ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

আমাদের জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে

মুহম্মদ জাফর ইকবাল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৪
আমাদের জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে

স্বাধীনতা দিবস আসছে তাই মনটা ভালো ছিল, হঠাৎ করে দেখি মনটা ভালো নেই। স্বাধীনতা দিবসে লক্ষ মানুষ নিয়ে আমাদের প্রিয় জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ গাইব, এখন শুনছি সেই গান গাওয়ার জন্যে টাকা দিচ্ছে জামাতে ইসলামীর নিজেদের ইসলামী ব্যাংক।



যে গানটির একটি কথা মুখে উচ্চারণ করার জন্য এই দেশের মানুষকে যারা চোখ বন্ধ করে জবাই করেছে তাদের দল এখন এই গানটি গাওয়ার জন্য টাকা দিবে আর সেই টাকা নিয়ে আমাদের গানটি গাইতে হবে, আমাদের কী এতোই অবস্থা খারাপ হয়েছে?

উদীচীকে দুই হাতে স্যালুট তারা বলে দিয়েছে ইসলামী ব্যাংকের টাকা দিয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলে তারা সেখানে জাতীয় সঙ্গীত গাইবে না। আমাদের ভালোবাসার এই গানটির সম্মান রক্ষা করার জন্যে তাদের এই ভূমিকার কথা দেশের মানুষ অনেক শ্রদ্ধার সাথে মনে রাখবে। আমি এখন পর্যন্ত যত তরুণ তরুণী কিশোর কিশোরীর সাথে কথা বলেছি তারা সবাই বলেছে অনেক আগ্রহ আর উৎসাহ নিয়ে তারা এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটির জন্যে অপেক্ষা করছিল এখন তারা আর নিজের ভেতর উৎসাহ খুঁজে পাচ্ছে না। আমাদের তরুণ প্রজন্ম কোনটি সঠিক কোনটি ভুল অনুভব করতে পারে দেখে আমি খুব আশান্বিত হয়েছি।

স্বাধীনতা দিবস আসছে এখন আমি মন খারাপ করা কথা বলতে চাই না। আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের মত এতো সুন্দর একটি সঙ্গীত আর কোন দেশের আছে কী না আমার জানা নেই।

আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম তাদের কাছে এই গানটির একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন আবেদন আছে, তার একটি একটি চরণ যখন আমরা শুনি আমাদের চোখ ভিজে আসে। এটি যদি শুধু একটি গান হতো তাহলে সবাই নিজের মত করে গাইতে পারত, কিন্তু এখন এটি আমাদের জাতীয় সঙ্গীত তাই এটি এখন আর নিজের মত করে গাইতে পারব না। এটি শুদ্ধ ভাবে গাইতে হবে। আমি লক্ষ্য করেছি অনেক বড় অনুষ্ঠানেও এটি পুরোপুরি শুদ্ধভাবে গাওয়া হয় না, এক দুটি লাইন বাড়তি যোগ করে দেয়া হয়। গানটি কীভাবে গাইতে হবে শেখানোর জন্যে স্কুলের ছেলে মেয়েদের পাঠ্য বইয়ে সেটি লিখে দেয়া হয়েছে, আশা করছি এই প্রজন্ম যখন বড় হবে তখন তারা আমাদের জাতীয় সঙ্গীতটিকে ভালোবাসার সাথে সাথে পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে সঠিক ভাবে গাইবে।

এই লেখার সাথে আমি জাতীয় সঙ্গীতটি যেভাবে গাইতে হবে সেটি যুক্ত করে দিচ্ছি, খবরের কাগজ হলে কেটে সবাই যেন তার পকেটে রেখে দেয়। কপি করে অন্যকে দেয়। (আমার পকেটে সব সময় এর কপি থাকে!) ইন্টারনেট হলে এক কপি প্রিন্ট করে নিয়ে নেয়, নিজে রাখে, অন্যকে দেয়।

গাওয়ার জন্য জাতীয় সংগীতের পূর্ণপাঠ

আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
চিরদিন তোমার আকাশ,
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস,
আমার প্রাণে
ও মা, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি,
সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি ।    

ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,
মরি হায়, হায় রে-
ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,
ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে কী দেখেছি
আমি কী দেখেছি মধুর হাসি।
সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি ।

কী শোভা, কী ছায়া গো, কী সেèহ, কী মায়া গো-
কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর  কূলে কূলে।
মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,
মরি হায়, হায় রে-

মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,
মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, আমি নয়ন
ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি।

সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি ।

শেষ করার আগে সরকারের কাছে অনুরোধ ইসলামী ব্যাংকের দেয়া টাকাটা যেন তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়-আমরা আমাদের প্রিয় জাতীয় সঙ্গীতটি ভালোবাসা দিয়ে মর্যাদা দিয়ে সম্মান দিয়ে গাইতে চাই। আমাদের আশাহত করবেন না- দোহাই আপনাদের।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৬ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।