জন্য সরকার দায়ী। বিরোধীদলের প্রতি জনগণকে ক্ষুব্ধ করতে সরকার এমনটি করছে। তারা কোন সন্ত্রাস করছে না।

আর সরকার বলছে, বিরোধীদলই দায়ী। তারা জনসমর্থন হারিয়ে সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। সরকার ও বিরোধীদলের এই ভাষা আমাদের চিরপরিচিত।

গৌতম বুদ্ধ বলেছিলেন, তীরটি কোথা থেকে এসেছে সে বিতর্ক না করে আহত মানুষটির সেবা করাই মানব ধর্ম।

আমাদের রাজনীতিবিদরা জনসেবার কথা বলেন, অথচ মানুষ পুড়িয়ে মারতে একদল মানুষকে উসকে দিচ্ছেন আন্দোলনের নামে। জনগণ কি অপরাধ করেছে? যেখানে দু’মুঠো ভাতের জন্য রাত ভোর হওয়ার আগে মালিকের দরজায় পৌঁছুতে হয়, সেখানে দিনে পর দিন অবরোধ ও আগুন নিয়ে খেলা যুক্তিযুক্ত হতে পারে কি?    

পরিবেশ নেই বলে এরশাদ সাহেব নির্বাচন করবেন না জানিয়েছেন। তিনি যে উপলব্ধি থেকে বলেছেন তা সারা দেশের মানুষের উপলব্ধি কিনা জানিনা, তবে জনগণ খুবই শঙ্কিত জননিরাপত্তা নিয়ে।

জেনারেল এরশাদ সম্ভবত: দু’টি কারণে নির্বাচন থেকে সরে গেছেন। এক হল নিরাপদ পরিবেশের অভাব। প্রথম থেকেই সেনা মোতায়েন করে এই সমস্যা মোকাবেলা করা যেত। দ্বিতীয়ত: মনোনয়ন জমা দানের সময়। নির্বাচন কমিশন এখনও যদি সময় বাড়িয়ে দেয় ও সেনা মোতায়েতন করে তাহলে আলোর পথ দেখা যেতে পারে। তাতে সরকার ও বিরোধীদল আরও সময় পাবে ঐক্যমত্যে পৌছানোর।

শুক্রবার গেলো ৬ ডিসেম্বর । ১৯৯০ সালের এ দিনটিতে জেনারেল এরশাদ পদত্যাগ করেছিলেন। গণতন্ত্রের দ্বার মুক্ত হয়েছিলো। আজ তিনি নতুন করে ক্ষমা চাইতে পারেন এবং প্রকৃত বিরোধীদল হিসেবে জনতার পাশে দাঁড়াতে পারেন। হেফাজতের দোয়া নয়, জনগণের ভালবাসা হোক শক্তি।  

সবার কাছে আমাদের প্রত্যাশা, বিজয়ের মাসে যেন পোড়া মানুষের আর্তচীৎকারে বাতাস আর ভারী না হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হোক আমাদের পথ চলার শক্তি। আমরা ১৯৯০ সালে তিন জোটের রুপরেখায় একটি ঐক্যমত্যে পৌঁছুতে পেরেছিলাম। আজ তেমনি একটি ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠা না করে একলা চলার নীতি গ্রহণ করলে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়ন কঠিন ও জটিল হয়ে পড়বে।

বিজয়ের মাস হোক আনন্দের ও ঐক্যবদ্ধ থাকবার শক্তি। আমরা যেন ভুলে না যাই এক নদী রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা।

ড. ফরিদ আহমেদ: অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১৭

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।