১৬ ফেব্রুয়ারি রোববার সন্ধ্যা ছয়টা ১৫ মিনিটে অনলাইনে জন্মনিবন্ধনে বাংলাদেশ একটি বিশেষ মাইলফলক স্পর্শ করেছে। এ সময় বাংলাদেশে অনলাইনে সংরক্ষিত জন্মনিবন্ধনের সংখ্যা ১০ কোটি স্পর্শ করে।
এরপর এ পর্যন্ত প্রায় ১৬ কোটি ৯৩ লাখ মানুষ (প্রবাসীসহ) জন্মনিবন্ধনের আওতায় এসেছেন।
আশা করা যাচ্ছে, এ বছরের মধ্যেই সব নাগরিকের জন্মনিবন্ধন তথ্য অনলাইনে চলে আসবে। সারাদেশে সব ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন এবং ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের প্রায় পাঁচশয়ের ওপর নিবন্ধক অফিস এবং বাংলাদেশের প্রায় ২৪টি দূতাবাস থেকে অনলাইনে জন্মনিবন্ধনের কাজ সম্পন্ন হচ্ছে।
অন্যান্য সব উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশেও মেশিন রিডাবেল পাসপোর্ট এবং জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়াও প্রায় ১৬টিরও বেশি কাজে জন্মনিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বিভিন্ন দূতাবাস তাদের ভিসা এবং অন্যান্য কাজের জন্য জন্মসনদ বাধ্যতামূলক করেছে।
অনলাইনে জন্মনিবন্ধন না থাকলে, তা সাধারণত সত্যায়িত করা সম্ভব হয় না এবং পাসপোর্ট অফিস, জাতীয় পরিচয়পত্র অফিস এবং অন্যান্য দূতাবাস জন্মনিবন্ধন অনলাইনে না পেলে, তা তারা গ্রহণ করে না।
ঘরে বসে যে কেউই নিচের লিংকে ক্লিক করে http://bris.lgd.gov.bd/pub/?pg=verify_br তার জন্মসনদটি অনলাইনে আছে কিনা তা জানতে পারবেন। এ জন্য তাদের ১৭ অঙ্কের জন্মনিবন্ধন নম্বর এবং জন্ম তারিখ লিখে Verify –তে ক্লিক করতে হবে। এতে করে তার জন্ম সনদটি অনলাইনে এসেছে, কিনা তা জানতে পারবেন। কেউ যদি তা না পান, তাহলে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধক অফিসে যোগাযোগ করে তাদের আপনার জন্মসনদটি অনলাইনে দিতে অনুরোধ করুন।
এটি আপনার অধিকার। অনলাইনে ১০ কোটি জন্মনিবন্ধনের এ খবর United Nations Economic and Social Commission for Asia and the Pacific (ESCAP) গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছে।
বিস্তারিত নিম্নোক্ত লিংকে https://twitter.com/UNESCAP/status/435331584363745280 এবং তারা এ নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে খবর প্রকাশ করবে বলে জানিয়েছে। অনলাইনে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয় ২০১০ সালের অক্টোবর মাস থেকে।
এ বিষয়ে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন প্রকল্পের (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্প পরিচালক আ ক ম সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ১০ কোটি মানুষের জন্মনিবন্ধনের তথ্য অনলাইনে সংরক্ষণ করা একটি মাইলফলকের কাজ। আশা করা হচ্ছে, চলতি বছরেই সবার জন্মনিবন্ধনের তথ্য অনলাইনে সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।
জননিবন্ধনের সংখ্যা প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক বলেন, সর্বশেষ ২০১১ সালে আদমশুমারির পর দেশে জনসংখ্যা বেড়েছে। এ ছাড়া কিছু ক্ষেত্রে নিবন্ধনের পুনরাবৃত্তিও ঘটেছে। কিন্তু, অনলাইনে সব তথ্য সংরক্ষিত হলে পুনরাবৃত্তি এড়ানো সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, এ কৃতিত্ব সারাদেশের সব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, সচিব, উদ্যোক্তা, পৌরসভার মেয়রের। এছাড়াও যারা জন্মনিবন্ধনের কাজে জড়িত ছিলেন সবাই এর অংশীদার।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার শপথে তিনি সবাইকে এ কাজে অংশগ্রহণের জন্য এগিয়ে আসতে বলেন।
