বেশ কয়েক বছর ধরেই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনের নামে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে যাচ্ছেন। সাধারণত তিনি সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর দেন না।
কোনো সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে অম্লান বদনে তিনি বলে যান, ‘আরেক দিন, আজ নয়। ’
এরপরও যদি নাছোড়বান্দা কেউ কোনো প্রশ্ন করেই যান, তিনি মৃদু হেসে বলেন, ‘কিছু শুনতে পাচ্ছি না। ’
জাতির সামনে যদি তিনি বক্তব্যই দেবেন, সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরই দেবেনই না, তবে তাকে সংবাদ সম্মেলন নাম দেয়ার হেতু কি?
পাঁচতারা হোটেলে সংবাদ সম্মেলন না ডেকে তিনি তো যে কোনো টিভি চ্যানেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্যামেরার সামনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করলেই পারেন। খামাখা সাংবাদিকদের তাহলে আর বসে থেকে সময় নষ্ট করতে হয় না।
সম্ভবত ২০০৬ সালের অক্টোবর মাসে কোনো এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের হাতেগোণা কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন। এরপর দীর্ঘ আট বছরে বলতে গেলে কোনো সংবাদ সম্মেলনেই তেমন কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি তিনি। এত এত মাইক্রোফোন সামনে নিয়ে, সামনে বসা সাংবাদিকদের যেন সাক্ষী রেখে তার লিখিত বক্তব্য দিয়ে যান।
সেই বক্তব্য দেবার আগেও তিনি ভালো করে একবার পড়েও দেখেন না। উপদেষ্টাকূল যা লিখে দেন, সেটাই তিনি কোনো রকম যাচাই না করেই হোঁচট খেতে খেতে পড়ে যান। জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া তার বক্তব্যগুলোতে তাই থাকে অসত্য তথ্যের সমাহার।
এই তো সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনটিতে তিনি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিবরণ দিতে গিয়ে নেতাকর্মীদের হত্যা, গুমের সব ভুয়া তথ্যে ভরপুর একটি বক্তব্য উপস্থাপন করলেন।
তার বক্তব্য যে ভুল তথ্যে ভরা তা ইতোমধ্যে মিডিয়াতে উঠে এসেছে। এমন তথ্য বিভ্রাট জাতির সামনে এভাবে ঘটা করে পরিবেশন করার হেতু কি?
যদিও তিনি প্রশ্নের উত্তর দিতে ভালবাসেন না, তবুও অনেক চাপাচাপির পর দু-চারটা প্রশ্নের উত্তর কখনো সখনো দেন। এর আগে নির্বাচন পরবর্তী একটি সংবাদ সম্মেলনের নামে বক্তব্য পরিবেশন অনুষ্ঠানে বিদেশি কূটনীতিকদের বাংলাদেশ নিয়ে অহেতুক মাথা ঘামানো প্রসঙ্গে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘আমরা সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাই। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। চাই না অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কেউ হস্তক্ষেপ করুক। ’
অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের নতুন সরকার গঠন হওয়ার পর যুক্তরাজ্য, চীন, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, ভারত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বিশ্ব মাতবরের প্রতিনিধি ড্যান মজিনাসহ সব রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা ঝাঁকে ঝাঁকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করছেন।
কবিতার ভাষায় বলতে হয়, কি কথা তাহাদের সাথে?
কি কথা তারা বলছেন, বিস্তারিত না জানলেও অনুমান করে নিতে কষ্ট হয় না যে, নির্বাচন নিয়েই কিছু শলা-পরামর্শ হয়তো চলছে।
প্রশ্ন হলো যেখানে খালেদা জিয়া নিজেই জাতির সামনে স্পষ্ট কন্ঠে বলছেন, তিনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ বা নাক গলানো মোটেই সমর্থন করেন না, সেখানে কি কথা ড্যান মজিনার সঙ্গে?
ড্যান মজিনারা কি পারবেন খালেদা জিয়াকে ক্ষমতায় বসাতে? কেন শুধু শুধু ঘরের ব্যাপারে পরকে এনে সালিশ মানা? দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে সুবিধাবাজ ও মতলববাজ মিস্টার মজিনা আর এইসব বিদেশি কূটনীতিকদের এত দৌড়াদৌড়ি ও ছুটাছুটিরইবা অর্থ কি? এত কিসের আগ্রহ? এসব কূটনীতিকইবা কেন খালেদা জিয়ার কাছে গিয়ে আমাদের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান চাইছেন?|
বিএনপিকে কিভাবে নতুন করে রাজনৈতিকাঙ্গনে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করবেন, সে সিদ্ধান্ত অবশ্যই বিএনপি নেবে। তবে আমাদের প্রত্যশা হলো- জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া খালেদা জিয়ার বক্তব্য হোক সঠিক ও গঠনমূলক। সংবাদ সম্মেলনের নামে মিথ্যের বেসাতি কোনভাবেই কাম্য নয়। জনগণের সামনে দায়সারাভাবে কোনো কিছু বলে দিয়েই যে পার পাওয়া যাবে না, এ সত্য খালেদা জিয়া যত তাড়াতাড়ি উপলদ্ধি করবেন তা তার দলের জন্য ও দেশের জন্য তত দ্রুতই মঙ্গলজনক হবে।
ড. জিনিয়া জাহিদ: অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক
বাংলাদেশ সময়: ১২১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৪