বাংলাদেশের আফগান-বধে; বোধন ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টি যজ্ঞের। শুনতে কেমন যেন একটু ম্যাড়মেড়ে লাগছে! কিন্তু তার চেয়েও ম্যাড়মেড়ে হলো ম্যাচটা।
অথচ হঠাৎ করেই এই ম্যাচটার গায়ে লেগে যায় অন্যরকম ম্যাচের একাধিক স্টিকার! প্রতিশোধের ম্যাচ! মর্যাদার ম্যাচ! যোগ্যতা প্রমাণের ম্যাচ! কতো নামে ডাকা হচ্ছিলো ম্যাচটাকে! ‘প্রতিশোধ’- শব্দটা ঠিক ক্রিকেটের স্পিরিটের সঙ্গে যায় না। মুখে না বললেও ভেতরে ভেতরে কি এক ধরনের প্রতিশোধস্পৃহা কাজ করেনি বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে? অবশ্যই করেছে। এশিয়া কাপে হারের বদলা নেবার মঞ্চ হিসেবে এ-ম্যাচের চেয়ে ভাল আর কি হতে পারে, সেটা জানতেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। তাই টস জয় থেকে ম্যাচ জয় পর্যন্ত বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষাও ছিল অন্যরকম। যে জন্য কোনো এক কাবুলিওয়ালা ‘দৌলত’-র পেশীশক্তির জবাব পেশী দিয়েই দিতে চেয়েছিলেন সাকিব আল-হাসান। যে কারণে ম্যাচ ফি’র পঞ্চাশ শতাংশ জরিমানাও গুনতে হলো বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় তারকাকে! জরিমানা সাকিব গুনলেন বটে। কিন্তু একটা বার্তা যেন তিনি দিয়ে দিলেন; আফগানদের দুরমুশ করতে সামান্যতম ছাড় দেয়ার প্রশ্ন ওঠে না। এবং সত্যি বলতে কি, এই একটা ম্যাচে বাংলাদেশ পেশাদারিত্বের চূড়ান্ত নমুনা রাখলো।
পেশাদারিত্ব না দেখিয়ে উপায় কি। আইসিসি’র বিশ্রী নিয়মে বাংলাদেশকে অনেক অপমান সইতে হচ্ছে। নিজের মাঠে খেলতে হচ্ছে ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের কোয়ালিফাইং রাউন্ড। টেস্ট প্লেয়িং দেশ হওয়ার পরও বাছাই পর্বের বাধা পেরিয়ে মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে! এই অপমানের জবাব দেয়ার জন্য এরকম একটা জয় অনেক বেশি জরুরি ছিল বাংলাদেশের জন্য। এরকম একটা জয় বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা উৎসর্গ করতে পারেন, আইসিসির সেই কর্মকর্তাদের যারা টোয়েন্টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও বাংলাদেশকে ক্রিকেটবিশ্বের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানিয়ে রেখেছেন।
‘মর্যাদার ম্যাচ’ হিসেবে বাড়তি একটা মর্যাদা-ই দেয়া হচ্ছিলো এই ম্যাচটাকে। বাংলাদেশের জন্য ম্যাচটা শুধু মর্যাদার ম্যাচ ছিল না। বাংলাদেশের জন্য বাঁচন-মরণের লড়াইও ছিল। এ-ম্যাচে হারলে বাংলাদেশের মূল পর্বে খেলার সম্ভাবনা অনেক দূরে সরে যেতো। কিংবা বিলীন-ই হয়ে যেতো। তেমন কিছু হলে বিষাদের ছায়া পড়তো দেশজুড়ে। আর ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টির গায়ে বিষাদের সেই আস্তরণ আরো পুরু হতো। যা চান নি বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। তাই ম্যাচের শুরু থেকেই আফগান বধে মেতে উঠলো বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম বলে মাশরাফি তুলে নিলেন উইকেট। জেগে উঠলো গ্যালারি। তেতে উঠলো গোটা দল। সেই গ্যালারির চিৎকার-চেঁচামেচি ম্যাচ শেষেও থামে নি। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ফ্লাাডলাইট নিভে গেছে। গ্যালারি ফাঁকা হয়ে গেছে। কিন্তু স্টেডিয়ামের চারপাশজুড়ে বিজয়োল্লাস চলেছে অনেক রাত পর্যন্ত! মাশরাফির গোলা আর সাকিবের ঘূর্ণিতে আফগান ক্রিকেটের শব রাখার জন্য কবর খোঁড়া হয়ে যায়। ৭২ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর আফগানরা ম্যাচ জেতার আশা করতে পারতেন শুধু এই ভেবে যে, যদি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা আত্মহত্যার জন্য লাইন দিয়ে দাঁড়ায়!
কিন্তু না। বাংলাদেশের বোলাররা যেভাবে পুড়িয়ে ভস্ম বানালেন আফগানিস্তানের ইনিংসটাকে, তাতে খানিকটা শান্তির জল ঢেলে দিলেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। আর কিছুটা সহানুভুতি আফগানরা পেলেন আম্পায়ারের কাছ থেকে। না হলে হয়তো ম্যাচটা তাদের হারতে হতো দশ উইকেটে। সেটা আরো বিশ্রী বিজ্ঞাপণ হতো টি-টোয়েন্টির জন্য। বাঁচিয়ে দিলেন আম্পায়ার। তামিমকে যে বলে এলবিডাব্লিউ দিলেন, তাতে খানিকটা সংশয় থাকলো। লেগ সাইডে বল ধরে লাফালাফি করলেন আফগান উইকেট রক্ষক। আর শেষ পর্যন্ত আঙ্গুল তুললেন আম্পায়ার! এর তীব্র প্রতিক্রিয়াও টের পাওয়া গেলো না গ্যালারিতে। কারণ তারাও ততোক্ষণে জেনে গেছেন: এ ম্যাচ বাংলাদেশ জিতে গেছে।
শুধু জানতেন না আফগানরা, বাংলাদেশের পেস-স্পিন ক্ষেপণাস্ত্রে এভাবে বিধ্বস্ত হতে হবে তাদের।
বাংলাদেশ সময় ১৭২৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৪