ভালবাসার মানুষটিকে খুশি রাখতে ফুল, চকলেট, কার্ড, পারফিউম ইত্যাদি ইত্যাদি কত কিছুই না উপহার দেয়ার কথা চিন্তা আসে মাথায়। অথচ ভালবাসার শুরুতেই মহামূল্যবান হৃদয়টাই উপহার হিসেবে পছন্দের মানুষকে দিয়েছেন, সে খবর আছে তো? হৃদয় দিয়েছেন বেশ করেছেন।
ভালবাসার যে কত্ত শক্তি আসুন জেনে নেই।
১. ভালবাসা সুরক্ষিত করে হার্ট
ভালবাসার শক্তিতে একজন ব্যক্তি হার্টের সিরিয়াস অনেক সমস্যা থেকে নিজেকে অনায়াসেই মুক্ত রাখতে পারেন। ইউনিভার্সিটি অফ পিটসবার্গের গবেষণায় দেখা যায় যে, ভালবাসায় টুইটুম্বর দম্পতিদের হার্টের অসুখের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় কম। এরা বাঁচেও অসুখী দম্পতিদের তুলনায় বেশি।
২. ভালবাসা করে তোলে স্মার্ট
যদিও কথায় বলে, প্রেমে পড়লেই মানুষ নাকি বোকা হয়ে যায়। কিন্তু আসলে ভালবাসা আপনার স্নায়ুকে শক্তিশালী করে তোলে, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। ২০০৯ সালে সুইডিশ একটি গবেষণায় এরকম ফলাফলই পাওয়া গেছে। ভালবাসার কারণেই আপনি হয়ে ওঠেন অধিকতর স্মার্ট।
৩. ভালবাসা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
ভালবাসায় মোড়ানো সম্পর্ক ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। ইউনিভার্সিটি অফ আইওয়ার গবেষণায় দেখা গেছে, ওভারিয়ান ক্যান্সারে আক্রান্ত নারী যারা সুখী সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ তাদের শরীরে ক্যান্সার সেল প্রতিরোধ করার ক্ষমতা অসুখী নারীদের তুলনায় অনেক বেশি।
৪. ভালবাসা রক্তচাপ কমিয়ে আনে
ভালবাসার মানুষটিকে দেখলেই আপনার মাথা ঝিমঝিম করে উঠতে পারে, পানির তৃষ্ণা পেতে পারে। এসবেই কিন্তু নিম্ন রক্তচাপের ফল। নর্থ ক্যারোলিনা ইউনিভার্সিটির গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত নিবিড় শারীরিক সম্পর্ক কিংবা একে অন্যকে জড়িয়ে গভীর চুম্বন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে উচ্চ রক্তচাপ।
৫. ভালবাসা বাড়িয়ে দেয় ত্বকের ঔজ্জ্বল্য
নতুন প্রেমে পড়া কাউকে কিংবা বিয়ের পর নব দম্পতিদের খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন, তাদের ত্বকে সৌন্দর্য্যের একটি আলাদা ছটা। কারণ আর কিছু নয়। সেই ভালোবাসা-ই। প্রেমে পড়ার কারণে তাদের ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় যা ত্বকে ব্রণ প্রতিরোধে সহায়তা করে। স্কটল্যান্ডের রয়াল এডিনবার্গ হসপিটালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ভালবাসায় সিক্ত নারীকে প্রকৃত বয়সের তুলনায় ১০ বছরের কম বয়সী মনে হয়!
