গত সাত তারিখে অনাকাঙ্খিত এক ঘটনার মধ্যে নিজেকে জড়িয়েছি। এর পর একজন সচেতন নাগরিক এবং একজন সাংবাদিক হিসেবে নিজের অনুভূতিটুকু লেখার আকারে প্রকাশ করেছিলাম।
কাছের অনেক বন্ধু-বান্ধব উৎকণ্ঠায় অস্থির। তাদের তিরস্কার –‘যারা যাকে ইচ্ছে মারুক কাটুক তুই জড়াতে গেলি ক্যানো?’
আমি আমার সেই বন্ধুদের বলতে চাই- নিরন্তর কিছু মানুষ ঝামেলায় জড়িয়ে যায় আমি তাদেরই একজন । যারা ঝামেলা বাঁধায় তারা আমার দেশ আমার সমাজ আমার পরিবার এবং আমারই সাংস্কৃতির অংশ। তাই যে রক্তাক্ত হচ্ছে সে কিন্তু আমিই । আর যে নিজের হাতে রক্তের দাগ লাগাচ্ছে সেও আমি।
একটু খোলসা করি বলি- তুই আমি আমরা আজকে বড্ড বেশি ‘অমিত্ব’ রেগে ভুগছি। খুবই কষ্টের এবং আশঙ্কার বিষয় হল আমরা মূল্যবোধ এবং সচেতনতা হারিয়েছি। রাজনীতি সচেতন নেই বলে রাজনীতি আজ অন্ধকার জায়গা।
ধরা যাক- তোদের কারো সন্তান ‘দোষী’ ‘অদোষী’ আমার জানা নেই। রাস্তায় পড়ে মার খাচ্ছে। আমি কি করবো? চোখ উল্টে হাঁটা দেবো! তোদের কারো সন্তান কাউকে মেরে ফেলার উপক্রম করেছে আমি কি করব? ওরে বাবা এ আমার নয় বলে মুখ ফেরাবো?
আমি কি পারবো আমাদের সন্তানদের সুন্দর কোমল হাত গুলোকে কালো রং করতে। পারবো না। এদেশে জন্মের কিছু দায়বদ্ধতা থাকে। আমি সেই দায় এড়াতে পারবো না। আমি ছাত্র রাজনীতি করা মানুষ। কলেজে পড়ার সময় আমাদের সহপাঠি ছাত্রলীগের অজয় যেদিন নিহত হলো আমরা অঝর ধারায় কেঁদেছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী এক ছাত্র ক্যাভারভিত্তিক রাজনীতির শিকার। আমাদের দিদি-ভাই দিদি-ভাই বলে ডাকতো। যেদিন সে নিহত হলো আমার আমরা কাঁদলাম কেনো?
উত্তর একটাই- আমার সবাই এই দেশের সন্তান। ভাল, মন্দ, খারপ, অপরাধীর বিচার রাষ্ট্রীয় আইন করবে। আইনের দণ্ডপ্রাপ্ত যদি আমার কাছের মানুষ হয় তবে সেই শাস্তি আমি মাথা পেতে নেবো।
আমি সেইসব রাজনৈতিক বড় ভাইদের বলতে চাই- আপনার মতোই আমার প্রতি রুঢ় আচারণ প্রদর্শন করুন যদি কোনোদিন কোনো রাস্তায় আপনাদের রক্তাক্ত হতে দেখি আমি সেদিন একইভবে হয়তো আপনাদেরও বাঁচাতে চাইবো। কারণ যে মার খাচ্ছে তার অপরাধ আমার জানা নেই।
লেখা পড়ে অনেইকেই বলছেন- সত্যিই কি আমাদের কিছুই করার নেই?
আছে- আসুন আমরা সবাই মিলে প্রথমত দ্বিতীয়ত, তৃতীয়ত এবং শেষ পর্যন্ত দেশটাকেই ভালোবাসি।
লেখক: সিনিয়র ফটোসাংবাদিক, কালের কণ্ঠ
ছেলেটিকে উঠিয়ে নিয়ে গেল ‘বড় ভাইরা’!
বাংলাদেশ সময়: ১১০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৪
এমএমকে