ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট থেকে আশু উত্তরণ জরুরি

শাহ মো. আরিফুল আবেদ, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৪
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট থেকে আশু উত্তরণ জরুরি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

১.
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের অন্য যেকোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একেবারেই স্বতন্ত্র। সবচেয়ে অল্প জায়গাতে সবচেয়ে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছে।

শিক্ষার্থী বিবেচনায় দ্বিতীয় বৃহত্তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাসের আয়তন কাগজে কলমে ১১.১১ একর হলেও  বাস্তবিক পক্ষে ৭.১০ একর। বর্তমানে এর শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ২৩ হাজার। ৩১ টি অনুষদ ও ১টি ইনস্টিটিউট নিয়ে এর শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার নবম বছরে পা রাখলেও শিক্ষার্থীদের আবাসন, শ্রেণিকক্ষ, গ্রন্থাগারে পুস্তক, গবেষণাগার, পরিবহন এবং শিক্ষকদের একাডেমিক বসার স্থান সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। চার দলীয় জোট সরকারের সময় জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করা হলেও এর অবকাঠামোগত রূপরেখা প্রণয়নে  স্পষ্ট কোনো দিক নির্দেশনা চোখে পড়ে নি। এর প্রথম কয়েক বছর প্রেষণে নিযুক্ত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রিট-মামলা প্রভৃতি নানা বিষয়ের সুরাহা করতেই কেটে গেছে।

বর্তমান সরকারের বিগত পাঁচ বছরে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর ভর্তি ও নিয়োগের মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলেও অবকাঠামোগত কারণে এর পূর্ণতা প্রাপ্তিতে অনেকটাই ছেদ পড়েছে। তবে এই সরকারের বিগত আমলে একহাজার আসন বিশিষ্ট শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ছাত্রী হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ফলে  বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহল সরকারের সদিচ্ছার প্রতি আস্থা রেখেছে চলেছে। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান এই আস্থাকে আরো গভীর করার কথা বরাবরই বলে আসছেন। সবাই সে আস্থাতেই আশার ভেলা ভাসিয়েছেন।

২০০৫ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা দেয়া হলেও বিদেশি দাতাগোষ্ঠীর পরামর্শে  বিশ্ববিদ্যালয়টিকে নিজস্ব অর্থায়নে চলার জন্য একটি ধারা (২৭/৪) যুক্ত করে দেয়া হয়েছিল। ধারাটি পরে ছাত্রদের তীব্র আন্দোলনের মুখে বাতিল করা হয়। ২৭ এর ৪ ধারা বলবৎ থাকলে একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম পর্যায়ের খরচেই এখানে পড়তে হতো। ২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫  পাশের মাধ্যমে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার শুরুতেই তাই উপর্যুক্ত ধারাটি যুক্ত করে তৎকালীন সরকার কলেজটিকে  বিশ্ববিদ্যালয় মর্যাদাদানেই শুধু নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখে। এর অন্য কোনো দায়ভার গ্রহণের চিন্তা থেকে বিযুক্ত থাকার একধরনের প্রয়াস ২৭ এর ৪ ধারার মাধ্যমে লক্ষণীয় নয় কি?

বিবেচনার বিষয় হল, আইন পাশের মাধ্যমেই একটি  বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষার সূতিকাগার হয়ে ওঠতে পারে না।   বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেড়ে ওঠার জন্য আইন পাশের পরও আরো নানাবিধ অনুষঙ্গের প্রয়োজন হয়। দরকার হয় শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ তথা একাডেমিক ভবন, গবেষণাগার, ছাত্রাবাস এবং শিক্ষকদের  প্রতিষ্ঠানের কাছে আবাসন। সর্বোপরি শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা সর্বাগ্রে নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি পদক্ষেপ।

বাংলাদেশে রাজধানীর মেসে থাকার অভিজ্ঞতা সবারই কম বেশি রয়েছে। গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির চেয়ে ঢাকায় কাজের মানুষের সমস্যা প্রবল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীকে মেসজীবন যাপন করায় প্রতিনিয়ত এই চতুর্মুখি সমস্যায় নাকানি-চুবানি খেতে হচ্ছে। অন্যদিকে পুরান ঢাকার পরিবেশ ও আর্থিক দিক বিবেচনায় যারা ক্যাম্পাস থেকে দূরে অবস্থান করে তাদের প্রতিদিন বাদুরঝোলা হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হয়।

