ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

শুক্রবারের বাংলানিউজ থেকে

গোয়েবলসের রেডিও এবং বিএনপির ভাঙ্গা রেকর্ড!

মনোয়ার রুবেল, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৪
গোয়েবলসের রেডিও এবং বিএনপির ভাঙ্গা রেকর্ড!

বিএনপি যা শুরু করেছে তাকে স্রেফ গোয়েবলসীয় ফর্মুলা বলা যায়। গোয়েবলস সম্পর্কে যারা জানেন না তাদের জন্য একটু আলোচনা করা যাক।

১৯৩৩ সালে হিটলার "প্রোপাগান্ডা মিনিস্ট্রি" নামে নতুন মন্ত্রণালয় খুলে তার মন্ত্রী নিয়োগ করেন জোশেফ গোয়েবলস কে। তার কাজ প্রোপাগান্ডা ছড়ানো। গোয়েবলসের বিখ্যাত উক্তি সবাই জানে। একটি মিথ্যাকে দশবার বললে সেটি সত্যের মতো শোনায়। জোশেফ গোয়েবলস এই ফর্মুলায় হিটলারকে জার্মানিতে মহা মানব হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন। টাকায় কেনা যায় এমন বুদ্ধিজীবী, কবি, সাংবাদিকদের তিনি নিয়োগ দিয়েছেন। তারা হিটলারের প্রচার চালাতেন। নাৎসিদের প্রেসে তাদের কবিতা বা লেখা প্রকাশ করা হত। শিশুদের জন্য কমিক বইও প্রকাশ করা হত। বড়দের জন্য নাটক লেখা হতো। গোয়েবলস নিজেই দুটি নাটক লিখেছিলেন।

তখনকার দিনে রেডিও ছিল দুর্লভ। রেডিওতে কানের উপর একই রেকর্ড বারবার বাজানো হলে মানুষ সেটা বিশ্বাস করবে। গোয়েবলস রাস্তার মোড়ে মোড়ে উচ্চ শব্দের রেডিও বসালেন। তাতেও প্রচার জমছিল না। গোয়েবলস সস্তায় নতুন রেডিও তৈরি করে বিলি করলেন। রেডিওর নাম দেয়া হল পিপলস রেডিও। এই রেডিও তে শুধু একটি চ্যানেল ছিল। পিপলস রেডিওতে হিটলারের গুনগান করা হত। নাৎসিদের আদর্শ প্রচার করা হত। পত্রপত্রিকা, সাহিত্য, কবিতা, রেডিও, নাটকে সর্বত্র নাৎসিদের প্রোপাগান্ডা। এটাই গোয়েবলসীয় প্রপাগান্ডা।

গোয়েবলস একটা কথা প্রায়ই বলতেন- মিথ্যা যখন বলবে তখন বড়সড় মিথ্যাই বলবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার চুয়াল্লিশ বছরে গোয়েবলসের স্টাইলে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি প্রমাণে উঠে পড়ে লেগেছে বিএনপি। ২৬ শে মার্চ মেজর জিয়ার বড় ছেলে তারেক জিয়া এই দাবি করার পর মানুষ ঠাট্টা তামাশা শুরু করার আগেই বেগম জিয়া একই রব তুলেছেন। পরদিনই রফিকুল ইসলাম মিয়া, সাদেক হোসেন খোকাও এই দাবি করলেন। সবাই একসাথে একই রেকর্ড বাজানোর ফর্মুলায় এগুচ্ছেন। ৪৩ বছর পর কোন কারণ ছাড়াই সমস্বরে এই বানোয়াট দাবি ১৯৩৩ পরবর্তী গোয়েবলস এর চমৎকার অনুকরন! অনুসরণ!

গোয়েবলসএর নীতি নাৎসিদের দেড় দশকেরও কম সময় টিকিয়ে রেখেছিল। বিএনপি এই নীতিতে কত সময় টিকবে সেটা প্রশ্ন?  হঠাৎ এমন নীতিই বা বিএনপিকে নিতে হলো কেন? বিএনপির নীতি আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন আওয়ামীলীগ নেতারা। বড় একটি দলের ইচ্ছাকৃত মিথ্যাচারে সুশীলরাও আতঙ্কিত। সত্যিই বিএনপির আদর্শ কী? বিএনপি কোন তত্ত্বের ভিত্তিতে রাজনীতি করে?

জনশ্রুতি আছে বিএনপির কোন আদর্শ নাই! একে ওকে জিজ্ঞেস করে বিএনপির আদর্শের জন্য তাদের ওয়েবসাইটে ঢুকলাম। সেখানে যা পেলাম তা রীতিমতো আতকে উঠার মত। আইডোলজি শিরোনামে দু লাইনে তারা লিখেছে "ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামীলীগকে প্রতিরোধ করার লক্ষে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের চেতনায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে আদর্শগতভাবে প্রকাশ করে। "

http://bangladeshnationalistparty-bnp.org/content.aspx?tablename=webitem2&id=9&child=null&parentid=null

শুধুমাত্র একটি দলকে প্রতিহত করাই কোন দলের আদর্শ হতে পারে? আদর্শ হয় কিসের ভিত্তিতে? আওয়ামীলীগ যদি বিলুপ্ত হয়ে যায় বিএনপির আদর্শ হবে কী? আওয়ামীলীগকে ডুবিয়ে তারা নিজেরাও ডুবে যাবে? এ ব্যাপারে তাদের মত জানা জরুরি ।

পৃথিবীতে নাৎসি একমাত্র দল ছিল যাদের লিখিত আদর্শে একটি ধর্ম বা সম্প্রদায়কে মোকাবেলার কথা ছিল। নাৎসিদের আদর্শ ছিল ইহুদী বিদ্বেষ! এজন্য তারা যাচ্ছেতাই মিথ্যাচার করেছে, প্রোপাগান্ডা মিনিস্ট্রি খুলেছে। তবুও নাৎসিরা টেকেনি।

একই ফর্মুলায় বিএনপি কি পৃথিবীতে দ্বিতীয় দল?

লেখক : ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট ।

বাংলাদেশ সময় ১৮০৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।