ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

ভিক্ষা চাই না মাগো, ছাত্রলীগ সামলান

ড. জিনিয়া জাহিদ, কনট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৪
ভিক্ষা চাই না মাগো, ছাত্রলীগ সামলান ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বাংলাদেশের আম-জনতার দুর্ভাগ্য যে, আওয়ামী লীগ-বিএনপি যে দলই ক্ষমতায় থাক না কেন, ছাত্রদের নিয়ে গড়া সংগঠন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের ছত্রছায়ায় ছাত্র নামধারী দুর্বিনীত সন্ত্রাসীরা দেশকে জিম্মি করে রাখে। এদের নষ্ট হবার হাতেখড়ি হয় কলেজ পর্যায়েই।

 

 

নেতা গোছের সন্ত্রাসী বড় ভাইদের কাছ থেকে পাওয়া অস্ত্র চালানো রপ্ত করার বিদ্যে, খিস্তি- খেউর, চাঁদাবাজি সব কিছুর কোর্স কলেজ পর্যায়ে শেষ করে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শুরু হয় সন্ত্রাসী অভিজ্ঞতার প্র্যাক্টিক্যাল সেশন। সমৃদ্ধ (!) হতে থাকে অপরাধের প্রোফাইল।

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিপরিষদ সন্ত্রাসের বিপক্ষে যতই তর্জন গর্জন করুন না কেন, বাস্তবে আমরা মোটেও তার প্রতিফলন দেখতে পাই না। তাদের ছাত্রলীগ যে এখন সন্ত্রাসের সমর্থক সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ আছে কি?



অথচ ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা আদর্শে গড়া, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলিয়ান এই সংগঠনটি ভিন্নতর ইমেজ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন আলোকিত করতে পারত! পারত সুস্থ রাজনীতির সুন্দর অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে। কিন্তু বল্গাহীন ও লাগামহীন ক্ষমতার অপব্যবহারে এই দলটি এখন নষ্টদের পর্যায়ে চলে গেছে।

 

ছাত্রলীগের কার্যক্রম দেখলে হয় না যে, খোদ প্রধানমন্ত্রী এদের অভিভাবক!! এরা আদৌ কি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করে? যদি করতই তবে এদের সাম্প্রতিক কার্যক্রম এত হিংসাত্মক হবে কেন?

 

প্রকাশ্যে বিশ্বজিতকে হত্যা করার মত ন্যাক্কারজনক কাজ করেছিল এই ছাত্রলীগ। এজন্য সেসব কর্মীদের বিচারের রায়ও হয়েছে। তারপরও কি ছাত্রলীগ কর্মীদের বোধদয় হয়েছে? হয়নি যে তার প্রমাণ তো আমরা পাচ্ছি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের দাপুটে কর্মকাণ্ডেই।

 


ছাত্রলীগ কি তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাতারে পড়ে না? তারা কি অসাধারণ, অশরীরী কিছু? তা না হলে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া করে এতো শিক্ষার্থীকে আহত করে কিভাবে?  ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী পিস্তলের ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করেইবা কি করে? 

 

এতদিন তো জানতাম, শিবির হলো ককটেলবাজ। তবে কেন ছাত্রলীগও ককটেলবাজি করছে?  এতদিন তো জানতাম ছাত্রদল অস্ত্রবাজ, তাহলে কেন ছাত্রলীগের কর্মীদের হাতে পিস্তল?

 

বর্ধিত ফি প্রত্যাহার ও সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স কোর্স বন্ধ নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের যে দাবি-দাওয়া তা কি সুষ্ঠুভাবে সমাধান করা যেত না? কেন ছাত্রলীগকে অস্ত্র ও ককটেল হাতে এগিয়ে আসতে হবে? দুর্বিনীত ছাত্রলীগের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হবে এর দায় কি ছাত্রলীগের উপরই বর্তাবে না?


আওয়ামী লীগ যেখানে ক্ষমতায়, সেখানে তাদের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের জন্যই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর চেয়ে লজ্জার আর কি হতে পারে?  এমন পরিস্থিতি কি সরকারের চরম ব্যর্থতারও পরিচয় বহন করে না?  

 

শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্ষমতার অপব্যবহার ও পেশীশক্তির মহড়ায় প্রশাসনসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের তটস্থ করে রেখেছে ছাত্রলীগ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, কোনো দাবিদাওয়া মেটানো তো দূরে থাক, আপাতত ছাত্রলীগের হাত থেকে নিজেদের বাঁচানোর জন্য ভিক্ষা চাওয়া ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই।

 

তাই তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন, “ভিক্ষা চাই না গো মা- তোমার সোনার ছেলে ছাত্রলীগের হাত থেকে বাঁচাও। ”

 

ড. জিনিয়া জাহিদ: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ ও গবেষক



বাংলাদেশ সময়: ১০৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।