ক্রিকেট খেলার জগতে যখন এই আধুনিকতা ছিল না তখন টেস্ট ক্রিকেটই ছিল ক্রিকেট খেলার কেন্দ্র বিন্দু। ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টির পর দেশে দেশে প্রিমিয়ার লিগের আবির্ভাবের পর টেস্ট খেলা কিছুটা জনপ্রিয়তা হারায়।
ক্রিকেটারদের ব্যাট-বলের যুদ্ধের জন্যে মূল পাঠশালা হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটকেই মনে করা হয়। ক্রিকেট মোড়লরা টেস্টের আধুনিকতার নামে নিজেদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে টেস্ট খেলায় দ্বি-স্তর নীতি প্রচলন করতে সুচারুরূপে কৌশল অবলম্বন করে চলছে।
মূলত আমাদের বন্ধু প্রতিম দেশ ভারতই রয়েছে প্রধান ভূমিকায়। অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড-ভারত আইসিসির পুরো নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে রাখতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
একটি খসড়া প্রস্তাব অনলাইনে ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর থেকেই ক্রিকেট বিশ্বে চলছে এ নিয়ে তোলপাড়। প্রতিটি ক্রিকেট প্রেমী ক্ষোভে ফেটে পড়ছে। ফাঁস হয়ে যাওয়া খসড়া প্রস্তাবে দেখা যায় তিনটি ক্রিকেট বোর্ড ছাড়া বাকি প্রতিটি ক্রিকেট বোর্ড একদিকে তাঁদের রাজস্ব আয় হারাবে, অন্যদিকে আইসিসিতে তারা শুধু সাজানো শোপিচের মত সৌন্দর্যবর্ধক হয়ে পড়বে। এমনকি বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা হারাবে তাদের অর্জিত টেস্ট মর্যাদা।
১০ টি দলের মধ্যে কি সুন্দর ভাগ! প্রথম ভাগে পুরো আট! বাকি ভাগে দুই! দ্বি-স্তর বিশিষ্ট টেস্ট ক্রিকেট চালু করা হলে ওপরের ৮টি দল থাকবে ধাপ-১ এ এবং বাংলাদেশ এবং সহযোগী দেশগুলোকে নিয়ে গঠন করা হবে ধাপ-২! তাহলে বলা যায়, বাংলাদেশের ক্রিকেট ধ্বংস করে দিতেই কী এই ষড়যন্ত্র?
ফেডারেশন অফ ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশনস (ফিকা) এরইমধ্যে তাদের এক প্রতিক্রিয়ায় বড় তিন বোর্ডের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়েছে। ফিকা প্রধান পল মার্শ এক বিবৃতি দিয়েছেন যার মূল মর্ম বাণী হচ্ছে বাকি সাতটি দেশ যেন এই প্রস্তাবে একযোগে না ভোট প্রদান করে।
দুঃখজনক জনক হলেও সত্য, ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা সত্ত্বেও নিউজিল্যান্ড আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছে। এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের মত ব্যক্ত করেছে।
অতি দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে বাংলাদেশ প্রথম সারিতে। তাই এই বিষয়ে মুখ খোলা উচিৎ। কোন অজানা কারণে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ নীরব? বিসিবি কী কোনো জুজুর ভয় করছে? নাকি টেস্ট মর্যাদার আসল স্বাদ হারিয়ে তিক্ত ক্রিকেট অভিজ্ঞতা অর্জনের পর কর্তা মহোদয়ের হুশ হবে?
এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া বাকি তিনটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও যদি ‘না’ ভোট দেয় তাহলে এই প্রস্তাব ভেস্তে যাবে। ক্রিকেট বিশ্বকে শৃঙ্খলে বন্দি করে ফেলার অশুভ চক্রান্ত নস্যাৎ করে দিতে বা নিজের অধিকার রক্ষার্থে কেনই বা এতো ঢিলেমি!
বিশ্ব ইতিহাসে অন্ধকার যুগের পর্যালোচনায় দেখা যায়, ইংল্যান্ড শত শত বছর অন্যান্য দেশের মানুষকে দাস করে রাখত সুকৌশলে। তাহলে কী বলতে পারি, এই আধুনিক বিশ্বে তাদের সঙ্গেই জোটবদ্ধ হয়ে শক্তিশালী বাকি দুটি দল অন্যান্য দলকে তাদের দাসে পরিণত করতে চাইছে না তো? অন্যদিকে ক্রিকেট থেকে উঠে আসা আয় তারা তিনজন মিলে লুটপাট করে খাবে আর বাকি সাতজন কি তাহলে আঙ্গুল চুষবে?
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের জরুরি সভায় বসার কথা রয়েছে। দেখা যাক, আমাদের হর্তা-কর্তাদের বোধোদয় হয় কিনা! প্রতিটি ক্রিকেটপ্রেমী বাঙালি তথা পুরোবিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীরা তাকিয়ে আছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সিদ্ধান্তের উপর।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সরাসরি না প্রস্তাব এলেই মোড়লদের হাতে কুক্ষিগত হতে যাওয়া পুরো বিশ্বের মানুষের নির্মল বিনোদনের স্থান ক্রিকেট জগতে প্রতিটি দেশের ভারসাম্য অবস্থান বজায় থাকবে।
এখন ক্রিকেটপ্রেমী প্রত্যেক বাংলাদেশির মনে একটাই প্রশ্ন ‘নিজস্ব ক্রিকেটীয় স্বার্থ রক্ষার্থে বাংলাদেশ কি এই প্রস্তাবে ‘না’ ভোট দিচ্ছে?
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৪