৬. ভালবাসা কোলেস্টরেল কমিয়ে দেয়
অনেকেই আছেন যারা প্রেমে পড়েই মোটা হতে থাকেন। এটা অবশ্য বিয়ের পর বেশিরভাগ সুখী দম্পতির মাঝেই দেখা যায়। কিন্তু একথাও সত্য যে, ভালবাসা ক্ষতিকর কোলেস্টরেল কমিয়ে দেয়। হিউম্যান কমিউনিকেশন রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা পেপারে দেখা যায়, যেসব ব্যক্তি তাদের ভালবাসার মানুষটিকে নিজের অনুভূতির কথা লিখে জানিয়েছেন তাদের কোলেস্টরেল লেভেল যারা লেখেননি তাদের থেকে অনেক কম পাওয়া গেছে। কাজেই কোলেস্টরেল কমিয়ে আনতে নিজের ভালবাসার কথা ভালবাসার মানুষকে জানিয়ে দিন অকপটে।
৭. ভালবাসা অনিদ্রা দূর করে
যেদিন থেকে ভালবাসার মানুষটিকে নিজের বিছানায় পাবেন, দেখবেন এক নিমিষেই আপনার অনিদ্রা রোগ দূর হয়ে গেছে। ইউনিভার্সিটি অফ উটাহ ৩৪ জন দম্পতির উপর একটি গবেষণা পরিচালনা করে। এতে দেখা যায়, দম্পতিরা দীর্ঘদিন আলাদা থাকলেই বেশি স্ট্রেসড হয়ে পড়েন, যা তাদের ঘুম ব্যাহত করে। অথচ একঙ্গে থাকলেই তারা রিল্যাক্সড থাকেন যা সুনিদ্রার সহায়ক হয়ে ওঠে।
৮. ভালবাসা ব্যথা দূর করে
কখনো কি শুনেছেন, ভালবাসা একটি ঔষধ। আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষকরা দেখিয়েছেন, গভীর ভালবাসা ব্যথা থেকে মুক্ত করতে পারে। ভালবাসার মানুষটির ছবি ৪০ শতাংশ মাঝারিধরনের পেইন এবং ১০ থেকে ১৫ ভাগ সিভিয়ার পেইন কমাতে সাহায্য করে। ভালবাসার মানুষটির হাতে হাত রেখে অনায়াসে ভুলে যেতে পারেন শরীরের কঠিন কোনো পেইন।
৯. ভালবাসা মানসিক রোগের ঝুঁকি কমায়
শুধু শারীরিক উপকারিতাই নয়, ভালবাসা মানসিক রোগের ঝুঁকিও কমিয়ে দেয়। নিউজিল্যান্ডের ওতাগো ইউনিভার্সিটির গবেষণা লব্ধ ফলাফলে দেখা যায়, যারা পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় সুখী সম্পর্কে আবদ্ধ তাদের মাঝে ডিপ্রেশন এবং আত্মহত্যা করার ঝুঁকি খুবই কম। নিউইয়র্কের স্টেট ইউনিভার্সিটির আরেকটি গবেষণায় পাওয়া যায়, নিবিড় ভালবাসায় সিক্ত দম্পতিদের মাঝে দুশ্চিন্তাজনিত রোগের প্রবণতা খুবই কম।
১০. ভালবাসা দীর্ঘজীবী করে তোলে
অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিন্ডার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা যায়, যেসব ব্যক্তি বন্ধুদের ভালবাসায় পরিবেষ্টিত, তারা নিঃসঙ্গ ব্যক্তিদের তুলনায় বাঁচেন বেশি দিন। কারণ, বন্ধুদের কাছে পাওয়া ভালবাসা, জীবনের কঠিন সময়ে পাশে থাকা এবং ভালবাসার মানুষদের পজিটিভ লাইফ স্টাইল যেমন, ধুমপানমুক্ত জীবন, নিয়মিত ব্যায়াম এসব দেখেও একজন ব্যক্তি উদ্বুদ্ধ হয়ে থাকেন, যা তাকে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার রসদ যুগিয়ে থাকে।
পাদটিকা: একে অন্যকে গভীরভাবে ভালবাসুন। শারীরিক ও মানসিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠুন। কারণ ভালবাসার শক্তি অসীম!!!
ড. জিনিয়া জাহিদ: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ ও গবেষক
বাংলাদেশ সময়: ০১৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৪