১৯৭৫ সালে ১৬ ডিসেম্বরের পূর্ব মূহুর্তে কয়েকজন চাটুকার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কাছে গিয়েছিল। বিজয় দিবস পালন করা হবে কিনা জানতে।
চাটুকাররা এমনই হয়। তারা আগবাড়িয়ে কিছু কাজ করে পুরো দেশকেও তার জন্য মাঝে মাঝে ভুগতে হয়। সবদলেই কিছু চাটুকার প্রকৃতির চরিত্র থাকে। তারা আত্মসম্মান পরসম্মান বোঝেনা। আপন পরও বোঝে না। আওয়ামীলীগও এর ব্যতিক্রম নয়।
৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের পর ভারত একটি বিরোধী শক্তি বাংলাদেশকে ভারতের কলোনিয়াল হিসেবে প্রচার করতে পছন্দ করে, এই আওয়ামীলীগের সময় সেটাতো আরো বেশী। বিগত নির্বাচনে ভারতের সমর্থনের পর স্বয়ং আওয়ামীলীগেরই ভেতরই আইসিসিতে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস কেড়ে নেওয়ার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোকে বেয়াদবি মনে করছিল কিছু বোধহীন চাটুকার, তা নিয়ে তাদের কলিজায় কাপন ধরেছিল।
আগেই যেমন বলেছি মোসাহেবরা আগবাড়িয়ে কিছু কাজ করে। ক্রিকেট বোর্ডের একসভায় এমনই ২০জন ব্যক্তি আগবাড়িয়ে সম্মতও হয়েছিল ভারতের বিরুদ্ধে সরাসরি দাঁড়াবেন না। শেষমেশ সিদ্ধান্তের জন্য শেখ হাসিনার দপ্তর পর্যন্ত গড়িয়েছে বলে ভারতীয় পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চওড়া বুক লাগে না, চওড়া কলিজা থাকা লাগে। আমার ধারনা এই ২০জন ব্যক্তি ভারতকে ক্রীড়া শক্তি বিবেচনা না করে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে দেখেছিল। তারা রাজনীতি আর ক্রিকেটীয় কূটনীতিকে আলাদা করার জ্ঞান রাখেন না। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, এসব পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যাক্তিরাই আমাদের ক্রিকেট চালান, যারা নিজেরাই নিজ পায়ে দাঁড়াতে পারেন না।
বিসিবি চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান পাপনের কলিজার জোরও নিয়ে আমার মতো অনেকের সন্দেহ ছিল। তাই সেইদিন সন্দেহগ্রস্ত লোকেরা শাহবাগে দাঁড়িযেছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের অনাচারের বিরুদ্ধে। (এটা ভারতের অনাচার না বলে, বিসিসিআই সভাপতি শ্রীনিবাসনের অনাচার বলাই শ্রেয়। ভারতের ভেতরেও অনেক ক্রিকেটবোদ্ধা এর সমালোচনা করেছেন। )
বাংলাদেশের মতো দলগুলোর উপর ভারতের মতো দেশ আধিপত্য বজায় রাখার চেষ্টা করে। তারা সবসময় ভাবে আমরা যা বলব বাংলাদেশ, জিম্বাবুয়ে তা বলবে। আমাদের চিন্তাই তাদের চিন্তা। কিন্তু না। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ তাদের অবস্থান পরিস্কার করায় পিছু হটতে হলো তিন জমিদারকে।
ভারতের একক গোয়ার্তুমীর হাত থেকে রক্ষা পেতে যাচ্ছে বিশ্ব ক্রিকেট। এটা ক্রিকেটের জন্যতো বটেই ভারতের জন্যও মঙ্গলজনক। ভারত যে নগ্নতায় নেমেছিল তার জবাব দিয়েছে বাংলাদেশ।
সাত ভোটের মধ্যে আগেই ছয়টি ম্যানেজ করে ফেলেছিল ইন্ডিয়া। বাংলাদেশের একটি ভোটই হ্যা/না’র জন্য বাকী ছিল। ভারত যে কোন মূল্যে প্রস্তাব পাশের ফর্মুলায় নেমেছিল। বাংলাদেশ তা রুখে দিল। টাকার লোভে তারা হিতাহিত জ্ঞানটুকু হারিয়ে ফেলেছে। স্কাইপেতে শ্রীনিবাসন বাংলাদেশকে হুমকি দিয়েছেন বলে কলকাতার আনন্দ বাজার পত্রিকা লিখেছে। তিনি বলেছেন- আপনারা (বাংলাদেশ) রাজি না হলে আমরা এ বছর বাংলাদেশে টি টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপ খেলব না। এশিয়া কাপ থেকেও নাম তুলে নেব। দেখি আপনারা কী করেন!!!
বিসিবি সভাপতি পরে কী করবেন জানি না। এখন যা করার করে ফেলেছেন। তিন জমিদারের ষড়যন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়ল। এটা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত আনন্দের। বাংলাদেশকে টেস্ট স্ট্যাটাস হারাতে হচ্ছে না। এটা ছাড়াও নৈতিক অবস্থানের জয়তো আছেই।
ক্রিকেট মাঠে ভারত দাদাগিরি দেখালেও নৈতিক ভাবে ভারত দুর্বল শক্তির বাংলাদেশের কাছে পরাজিত হয়েছে। বন্ধু ভারতের অন্যায্য, অন্যায় আবদারের পক্ষে আমরা ছিলাম না। সেই পরিতৃপ্তিতো আছেই। আমরা আমাদের বিবেকের কাছেও পরিষ্কার। এখন আমাদের দেশপ্রেমের আত্মতৃপ্তির ঢেকুর আছে।
জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি পিটার চিঙ্গোকা র মতো আমাদের বলতে হচ্ছে না- “আমরা নোংরা ব্ল্যাকমেলিংয়ের শিকার হতে যাচ্ছি। কিন্তু কিছু করার নেই। ভারত আমাদের টাকা দেবে বলেছে। ”
আমারা বলতে পারি, আমরা বাংলাদেশ, কিছু করেছি। ভারত আমাদের তৃতীয় সারির দল বলে গালি দিলেও আমরা কিছু মনে করি না। তারা কুড়ি বছর বাংলাদেশ সফরে না এলেও আমরা কিছু মনে করি না। কারন আমরা জানি আমরা প্রতিদিন মাঠে হারলেও আমরা ক্রিকেট নিয়ে জোচ্চুরি করি নি। আমরা ক্রিকেট দেবের কাছে সৎ। আমরা নিষ্পাপ মনেই ক্রিকেটকে ভালোবেসেছি।
আনন্দ বাজার পত্রিকায় প্রকাশিত শাহবাগের মানবন্ধনের সেই ছবির ব্যানারের কথাই আমাদের প্রাণের কথা। ক্রিকেট ইজ বিজনেস টু ইউ, বাট অক্সিজেন টু আস (ক্রিকেট তোমাদের কাছে পণ্য, কিন্তু আমাদের কাছে এটা অক্সিজেন)।
মনোয়ার রুবেল। ইমেইল- monowarrubel@yahoo.com
বাংলাদেশ সময় ১৯১৫ ঘন্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৪