এতদিক সামাল দিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য যে সংগ্রাম করতে হচ্ছে, তা ইতিহাসের পাতায় লিখিত হবার মতো ব্যাপার! তাদের এ অবস্থায় পড়ে হাবুডুবু খাওয়ার কথা ছিল না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি হল জালিয়াত চক্র বিভিন্ন উপায়ে দখল করে নেওয়ায় তাদের আজ এই সীমাহীন কষ্ট-দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

২.
২০০৫ সালে জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার পর প্রথম উপাচার্য অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম খান সাবেক কলেজের স্থাবর অস্থাবর সম্পদের পরিসংখ্যানপত্র (ইনভেন্টরি) তৈরির জন্য ২০০৭ সালের ৫ নভেম্বর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মসি মুহিত হক অ্যান্ড কনসোর্টিয়ামের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি এক বছর পর ২৯ জুন ২০০৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেশ করে। তাতেই হদিস মেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেহাত হয়ে যাওয়া হল ও ধূপখোলা খেলার মাঠের।

মূলত আশির দশক থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো বেহাত হওয়া শুরু হয়। এর পেছনে কারণও ছিল বেশকিছু। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্ররা ছিল সবচেয়ে বেশি উচ্চকণ্ঠ। এরশাদের পতনের জন্য ছাত্রদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। ঢাকার অনেক আন্দোলনই বেগবান হতো না এই কলেজের ছাত্রদের ছাড়া। আর এই ছাত্রদের প্রধান আবাস ছিল জগন্নাথ কলেজের হলগুলোতে।   সামরিক সরকার আশির মাঝামাঝি সময়ে ছাত্র রাজনীতি কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। বিশেষ করে জগন্নাথ কলেজে ও ছাত্রদের প্রতি সরকার কড়া নজরের কথা তৎকালীন ছাত্রদের মুখ থেকে এখনো শোনা যায়। স্বৈরাচারী সরকার স্থানীয় প্রভাবশালীদের সাথে আঁতাতের মাধ্যমে  জগন্নাথ কলেজের হলগুলোতে বসবাসরত শিক্ষার্থীদের  উচ্ছেদের পাঁয়তারা করে। এ সময় শাসকদের রাস্তা সহজ করে দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ছাদ ধসে ছাত্রমৃত্যুর  ট্র্যাজেডি।

এদিকে জগন্নাথ কলেজের হলগুলো বহু পুরনো হওয়ায় আগে থেকেই বসবাসের জন্য কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তৎকালীন কলেজ প্রশাসন হলগুলো সংস্কারের উদ্যোগ না নিয়ে বরং ছাত্রদের হল থেকে বের কর দেয়।   এ সময় সামরিক শাসক এরশাদের আস্থাভাজন স্থানীয় ক্যাডার বাহিনী ছাত্রদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ঐ সময় থেকে  তৎকালীন সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু, হলের জরাজীর্ণতা, কলেজ কর্তৃপক্ষের দুর্বলতা-আপসকামিতা এবং স্থানীয় জালিয়াত চক্রের দৌরাত্ম্যের কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হারায় হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি ও ১২ টি ছাত্রাবাস।

৩.
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পাঠশালা থেকে স্কুল কলেজ পর্যায়ে উন্নীত হওয়া প্রভূত জায়গা-সম্পদের মালিক ছিল। দিনে দিনে জালিয়াত চক্র নানা কৌশলে এগুলো হাতিয়ে নেয়। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত ধূপখোলা খেলার মাঠ এবং বাণী ভবন হলের একাংশ মাত্র দখল ফিরে পাওয়া গেছে। জাল দলিলের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ১২টি হলের জায়গা ইতোমধ্যে কয়েক বার হাত-বদল হয়ে গড়ে উঠেছে বাণিজ্যিক ভবন, দোকান-পাট, গোডাউন, ফ্ল্যাট-বাড়ি, সমিতির কার্যালয়, মাদ্রাসা, রিকশা-গ্যারেজ ইত্যাদি। গণপূর্ত বিভাগ ও ভূমি অফিসের গাফিলতি এক্ষেত্রে অনেকাংশে দায়ী। কারণ, জগন্নাথের বেহাত হওয়া অধিকাংশ সম্পত্তি যা দানসূত্রে অথবা অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে পাওয়া-তা এদের যোগসূত্রেই অন্যদের লিজ অথবা জালিয়াতের সুযোগ করে দিয়েছে।
           
