৩ জানুয়ারি নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিকের সঙ্গে বিএনপি প্রধান ম্যাডাম খালেদা জিয়ার সাক্ষাত্কারে বাধা দিয়েছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ম্যাডাম কি বলতেন সেসময় তা জানা না গেলেও নিউইয়র্ক টাইমসে গত ৬ জানুয়ারির অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে তার মনের ভাব।
যুদ্ধাপরাধী জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে ম্যাডাম বেশ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছেন বলেই মনে হল। তিনি কখনো বলছেন জামায়াতের সঙ্গে কৌশলগত কারণে আছেন, কখনো বলছেন সময় হলেই ওদের সঙ্গ ত্যাগ করবেন। কখনো বলছেন জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট ‘স্থায়ী কোনো জোট নয়`, সঙ্গ ছাড়ার ব্যাপারটি নাকি তারা বিবেচনা করে দেখবেন (!!!)। কি জানি কি বিবেচনা করবেন ম্যাডাম, কবে তার হুঁশ ফিরবে, কিংবা আদৌ ফিরবে কি না!
ইসলাম ধর্ম নিয়ে ব্যবসা ফাঁদা বিষধর জামায়াত ক্রমান্বয়ে গিলে খেয়েছে বিএনপি নামক বড় দলটিকে।
আজ যেখানেই কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রম হচ্ছে, অবধারিতভাবেই জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির নাম চলে আসছে। বিএনপির কেউ জড়িত থাকুক আর না থাকুক, জামায়াতের সব পাপের ভাগীদার বাই ডিফল্ট বিএনপির ঘাড়ে পড়ছে। আর এটাই আসলে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির বন্ধুত্বের ফল। বিএনপি নিজেদের অস্তিত্ব বিলীন করে জামায়াতি আঁতাতের মূল্য শোধ করছে !!!
৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে সদর্পে বর্জন করেছিলেন ম্যাডাম। সমঝোতা, আলোচনা এসব কোনো কিছুতেই যে হাসিনা আপা আগ্রহী ছিলেন না, এই কূটচাল টেলি কনফারেন্সের সময় ম্যাডামের উত্তপ্ত মস্তিষ্কে না ঢুকলেও, পরে নিশ্চয় ঢুকেছিল। তাই তো নির্বাচনের আগে আলোচনা করতে চাই বলে মির্জা বাহিনীকে যতই দৌড়ঝাঁপ করতে পাঠাক না কেন, আপার বাহিনীর কাছ থেকে তেমন কোনো সাড়া ছিল না।
নির্বাচনের ট্রেন কিন্তু ঠিক সময়ই এসেছিল ম্যাডাম। আওয়ামী ও জাতীয় পার্টি তাতে আগেই সওয়ার হয়েছিল। ট্রেন ২-৩ মাস লেটে সংসদ ভবনে পৌঁছুবে এই আশা করে রাজ্যের কূটনীতিকদের শলা-পরামর্শ কোনটাই কাজে দেয় নি। দেবে কি করে? দাদাভাই ইন্ডিয়া যে ট্রেনের চালক, সে ট্রেন যে লেট করবে না, এটা কি আপনার জানা ছিল না ম্যাডাম?
মাইনাস বিএনপি ফর্মুলা সাফল্যের সঙ্গেই আওয়ামী লীগ কার্যকর করেছে। মাথা চাড়া দিয়ে উঠবার আগেই গোড়া শুদ্ধ উপড়ে ফেলে দিয়েছে বিনপির যত আন্দোলনীয় চাল।
আগামী ৫ বছরের মধ্যে বিএনপিকে যে ধুয়েমুছে ফেলে দেবে আওয়ামী লীগ, সে তো বলাবাহুল্য। আর সে কথা দেরিতে হলেও কি ম্যাডাম অনুধাবন করতে পেরেছেন? আর সেজন্যই কি আলোচনা, সমঝোতার জন্য হঠাৎ মরিয়া হয়ে উঠেছেন?
কিন্তু ম্যাডাম, নির্বাচনের ট্রেন তো ভোটার নামক লাইনম্যানদের সিগন্যালের তোয়াক্কা না করেই দন্ত বিকশিত দেশপ্রেমীদের নিয়ে অলরেডি সংসদে পৌছে গেছে। যাত্রীরা সব সহী-সালামতে সংসদে পৌছে শপথও নিয়ে ফেলেছেন।
এখন প্ল্যাটফর্মে একা দাঁড়িয়ে থেকে কি কোনো লাভ আছে ম্যাডাম? এই তো বনের মন্ত্রী হাছান আর তথ্যসূত্র ইনু সাহেব বলেই দিলেন যে, ৫ বছরের মেয়াদের আগে সংসদ থেকে আওয়ামী লীগের নামার প্রশ্নই আসে না।
সৈয়দ সাহেব তো গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার ন্যায় আরো এক কাঠি উপরে উঠে বলেই দিলেন, এখন থেকে আপনি আর বিরোধীনেত্রীও নন। আনপ্রেডিক্টবল হিরোই বলুন আর ভিলেনই বলুন- এরশাদের স্ত্রী, একদা জামদানিপ্রেমী, ইমালেদা মার্কসের ন্যায় ফার্স্টলেডি রওশন এরইমধ্যে বিরোধীনেত্রীর খেতাব জয় করে এখন আপনার শূন্যস্থান পূরণ করেছেন।
তাহলে এখন আর খামাখা সমঝোতা, আলোচনা এসবের দাবি কেন জানাচ্ছেন ম্যাডাম? সেই সঙ্গে আবার শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন, আপনার নেতাদের কারাগার থেকে ছেড়ে দিতে হবে! বাজারে এ কথাও চালু আছে যে, আন্দোলন থেকে গা বাঁচানোর জন্য মধুলোভী কিছু নেতা স্বেচ্ছায় কারাগারে আরাম করছেন! মুক্তির দাবি জানিয়ে কেন খামাখা ত্যাগী নেতাদের আরাম নষ্টের দাবি জানাচ্ছেন ম্যাডাম?
আপনার শর্ত মেনে নিয়ে কেউ কি সমঝোতা করতে এগিয়ে আসবে? কেন আসবে? আপনার সঙ্গে আলোচনা আওয়ামী লীগ কেন করতে আসবে? কি নিয়ে আলোচনা করবে? ক্ষুধার্ত নেতারা ক্ষমতা নামক সুস্বাদু খাবার ফেলে রেখে কেন আপনার সঙ্গে আলোচনা করে সংসদ ভেঙ্গে পুনরায় নির্বাচনের ডাক দেবে? যেখানে তারা ভালো করেই জানে, সঠিক নির্বাচন হলে তারা কখনই মসনদে বসতে পারবে না।
আলোচনা আর হবে না। কেউ সমঝোতা করতে আর এগিয়ে আসবে না। ম্যাডাম, এই সরল সত্যটা কি আপনি অনুধাবন করতে পারছেন না এখনো?
নির্বাচনী ট্রেন ৫ বছরের জন্য আপনাকে ফেলে চলে গেছে। ঠিক সময়ই এসেছিল, আপনিই তা মিস করেছেন।
এখন কি আপনি প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকবেন, নাকি ঘরে ফিরে গিয়ে জামায়াত নামক বিষাক্ত সঙ্গীদের ত্যাগ করে শুদ্ধ হবেন সে সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণই আপনার। আমরা তো শুধুই নীরব দর্শক।
ড. জিনিয়া জাহিদ: অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০১৪