ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

মুন-নাভিদের নিন্দনীয় আচরণ

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৩
মুন-নাভিদের নিন্দনীয় আচরণ বান কি মুন ও নাভি পিল্লাই

এবার বিজয় দিবসের মাত্রা ছিলো সম্পূর্ণ ভিন্ন আমেজের। জাতি ৪২ বছর পর সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে মহান বিজয় দিবস পালন করলো।

প্রথমত, একজন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর, দ্বিতীয়ত, বিশাল `লালসবুজ` জাতীয় পত‍াকা আর `জাতীয় সঙ্গীতের বিশ্ব রেকর্ডের মাধ্যমে বিজয় দিবস উদযাপন।

তারপরও বেশ কিছু দুঃখজনক বিষয় আমাদের মর্মাহত করেছে। শুধু দেশি শত্রুই নয়; বিদেশিরাও আন্তর্জাতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করছে। তবু শেখ হাসিনা সরকার এবার ক্ষমতায় এসে দু`টি ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর করেছে! জাতির এই কলঙ্কমুক্তির জন্য তিনি বাংলার ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

নিন্দা জানানোর ভাষা নেই, কসাই কাদেরের ফাঁসিতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। ফাঁসি দেয়ার আগে জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস হাই কমিশনার ভারতীয় তামিল বংশোদ্ভূত সাউথ আফ্রিকান নাভি পিল্লাই যুদ্ধাপরাধী কসাই কাদেরের মৃত্যুদণ্ড মওকুফের আবেদন করেছেন। এই নাভি মানবাধিকারকর্মী হয়েও এর আগে এ ধরনের বিতর্কিত ও নিন্দনীয় কাজ করেছেন।

তার ২/১টা চিত্র তুলে ধরছি:

নাভি নিজের জন্মস্থানেই মানবাধিকারকর্মীদের এক দাবি প্রত্যাখ্যান করে নিজের ‘দেমাগী’ মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন।
এছাড়াও বিভিন্ন দেশে তিনি এ ধরনের বিতর্কিত কাজ করেছেন। যেমন, চীনের রাজনৈতিক সংস্কার এবং গণতান্ত্রিক রাজনীতির পক্ষে আন্দোলনকারী কারারুদ্ধ মানবাধিকারকর্মী, নোবেল পুরস্কারে ভূষিত চীনের লেখক ও মানবাধিকারকর্মী কারারুদ্ধ লিও সিয়াও বোর মুক্তির জন্য চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় নাভিকে বান কি মুন অনুরোধ জানান যে, তিনি যেন লিও’র মুক্তির বিষয়টা তাঁর কাছে তুলে ধরেন। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন।

শ্রীলঙ্কার মানবাধিকার পরিস্থিতি দেখতে সেদেশ সফর নিয়ে নাভি পিল্লাই ঝামেলা বাঁধান। তিনি শ্রীলঙ্কান সেনাবাহিনীর হাতে নিহত লিবারেশন টাইগার অব তামিল ইলম (এলটিটিই) সদস্যদের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর গোপন কর্মসূচি নেন। তাতে কলম্বো সরকার বাধ সাধলে নাভি তাঁর কর্মসূচিতে অটল থাকেন তা নিয়ে মতবিরোধ তৈরি হয়। সমালোচনার মুখে পড়েন নাভি।

একইভাবে কানাডার অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়েও নাক গলিয়ে নিন্দনীয় ও বিতর্কিত হন তিনি। টিউশন ফি বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে কুইবেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা লাগাতার বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে কুইবেক প্রাদেশিক সরকার ছাত্র বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেয় এবং সংসদে একটি বিল উত্থাপন করে। নাভি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বক্তৃতায় অভিযোগ করে বলেন, কুইবেক মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করে দিচ্ছে। তাই নাভি কুইবেককে কালো তালিকাভুক্ত করারও হুমকি দেন। তার এই বক্তৃতার তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে কানাডা সরকার।