বর্তমানে সংগঠিত  ‘তিব্বত হল’ পুনরুদ্ধারে ছাত্র আন্দোলন অধিক বেগবান হওয়ার কারণ এই যে, এই হলটিতে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা অবস্থান করেছিল। তিব্বত হলটি ৮.৮৯ কাঠা জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত এবং অবস্থান ৮ ও ৯ জিল পার্থ লেন (কুমারটুলীতে) আহসান মঞ্জিলের বিপরীতে।   ১৯৮৫ সালে ছাত্ররা হলটি পরিত্যাগের পর ১৯৯১ পর্যন্ত এটি আনসার সদস্যদের দখলে ছিল। আনসারদের পর তিব্বত হলটি পুলিশের দখলে যায়। সেখান থেকে ব্যক্তিমালিকানায় এসে এটি গুলশান আরা সিটি মার্কেটে পরিণত  হয়। ২০০৮ সাল থেকেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হল উদ্ধারের জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করে। এ বছর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের ছয় সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে তিব্বত হলসহ পাঁচটি হল বুঝিয়ে দিতে বললেও আজও এর কোনো অগ্রগতি দেখা যায় নি।

৪.
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন প্রায় পাঁচশত। ৩১ টি অনুষদ এবং ১ টি ইনিস্টিটিউটের একাডেমিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনের নিমিত্তে তা যথেষ্টই বলা চলে। ঢাকার নানা প্রান্তে এই শিক্ষকগণ বসবাস করছেন। শিক্ষার্থী-শিক্ষকের পারস্পরিক জ্ঞানের বিনিময় ও মিথস্ক্রিয়ায় যেখানে ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ অভিধাটির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য রোপিত সেখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটছে ভিন্নরূপ।
 
এমনিতে পুরান ঢাকা বাংলাদেশের ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে বহু আগে থেকে।   দক্ষিণ অঞ্চলে ব্যবসায়িক দ্রব্যাদি প্রেরণ ও ঐ অঞ্চলের মানুষের রাজধানীতে আগমনের প্রবেশদ্বার হিসেবে সদরঘাট সব সময়ই জনাকীর্ণ থাকাই স্বাভাবিক।
 
পুরান ঢাকায় কোর্ট-কাছারি-কেন্দ্রীয় কারাগার অবস্থিত হওয়ায় প্রতিদিনই  এই এলাকাটুকুতে দেশের দাগি আসামীসহ নানা ফৌজদারী মামলার আসামিদের আগমন ঘটে। আর আদালত পাড়ায় আইনজীবী ছাড়াও আসামিদের আত্মীয়-পরিজনকে মামলার হাজিরাহেতু অনেক সময়ই উপস্থিত  থাকতে হয়। এসব কারণে পুরান ঢাকার সম্প্রসারণ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছিল। ঢাকা উত্তরে সম্প্রসারিত হচ্ছেও দিন দিন। এহেন পরিস্থিতিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩  হাজার শিক্ষার্থী, প্রায় পাঁচশত শিক্ষক এবং এক হাজারের অধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী মাত্র সাত একর ক্যাম্পাসে প্রতিনিয়ত একত্র হচ্ছে। একে ঘনবসতির চূড়ান্ত উদাহরণ হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। একটু দম ফেলার ফুরসত বুঝি এখানে ফাঁকা নেই।
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসন ব্যবস্থা না থাকায়  বৃহৎ সংখ্যক শিক্ষকদের সবাইকেই থাকতে হচ্ছে রাজধানীর ব্যয়বহুল ভাড়াবাড়িতে। আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও পুরান ঢাকার ক্লান্তিকর যানজট ঠেলে শিক্ষকদের পাঠদান ও একাডেমিক গবেষণায় নিয়োজিত থাকা কতটা কষ্টসাধ্য-তা সহজেই অনুমেয়।
  
