লন্ডন: সম্প্রতি বাংলাদেশ নিয়ে ব্রিটিশ এমপিদের ব্যাপক আগ্রহ দেশ-বিদেশে বসবাসরত বাঙালিদের (বাংলাদেশিদের) মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল ও প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। ১৬ জানুয়ারি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক এবং এই বিতর্কে অংশ নেয়া এমপিদের কোনো কোনো মন্তব্য নানাভাবে মূল্যায়িত হচ্ছে।
আবার কেউ কেউ বলছেন, দেশটি সম্পর্কে অনেক এমপি’র মন্তব্যে ব্যাপক তথ্য-ঘাটতিও রয়েছে। দেশে বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের কৌতূহলের কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ বিষয়ে ব্রিটিশ রাজনীতিকদের সাম্প্রতিক এই আগ্রহের কারণ জানার চেষ্টা করেছে বাংলানিউজ। এ বিষয়ে বেশ ক’জন এমপি’র কাছে গোটাকয় প্রশ্ন রাখা হয়। বাংলানিউজের এই উদ্যোগে সাড়াও দেন তাঁরা।
মূলত বাংলাদেশ নিয়ে ব্রিটিশ এমপিদের আগ্রহের মূল কারণগুলো জানতে চাওয়া হয়। বাংলানিউজের সঙ্গে ব্রিটিশ এমপিদের বাংলাদেশ বিষয়ক এই ভাবনা নিয়েই আমাদের প্রতিবেদন ‘বাংলাদেশ নিয়ে ব্রিটিশ এমপিদের কেন এতো আগ্রহ?’। প্রতিবেদনের চতুর্থ পর্বে আজ সাবেক মন্ত্রী ও লেবার দলীয় এমপি জিম ফিটজপ্যাট্রিকের বাংলাদেশ বিষয়ক ভাবনা
পাঠকদের জন্যে তুলে ধরা হলো:
জিম ফিটজপ্যাট্রিক বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস এর পপলার ও লাইম হাউস এলাকার লেবার দলীয় এমপি। বাংলাদেশের বিভিন্ন দুর্যোগ-দু:সময়ে স্থানীয় বাঙালি কমিউনিটির একজন সৃহৃদ হিসেবে জিমকে সব সময়ই পাশে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের
চেতনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল এই এমপি বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার একজন সমর্থক। এ-কারণে মৌলবাদী গোষ্ঠির অপপ্রচারেরও শিকার হয়েছেন অতীতে। স্পষ্টভাষী জিম ফিটজপ্যাট্রিক তাঁর নিজ দল ‘লেবার পার্টিতে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর ইউরোপীয় সংস্করণের অনুপ্রবেশ ঘটেছে’ বলে অভিযোগ তুলে এক সময় তোলপাড় শুরু করেছিলেন ব্রিটিশ মূলধারার সংবাদ মাধ্যমে। ঐ অভিযোগ তোলার পর বিগত পার্লামেন্ট নির্বাচনে জিমের বিরুদ্ধে আঁটঘাট বেধে নির্বাচনী মঠেঁ নামে জামায়াত সমর্থকরা। কিন্তু জনরায়ের কাছে জামায়াত সমর্থকদের কোনো বাধাই টেকে নি। বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন জিম ফিটজ
প্যাট্রিক।
গত ১৬ই জানুয়ারির পার্লামেন্ট ডিবেইটে সাবেক এই মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের আগামী আরেকটি নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ খুবই কঠিন। হয়তো কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস। তবে আমি মনে করি, তাঁর চেয়েও বেশি সময় হয়তো অপেক্ষা করতে হবে, যদিও এই মুহুর্তে আরেকটি নির্বাচন বাংলাদেশের স্বার্থের জন্যে ইতিবাচক নয়’।
তাঁর আরও মন্তব্য ছিল, ‘কি কারণে বর্তমান সরকারকে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটি করতে হয়েছে তা অনুধাবন করতে পারলেও, বৃহত্তর বৈধতার স্বার্থে একটি অংশগ্রহণমূলক স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকেই আমি সমর্থন জানাই’।
বাংলাদেশের প্রতি ব্রিটিশ রাজনীতিকদের সাম্প্রতিক আগ্রহের কারণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে জিম ফিটজপ্যাট্রিক বাংলানিউজকে বলেন, কোনো কোনো এমপি বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহী হলে, তাঁর সেই আগ্রহ আরও বেড়ে যায় যদি স্থানীয় ভোটারদের আগ্রহও এতে যোগ হয়। ভোটাররা যখন সংশ্লিষ্ট দেশ সম্পর্কে তাদের মনোভাব জানিয়ে এমপিকে বিষয়টির দিকে মনযোগ দিতে অনুরোধ করেন, তখন স্বাভাবিক কারণেই দেশটি সম্পর্কে এমপি’দের আগ্রহ বেড়ে যায়। এমপিদের এই আগ্রহ সৃষ্টিতে লবিস্টের ভূমিকার কথাও স্বীকার করেন সাবেক এই লেবার দলীয় মন্ত্রী।
১৬ জানুয়ারির বাংলাদেশ বিষয়ক বিতর্ক সম্পর্কে কমিউনিটির মিশ্র প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে বিস্তারিত কিছু না বলে জিম ফিটজপ্যাট্রিক ঐ বিতর্ককে একটি ‘ওয়েল ইনফর্মড ও ব্যালেন্সড’ বিতর্ক বলে বাংলানিউজের কাছে মন্তব্য করেন।
‘বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লবি করা দু’দেশের গণতন্ত্রের জন্যে কতটুকু ইতিবাচক?’ এ-প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে লেবার দলীয় ঐ এমপি বলেন, গণতন্ত্রে ব্যক্তিগত বা সাংগঠনিকভাবে নিজ নিজ চিন্তা প্রকাশ ও তার পক্ষে প্রচার চালানোর অধিকার সবার রয়েছে। এটি দোষের কিছু নয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৪১৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৪