শ্রীলঙ্কা আর কানাডাও তাদের আভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে নাভি’র নাক গলানোর প্রতিবাদ করেছে। বাংলাদেশের উচিত ছিলো নাভির এই ‘অমানবিক’ আবদারের প্রতিবাদ করার। তবে শত শত বাঙালি নাভির মেইলে তীব্র ভাষায় প্রতিবাদের ঝড় তুলেছিলো। কারণ, এখনো অনেক দেশে ফাঁসি কার্যকর করা হচ্ছে। ২০১২ সালে বিভিন্ন দেশে ফাঁসি কার্যকরের হার ভয়াবহ। এ হার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৪৩ জন, ইরানে ৩১৪+ জন, ইরাকে  ১২৯+ জন, সৌদি আরবে ৭৯+ জন,  চীনে ১০০০+ জন, ইয়েমেনে ২৮+ জন, সুদানে ১৯+ জন, আফগানিস্তানে ১৪ জন, জাম্বিয়ায়  ৯ জন, জাপানে ৭ জন। আর আমাদের বাংলাদেশে ২০১২ সালে কেবল ১ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। (তথ্যসূত্রঃ Amnesty International)।

আজ জাতিসংঘ মানবাধিকারের কথা বলে, যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকারের কথা বলে। এই যে এসব দেশে মৃত্যুদণ্ড হয়ে গেল এবং এখনো হচ্ছে। তখন কোথায় থাকে তাদের মানবতাবোধ?  বাংলাদেশের ৮ জনের যখন শিরশ্ছেদ করা হল সৌদি আরবে তখন কোথায় ছিল জাতিসংঘের মানবতাবোধ?

আজ কাদের মোল্লার মানবাধিকার নিয়ে নাভি উদ্বিগ্ন। ১৯৭১ সালে এইসব কসাই নির্বিচারে ত্রিশ লাখ বাঙালি নিধন করেছিলো, তখন নাভিরা কোথায় ছিলেন? যখন মার্কিন সেনারা সাদ্দাম হোসেনকে ঈদের দিন হত্যা করে লাশ গুম করে, যখন উসামা বিন লাদেনকে মেরে সাগরে ভাসিয়ে দেয়া হয়, যখন গুয়েন্তানামো বে কারাগারে আমেরিকা বন্দিদের ওপর নারকীয় নির্যাতন চালায়,  তখন নাভিরা কি গভীর নিদ্রায় থাকেন?

দীর্ঘ চার দশক পেরিয়ে গেলেও মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যার জন্য বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চায় নি পাকিস্তান। বরং নানা সময় আসল চেহারার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো মোল্লার ফাঁসিতে প্রতিবাদ করেছে। পাকিস্তান জামায়াত তাকে ‘শহীদ’ আখ্যায়িত করে সেদেশে বিক্ষোভ-সমাবেশ করছে। ‘মিথ্যা’ অভিযোগে কাদের মোল্লার ফাঁসি দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান। এছাড়াও ‘এক পাকিস্তানের’ সমর্থক হিসেবে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডে শোক প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খান। কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডে উদ্বেগ জানিয়ে গত সোমবার পাকিস্তান পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে বলে জানিয়েছে দি এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।

এর আগে ভারতীয় রাজাকার শর্মিলা বসু পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেছেন। তার ‘ডেড রেকনিং: মেমোরিজ অব দ্য ১৯৭১ ওয়ার’ গ্রন্থে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বলেছেন, ‘একাত্তরে পাক হানাদাররা কোনো হত্যা, ধর্ষণ নির্যাতন করে নি। ’৭১-এর ‘গৃহযুদ্ধ’-এ ৩০ লাখ বাঙালি শহীদ হয় নি।

ইয়াহিয়াকে একজন ‘ভালো’ মানুষ হিসেবে অভিহিত করে ‘স্মৃতিকথা’ লিখেছেন তিনি।

কাজেই এটা স্পষ্ট যে, এখনো আমাদের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি তারা। তাই আমাদের সব সময় সতর্ক থাকতে হবে শর্মিলা, বান কি মুন, নাভি,  ইমরানদের ব্যাপারে।  

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল: saifullahdulal@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।