৫.
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান হল পুনরুদ্ধার আন্দোলনে পুলিশের অতিরিক্ত কঠোরতা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের লক্ষ্য করে ছর্‌রা গুলি বর্ষণ এবং ছাত্রদের নির্বিচারে লাঠিপেটা করা হয়। একজন শিক্ষককে  গায়ে ৪৬ টি ছররা গুলি আজীবন বহন করতে হবে এবং একজন শিক্ষার্থীকে চোখ হারাতে হচ্ছে-এটি কতটা যৌক্তিক ছিল তা বোধগম্য নয়। সরকারের উচিত এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে পুলিশ প্রশাসনকে আরো নমনীয় পর্যায়ে রাখা এবং জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া।   উচ্চ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষার্থীদের হলের দাবী পূরণে সরকারকে সহযোগিতাসুলভ মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। দল বিবেচনা নয়, যে বা যারাই জালিয়াত চক্রের সাথে জড়িত হোক তার/তাদের  ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জায়গা-সম্পত্তি জবর-দখল শুধু বেআইনিই নয়, অনৈতিকও বটে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রকৃত উচ্চ শিক্ষার ভিত্তিভূমিতে নিয়ে যেতে হলে শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের আবাসন সমস্যা সমাধানের বিকল্প নেই। এজন্য হলগুলো পুনরুদ্ধারের পাশাপশি বিকল্প কয়েকটি প্রস্তাব সরকার ভেবে দেখতে পারে।

যেমন:
ক) ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার আগামী জুন মাসে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। এই জায়গাটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া যেতে পারে। কিছু অংশ কারাগারের জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষিত রেখে বাকিটুকু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে দেওয়া হলে শিক্ষাথীদের আবাসন সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব হবে বলে প্রতীতি হয়।

খ) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ক্যাম্পাসে প্রবেশমুখে ‘গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল-‘-এর মতো দৃষ্টিকটুভাবে অবস্থান করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সদরঘাট শাখার ভবনটি। সরকারের উচিত অবিলম্বে ব্যাংক ভবনটি অনত্র সরিয়ে নেয়া। তাহলে গত বছর চালু হওয়া নতুন তিনটি বিভাগ ক্লাশ-পরীক্ষা নেয়ার কিছুটা হলেও জায়গা পাবে।

গ) বর্তমান আদালত-কাছারি-আইনজীবী চেম্বার-জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রভৃতি অবাধ যাতায়াতের সুযোগ সুবিধা আছে রাজধানীর এমন জায়গায় স্থানান্তর করতে পারলে জনগণের প্রভূত উপকার হয়। যদি তা সম্ভব হয় তবে এই জায়গাগুলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করে দেওয়া যায়।

আর তা করতে পারলেই কেবল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন, শ্রেণিকক্ষ, গবেষণাগার  সংকটসহ যাবতীয় সমস্যা সমাধানপূর্বক উচ্চ শিক্ষার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হওয়া সম্ভব। দেশের আপামর জনসাধারণের ট্যাক্সের অর্থে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব হল বেদখলে থাকায় বাসা-বাড়ির মেসে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে; এটি একাধারে অভিভাবকদের উপর অর্থনৈতিক চাপ। তাছাড়া এর ফলে শিক্ষার্থীরা সুন্দর-সুষ্ঠু পরিবেশে পড়াশোনার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারের উচিত অবিলম্বে শিক্ষার্থী সংখ্যায় দ্বিতীয় বৃহত্তম এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি সুনজর দেওয়া। আমরা আর কোনো শিক্ষকের গায়ে গুলি এবং আর কোন শিক্ষার্থীকে পুলিশের নির্মম লাঠির ঘায়ে চোখ হারাতে দেখতে চাই না। হল চাই, হল।

শাহ মো. আরিফুল আবেদ: শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, arifulabed@yahoo.com

রাংলাদেশ সময়: ১০২৪ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।