সাইফুল ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্থানীয় সরকার, পল্লীউন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং স্থানীয় সরকারের বর্তমান সচিব জনাব মনজুর হোসেন এবং প্রাক্তন সচিব আবু আলম সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা, কার্যকর উদ্যোগ এবং প্রকল্পের সব কর্মচারী এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের এ কাজে জড়িত কর্মচারীর সহায়তা এবং অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই আজকের এই মাইলফলক স্পর্শ করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি জানান, বর্তমানে ধারণা করা হচ্ছে, অনলাইনে এই জন্মনিবন্ধন শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারাবিশ্বের সেরা দশটি অনলাইন জন্মনিবন্ধন ডাটাবেজের মধ্যে বাংলাদেশের অনলাইন জন্মনিবন্ধন ডাটাবেজ অন্যতম।
স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে ২০০১ সালে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন প্রকল্প শুরু হয়। এতে কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) এবং বাংলাদেশ সরকার। এ কাজের ধারা আরো গতিশীল এবং দেশের নাগরিকদের একটি স্থায়ী ডাটাবেজ সংরক্ষণের জন্য সরকার আইনের সংশোধন করে একটি রেজিস্টার জেনারেল অফিস করার ঘোষণা দিয়েছে। এখান থেকে সারা বাংলাদেশ এবং দূতাবাসের জন্মনিবন্ধনের কাজ তদারকি করা হবে এ ছাড়াও জন্মনিবন্ধন সার্ভারটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি।
এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক আ ক ম সাইফুল ইসলাম চৌধুরী এবং উপপ্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এ সংক্রান্ত কাগজপত্র ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে এবং আশা করা যাচ্ছে, খুব শিগগিরই এর কার্যক্রম শুরু হবে।
বর্তমানে জন্মনিবন্ধনের সার্ভারটি বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ডাটাসেন্টারে অবস্থিত এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ কাজে সিস্টেম এনালিস্ট মো. সফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে দুজন সহকারী প্রোগ্রামার খালিদ বিন ইউসুফ এবং সামিয়া আক্তারের দায়িত্বে রয়েছে।
এছাড়াও যে কোনো ধরনের সার্ভার ইউজার বা অন্যান্য সমস্যার দায়িত্বও তারা পালন করছেন। যদিও এ কাজটি অত্যন্ত পরিশ্রমের এবং কষ্টসাধ্য। তারপরও এ পর্যন্ত অত্যন্ত সাফল্যতার সঙ্গেই তারা এ গুরু দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
এবাদেও সব নিবন্ধক অফিসের সার্ভার সংক্রান্ত বা অনলাইনে জন্মনিবন্ধন সম্পর্কিত যে কোনো সমস্যার সমাধান এই দলটিই ফোন অথবা ইমেলের মাধ্যমে দ্রুত এবং দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করে থাকে।
বর্তমানে অনলাইনে কতজনের জন্মনিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে, তা দেখতে এ লিংকে ক্লিক করতে হবে- http://www.paskan.com/br/bd/dial ।
যারা এখনো জন্মনিবন্ধন করেননি তারা নিদিষ্ট ফি’র বিনিময়ে অনলাইনে আবেদন করে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধক অফিসে যোগাযোগ করে জন্মনিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করতে পারেন।
এ ছাড়াও দুই বছর পর্যন্ত সব শিশুর জন্মসনদ করতে কোনো ফি’র প্রয়োজন হয় না এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য এ ফি মওকুফ করা হয়েছে। সুতরাং আর দেরি না করে যারা জন্মনিবন্ধন করেননি তারা এখনই নিবন্ধন করে নিন। তা না হলে ভবিষ্যতে বিভিন্ন কাজে সমস্যার সন্মুখীন হতে পারেন। জন্মনিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করা সব নাগরিকের একটি নাগরিক দায়িত্ব এবং অধিকারও।
লেখক- সহকারী প্রোগ্রামার
জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন প্রকল্প
স্থানীয় সরকার বিভাগ
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৪